স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতিকে, সমস্যা!
সরকার যখন থেকে এই পরিকল্পনা করছিল তখন থেকেই ধারাবাহিক ভাবে প্রতিবাদ হয়ে আসছিল কিন্তু সরকার মনের সুপ্ত বাসনা বাস্তবায়ন করেই ছাড়লেন। তিনি রাখলেন না অন্য কারো কথা। তিনি রাখলেন নিজের কথা,নিজের দলের অনুগত নেতা-কর্মীদের কথা।তাতে করে কি আমাদের প্রধান মন্ত্রীর প্রতি আপামর শ্রেণীর মানুষের সুভাব বাড়লো নাকি কমলো! না বাড়েনী বরং ঢের কমেছে। একটি কথা আমাদের মনে রাখা দরকার,একবার যদি আপনার উপর থেকে মানুষের আস্থা উঠে যায় তাহলে আপনি যে কাজই করবেন মানুষ সেটাকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখবে। আমাদের আওয়ামীলীগের বেলায় হয়েছে এমনই। আস্থা কিভাবে থাকবে,জনগণের প্রতিতো আপনাদের বিন্দুমাত্র আস্থা নেই। আওয়ামীলীগের প্রধানমন্ত্রী জানেন আজ যদি সাধারন মানুষ তাদের মতামত প্রকাশের সুযোগ পায় তাহলে তারা বাংলাদেশ আওয়ামীলীগকে ভোট দিবেনা। কাজেই শেখ হাসিনা সে পথে না হেটে তত্বাবধায়ক ব্যবস্থা উঠায় দিয়ে তার আন্ডারে জাতীয় নির্বাচনের বন্দোবস্ত পাকা করে ফেলেন। বাংলাদেশের আশি শতাংশ মানুষ তাদের জাতীয় অধিকার প্রয়োগ থেকে বঞ্চিত হল। ফলাফল আওয়ামীলীগ বিনাপ্রতিদন্দীতায় আবারো ক্ষমতায় আসীন হয়। ৫ই জানুয়ারী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের মানুষের মধ্যে যে অস্থিরতা তৈরী হয়েছে সেটা আজও বিদ্যমান। এই নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সমগ্র বাঙ্গালী জাতিকে দুই ভাগে ভাগ করে দিলেন। মুক্তি যুদ্ধের পক্ষের ও বিপক্ষের শক্তি। যা একটি স্বাধিন দেশে জাতিগত দাঙ্গা বাধাতে বেশ ক্রিড়ানকের ভূমিকা পালন করে থাকে। রুয়ান্ডার হুতু ও তুতশীদের মধ্যে দীর্ঘদিনের যে দাঙ্গা বেধেছিল সেটি তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনেক গুরুত্বপুর্ন। এই নির্বাচনের সময় স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সাথে সরাসরি সাধারন মানুষের সাক্ষাত ঘটে। এতে করে নেতার সাথে কর্মীর যেমন দুরত্ব ঘোচে তেমনী সাধারন মানুষেরা সরাসরি তাদের কথা জোর গলায় নেতাকে বলতে পারে।ফলে সকলের সাথে সকলের ব্যক্তিগত সম্পর্কের পাশাপাশি সামাজিক হৃদ্যতাও বাড়ে। মিলেমিশে বসবাসের জন্য যেটা খুবই দরকারী উপাদায় বলে আমি মনে করি। তাছাড়া নির্দলীয় নির্বাচন হবার কারনে দলবল নির্বিশেষে সবাই আগ্রহের সাথে কাধে কাধ রেখে ভোট দিতে যেত,যার কারনে যে কোন ধরনের সংঘর্ষের সম্ভাবনা কম থাকত। নির্বাচিত প্রতিনিধি ছিল সবার প্রতিনিধি। বিপদে আপদে সবার দ্বারে ছুটে যেতে হত তাকে।যার ফলে সমাজে বসবাসকারী সবার মাঝে হৃদ্যতা বাড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের বিশৃংখলার হাত থেকেও মানুষজন রক্ষাপেত। কাজেই এসব কিছুকে সামনে রেখে বলবো স্থানীয় সরকারকে দলীয় প্রতিকের বাইরে রাখাই সময় উপযোগী ছিল।
স্থানীয় ও জাতীয় রাজনীতির সাথে রাজনীতি এবং রাজনীতির সাথে রাজনৈতিক দলের সম্পর্ক থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তাই পথিবীর অন্যন্য দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থাতে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দীর্ঘদিনের প্রথা,পদ্ধতি ও ঐতিহ্য অনুসরন করে দলীয় প্রতিকেই হয়ে থাকে। প্রতিবেশী ভারত যার অন্যতম দৃষ্টান্ত হিসাবে ভূমিকা পালন করছে। এসব বিষয়কে সামনে রেখে আমাদের সরকার মহোদয় যদি এই সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়ন করে থাকে তাহলে আমার কয়েকটি প্রশ্ন রয়েছে!
১.আইনের শাসনের প্রতি নূন্যতম শ্যদ্ধাবোধ কি আপনাদের/আমাদের আছে?অনিয়ম ও দূর্নীতির ক্ষেত্রে আমরা কি শূন্য সহিষ্ণুনতা দেখাতে পেরেছি?
২.দলের অভ্যন্তরীন শৃংখলা বিধানের সাথে সাথে দলের কর্মীদের মানোন্নয়ন কি আমরা নিশ্চত করতে পেরেছি?আমরা কি নিশ্চিত যে,সরকারী দল নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করবেনা?
৩.নির্বাচনে সকল দলের জন্য সমতল ক্ষেত্র তৈরীর পাশাপাশি সমান সুযোগ কি আমরা নিশ্চিত করতে পারবো?
প্রতিবেশী দেশ এবং অন্যন্য পশ্চিমা দেশে উপরোক্ত তিনটি প্রশ্নে সবাই এক।সেসব দেশে আইনের চোখে সবাই সমান বলে সরকারী দল বিরোধীদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেনা। নির্বাচনের সময় অন্যায়ভাবে বিরোধীদের ঘাড়ে মামলা দায়ের করে নির্বাচনের মাঠ থেকে ফেলে দেয়না। কিংবা হায়েনার মত বিরোধীপক্ষ এর উপর ঝাপিয়ে পড়েনা। কিংবা সরকারী আমলাদের ব্যবহার করে পরাজিতকে জয়ী হিসাবে ঘোষনা করেনা। কিংবা সরকারী দলের লোকেরা দেশের টাকাকে লুটপাট করে খেয়ে ফেলে না।কাজেই দলীয় প্রতিকে জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি স্থানীয় নির্বাচন হলেও কোন কারচুপি বা অনিয়ম হয়না। ফলে স্থানীয় নির্বাচন, দলীয় প্রতিকে হয়ে থাকে।
কিন্তু আমাদের বাংলাদেশ কি ভারত কিংবা পশ্চিমাদেশ হয়ে গেছে!আইন আছে তার বাস্তবায়ন নেই। যতটুকু বাস্তবায়ন হয় তার সবটুকুই হয় বিরোধীদলের কর্মীদের উপর। এক কথায় আইনের শাসন নেই। ফলে যারা ক্ষমতায় থাকছে তাদের কথাই হয়ে যাচ্ছে আইন। দলে কোন শৃংখলাবোধ নেই। জনগণের রায়ের প্রতি কোন আস্থা নেই। নির্বাচনে সবার জন্য সমক্ষেত্র নেই,যার কারনে সরকারী দল ফলাফল পক্ষে আনার জন্য সব ধরনের প্রভাব বিস্তার করে থাকে। যার প্রমান আমরা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে লক্ষ করেছি। এমতাবস্থায় স্থানীয় নির্বাচন যদি দলীয় প্রতিকে করা যায় তাহলে সমাজের মানুষের মধ্যে রাজনৈতিক হানাহানি বাড়বে,সমাজ বিভক্ত হয়ে যাবে,সমাজের মানুষের মধ্যে সব ধরনের হৃদ্যতা কমবে এবং সামাজিক বিশৃংখলা অধিক পরিমানে বাড়বে। যা একটি স্বাধিন রাষ্ট্রকে অস্তিত্বের সংকটে ফেলে দেবে,সেটা আমাদের কারোরই কাম্য হতে পারেনা।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
১৮ ফেব্রুয়ারি ’১৬ বিকাল ০৪:৩৮
একটা বিষয় মোটেও আমার মাথায় খেলছেনা। বাংলাদেশ কি পশ্চিমা দেশের মত হয়ে তারপর মর্যাদাপূর্ণ নির্বাচনী ব্যবস্থা প্রনয়োন করবে? নাকি, মর্যাদা পূর্ণ নির্বাচনী ব্যবস্থার মধ্য দিয়েই পশ্চিমা দেশগুলোর কাতারে যাবে?
আশা করি উত্তর দেবেন। আজকের ভারত কিংবা পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলো একদিনেই নিশ্চই উন্নত ও মর্যাদাপূর্ণ আচরনে অভ্যস্ত হয়নি! তাছাড়া অগণতান্ত্রিক শক্তির সুযোগ রাখলে নির্বাচনে সুস্থ পরিবেশ আনা তো দূর, দেখা যাবে গণতন্ত্রই থাকবে না। নাই মামার চেয়ে অবশ্যই কানা মামা থাকা বেটার।
২০ ফেব্রুয়ারি ’১৬ বিকাল ০৩:৪৬
আমরা নিশ্চিত,নির্বাচনে সরকার মহোদয় প্রভাব বিস্তার করে ফলাফল নিজের পক্ষে নিয়ে আসবেই,যা সামাজিক বন্ধনকে ক্ষতিগ্রস্থ করবে।কাজেই স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতিক ব্যবহারের বিরোধী আমি