হিজাব বনাম ধর্ষণঃ আমার পর্যালোচনা
শুরুতেই বলে নেই, লেখাটিতে আমি হিজাবের ধর্মীয় দিককে স্বযত্নে এড়িয়ে চলছি। কারন ধর্মীয় ব্যাপার পবিত্র। এখানে কোন অশ্রদ্ধা নেই। আমার আজকের যুক্তি কেবলই তাদের জন্য যারা হিজাবকে ধর্মীয় পবিত্রতার উর্ধে নিয়ে সেটাকে রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার করেন। তাই আমার যুক্তিগুলোকে কেউ ধর্মের সাথে মিলিয়ে ফেলবেন না।
আমার ক্লাসমেটদের অনেকেই শুরুতে সাধারন পোশাকে ক্লাসে আসতো। তাদেরকে কখনই আমাদের অশালিন বলে মনে হয়নি। কারন তারা আচরনগত দিক থেকে ভদ্র ছিলো। পোশাকের একটা অবদান অবশ্যই আছে কিন্তু তার মানে এই নয় যে পোষাক এবং প্যাকেট একই ভাবে গৃহীত হবে। পোশাক মানেই সৌন্দর্য। যে পোষাকে আপনি যত সুন্দর সেটা আপনার জন্য তত গ্রহনযোগ্য। একই ভাবে যখন বাড়াবাড়ির কারনে পোষাক আর পোশাক থাকেনা তখন সেটা বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। একই ভাবে হিজাব যখন সোউন্দর্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ তখন তাতে কারো কোন আপত্তি নেই। কিন্তু একে নিয়ে যখন রাজনীতি করা হয়। যখন যেকোন হতভাগা নারী নির্যাতনের শিকার হওয়া মাত্রই তার জন্য সব দোষ তাকে দিয়ে বলা হয় মেয়েটি হিজাবী নয় বলেই সে নির্যাতিত! তখন তাকে অবশ্যই রাজনীঊতি ও বাড়াবাড়ি বলতে হবে।
আমার মূল বক্তব্যই এখানে। বলছিলাম আমার কিছু ক্লাসমেটের কথা। তারা হঠাতই হিজাব পড়া শুরু করে দিলেন। ফলে ক্লাসে প্রাথমিক ভাবেই একটা ভিন্ন পরিবেশ তৈরি হল। চেনা মানুষের সাথে কথা বলতেও ইতস্তত হত। আস্তে আস্তে যখন আবার ফ্রি হলাম, একদিন প্রশ্ন করলাম, কেন হঠাত তারা এমন ভাবে হিজাব ধারন করলো? উত্তরে বলেছিলো, এটা নাকি ফ্যাশন। এরপর আরেকটু ভালোভাবে যখন বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলাম তখন তারা অনেকেই স্বীকার করেছে যে এটা শুধু ফ্যাশন নয় বরং রীতিমত তাদেরকে বাধ্য করে হিজাব পড়ানো হয়েছে। আর এই কাজতা করেছে তাদের ফ্যামিলি থেকে।
তাদের কথা হল, নারী নির্যাতন বেড়ে গেছে বলেই পরিবভার তাদেরকে হিজাবের প্রতি চাপ দিয়েছে। কী আশ্চর্য দেখুন! একদল পশু রাস্তায় বের হোল, আর আপনি দেখলেন কিছু মানুষকে তারা হত্যা করলো, তখন কেউ একজন বলল আপনি ধুপ জ্বালান তাহলে আপনাকে ওই পশু আক্রমণ করবে না আর আপনিও তা করে পশুর সামনে পড়ার পর ঠিকই আক্রান্ত হলেন! ঠিক এমনটাই হচ্ছে। হিজাব ধর্মীয় পোশাক ঠিক আছে। আপনি ধর্মীয় কারনে তা ধারন করতেই পারেন। কোন আপত্তি নাই। থাকা উচিত নয়। হিজাব একটি ফ্যাশন হতে পারে। আপনি আধুনিক মনা মানুষ। ফ্যাশন আপনি করুন, তাতেও কারো কোন আপত্তি করার কিছু নেই।
কিন্তু এই হিজাব কে যখন নারী নির্যাত্রন থেকে মুক্তির ত্রাতা বলে রাজনীতি করা হয় তখনই কথা গুলো আসে। তাহলে আপনি হিজাব ছাড়া মানুষ গুলোকে নিশ্চিত ভাবে অসভ্য হিসেবে গন্য করলেন। এভাবে সমাজে যখন হিজাবের রাজনীতিকরন হয় তখনই ইভ টিজিং থেকে শুরু করে সকল অপরাধের দায় চাপিয়ে দেয়া হয় কোন হিজাবহীন নারীর দিকে। আর এর মাধ্যমে নির্যাতিত নারী দোষী হয় ও নির্যাতনকারী একধরনের বৈধতা পেয়ে যায়! তার দোষ মাফ হয়ে যায়!
কিন্তু ঠিক এই রাজনীর নিন্দনীয় দিকের বাইরে এসে দেখুন। উপলব্ধি করুন। হিজাব কি সত্যিই ত্রাতা হতে পারে? অবশ্যই নয়। আমি চযালেঞ্জ করলাম কেউ তা প্রমাণ করতে পারবেন না। কারন আমাদের সামনে দিয়ে নরপশুরা হিজাবী কিংবা হিজাবহীন সকল নারীকেই ইভটিজিং ও নির্যাতন করছে! এখানে শুধুমাত্র ঐ বখাটের মানসিকতাই দায়ী। মানকিতাই যদি দায়ী না হবে, তাহলে কি আপনি স্বিকার করছেন যে আপনিও ওই বখাটের মত আচরন করেন? কিংবা তাকে স্বীকৃতি দেন?
দুঃখিত প্রশ্নটি সরাসরি করার জন্য। নিছক বোঝানোর উদ্দেশ্যে প্রশ্নটা এভাবে করলাম।
আশা করি তনুর মত হিজাবী মেয়েরা হিজাব নিয়ে রাজনীতির পথে বড় একটি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে যাচ্ছেন। এর পর থেকে মূল সমস্যায় সবাই নজর দেবেন এবং প্রকৃত ধার্মিকদের সম্মান জানানোর উদ্দেশেই ধর্ম নিয়ে রাজনীতিকারীদের দমন করবেন।
অপরাজনীতি নয়। কোন অপসংস্কার নয়! হিজাব ব্যবহারে বাধ্যতা নয় বরং ধর্মীয় পবিত্রতা বজায় থাকুক। সচেতন নারীরা স্বতস্ফূর্ত ভাবে পরিধান করুক ফ্যাশনেবল হিজাব। আমাদের সকল মা-বোন-মাসি-পিসি নিশ্চিন্তে সুন্দর পরিবেশে যাতায়াত করুন। সেই প্রার্থনাই করছি।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
২৪ মার্চ ’১৬ বিকাল ০৫:৩৯
আপনার পর্যালোচনা পড়লাম। মনে হল কিছু হীনমন্যতা কাজ করেছে আপনার মাঝে। কারন হিজাবের রাজনীতি বলে আপনি যা বোঝাতে চেয়েছেন তা ধর্মীয় রাজনীতি নয়। আপনি আপনার জানার ভিত্তিতে পর্যালোচনা করেছেন। কিন্তু যেহেতু ইসলামের কিছু পর্যালোচনা এসেছে সেহেতু আগে জানা উচিত ইসলাম এ ব্যাপারে কি বলে? ইসলাম কি নিছক একটা সিম্বল হিসেবে হিজাব কে ধারন করেছে? কখনই নয়। বরং হিজাব বা পর্দার ব্যাপারে ব্যাখযা ও থট আছে। যে বিশয়কে আপনি রাজনীতি বলেছেন তা নিয়ে ইসলামিক অধ্যয়ন করলে আপনার ভুল ভাংবে। পোস্টের জন্য ধনযবাদ দাদা।
২৪ মার্চ ’১৬ বিকাল ০৫:৪২
আর ধর্ষণের সাথে সাথে যারা হিজাবহীন নারীকেই দোষারপ করে তারা অবশ্যই অপরাধ করে থাকে। তাদের ওই প্রবণতার কারনে ধর্ষক যদি তার কাজে সমর্থন পায় সেটা অবশ্যই অপরাধ। কারন ইসলাম একই সাথে পুরুষকেও পর্দা করতে বলে। আর ধর্ষণের কঠোর শাস্তি দেয়। তাই ধর্মের নামে যদি কেউ ধর্ষিতার দোষ দেয় আর ধর্ষকের কাজে বৈধতা দেয় তাহলে সে অবশই ধর্মীয় অপরাধও করেছে। তার স্বাভাবিক শান্স্রির পাশাপাশি ধর্ম অবনাননার শাস্তিও হওয়া উচিত।
২৪ মার্চ ’১৬ সন্ধ্যা ০৬:২৬
ব্লগ এবং মতামত ভালো লেগেছে। আশা করি এভাবেই একদিন সবাই যৌক্তিক মতে পোউছতে পারবো। অন্ধ ধার্মিকতা ধর্মের সবচেয়ে বড় অবমাননা।