আমরা যদি না জাগি মা, কেমনে সকাল হবে!
গত শতকের মাঝামাঝি সময়ে আমেরিকাতে চলতে থাকা বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে কাজ করে সারা বিশ্বের মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন একজন তরুণ। ষাটের দশকে পশ্চিমা বিশ্বে সাদা আর কালোর মধ্যে ভেদাভেদ চরম পর্যায় চলে গিয়েছিল। সেই সময় বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে নিজের শক্ত অবস্থান তুলে ধরেন আমেরিকান এক মানবাধিকার কর্মী মাত্র ত্রিশ বছরের যুবক মার্টিন লুথার কিং। সারা বিশ্বকে তিনি দেখিয়েছেন তরুণরা চাইলে যেকোন বৈষম্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারে। আর তারুণ্যের এই প্রতিবাদ কখনোই ব্যর্থ হওয়ার নজির নেই। নানান ভয়ভীতি আর ষড়যন্ত্রের শিকার হওয়া সত্ত্বেও তিনি থেমে যাননি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। লুথার বলেছিলেন "আই হেভ এ ড্রিম" তিনি তাঁর শেষ বক্তব্যে বলেছিলেন- "আমি এমন এক আমেরিকার স্বপ্ন দেখি, যেখানে থাকবে না কালো আর সাদার ভেদাভেদ।" মাত্র ৩৯ বছর বয়সে আততায়ীর হাতে নিহত হয়েছিলেন লুথার। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর অনেক বছর পরেও আজো সারা বিশ্বের মানুষ তাঁকে স্মরণ করে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায়।
দ্রোহের কবি নজরুল তারুণ্যের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছেন, "তরুণ নামের জয়মুকুট শুধু তাহারই, যাহার শক্তি অপরিমাণ, গতিবেগ ঝঞ্ঝার ন্যায়, তেজ নির্মেঘ আষাঢ় মধ্যাহ্নে মার্তন্ড প্রায়, বিপুল যাহার আশা, ক্লান্তিহীন যাহার উৎসাহ, বিরাট যাহার সাধ, মৃত্যু যাহার মুষ্টিতলে’। নজরুল তার অন্য একটি কবিতায় বলেছিলেন- আমরা যদি না জাগি মা, কেমনে সকাল হবে? তোমার ছেলে উঠলে মাগো, রাত পোহাবে তবে! কি নিদারুন উচ্চারিত সত্য! এদেশের বুকে চলমান সকল অন্যায়-অনিয়ম, অবিচার, জুলুম, নির্যাতন, দেশ জুড়ে চলতে থাকা ধর্ষণ এবং খুনসহ সমস্ত ভয়ংকর নৈরাজ্যের অন্ধকার নিশা শেষ হয়ে একটি আলো ঝলমলে সকাল আসতে পারে কেবল তরুনদের জেগে উঠার মাধ্যমে। এ জন্য বোধহয় কবি তারুণ্যের ভিতর ভর করে রুপাশ্রয়ী ঢংয়ে বলেছিলেন- আমরা যদি না জাগি মা, কেমনে সকাল হবে!
একটি জাতির আশা আকাঙ্খার পুরোটা জুড়ে থাকে তরুণ্য নির্ভর। বুড়িয়ে যাওয়া সমাজপতিরা যেখানে সকল অন্যায় মুখবুজে গৃহকোণে পড়ে থাকে, তরুণরা সেখানে নিশ্চিত জীবন সংশয় জেনেও ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারুণ্যের শক্তি অপার! লক্ষ্য অটুট! জীবনী শক্তি অপুরন্ত! এরা স্বপ্ন দেখতে জানে, দেখাতেও জানে। স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়ায় এরা নিখাঁদ শিল্পি! সমুদ্রের শক্তিশালী ঝরকে এরা তুচ্ছ করতে জানে। প্রবল বৈশাখীর দিগন্ত বিনাশী প্রলয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতেই তরুণদের আগমন। শত বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও তরুণদের জয় রুখবে এমন সাধ্য কার? যুগে-যুগে অত্যাচারীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তরুণরা শুধু শোষকের বুনিয়াদই ভেঁঙেই দেয়নি বরং এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে যার দরুন পরবর্তীতে অনেক শাসক জুলুম করার ধৃষ্টতা দেখানোর সাহস পায়নি। পৃথিবীর আদি থেকে অদ্যবদি শোষনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ইতিহাসে চোখ রাখলেই দেখতে পাওয়া যায় তারুণ্যে সাফল্যগাঁথা। কর্ণ কুহরে কম্পন তোলে তারুণ্যের বজ্রহুংহার!
১৯৬১ সাল। গ্যাগরিন তখন মাত্র সাতাশ বছরের তরুন। ঘরের বাইরের জগৎটাও এখনো ভালো করে দেখা হয়নি। এই বয়সে নিশ্চিত মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে বেরিয়ে পড়েছিলেন মহাশুন্য পানে। মানুষ যখন ভ্যুলোকের সব দূর্গম স্থান জয় করার সাহস দেখিয়ে উঠতে পারেনি, সেই সময় মহাকাশ নভোচারী হিসেবে রওনা হয়েছিলো এই তরুন। কোন প্রবীণ কিংবা বয়োজ্যেষ্ঠ সেদিন এগিয়ে আসেনি। কারণ এই যাত্রায় জীবিত ফিরে আসার সম্ভাবনা ছিলো না বললেই চলে। কিন্তু মৃত্যু যেখানে ওৎপেতে আছে, জীবন সেখানে আরো সুন্দর! অর্থবহ! নব আবিস্কারের নেশায় জীবনকে তুচ্ছ করার এই মোহ রুখবে এমন সাধ্য কার? ইউরি গ্যাগরিন ছিলো এই মৃত্যু পথের একমাত্র যাত্রী। কিন্তু তারুণ্যের এই অপুরন্ত প্রাণশক্তিকে কুর্নিশ করে মৃত্যুও! তাই মহাকাশে প্রথম পা রাখার ইতিহাস গড়ে নিজের নামটিও ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখলেন গ্যাগরিন। সেই ১৯৬১ সালে সারা দুনিয়াজুড়ে এই বিস্ময় তরুণের জয়গান গেয়েছিল সারা বিশ্ব। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বিশ্বের সমস্ত তরূণদের জন্য ছিলেন উদাহরন। তরুণদের হৃদয় জুড়ে তিনি প্রেরণা হয়ে থাকবেন মানব ইতিহাসের শেষ দিন পর্যন্ত।
বাঙালি জাতীয়তাবাদে এই দেশের তরুনদের অবদান ইতিহাসের প্রতিটি পরতে পরতে খুদিত আছে। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে প্রীতিলতা, ক্ষুদিরাম, সূর্য্যসেনদের অবদান বিপ্লবের আকাশে আজো ভাস্মর! একজন তরুন সৈনিক মঙ্গল পান্ডের নেতৃত্বে গড়ে উঠা সিপাহী বিদ্রোহে গোটা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ভীত নাড়িয়ে দিয়েছিলো। তারুণ্যের দূর্বার প্রতিরোধের মুখেই বৃটিশরা ভারতবর্ষ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলো। ১৯৫২ সালে এ দেশের তরুনরা শোষকের জারি করা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মৃত্যুর মিছিলে সামিল হয়েছিলো বলেই আমরা পেয়েছি মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার। ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের অগ্রভাগেও ছিলো এদেশের দুরন্ত তরুণ প্রাণ! আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহনকারী স্বাধীনতার সংগ্রামীদের আশি ভাগই ছিলো তরুন। রুমি, আজাদদের মতো লাখো টগবগে তরুণ যে জাতিকে পরাধীনতার গ্লানি থেকে মুক্তির স্বপ্ন দেখিয়েছে, সে দেশের তরুণরা পথ হারাবার নয়। একটা উপনিবেশিক কলোনিকে একটা স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ার পথে আমাদের যে জন্মযুদ্ধের মহাগল্প রচিত হয়েছে, সেই গল্পের ভাঁজে ভাঁজে খুদিত আছে অসংখ্য তরুন মুক্তিযোদ্ধার রক্ত দিয়ে লেখা অজস্র উপগল্প। ৯০ এর স্বৈরসশাসক বিরোধী আন্দোলনও মুখরিত ছিল এ দেশের তারুণ্য। তারুণ্যের ইতিহাসই বাঙালির ইতিহাস। তরুণরা চাইলে যেকোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারে। প্রয়োজন শুধু সৎ সাহস আর তেজোদিপ্ত মনোবল।
একটা দরিদ্র পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম লোক কিংবা বিধবা মায়ের একমাত্র সন্তান দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত! চিকিৎসার জন্য বিশাল অংকের অর্থের প্রয়োজন। বড়রা যেখানে মুখ ঘুরিয়ে নেয়, সমাজের বিত্তবানরা যেখানে সামান্য কিছু অর্থ দিয়ে দায়িত্ব শেষ করে, তরুণরা সেখানে তুড়ি মেরে জোগাড় করে দেয়। দেশের সমস্ত দূর্যোগে, প্রলয়ঙ্করী বন্যায়, তীব্র খরাই, মরুময় শীতে তরুণরা আছে দুস্থ মানুষের পরম বন্ধু হয়ে। সরকার-প্রশাসন যেখানে রাজনীতিক হিসেব কষে, তারুণ্য সেখানে ঝাঁপিয়ে পরে নি:শ্বার্থ মানবতায়। বর্তমান সময়ে দেশ জুড়ে ধর্ষণের মহামারি রুখতে পারে একমাত্র তারুণ্যের শক্তি। আমাদের ঘুমিয়ে পরা তারুণ্যকে জাগাতে হবে। কারণ এই তারুণ্যই পারে রাষ্ট্রকে একটা মানবিক সমাজ উপহার দিতে। শহীদ রুমি, শহীদ আযাদের উত্তরসুরীরা ঘুমিয়ে পড়েছে, একটা সমৃদ্ধ সকাল আসবে যদি তারা আরেকবার জেগে উঠে।
জীবন যেখানে কন্টকাকির্ণ, তারুন্য সেখানে প্রাণোবন্ত। বয়োজ্যেষ্ঠরা যেখানে হতাশাগ্রস্থ, প্রবীণরা যেখানে পরাজিত, বৃদ্ধরা যেথায় মৃত্যুপথযাত্রী, নবীনরা সেখানে দুরন্ত-দুর্মর! অসাধ্য কে সাধন করবার, অজেয়কে জয় করবার, ভিষন শুন্য, অতল পাতাল করায়ত্ত করার সকল মন্ত্রনা জানা আছে তারুণ্যের। তারুণ্য যেখানেই হাত দিবে সেখানেই ঘটবে নতুন কিছু, সৃষ্টি হবে নতুন এক ইতিহাস। মানব ইতিহাসে সকল দ্রোহের ইতিহাসই তারুণ্যের ইতিহাস। সকল বিদ্রোহ, সমস্ত বিপ্লব এসেছে তারুণ্যের কাধে ভর করে। তারুণ্যের প্রতি অগাধ বিশ্বাস থেকে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তাই বলেছিলেন-
এ বয়স জেনো ভীরু, কাপুরুষ নয়
পথ চলতে এ বয়স যায় না থেমে,
এ বয়সে তাই নেই কোনো সংশয়
এ দেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
দ্রোহের কবি নজরুল তারুণ্যের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছেন, "তরুণ নামের জয়মুকুট শুধু তাহারই, যাহার শক্তি অপরিমাণ, গতিবেগ ঝঞ্ঝার ন্যায়, তেজ নির্মেঘ আষাঢ় মধ্যাহ্নে মার্তন্ড প্রায়, বিপুল যাহার আশা, ক্লান্তিহীন যাহার উৎসাহ, বিরাট যাহার সাধ, মৃত্যু যাহার মুষ্টিতলে’। নজরুল তার অন্য একটি কবিতায় বলেছিলেন- আমরা যদি না জাগি মা, কেমনে সকাল হবে? তোমার ছেলে উঠলে মাগো, রাত পোহাবে তবে! কি নিদারুন উচ্চারিত সত্য! এদেশের বুকে চলমান সকল অন্যায়-অনিয়ম, অবিচার, জুলুম, নির্যাতন, দেশ জুড়ে চলতে থাকা ধর্ষণ এবং খুনসহ সমস্ত ভয়ংকর নৈরাজ্যের অন্ধকার নিশা শেষ হয়ে একটি আলো ঝলমলে সকাল আসতে পারে কেবল তরুনদের জেগে উঠার মাধ্যমে। এ জন্য বোধহয় কবি তারুণ্যের ভিতর ভর করে রুপাশ্রয়ী ঢংয়ে বলেছিলেন- আমরা যদি না জাগি মা, কেমনে সকাল হবে!
একটি জাতির আশা আকাঙ্খার পুরোটা জুড়ে থাকে তরুণ্য নির্ভর। বুড়িয়ে যাওয়া সমাজপতিরা যেখানে সকল অন্যায় মুখবুজে গৃহকোণে পড়ে থাকে, তরুণরা সেখানে নিশ্চিত জীবন সংশয় জেনেও ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারুণ্যের শক্তি অপার! লক্ষ্য অটুট! জীবনী শক্তি অপুরন্ত! এরা স্বপ্ন দেখতে জানে, দেখাতেও জানে। স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়ায় এরা নিখাঁদ শিল্পি! সমুদ্রের শক্তিশালী ঝরকে এরা তুচ্ছ করতে জানে। প্রবল বৈশাখীর দিগন্ত বিনাশী প্রলয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতেই তরুণদের আগমন। শত বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও তরুণদের জয় রুখবে এমন সাধ্য কার? যুগে-যুগে অত্যাচারীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তরুণরা শুধু শোষকের বুনিয়াদই ভেঁঙেই দেয়নি বরং এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে যার দরুন পরবর্তীতে অনেক শাসক জুলুম করার ধৃষ্টতা দেখানোর সাহস পায়নি। পৃথিবীর আদি থেকে অদ্যবদি শোষনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ইতিহাসে চোখ রাখলেই দেখতে পাওয়া যায় তারুণ্যে সাফল্যগাঁথা। কর্ণ কুহরে কম্পন তোলে তারুণ্যের বজ্রহুংহার!
১৯৬১ সাল। গ্যাগরিন তখন মাত্র সাতাশ বছরের তরুন। ঘরের বাইরের জগৎটাও এখনো ভালো করে দেখা হয়নি। এই বয়সে নিশ্চিত মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে বেরিয়ে পড়েছিলেন মহাশুন্য পানে। মানুষ যখন ভ্যুলোকের সব দূর্গম স্থান জয় করার সাহস দেখিয়ে উঠতে পারেনি, সেই সময় মহাকাশ নভোচারী হিসেবে রওনা হয়েছিলো এই তরুন। কোন প্রবীণ কিংবা বয়োজ্যেষ্ঠ সেদিন এগিয়ে আসেনি। কারণ এই যাত্রায় জীবিত ফিরে আসার সম্ভাবনা ছিলো না বললেই চলে। কিন্তু মৃত্যু যেখানে ওৎপেতে আছে, জীবন সেখানে আরো সুন্দর! অর্থবহ! নব আবিস্কারের নেশায় জীবনকে তুচ্ছ করার এই মোহ রুখবে এমন সাধ্য কার? ইউরি গ্যাগরিন ছিলো এই মৃত্যু পথের একমাত্র যাত্রী। কিন্তু তারুণ্যের এই অপুরন্ত প্রাণশক্তিকে কুর্নিশ করে মৃত্যুও! তাই মহাকাশে প্রথম পা রাখার ইতিহাস গড়ে নিজের নামটিও ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখলেন গ্যাগরিন। সেই ১৯৬১ সালে সারা দুনিয়াজুড়ে এই বিস্ময় তরুণের জয়গান গেয়েছিল সারা বিশ্ব। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বিশ্বের সমস্ত তরূণদের জন্য ছিলেন উদাহরন। তরুণদের হৃদয় জুড়ে তিনি প্রেরণা হয়ে থাকবেন মানব ইতিহাসের শেষ দিন পর্যন্ত।
বাঙালি জাতীয়তাবাদে এই দেশের তরুনদের অবদান ইতিহাসের প্রতিটি পরতে পরতে খুদিত আছে। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে প্রীতিলতা, ক্ষুদিরাম, সূর্য্যসেনদের অবদান বিপ্লবের আকাশে আজো ভাস্মর! একজন তরুন সৈনিক মঙ্গল পান্ডের নেতৃত্বে গড়ে উঠা সিপাহী বিদ্রোহে গোটা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ভীত নাড়িয়ে দিয়েছিলো। তারুণ্যের দূর্বার প্রতিরোধের মুখেই বৃটিশরা ভারতবর্ষ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলো। ১৯৫২ সালে এ দেশের তরুনরা শোষকের জারি করা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মৃত্যুর মিছিলে সামিল হয়েছিলো বলেই আমরা পেয়েছি মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার। ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের অগ্রভাগেও ছিলো এদেশের দুরন্ত তরুণ প্রাণ! আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহনকারী স্বাধীনতার সংগ্রামীদের আশি ভাগই ছিলো তরুন। রুমি, আজাদদের মতো লাখো টগবগে তরুণ যে জাতিকে পরাধীনতার গ্লানি থেকে মুক্তির স্বপ্ন দেখিয়েছে, সে দেশের তরুণরা পথ হারাবার নয়। একটা উপনিবেশিক কলোনিকে একটা স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ার পথে আমাদের যে জন্মযুদ্ধের মহাগল্প রচিত হয়েছে, সেই গল্পের ভাঁজে ভাঁজে খুদিত আছে অসংখ্য তরুন মুক্তিযোদ্ধার রক্ত দিয়ে লেখা অজস্র উপগল্প। ৯০ এর স্বৈরসশাসক বিরোধী আন্দোলনও মুখরিত ছিল এ দেশের তারুণ্য। তারুণ্যের ইতিহাসই বাঙালির ইতিহাস। তরুণরা চাইলে যেকোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারে। প্রয়োজন শুধু সৎ সাহস আর তেজোদিপ্ত মনোবল।
একটা দরিদ্র পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম লোক কিংবা বিধবা মায়ের একমাত্র সন্তান দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত! চিকিৎসার জন্য বিশাল অংকের অর্থের প্রয়োজন। বড়রা যেখানে মুখ ঘুরিয়ে নেয়, সমাজের বিত্তবানরা যেখানে সামান্য কিছু অর্থ দিয়ে দায়িত্ব শেষ করে, তরুণরা সেখানে তুড়ি মেরে জোগাড় করে দেয়। দেশের সমস্ত দূর্যোগে, প্রলয়ঙ্করী বন্যায়, তীব্র খরাই, মরুময় শীতে তরুণরা আছে দুস্থ মানুষের পরম বন্ধু হয়ে। সরকার-প্রশাসন যেখানে রাজনীতিক হিসেব কষে, তারুণ্য সেখানে ঝাঁপিয়ে পরে নি:শ্বার্থ মানবতায়। বর্তমান সময়ে দেশ জুড়ে ধর্ষণের মহামারি রুখতে পারে একমাত্র তারুণ্যের শক্তি। আমাদের ঘুমিয়ে পরা তারুণ্যকে জাগাতে হবে। কারণ এই তারুণ্যই পারে রাষ্ট্রকে একটা মানবিক সমাজ উপহার দিতে। শহীদ রুমি, শহীদ আযাদের উত্তরসুরীরা ঘুমিয়ে পড়েছে, একটা সমৃদ্ধ সকাল আসবে যদি তারা আরেকবার জেগে উঠে।
জীবন যেখানে কন্টকাকির্ণ, তারুন্য সেখানে প্রাণোবন্ত। বয়োজ্যেষ্ঠরা যেখানে হতাশাগ্রস্থ, প্রবীণরা যেখানে পরাজিত, বৃদ্ধরা যেথায় মৃত্যুপথযাত্রী, নবীনরা সেখানে দুরন্ত-দুর্মর! অসাধ্য কে সাধন করবার, অজেয়কে জয় করবার, ভিষন শুন্য, অতল পাতাল করায়ত্ত করার সকল মন্ত্রনা জানা আছে তারুণ্যের। তারুণ্য যেখানেই হাত দিবে সেখানেই ঘটবে নতুন কিছু, সৃষ্টি হবে নতুন এক ইতিহাস। মানব ইতিহাসে সকল দ্রোহের ইতিহাসই তারুণ্যের ইতিহাস। সকল বিদ্রোহ, সমস্ত বিপ্লব এসেছে তারুণ্যের কাধে ভর করে। তারুণ্যের প্রতি অগাধ বিশ্বাস থেকে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তাই বলেছিলেন-
এ বয়স জেনো ভীরু, কাপুরুষ নয়
পথ চলতে এ বয়স যায় না থেমে,
এ বয়সে তাই নেই কোনো সংশয়
এ দেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
মন্তব্য: ২ টি