বাংলাদেশ একটি জনবহুল রাষ্ট্র। এখানে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র রয়েছে। বৈচিত্র রয়েছে জাতিসত্বায়। এর আগে এই দেশটি অন্য একটি ভূখন্ডের অধীনে ছিলো। সেই ভূখন্ডটি আবার বিশ্বব্যাপী কুখ্যাত তাদের অপসাম্প্রদায়িক ঐতিহ্যের কারনে। যেখানে শুধুমাত্র সংখ্যাগুরু ধর্মীয় সম্প্রদায় ও জাতিসন্ত্বা সর্বগ্রাসী আচরন দিয়ে অন্যদের বিতাড়িত ও ধ্বংপ্রাপ্ত করে ছেড়েছে। এই যখন অবস্থা ছিলো, ঠিক তখনই এ অঞ্চলের অসাম্প্রদায়িক ঐতিহ্য আর তা মেনে নেয়নি। সেই ঐতিহ্যের কারনেই ধর্ম-বর্ণ ও জাতিসত্বা নির্বিশেষে এক হয়ে সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে বিতাড়িত করে।

এই তো আমাদের মুক্তি সংগ্রাম। ১৯৭১ এর নাম 'মুক্তি' কেন? কারন- আমরা অসাম্প্রদায়িক জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে স্বাধীনতা লাভ করেছি। প্রেতাত্মার হাত থেকে 'মুক্তি' লাভ করেছি। তাই আমরা মুক্ত ও স্বাধীন।

এখন আসি বর্তমান প্রেক্ষিত আলোচনায়। আমরা কি আজ মুক্ত? যদি ৭১ পূর্ব সাম্প্রদায়িকতাকে অস্বীকার করতে হয়, তাহলে বলতে হবে বহুলাংশেই আমরা পরাধীন হয়ে পড়েছি। সেই পরাজিত চেতনার কাছে আমরা আবার পরাধীন হয়ে যাচ্ছি। স্বাধীনতার সময় যেদেশে ৪২ ভাগ জনসংখ্যা ছিলেন অমুসলিম, আজ মুক্তিযুদ্ধের দেশেই সে সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৮ ভাগে! এসব কিসের সংকেত?

বিজয়ের? নাকি পরাজয়ের? মুক্তির নাকি আবদ্ধতার? নিঃসন্দেহে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তি তীব্র আতংকগ্রস্থ। তারা সব হিসেব সেরে, নিজেদের সংগ্রামের হিসেব আর মেলাতে পারেন না।

যে আভ্যন্তরীন নির্যাতন এদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর চলেছে যুগের পর যুগ তারই ফলাফল এই চিত্র! আজ তাই আকাশের দিকে তাকিয়ে একজন সংখ্যালঘু হিসেবে নিজেকে বড় পরাজিত মনে হয়। আমার চোখের সামনে দিয়ে বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িকীকরন করা হল। আদালতে আমার আর্জি সরাসরি খারিজ হয়ে গেলো! আর আমি? আজ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িক চেহারা দেখার আর্জি জানাতে শিখলাম না! শিখতে পারলাম না যথাযথ প্রক্রিয়া! তাহলে আমরা কতটা পিছিয়ে আজ? নিজ অধিকার আদায়ের আর্জিও আমাদের শেখা নেই। জানা নেই! চিৎকার করার নিয়ম জানিনা?

ঐ আকাশ বুঝি আমার মনে কথা বোঝে। ঐ আকাশ বুঝি আমাকে কেদে কেদে হালকা হতে বলে! তা বুঝি আমার চিৎকার খারিজ হয়ে যাবার পর থেকেই আকাশটা কেদেই চলেছে?!




ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ