সপ্তাহব্যাপী জঙ্গিবিরোধী অভিযানে কী পেলো পুলিশ?
হঠাত জঙ্গিবাদের উত্থানে ভীত গোটা দেশ। এমন আগে কখনো দেখা যায়নি। একসাথে ৬৩ জেলার বোমা হামলার কথা বলা হলেও সেগুলো ছিলো শ্রেফ পটকাবাজি। পেন্সিল ব্যাটারি চালিতো পটকা ফুটিয়ে নিছক ত্রাস সৃষ্টিই ছিলো তার উদ্দেশ্য। এরপরের দৃশ্য সকলেই দেখেছে। জেএমবির শেকড় সহ গুড়িয়ে দেয়া হয়েছিলো। জেএমবির নিষ্ঠুরতা মূলত রাজশাহীর বাগমারা থানা কেন্দ্রীকই সীমাবদ্ধ ছিলো। সীমাবদ্ধ ছিলো স্বশস্ত্র একটি বাম গ্রুপের বিরুদ্ধে। ফলে আজকের মত ধর্মীয় কিংবা প্রগতীর বিরুদ্ধে সেসময় কাউকে দেখা যায়নি। সেটাই ছিলো এ পর্যন্ত ঘটা জঙ্গিবাদী ঘটনা। এরপর নানা সময়ে বিভিন্ন স্থান থেকে অস্ত্র উদ্ধারে জঙ্গিবাদ সীমাবদ্ধ ছিলো। কিন্তু হঠাত করেই বৈশ্বিক জঙ্গিবাদী গোষ্ঠী আলকায়দা ভারতীয় উপমহাদেশ ও বিশেষত বাংলাদেশকে টার্গেট করে বক্তব্য প্রদানের মধ্য দিয়ে ভীতি ছড়িয়ে দিলো। এর পর থেকেই মূলত চলমান গুপ্ত হত্যার মাত্রা বেড়ে গেছে। ব্লগার, সমকামী, পুরোহিত, শিয়া, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক এবং পুলিশ অফিসারের স্ত্রী মারা পড়তে থাকলেন ক্রমাগত।
ঠিক, এমন একটি পরিস্থিতিতে ঘোষণা দিয়ে জঙ্গি বিরোধী অভিযানে নামলো পুলিশ। এমন একটি স্পর্ষকাতর অভিযান যখন ঘোষণা দিয়ে শুরু হয় তখন যাত্রাতেই গলদ তৈরি হয়। ফলে এই অভিযানের স্বাভাবিক ফলাফল ব্যার্থ হয়। হয়েছেও তাই। প্রকাশ, পুলিশের তালিকাভূক্ত মোট জঙ্গি ৩ হাজার। এর মাঝে প্রায় আড়াই হাজার জঙ্গিকে খুঁজে পাচ্ছেনা পুলিশ! ফলে দেশের অবস্থা শোচনীয় করতে এদের মুক্ত অবস্থাই যে যথেষ্ট তা আর বলতে হয়না। পাশাপাশি বিভিন্ন ভাবে জামিনে বেরিয়ে গেছে আরও প্রায় পাচ শত জঙ্গি। ঘোষনা দিয়ে জঙ্গি বিরোধী অভিযানে প্রকৃত জঙ্গি গ্রেফতার হয়নি আশানুরুপ। যদিও বৈশ্বিক জঙ্গিবাদের অন্যতম প্রধান কারন 'জনঅসন্তষ' ঠিকই তৈরি হয়েছে। জঙ্গিবাদের পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। যেখানে মোট তালিকা ভূক্ত জঙ্গিই ৩ হাজার সেখানে দেশের মানুষকে জঙ্গি নামে এরেস্ট করা হয়েছে প্রায় ১৩ হাজার। এই বিশাল জনসংখ্যা সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে জঙ্গি তকমায় ভূষিত হল। এরা জঙ্গিবাদ বিরোধী অভিযানের বিরুদ্ধে চলে গেলো। অন্যদিকে মাদারিপূর থেকে জনতার হাতে আটক ফাহিমকে রিমান্ডে নিয়ে ক্রসফায়ার দিয়ে মেরে ফেলা হল। ফলে সাধারন মানুষজন জঙ্গিদের ধরে পুলিশে দেয়ার কোন মানে খুঁজে পাচ্ছেনা। ক্রসফায়ারের অর্থ মানুষ বুঝেন। ফলে ধৃত একজন জঙ্গিকে তথ্য উদ্ধারের কাজে না লাগিয়ে মেরে ফেলার ভিন্ন অর্থ খুঁজে পাবেন সাধারন মানুষ। ভিন্ন অর্থ খুঁজে নেবেন দেশের ভীত সংখ্যালঘুরা।
ফলে একথা স্পষ্ট যে জঙ্গিবাদের স্বরুপ এবং একই সাথে সাধারন জনগণের মনের কথা উপলব্ধিতে ব্যার্থ সরকার। জঙ্গিবাদ উত্থানে ঠিক এই দুটি উপাদানই প্রধান ভূমিকা পালন করে। এমন অবস্থায় দেশের জঙ্গিবাদ বিরোধী অভিযান যে ফ্লপ করেছে; বরং ক্ষতি তৈরি করেছে তা বলছেন অনেক বিশেষজ্ঞই। যা আজকের প্রথম আলোর একটি রিপোর্টে পরিস্কার ভাবে ফুটে উঠেছে। তাই ঘোষোনা দিয়ে চালানো সপ্তাহব্যাপী জঙ্গিবিরোধী অভিযান জনগনকে ভোগান্তির অভিযানে পরিনত হয়েছে। একই সাথে জঙ্গিদের ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার ভালো কোন অভিজ্ঞতা লাভ করেনি জনগণ। সরকারের ভবিষ্যত জঙ্গি বিরোধী অবস্থানে অবশ্যই এই দিকগুলো খেয়াল করা দরকার।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
মন্তব্য: ৩ টি