কম্পেরাটিভ স্টাডি
যেটা আগে খেয়াল করা হয়নি, দেখলাম, খৃষ্টানদের চেয়ে ইহুদী আর মুসলিমদের মধ্যে মিল বেশী!
অথচ এ দু'টাই একটা আরেকটা সবচে বেশী ঘৃণা করে!
অনেকদিন ধরে মনে একটা প্রশ্ন ছিলো- যেহেতু সাধারন নিয়ম অনুযায়ী শুধুমাত্র ইহুদী মায়ের পেটে জন্ম নিলেই একমাত্র ইহুদী হওয়া যায় (Judaism যে ভয়ংকর রকমের Patriarchal/ পুরুষতান্ত্রিক, তাদের এই নিয়মটা আমাকে অবাকই করেছে একটু, ইহুদী বাপের সন্তান ইহুদী হওয়ার কথা, কিন্তু এখানে উলটা!) তাই পৃথিবীতে ইহুদীদের সংখ্যা খুবই কম।
পুরা পৃথিবীর জনসংখ্যার মাত্র 0.7% নাকি 0.8% হচ্ছে ইহুদী। (অথচ যেখানে মুসলিমদের জনসংখ্যা ২৩%এর চেও বেশী!!!!)
এই সামান্য একটা পার্সেন্টেজের মানুষ এত ভয়ংকর রকম প্রভাবশালী কীভাবে হয়? (আমেরিকাকে ইসরাঈল যেভাবে নাকে দঁড়ি দিয়ে ঘুরায়, ইসরাঈল জোরে একটা ধমক দিলেও আমেরিকা প্যান্টে হিসু করে দেয়)- এর আসল কারণ কী হতে পারে তা অনেকদিন ধরেই ভেবে বের করতে চেষ্টা করছিলাম।
ওদের হিষ্ট্রী আর ধর্ম নিয়ে একটু ডীপে পড়তে গিয়ে টের পেলাম রহস্য।
আনবিলিভেবল মাত্রার ফ্যামিলি সেন্স ওদের মধ্যে। এই ফ্যামিলি শুধু আমার বাপ-মা-ভাই-বোন এই ফ্যামিলি না। ওদের কাছে পুরো পৃথিবীর জিউইশ কম্যুনিটি একটা ফ্যামিলি।
এবং তারা এটা একদম এক্সট্রিম লেভেলে বিশ্বাস করে এবং মেনটেইন করে।
সৌদি আরব কখনো খুলে দিবে তার দরজা পৃথিবীর অন্য মুসলিমদের জন্য? বলবে 'ভাই তোমাদেরকে যদি তোমাদের দেশে মারে/ধরে, এখানে চলে আসো। আমরা যা আছে তাই শেয়ার করে খাবো-পড়বো'-
বলবে?
বলবে এত এত পেট্রোডলারে ভেসে যাওয়া মুসলিম দেশগুলো অন্য কোনো মুসলিমদেরকে?
এই যে রোহিংগা মুসলিমদেরকে জীবন্ত পুড়ে-কেটে নৃশংসভাবে গনহত্যা চালাচ্ছে বার্মিজ উগ্রবাদীরা, কই, একটা মুসলিম দেশ বলেছে কী যে তোমরা আমাদের দেশে আসো?
উলটা যখন প্রানের ভয়ে শাড়ীটা পর্যন্ত গায়ে দিতে না পেরে শুধু ব্লাউজ আর পেটিকোট গায়ে রোহিংগা মহিলা বুকের শিশুটাকে দিয়ে নিজের লজ্জা ঢাকার মত করে কোলে নিয়ে নৌকায় উঠে এসে আরেক মুসলিম দেশ বাংলাদেশে ঢুকতে চেয়েছে, আমি হতবাক হয়ে গেছি শিক্ষিত শিক্ষিত হাইলি এডুকেটেড বাংলাদেশী মুসলিমদের রিএকশান দেখে। তাদের কমেন্ট অনেকটা এমন- এসব কীট পতংগকে আমাদের দেশে ঢুকতে দিলে আমাদের দেশটাও নোংরা হয়ে যাবে।
অথচ জানেন কী, আপনি যদি ইহুদী মায়ের পেটে জন্মে থাকেন, পৃথিবীর যে দেশেরই বাসিন্দা হন না কেনো, আপনি যে কোনো মুহুর্তে ইসরাইলে মাইগ্রেট করতে পারবেন।
ইসরাইল আপনাকে শুধু সিটিজেনশীপই দিবে না, আপনার থাকা-খাওয়ার খরচ কীভাবে যোগাবেন তারও ব্যবস্থা করে দিবে।
ইন রিটার্ন- আপনি যখন সামর্থবান হয়ে উঠবেন, আপনি অন্য জিউইশদেরকে হেল্প করবেন।
এটাকে ওরা বলে covenant. এটা তাদের আল্লাহর সাথে করা covenant এর মত।
[সংক্ষেপেঃ আল্লাহর সাথে মোসেস (মূসা আঃ) এর যে covenant হয়েছিলো- "আল্লাহ ইহুদীদেরকে পছন্দ করে নিয়েছেন, বিনিময়ে ইহুদীরা মোসেসকে দেয়া written Torah'র যে ৬১৩ টা mitzvot আছে সেগুলো মেনে চলবে"- এটাই আল্লাহর সাথে ইহুদীদের covenant, এক ধরনের চুক্তি]
ইসরাইলে (এবং আমেরিকায়) যে কোনো ইহুদীর পূনর্বাসনও এই covenant এর মতই- তোমাকে আমরা প্রতিষ্ঠিত করে দিবো বিনিময়ে তুমিও ভবিষ্যতে অন্য ইহুদীদের প্রতিষ্ঠিত হতে সাহায্য করবে।
না চাইলেও এসব জানতে জানতে আমার মাথার ভিতর মুসলিমদের ummah কনসেপ্ট টা ঘুরপাক খাচ্ছিলো।
ইহুদীদের family covenant আর আমাদের Muslim ummah দুইটার একটাকে আরেকটার সাথে তুলনা করতে গিয়েই অনেকদিনের ভাবতে থাকা প্রশ্নটার উত্তর পেলাম।
ইহুদীরা নিজেদের মধ্যে যে brotherhood ধরে রাখতে পেরেছে হাজার হাজার বছর ধরে, তা আমাদের মুসলিমদের মুখে মুখে বলা brother/sister এর মত শুধুই মুখে মুখে না। ওদের নিজেদের মধ্যকার সাপোর্ট সিস্টেমের মত এমন চরম মাত্রার সাপোর্ট সিস্টেম পৃথিবীর আর কোনো জাতি/দল/গ্রুপের মধ্যে আছে কিনা আমার সন্দেহ আছে।
যা বলতে চাচ্ছিলাম- ইসরাঈলে যত ইহুদী আছে তারচে' বেশী ইহুদী আছে আমমেরিকায়।
আমেরিকায় ইহুদীদের গণহারে assimilation এর শুরু সেই পনেরশ' শতাব্দীতে।
সে সময় ইহুদীদের একটা গ্রুপকে বলাই হতো 'Salon Jews'- এদের কাজ ছিলো আমেরিকা এবং উন্নত বিশ্বের এলিট খৃষ্টানদের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করা (সোজা কথায় হাত করা),
আরেকটা গ্রুপকে বলা হতো 'Court Jews' এরা হচ্ছে সমাজের নেতৃত্ব দিবে।
এবং যেহেতু প্রচুর সাধারন খৃষ্টানরা ইহুদীদেরকে দেখতে পারেনা, তাই তারা নিজেদের ইহুদী পরিচয় লুকিয়ে রাখতো।
এজন্যেই আমাদের মত সাধারন পাবলিকরা চরম অবাক হয়ে যাই যখন ইতিহাসের বড় বড় ফিগারদের ধর্ম পরিচয় খুঁজতে গিয়ে দেখি ভদ্রলোক ইহুদী ছিলেন!
সেদিন কাকে যেন বলছিলাম আলবার্ট আইন্সটাইন ইহুদী ছিলো- শুনে দেখি সে বিশ্বাসই করেনা!
কী আজব।
খোদ আমেরিকার বর্তমান Secretary of Treasury থেকে শুরু করে ওবামা সরকারের অনেক কি-ফিগার্স-ই ইহুদী।
নিজেদের মধ্যকার চরমমাত্রার কম্যুনিটি সেন্স আর সাপোর্ট সিস্টেম,
যেভাবেই হোক পৃথিবীর বিভিন্ন ফিল্ডে নেতৃস্থানীয় কী পজিশনগুলোতে ঢুকা,
এবং সামগ্রিকভাবে ইহুদীজাতিকে ফাইনানশিয়ালি সবচে সলভেন্ট হিসেবে ধরে রাখা-
এই তিনটা নিয়মকে ইহুদীরা তাদের রক্তের ভিতর ঢুকিয়ে নিয়েছে এবং নিষ্ঠার সাথে মেনে চলে।
এটা অবশ্য একদিনে grow করেনি।
ইহুদীরা খুব সম্ভব পৃথিবীর The most persecuted nation.
সেই যে ফেরাউনের সময় থেকে শুরু, Holocaust দিয়ে তার শেষ। প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছর ধরে তারা আক্ষরিক অর্থেই বিভিন্ন জাতির লাথি খেয়ে খেয়ে বনে-বাদারে মরুভূমিতে ঘুরে ঘুরে ফিরেছে।
মানুষ তাদের সাথে যে ব্যবহার করতো কুকুর-বিড়ালের সাথেও তারচে' ভাল ব্যবহার করতো।
অথচ আজকে তারাই পৃথিবীর রাজা।
ওদেরকে নিয়ে পড়ালেখা করতে গিয়ে মুসলিমদেরকে নিয়ে আমার হতাশা একটু কমেছে।
হিসাব অনুযায়ী ইহুদীদের মত ভাল পজিশনে যেতে আমাদের এখনো আরো কমপক্ষে দেড় হাজার বছর লাথি-গুতা খেঁতে হবে!!!!
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
১৭ জানুয়ারি ’১৬ সন্ধ্যা ০৭:১৭
not quantity,quality দ্বারা ইহুদীরা রাজত্ব করছে।আর ভ্রাতৃত্ববোধের বিষয়টা সত্যিকারার্থে তাদের মধ্যেই আছে
১৭ জানুয়ারি ’১৬ সন্ধ্যা ০৭:৪৫
সাম্রাজ্যবাদী ইহুদীবাদের হাত থেকে ফিলিস্তীনিদের মুক্ত করা সময়ের একান্ত দাবী
১৮ জানুয়ারি ’১৬ বিকাল ০৩:৪২
মানসিকতার ভালো খারাপ দুই দিকই আছে। যারা যেদিক প্র্যাকটিস করে। শুধু নিজেদের মাঝেই না ইহুদি জাতির ভদ্রতা, উদারতাও দেখা উচিৎ। সারা বিশ্বে তারা নেতৃত্ব দিচ্ছে। এটা কোন মতেই শুধু চতুরতার কারনে নয়। বরং মানুষ তাদের কাছে বিশ্বস্ততা খুজে পায়। অন্যদিকে অন্যান্য জাতির মাঝে এতটা মিল নেই। বিশেষত মুসলিমদের কথা যেহেতু এনেছেন, সেক্ষেত্রে বলতেই হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসীরা মুসলিম ধর্মের। তাই বিশ্বের মানুষও তাদেরকে বিশ্বাস করতে পারেনা।
১৮ জানুয়ারি ’১৬ বিকাল ০৪:৪৮
মানসিক অসুস্থতাই সাম্প্রদায়িকতা। শুধু একটা শ্রেণীকে নিয়ে যাদের মানবতা ও মনুষ্য কাজ করে তারা বিশ্বকে শান্তি এনে দিতে পারেনা। এরাই বিশ্বের স্থিতি নষ্ট করে। ব্লগারের সাম্প্রদায়িক মনোভাব দেখে বিস্মিত হইনি।