শিক্ষাখাতে বৈষম্য
একজন মণীষি বলেছেন“
দেশের ১০টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। ৫ বছরের মধ্যে এবারই ফলের সব সূচকে অবনতি ঘটেছে। কমেছে পাসের হার, জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী ও শতভাগ পাস করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। অন্যদিকে বেড়েছে শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানও। এবারের এইচএসসি পরীক্ষার ফলে এসব অবশ্যই আলোচিত ও উৎকণ্ঠার বিষয়। তবে একইসঙ্গে যে বিষয় অনেকটা সমালোচিত থেকে যাচ্ছে তা হলো ফলে গ্রামীণ ও শহুরে বৈষম্য বেড়েই চলছে। ৫ বছর ধরে পরীক্ষায় গ্রামীণ ছাত্রছাত্রীদের কৃতিত্ব স্পষ্টভাবে নিম্নগামী হয়েছে। ২০১৫ সালের প্রকাশিত ফলে দেখা যায়, এবার দেশের ১ হাজার ২৩৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শতকরা ৫০ ভাগের কম ছাত্রছাত্রী উত্তীর্ণ হতে পেরেছে, আর এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশিরভাগই গ্রামে অবস্থিত। ২০১১ সালে এ ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল ৫৮৪টি। অবশ্য তখনও এ ধরনের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল গ্রামের। অন্যদিকে এবার যে ৩৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কেউ উত্তীর্ণ হতে পারেনি, সেগুলোর বেশিরভাগই গ্রামে অবস্থিত।
এইচএসসির ফলের ভিত্তিতে সহজেই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়, উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সুবিধাগুলো গ্রামে এখনও অপ্রতুল। গ্রামের ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষায় ক্রমাবনতির পেছনে রয়েছে যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষকের অভাব, প্রতিষ্ঠানে অপর্যাপ্ত লাইব্রেরি ও গবেষণাগার সুবিধা। অন্যদিকে গ্রামের শিক্ষার্থীরা শহুরে ছাত্রছাত্রীদের মতো কোচিং, প্রাইভেট শিক্ষা ও সঠিক নির্দেশনা প্রত্যাশাই করতে পারে না। বিশেষ করে সৃজনশীল প্রশ্ন সমাধানে তাদের অস্পষ্টতার মধ্যেই থাকতে হয়। সুবিধাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে এ ধরনের বঞ্চনা প্রকারান্তরে গ্রামীণ শিক্ষার্থীদের প্রতি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতারই প্রতিফলন।
গ্রামীণ ও শহুরে ফলের ব্যবধানের মধ্যে মূলত সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসাম্যেরই প্রতিফলন ঘটেছে। রাজধানী ও বড় শহরের কলেজগুলোয় যেখানে প্রয়োজনের অতিরিক্ত শিক্ষক রয়েছে, সেখানে গ্রামে প্রয়োজনীয় শিক্ষক সঙ্কট নৈমিত্তিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। অধিকন্তু শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি, অযাচিত রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ আর নিম্নমানের পাঠদান গ্রামীণ শিক্ষা ব্যবস্থাকে করেছে বিপর্যস্ত। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে গ্রামীণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি বিশেষভাবে যত্নবান হওয়া আবশ্যক। সেখানে অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি উপযুক্ত শিক্ষক ও সুবিধা নিশ্চিত করা জরুরি।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও,আমি তোমাদের শিক্ষিত জাতি উপহার দেব”। গ্রামের শিক্ষিত মায়ের পরিসংখ্যানের দিকে তাকালেই গ্রাম ও শহরের শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্যের চিত্র কি ভেসে ওঠেনা! সত্যিকারার্থেই শিক্ষিত মা ছাড়া শিক্ষিত জাতি গঠন সম্ভব নয়। শতকরা ৫ জন উচ্চ শিক্ষিত মা গ্রামে নেই অথচ শহরে শিক্ষিত মায়ের সংখ্যা গ্রামের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। সম্ভবত কারনেই গ্রামের ছেলেপেলেরা শিক্ষার ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে। শুধু কয়েকটি গ্রামই নয় একটি জেলায়ও মানসম্মত স্কুল,কলেজ বা মাদ্রাসার যথেষ্ট অভাব আছে। ভাল কলেজের অভাবে এক জেলার ছেলে-মেয়েরা অন্য জেলায় গিয়ে পড়াশোনা করছে। অথচ বড় বড় শহরের আনাচে কানাছে এ ধরনের উন্নত স্কুল কলেজে একেবারে টইটুম্বুর।বাসাবাড়ির সামনে পিছনে-ডানে=বামে তাকালেই চোখে পড়ে নটরডেম,ভিকারুন্নেছা,রাজউক কলেজ বা রেসিডেন্সিয়াল স্কুল কলেজের মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।গ্রামতো দূরের কথা জেলা শহরে এ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কথা কি চিন্তা করা যায়! বাংলাদেশে হাতে গোনা ভাল মানের মাদ্রাসা গুলোর সবগুলোই ঢাকা বিভাগে অবস্থিত। তা‘মিরুল মিল্লাত,জা‘মেয়া কাসেমিয়া ও ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা সবগুলোই ঢাকা বিভাগে অবস্থিত। আর জেনারেল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক থেকে দশ বা বিশের মধ্যে যদি হিসাব করা হয় তাহলে সবগুলোই ঢাকাতে অবস্থিত। এসব প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করতে যে পরিমাণ অর্থ লাগে সেটার যোগান দেয়া গ্রামের খেটে খাওয়া শ্রমিকের পক্ষে সম্ভব নয়।শহরের আলালের ঘরের দুলালদের পক্ষেই কেবল সম্ভব এসব যায়গায় পড়াশোনা করা। এক ঢাকার নটর ডেম কলেজ বা ভিকারুন্নেসা নূন কলেজে যে পরিমান ছাত্র এ প্লাস পায় একটি বিভাগেও সে পরিমান এ প্লাস পায়না,২০১৫ সালের এইসএসসির ফলাফল সেটাই বলে।আগে স্কুল কলেজে ৪টি মডেল টেস্ট গ্রহন করা হত,এখন মাত্র দুটি টেস্ট গ্রহন করা হয়। কিন্তু শহরের স্কুল কলেজ গুলোতে এখনো ৪টি মডেল টেস্ট গ্রহন করা হয় যাতে ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনার মধ্যে থাকে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো গ্রামের স্কুল কলেজ গুলোতে দুটো টেস্ট নিয়েই ক্ষান্ত,ফলে ছাত্ররা পড়াশোনায় ভাল করতে পারছেনা শহরের তুলনায়। ভালো মানের দুরের কথা খারাপ মানের লাইব্রেরী বা গবেষণাগার গ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই যেখানে শহরের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই কম বেশি আছে।
দেশের ১০টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। ৫ বছরের মধ্যে এবারই ফলের সব সূচকে অবনতি ঘটেছে। কমেছে পাসের হার, জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী ও শতভাগ পাস করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। অন্যদিকে বেড়েছে শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানও। এবারের এইচএসসি পরীক্ষার ফলে এসব অবশ্যই আলোচিত ও উৎকণ্ঠার বিষয়। তবে একইসঙ্গে যে বিষয় অনেকটা সমালোচিত থেকে যাচ্ছে তা হলো ফলে গ্রামীণ ও শহুরে বৈষম্য বেড়েই চলছে। ৫ বছর ধরে পরীক্ষায় গ্রামীণ ছাত্রছাত্রীদের কৃতিত্ব স্পষ্টভাবে নিম্নগামী হয়েছে। ২০১৫ সালের প্রকাশিত ফলে দেখা যায়, এবার দেশের ১ হাজার ২৩৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শতকরা ৫০ ভাগের কম ছাত্রছাত্রী উত্তীর্ণ হতে পেরেছে, আর এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশিরভাগই গ্রামে অবস্থিত। ২০১১ সালে এ ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল ৫৮৪টি। অবশ্য তখনও এ ধরনের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল গ্রামের। অন্যদিকে এবার যে ৩৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কেউ উত্তীর্ণ হতে পারেনি, সেগুলোর বেশিরভাগই গ্রামে অবস্থিত।
এইচএসসির ফলের ভিত্তিতে সহজেই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়, উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সুবিধাগুলো গ্রামে এখনও অপ্রতুল। গ্রামের ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষায় ক্রমাবনতির পেছনে রয়েছে যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষকের অভাব, প্রতিষ্ঠানে অপর্যাপ্ত লাইব্রেরি ও গবেষণাগার সুবিধা। অন্যদিকে গ্রামের শিক্ষার্থীরা শহুরে ছাত্রছাত্রীদের মতো কোচিং, প্রাইভেট শিক্ষা ও সঠিক নির্দেশনা প্রত্যাশাই করতে পারে না। বিশেষ করে সৃজনশীল প্রশ্ন সমাধানে তাদের অস্পষ্টতার মধ্যেই থাকতে হয়। সুবিধাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে এ ধরনের বঞ্চনা প্রকারান্তরে গ্রামীণ শিক্ষার্থীদের প্রতি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতারই প্রতিফলন।
গ্রামীণ ও শহুরে ফলের ব্যবধানের মধ্যে মূলত সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসাম্যেরই প্রতিফলন ঘটেছে। রাজধানী ও বড় শহরের কলেজগুলোয় যেখানে প্রয়োজনের অতিরিক্ত শিক্ষক রয়েছে, সেখানে গ্রামে প্রয়োজনীয় শিক্ষক সঙ্কট নৈমিত্তিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। অধিকন্তু শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি, অযাচিত রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ আর নিম্নমানের পাঠদান গ্রামীণ শিক্ষা ব্যবস্থাকে করেছে বিপর্যস্ত। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে গ্রামীণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি বিশেষভাবে যত্নবান হওয়া আবশ্যক। সেখানে অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি উপযুক্ত শিক্ষক ও সুবিধা নিশ্চিত করা জরুরি।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
মন্তব্য: ২ টি