অপারেশন ডার্কল্যান্ড - ২
অপারেশন ডার্কল্যান্ড - ১
ম্যাপটির উপর কয়েকবার চোখ বুলালো বিপ্লব। মাথায় কিছুই ঢুকছে না। সেভেন সিস্টারের পুরো চিত্রই তুলে ধরা হয়েছে ম্যাপটিতে। ম্যাপের বেশ কয়েকটি স্থানে বড় করে লাল অক্ষরের V লেখা। এই V লেখার মানেটাই জানতে চাচ্ছে বিপ্লব।
তুমি কিছু বুঝছো মিরা?
মিরাও বিপ্লবের সাথে ম্যাপটি দেখছিলো। দিল্লী এম জি ইউনিভার্সিটির ক্যামিষ্ট্রি বিভাগের শেষ বর্ষের মেধাবী ছাত্রী মিরা। বিপ্লবের সবচেয়ে কাছের বন্ধু/বান্ধবী বলা চলে। একই ভার্সিটিতে পড়ে বলেই যে তারা একে অপরের বেষ্ট ফ্রেন্ড তা কিন্তু নয়। ছোট্র একটি ঘটনা তাদেরকে এতটা ঘনিষ্ঠ বানিয়ে দিয়েছে।
ঘটনাটি খুবই ইন্টারেষ্টিং। দু বছর আগে হবে। রোড এক্সিডেন্টে গুরুতর আহত হয় মিরার মা কামিনী লতা। হাসপাতালে ভর্তি করালে ডাক্তার জানালো এক ঘন্টার মধ্যে বি নেগেটিভ রক্ত জোগাড় করতে হবে। নইলে মাকে বাঁচানো যাবে না। যেনো বাজ পড়লো মিরার মাথায়। বি নেগেটিভ রক্ত রেয়ার হলেও পাওয়া যে যাবেনা তা নয়, কিন্তু সময় যে মাত্র এক ঘন্টা! আধাঘন্টা পর্যন্ত পাশবর্তী সকল ব্লাডব্যাংকে খোঁজ নিয়েও রক্ত পাওয়া গেলোনা।
একেবারেই ভেঙ্গে পড়লো মিরা। সে অস্থির হয়ে এখানে সেখানে ফোন দিতে লাগলো।
হাসপাতালের রিসিপশন রুমে চেয়ারে বসা একজন তরুণ কিছুক্ষণ ধরেই মিরার এমন অস্থিরতা খেয়াল করছিলো। মিরার ফোনের কথাবার্তায় সে ব্যপারটা বুঝতে পারলো। এসময় তরুণটি একজন রুগীর কক্ষে প্রবেশ করলো। প্রবেশ করার কয়েক মিনিট পরেই সে আবার ফিরে এলো। তরুণটি মিরার কাছে গিয়ে বললো, আমার রক্ত বি নেগেটিভ। চলুন আমি আপনার আম্মুকে রক্ত দিবো।
মরুভূমিতে পথ হারানো তৃষ্ঞার্ত ব্যাক্তির পানির সন্ধান পাওয়ার মতই অবস্থার সৃষ্টি হলো যেনো মিরার মাঝে। সে বিশ্বাসই করতে পারলোনা।
আপনি সত্যি বলছেন?
হাঁ, সত্যি বলছি, আমি আপনার মাকে রক্ত দিবো। চলুন।
কে আপনি?
ওসব পরে জানবেন, আগে রক্ত দেয়ার ব্যবস্থা করি চলুন, ডাক্তারের বেধে দেয়া সময়ের আর মাত্র ১৫ মিনিটের মত বাকি আছে।
মিরা বিষ্মিত হলো ঠিকই, কিন্তু আর কিছু বলতে পারলোনা। তরুণটির সাথে এগিয়ে চললো ভেতরে।
সেদিনের এই তরুণটিই ছিলো বিপ্লব। সে রক্ত না দিলে হয়তো সেদিন মিরার মাকে বাঁচানো যেতোনা। পরে জানতে পারলো যে, তারা একই ভার্সিটিতে পড়ে। তখন বিপ্লব জানিয়েছিলো, সেদিন সে আগে থেকেই কনপার্ম করা অন্য আরেকজনকে রক্ত দিতে হাসপাতালে আসছিলো। মিরার ব্যপারটি জানতে পেরে সে তৎক্ষণাৎ ঐ রুগীর সাথে কথা বলে জানলো যে তাকে কয়েক ঘন্টা পরে রক্ত দিলেও চলবে। তখনই সে মিরার মাকে রক্ত দিতে যায় এবং ফোনে যোগাযোগ করে ঐ রোগীর জন্য আরেকজন ডোনারের ব্যবস্থা করে দেন।
সেদিন থেকেই তারা পরষ্পর অবিচ্ছেদ্য এক হৃদয়।
বিপ্লবের বিপজ্জনক এবং অ্যাডভেন্সারপূর্ন জীবনের সাথে মিরা খুব ভালোভাবেই পরিচিত। সে নিজেও রহস্য ও অ্যাডভেন্সারপ্রিয়। এজন্য বিপ্লবের অজান্তেই পেছন থেকে কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স করে সে। বিপ্লবের বিপদে পড়ার আশঙ্কা থেকেই তার এমনটা করা।
সেদিন রহমত সাহেবের বাসায় সে-ই বিপ্লবকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করে। সেদিন বাক্সটি উদ্ধারের সময় অসতর্কতাবসত বিপ্লব রহমতের সহযোগীদের অস্ত্রের মুখে পড়ে গিয়েছিলো। পেছন থেকে মিরা গুলি করে তাদের হত্যা না করলে সেদিনই হয়তো বিপ্লবের ভবলিলা সাঙ্গ হতে পারতো।
রহমত আলীর বাসা থেকে উদ্ধার করা সেই বাক্সেই তারা এই ম্যাপটি পেয়েছে। যেটা নিয়ে তারা দুজনেই এতক্ষণ ধরে ভাবছে।
না বিপ্লব, আমিতো তেমন কিছুই বুঝতে পারছিনা, V দ্বারা তারা কোনো সংকেত ব্যবহার করছে মনে হচ্ছে; মিরা বললো।
সেটা কি হতে পারে মিরা?
সেটা নিশ্চই তাদের কাজ এবং উদ্দেশ্যের সাথে রিলেটেড।
তাদের উদ্দেশ্য তো তোমার জানা। তারা হিন্দুস্তানের সাথে রাষ্ট্রদ্রোহিতা করে এই সেভেন সিষ্টার এলাকার স্বাধীনতা চায়। এজন্য তারা সসস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনীও গড়ে তুলেছে। তাদের উদ্দেশ্যই তো হলো এই এলাকায় কোনো নৈরাজ্য চালিয়ে সেটা রাষ্ট্রীয় বাহিনীর উপর ছাপিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে বেকায়দায় ফেলা। এভাবে বিদেশীদেরকে আকৃষ্ট করা এবং তাদের কাছে ভুল বার্তা দেয়া। বলে থামলো বিপ্লব।
বুঝলাম তাদের উদ্দেশ্য। কিন্তু এর সাথে তাদের এই ম্যাপের চিহ্নগুলোর তো তাৎপর্য খুঁজে পাচ্ছিনা, বললো মিরা।
আচ্ছা মিরা V দিয়ে এমন কয়েকটা শব্দ বলতো, যেগুলোর অর্থ তাদের কাজের সাথে যায়?
এমন একটি শব্দই আমি দেখছি, সেটা হলো violence, যেটা তাদের কাজকর্মের সাথে যায়।
মুখটি উজ্জ্বল হয়ে উঠলো বিপ্লবের। বললো পেয়ে গেছি মিরা।
কি পেয়ে গেছো?
violence, V দ্বারা তারা violenceই বুঝিয়েছে।
কিভাবে শিওর হলে তুমি?
তাদের উদ্দেশ্য যেহেতু এই এলাকায় অরাজকতা কিংবা ভায়োলেন্স তৈরি করা সেহেতু, তারা সেভেন সিষ্টারের এই ম্যাপে যেসব স্থানে V চিহ্ন দিয়ে রেখেছে, সেসব স্থানে তারা নিশ্চই বড় কোনো ভায়োলেন্স করতে চাচ্ছে। সেটা হয়তো বোমাবাজি, নির্বিচারে মানুষ হত্যা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ করে করবে। এবং সেটা একই দিনে।
বিষ্ময়ে হা হয়ে গেলো মিরার মুখ! বল কি তুমি? তারা এমন ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা করেছে?
এর দ্বারা কি করতে চায় তারা?
ভয়ঙ্কর এই গণহত্যা তারা কেন্দ্রীয় সরকারের উপর চাপিয়ে দিয়ে বিদেশীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায়। এটার জন্য তারা হয়তো বিশ্বের বিভিন্ন মিডিয়াকে আগে থেকেই হাজির করে রাখবে যাতে সারা বিশ্বে এই গণহত্যা প্রচার করা যায়। এবং...
কথা শেষ করতে পারলো না বিপ্লব। হঠাৎ প্রকট শব্দে বোমা বিষ্ফোরণের শব্দ শুনলে ফেলো তারা...
(চলবে)
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
মন্তব্য: ২ টি