অপারেশন ডার্কল্যান্ড - ১
চারদিকে ভুতুড়ে নিরবতা। চাঁদের আলোতে রাস্তার বালিগুলো চিক চিক করছে।
পাহাড়ের একপাশে এই বাড়িটা যেনো এই পাহাড়েরই দারোয়ান রুপে দাঁড়িয়ে আছে। বাড়িটা দোতলা ডুপ্লেক্স। এটাই রহমত সাহেবের বাড়ি।
বিপ্লব বাড়িটার গেটের দিকে ধীরে এগোতে লাগলো। হঠাৎ দুপ করে একটা শব্দ হলো। উৎকর্ণ হলো বিপ্লব। গেটের ভেতর থেকেই এসেছে শব্দটা।
রাত এখন ৩টা। এই সময়েতো বাড়ির কেউ সজাগ থাকার কথা নয়। তাহলে শব্দটার হেতু কি?
এটা সেটা ভাবতে ভাবতেই বিপ্লব হঠাৎ দেখলো গেটের নিচের গ্রীলের ফাঁক দিয়ে একটি বিড়াল বেরিয়ে গেলো। বুঝতে পারলো বিপ্লব। কান্ডটা তাহলে এই বিড়াল মহোদয়ের।
লেসার কাটার দিয়ে গেটের লক বরাবর বৃত্তাকার অংশ কেটে ফেললো বিপ্লব। গেটের ভিতরে ঢুকেই ঘুমন্ত দারোয়ানকে ক্লোরোফরম দিয়ে অন্তত দু ঘন্টার জন্য আবশ্যক ঘুম পাড়িয়ে দিলো।
ভেতরের কেঁচি গেইটের লকও একইভাবে গলিয়ে ভেতরে ঢুকলো বিপ্লব।
লম্বা করিডোরটির দু পাশেই রুমের সারি। দুপাশে তিনটি করে ছয়টি রুম। বামপাশের একেবারে শেষের রুমটির সামনে দাঁড়ালো বিপ্লব। এটাই রহমত সাহেবের রুম। গত দুদিনে দুধওয়ালা আর ইলেকট্রিক মেকারের ছদ্মবেশে সে রহমত সাহেবের রুম এবং রুমের ভেতরের সবকিছুিই মুখস্ত করে ফেলেছে।
দরজাটা অনেক পুরনো লোহার তৈরি। বাড়িটা নতুন হলেও আগের বাড়ির এই দরজাটা রহমত সাহেব ফেলে কিংবা বিক্রি করে দেয়নি। পুরনো লোহা এবং নিশ্চই অনেক মজবুত হওয়ায় দরজাটা তিনি নিজের রুমেই লাগিয়েছেন।
এক্ষেত্রেও বিপ্লব লেসার কাটারই প্রয়োগ করলো।
রুমটা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বড়ই বলতে হবে। এক কোনে একটি খাট। চারপাশের দেয়ালে সারিবদ্ধ ওয়াল কেবিনেট। অফিস রুমের মতই।
বিপ্লব আস্তে আস্তে এগোলো খাটের দিকে। সে ঝামেলা এড়াতে চায়। ক্লোরোফরম করেই তাকে তুলে নিয়ে যেতে চায়।
কিন্তু খাটের কাছে গিয়েই বিপ্লব চমকে উঠলো। খাটে রহমত সাহেব নেই। কি ব্যপার? নিশ্চই ভাতরুমে হবে। এমনটা ভাবতে ভাবতেই কানের পাশে ঘাড়ে একটা শক্ত ধাতব পদার্থের আঘাত অনুভব করলো বিপ্লব। শরীরটা চিন চিন করে ঝিমিয়ে উঠলো বিপ্লবের। কিন্তু নিজের ভারসাম্য ঠিক রেখে সাথে সাথে লাফিয়ে একপাশে শুয়ে পড়লো বিপ্লব।
শুয়ে পড়াতে লাভ হলো। রহমত সাহেবের পরবর্তী আঘাতটি পড়লো খাটে। শরীরটা না সরালে এতক্ষনে বিপ্লবের মাথাটা ছাতু হয়ে যেতো।
একপাশে শুয়ে পড়েই অত্যন্ত ক্ষিপ্রতার সাথে রহমত সাহেবের দিকে একটি কিক ছুঁড়ে মারলো বিপ্লব। কিক খেয়ে দাঁড়ানো থেকে একেবারে বিপ্লবের গায়ের উপরই পড়ে গেলো রহমত সাহেব। এতে লাভই হলো। সাথে সাথে তার গলাটা হাত দিয়ে পেঁচিয়ে ধরলো বিপ্লব। এবং সাথে সাথেই আগে থেকে প্রস্তুত রাখা ক্লোরোফরম মাখানো রুমাল রহমত সাহেবের নাকে মুখে চেপে ধরলো সে।
মাত্র ৬-৭ সেকেন্ড। নেতিয়ে পড়লো রহমত সাহেবের দেহ।
ভুলটা তারই হয়েছিলো। লেসার কাটারে দরজার লক গলানোর সময় খন্ডিত লৌহখন্ডটিকে সে ধরতে পারেনি। পড়ে গিয়েছিলো নিচের ফ্লোরে। নিশ্চই লৌহখন্ড পড়ার শব্দেই ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিলো রহমত সাহেবের। এতেই সে সতর্ক হয়ে গিয়েছিলো।
পুরো রুমটা চেক করলো বিপ্লব। কিন্তু সে হতাশ হলো। যেই উদ্দেশ্যে তার আসা। সেই বাক্সটি সে খুঁজে পায়নি।
তাহলে কি রহমত সাহেব সজাগ হয়েই বাক্সটি কোথাও লুকিয়ে ফেলেছে? লুকালে তো এই রুমেই লুকাবে। কিন্তু রুমের তো কোনো যায়গাই বিপ্লব বাকি রাখেনি।
তাহলে? নিশ্চই কোনো গোপন হোল থাকতে পারে। সেটাই খুঁজছে বিপ্লব। বাক্সটা যে তাকে পেতেই হবে। এই বাক্সটাই যে পুরো হিন্দুস্তানের নিরাপত্তার রক্ষা কবচ।
হঠাৎ বিপ্লবের মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। সে দেখলো ফ্লোরের পূর্ব প্রান্তের কার্পেটটিতে বৃত্তাকার কাটা দাগ রয়েছে। কাটা কার্পেটটি সে তুলে ফেললো। তোলার সাথে সাথেই সে নিচে দুইটি সুইচ দেখতে পেলো। একটি ওপেন লিখা, অন্যটিকে শাটডাউন। ওপেন লিখা বোতামটি চাপার সাথে সাথেই উপরের ঢাকনাটি দুদিকে সরে গেলো। সরে যেতেই সে কাঙ্খিত বাক্সটি দেখতে পেলো।
বাক্সটি ধরতে যাবে এমন মুহুর্তে সে পিঠে একটা শক্ত কিছুর চাপ অনুভব করলো। সাথে সাথেই পেছন থেকে একটি কন্ঠ ভেসে এলো, হাত উপরে তোলো.............
(চলবে)
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
মন্তব্য: ১৪ টি