সাংস্কৃতিক বন্ধ্যাত্ব, বাংলাদেশের জন্য অশনী শংকেত!
এর মত অস্বস্তিকর বিষয় আর হয়না,কোন কিছুই ভালো লাগেনা। মনে হয় আমি প্রতিবন্ধি হয়ে গেলাম নাকি?এমনও হয়েছে যে,এমতাবস্থা থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনায় দাড়িয়ে গেছি”। এই পিরিয়ডটা শুধু একজন লেখকের জন্য খারাপ বিষয়টি সেরকম নয় বরং সমগ্র জাতির জন্য একটা অশনী শংকেত। কারন, লেখকেরা যদি না লিখতে পারেন, তাহলে দ্রুত সময়ের মধ্যে জাতি জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়বে সন্দেহ নেই। যে চিন্তা থেকেই পাকিস্থানীরা ১৯৭১ সালের ২৫ই মার্চরাতে বুদ্ধিজীবি নিধনে তাদের সমস্ত শক্তি নিয়োজিত করেছিল।
যার সন্তান নেই সেই শুধু জানে বন্ধ্যাত্বের কি জ্বালা। বন্ধ্যাত্ব ঘুচানোর জন্য পৃথিবীর সব কিছু করতে রাজি থাকে একজন মা। প্রয়োজনে পালক সন্তান নিয়ে নকল মা সাজতেও পিছপা হননা অনেক মা। পৃথিবীতে কি এরকম মা খুজে পাওয়া যাবে যে, অর্থের লোভে বন্ধ্যা হয়ে জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন অথচ তার মা হওয়ার সামর্থ ছিল। পাওয়া যাবেনা কিন্তু এমন অনেক লেখক পাওয়া যাবে যারা সামান্য অর্থের লোভে অথবা দলকে সন্তুষ্ট করতে গিয়ে নিজের স্বভাবজাত লেখা থেকে নিজেকে বিরত রেখেছেন। এমন অনেক কবিকে পাওয়া যাবে গণমানুষের জন্য কবিতা লেখা থেকে নিজেকে বিরত রেখেছেন। অনেক নাট্যকার পাওয়া যাবে যারা সমসাময়িক ঘটনা প্রবাহ নিয়ে নাটক লিখা ও নির্দেশনা দেয়া থেকে বিরত রখেছেন নিজেদের। কারন একটাই,দলের বিরুদ্ধে চলে যাবে! আর যদি দলের বিরুদ্ধে যায় তাহলে বাংলা একাডেমির মহা পরিচালক হওয়া হবেনা,শিল্পকলা একাডেমীর মহা পরিচালক হওয়া হবে না। বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক হওয়া হবেনা। বাংলাদেশ ফিল্ম ইন্ড্রাস্ট্রির পরিচালক হওয়া হবেনা। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি হওয়া হবেনা। বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সভাপতি হওয়া হবে না- আরো কতশত সুবিধাবাদী চিন্তার কারনে তারা নিজের উপর বন্ধ্যাত্ব চাপিয়ে দিয়ে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্দলীয় ব্যানারের অন্তরালে দলীয় মুখোশ পড়ে থাকে। ও হ্যাঁ, আরো কিছু কারনে তারা বন্ধ্যাত্ব বরণ করে থাকে। সামনে জাতীয় চলচিত্র পরস্কারটা দরকার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও একুশে পদক না পেলে কেমন দেখায়! স্বাধীনতা পুরস্কারটাতো আগে ঘরে তুলি- পরে লেখনী নিয়ে চিন্তা করা যাবে! শিল্প সাহিত্য ছেড়ে বিশাল একটা লেখক সমাজ,শিল্পী সমাজ, কবি সমাজ ও নাট্যকরগণ রাজনৈতিক চৌর্যবৃত্তিতে লিপ্ত। জাতি ক্রমাগত ভাবে জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ছে। পাশাপাশি রাজনৈতিক লেজুরবৃত্তিতে লিপ্ত এ সকল মানুষের প্রতি জনসাধারণের ভালোবাসাতো নেই বরং আস্থাটাও উঠে যাচ্ছে দিনদিন। ফলে ছবির হাট উঠিয়ে দিলেও এ সকল ধ্বজাধরী সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্বরা কথা বলে না। দীর্ঘদিনের জনসাধারণের আড্ডার যায়গা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সন্ধার সাথে সাথে বন্ধ করে দিলেও তারা নীরব দর্শক বনে যায়! আবার সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে শিল্পকলার উদ্যান পুলিশ দ্বারা ফাকা করে দিলেও সাংস্কৃতিক জোট কোন কথা বলেনা। একের পর এক ব্লগার হত্যা করলেও তারা প্রতিবাদ করার জন্য একটি মানববন্ধনের আয়োজন করেনা। বরং তাদের রক্তের উপর দিয়ে গিয়ে বিভিন্ন পুরস্কার গ্রহনেও তাদের নুন্যতম লজ্জাবোধ লক্ষ্য করা যায়না। যেখানে পার্শবর্তী দেশ ভারতে একের পর এক জাতীয় পুরস্কার ফিরিয়ে দিচ্ছে সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিরা। পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়ে তারা গণতান্ত্রিকভাবে নিজেদের প্রতিবাদ করছে। ভারতের জনসাধারন ও তাদের পাশে গিয়ে দাড়াচ্ছে। সারা ভারত ব্যাপি সাংস্কৃতিক কর্মীরা আজ মানবতাকে রক্ষার জন্য ঢাল হিসাবে দাড়িয়ে গেছে। আমাদের দেশের সংস্কৃতি কর্মীদের অবস্থান সম্পৃর্ন বিপরীত মুখি। তারা আজ প্রতিবাদ করতে ভুলে গেছে। তারা আজ প্রতিবাদী গান লিখতে ভুলে গেছে। ভুলে গেছে গণমানুষের জন্য প্রতবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের কথা! কিভাবে করবে বলেন,সরকারী অনুদানে চলচিত্র তৈরি করে আবার সেই চলচিত্রের জন্য জাতীয় পুরস্কার পেলে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলা যায়! নীতি নৈতিকতাকে এরা সাময়ীক সময়ের জন্য পকেটন্দি করে রেখেছেন। আপনাদের নিরবতা বাংলাদেশকে শিল্প সাহিত্যের দিক থেকে পিছিয়ে দিচ্ছে পাশাপাশি মৌলবাদকে উসকে দিচ্ছে।শিল্প সাহিত্য চর্চা কমে গেলে মৌলবাদের চর্চা বাড়ে প্রমানিত সত্য কথা।ক্রমাগত ব্লগার হত্যা যার উৎকৃষ্ট প্রমান।
আমাদের সংবিধানে লিখা আছে,“আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান”।কিন্তু সেই আইন যখন শুধু মাত্র একটি দলের সুবিধা প্রদানের জন্য ব্যবহৃত হয় তখন সেই আইন সমগ্র বাংলাদেশের জন্য অশনী সংকেত হয়ে দাড়ায়।ঠিক তেমনী সংস্কৃতি হলো সবার জন্য উন্মুক্ত।কবিতা হবে সার্বজনীন,সাহিত্য হবে সকল মানুষের,নাটক হবে নিরযাতিত নিপীরিত অধিকার বঞ্চিত মানুষের জন্য।অন্যথায় হিতে বিপরীত হবে। আজ আপনারা সুখে আছেন আগামীতে রাজনৈতিক শক্তির পাশাপাশি আপনারাও বিপদে পড়তে পারেন! আপনারা বিপদে থাকলে সমগ্র জাতি কষ্টে থাকে অস্বীকার করছিনা, আপনাদের নিরবতাও কখনো কখনো দেশের মানুষকে হতাশ করে এটাও মাথায় রাখত হবে। আমি বলছিনা যে,শিল্প সংস্কৃতি রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার বাইরে থাক,এটা দরকার আছে সংস্কৃতির বিকাশের জন্য।কিন্তু একটা কথা মনে রাখতে হবে,এটা করতে গিয়ে সংস্কৃতি যেন রাজনীতির মাঝে বিলীন হয়ে না যায়!যা একটি দেশের জন্য অশনী শংকেত।সংস্কৃতির জয় হোক।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
২১ ডিসেম্বর ’১৫ সন্ধ্যা ০৬:৩৯
সাধক:
শুধু সাংস্কৃতিক বন্ধ্যাত্ব নয়, লেখকের বন্ধ্যাত্ব নয়; একটি জাতির সামগ্রিক স্বকীয়তা হারিয়ে যাচ্ছে। সব জায়গায় লেজুড়বৃত্তিপনা, দলবাজী আর তেলবাজী। জাতির আশা-আকাঙ্খার বড় জায়গা সুলেখক সমাজ। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়- সুলেখকেরা সময়ের প্রয়োজন মিটিয়েছেন। কিন্তু এখন কেন জানি সবখানে একটা শূন্যতা। তবে পেইড লেখকদের ভিড়ে আশার দিক হচ্ছে- সোস্যাল মিডিয়ার কল্যাণে তরুণ প্রজন্ম লিখছে। সত্যকে তুলে আনছে-খুবই গভীর থেকে। এই যেমন আপনি একটা দারুণ বিষয়ে দিকপাত করেছেন। এটাই আশার বড় জায়গা।
২১ ডিসেম্বর ’১৫ সন্ধ্যা ০৭:০৩
ঠিক নীতিকথার মত শোনালো। টাকা পেলে আপনি আমিও ঠিম তেমনই করবো। ক্যাপিটালিস্ট সোসাইটিতে টাকাই মূল তত্ত্বকথা। সব উপর টাকা সত্য-তাহার উপর কিছু নাই!
২২ ডিসেম্বর ’১৫ সন্ধ্যা ০৬:১৫
সমস্যা আছে। সমাধানও আছে। সবার আগে দরকার সমস্যার সমাধান চাওয়ায় ঐক্য করা। সেই ঐক্যের মাঝে যারা ভাঙ্গন ধরাতে চায় তাদের চিহ্নিত করে ভাইরাস দূর করতে হবে।