যতই ঘাড়ে কোপ মারো, ঘাড়টা আমাদের ত্যাড়াই আছে
জাফর ইকবাল স্যারের উপর হামলাকারীর অভিযোগ, তিনি ইসলামের শত্রু এবং “ভূতের বাচ্চা সোলায়মান” লেখার কারণে এই হামলা। এই সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রচারও হচ্ছে বেশ। জাফর ইকবাল স্যারকে নাস্তিক/ ধর্মবিদ্বেষী হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। ‘ভূতের বাচ্চা সোলায়মান’ এই বইটা; মুহম্মদ জাফর ইকবালের ধর্মবিদ্বেষী উপন্যাস কিনা? কিংবা এখানে নবী সোলায়মান (আঃ) এর কথা ঘুণাক্ষরেও এসেছে কিনা!
একটা ছোটদের জন্য লেখা ভৌতিক ফিকশন। এবং ‘’ভুতের বাচ্চা সোলায়মান’ বইটা আপনাদের কিংবা আমাদের কারও জন্য না। একদম প্রাইমারি স্কুলের পিচ্চিদের জন্য লেখা একটা বই। যেখানে ধর্মের প্রতি কোন কটুক্তি কিংবা কাউকেই কটুক্তি করা হয় নাই।
স্যারের লেখা ‘নিশিভূত’ সিরিজ কিংবা ‘ভূতের বাচ্চা কটকটি’ এরকম শিশুতোষ গল্প যারা পড়েছেন। তারা জানবেন, এই বইটাও ‘ভূতের বাচ্চা কটকটির’ মতো এরকম একটা বাচ্চা ভূতকে নিয়ে লেখা বই। কোন ধর্মীয় কিংবা ধর্মকে উপজীব্য করে লেখা বই নয়। যেমন নয় জাফর ইকবালের অন্য বইগুলোও। কারণ তার লেখার স্কুল-জঁরা উভয়েই আলাদা।
এই সো কল্ড বিতর্কিত বইয়ের কাহিনীটা সংক্ষেপে বলি। নিতু নামের একটা মেয়ে খুব চালাক আর বুদ্ধিমতি। স্কুলে যায় মাত্র। সে তার সমবয়সী বন্ধুদের নিয়ে ‘প্রেত রহস্য’ নামের একটা বই পড়ে ফেলে। একদিন সবাই এক হয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে ভূতকে ডাকে। তো, এই নিরীহ ভূতের বাচ্চাটা এক সন্ধ্যায় পৃথিবীতে এসে আটকে যায়। সেই ভূতের বাচ্চা নিতুকে জানায়- ‘আমার নাম সোলায়মান। আমি দুষ্টলোকের যমের যম, ভালো লোকের জানের জান’। কিন্তু পৃথিবীতে অনেক গরম আর ধূলা! কাজেই, আমি ভূতের দেশে ফিরতে চাই’।
এই হচ্ছে সোলায়মান নামের একটা বন্ধুসুলভ ভূতের বাচ্চার কাহিনী। যেমন, আরেকটা বইয়ে রিটিনদের বন্ধু ছিল ‘ভূতের বাচ্চা কটকটি’। তো, এই বইয়ে দবীর চাচা নামের এক দুষ্টুলোক একটা অপরাধ করে মিডল ইস্টে পালিয়ে যায়। তারপর বহুদিন পরে নিতুদের বাসায় বেড়াতে আসে। সেই দবির চাচাই এই গল্পের ভিলেন।
নিতুর এই দুঃসম্পর্কে্র চাচা; যেহেতু শেখদের দেশ থেকে এসেছে; তো নিজের সংস্কৃতি ভুলে মিডল ইস্টের শেখদের মতো জোব্বা পরে। আর মনে করে ‘পোলাপাইনকে অলটাইম মাইরের উপর রাখতে হয়’। একদিন, ওই গল্পের দুষ্টুলোক দবির চাচা টের পায়; নিতুর ঘরে একটা ভূতের বাচ্চা থাকে।। নিতু তার সাথে খেলাধুলা করে আর পটরপটর করে গল্প করে। দবীর চাচা যেহেতু দুষ্টুলোক; তাই সে ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে নিতুর বন্ধু ভূতের বাচ্চা ‘সোলায়মানকে’ কালোবাজীরদের কাছে বিক্রি করে দিতে চায়।
এর বাইরে বলার মতো কাহিনী কিচ্ছু নাই। এখন একবার ভাবেন, এই কাহিনীর প্লটে ধর্ম বিদ্ধেষ আছে? এই নাম শুনেই একটা জীবন শেষ করে দিতে চাইলো? কেবল রাবু ভূত আর কটকটির জায়গায়, আরেকটা বইয়ে ‘সোলায়মান’ আসলো বলেই?
আচ্ছা, ধর্ম এসেছে কোথায়? এসেছে। নিতু নামের মেয়েটা যেদিন বলে, সে সায়েন্টিস্ট হতে চায়। সেদিন ভিলেন দবির চাচা বলে- “আস্তাগফিরুল্লাহ! কি বলে? মাইয়াদের সবার আগে সংসার। তাদের সায়েন্টিস্ট কিংবা ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হতে হয় না”। হ্যাঁ, এই কথাটা আছে। এই একটা বাক্য ধর্ম-বিদ্ধেষী? এই বাক্যের জন্য কোপানো জায়েজ? আর এই ধরণের কথা কি আমাদের সমাজে চালু নেই?
‘ভূতের বাচ্চা সোলায়মান’ গেল বইমেলায় এসেছিল। স্যারের বিরুদ্ধে প্রথম হত্যার হুমকি আসে ১৯৯৯ সালে। যখন শহীদ জননীর নামে সাস্টের একটি হলের নাম হয়। নাস্তিক ট্যাগ তো তখন থেকেই দেয়া। কে দিয়েছিল জাহানার ইমামকে ইসলামবিরোধী ট্যাগ? কেন দিয়েছিল?
হ্যাঁ! দেলোয়ার হোসেন সাঈদি দিয়েছিল এই ট্যাগ, যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে গণআদালত বসানোর জন্য। আর জাহানার ইমামের পক্ষে কথা বলাতেই জাফর স্যার হয়ে গেলেন ইসলামের শত্রু! ইসলাম তো ন্যায় আর ইনসাফের কথা বলে! হত্যা, ধর্ষণ, জোর করে ধর্মান্তরিত করা, এগুলো তো জঘন্য অপরাধ। তাহলে এর বিরুদ্ধে বলা, কী করে ইসলামের বিরুদ্ধে বলা হয়?
তাই নিঃসন্দেহে বলা যায়, ভূতের বাচ্চা সোলায়মান স্রেফ অজুহাত মাত্র। যেহেতু স্যার যুদ্ধাপরাধী,জামাত শিবির এবং মৌলবাদের বিরুদ্ধে কথা বলেন- তারাই অপপ্রচার চালিয়ে আপনার কানে ওই ফুস মন্তর দিয়েছে। ভুলে গেলেন এরাই মাওলানা ফারুকী আর শোলাকিয়ায় ঈদের ময়দানে হামলা করেছিল?
সমীকরণটা খুব সহজ। হয় এ দেশটা সিরিয়া-লেবানন হয়ে যাবে, নতুবা পৃথিবীর বুকে টিকে থাকতে হবে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে, মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে। যদি ২ নম্বরটিই আপনার উত্তর হয়, তাহলে প্রতিবাদ করুন আপনার মতো করে, অনলাইনে কিংবা অফলাইনে।
‘যতই ঘাড়ে কোপ মারো, ঘাড়টা আমাদের ত্যাড়াই আছে। দেশের জন্য!’
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
কোন মন্তব্য নাই.