দায় নেয়ার চেয়ে খুন করাটা এরা সহজতর মনে করে!
শাহাজান খান ২০১১সালে এক সমাবেশে বলেছিলো "ড্রাইভাররা গরু ছাগল চিনতে পারলেই তাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে হবে"! গো-গোত্রীয় শাহাজান খানের মায়া মমতা অবশ্যই মানুষের চেয়ে স্বজাতির প্রতি বেশি, তাই তিনি ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য ড্রাইভারদের মানুষ চেনার চেয়ে গরু চেনার আবশ্যকতার উপর বেশি জোর দিয়েছিলো।
সাংবাদিকরা যখন বলছিলেন "৩টা ছেলেমেয়ে বাসচাপায় মারা গেছে!" উনি তখন হাসছিলো..!! বিশ্বাস করুন ওটা কোন মানুষের হাসি ছিলো না, ওটা ছিলো ওসুরের হাসি! গণপরিবহনের চালকদের হাতে ক'দিন পর পর নৃশংসভাবে মানুষ খুন হচ্ছে! কত মায়ের কোল খালি হচ্ছে! কত শোকার্ত স্বজনের আহাজারিতে পাষান হৃদয় পর্যন্ত প্রকম্পিত হচ্ছে! অথচ দেশের একজন দায়িত্বশীল মন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলনে কি নির্দয় হাসি দিয়ে শোকার্ত জাতির শোক বহুগুনে বাড়িয়ে তুলছে! গতকালের ঘটনায় নিহতের স্বজনদের বেদনার্ত চেহারা দেখেও আমার এতটা কষ্ট হয়নি, যতটা হয়েছে শাহাজান খানের হাস্যরসাত্মক সেই কুৎসিত মুখটি দেখে। স্বজনহারা পরিবারের সাথে এমন নির্মম রসিকতা আর কি হতে পারে!
"এই ঘটনার বিচার হবে কিনা" সাংবাদিকদের এরকম প্রশ্নের জবাবে বিরক্ত শাহাজান খান বললো- "ভারতে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৩জন মারা গেছে, এগুলা নিয়ে তো ওরা এত কথা বলছে না! আপনারা এই ৩জন মারা যাওয়া নিয়ে এত কথা বলছেন কেন ??" কি ভয়ংকর যুক্তি! এর আগেও এই কালপ্রিটটা গণপরিবহনের খুনি ড্রাইভারদের পক্ষ নিয়ে বলেছিলো- "দুর্ঘটনার জন্য চালকদের সাজা বাড়ানো হলে দুর্ঘটনা কমবে না। চালকদের পাশাপাশি পথচারীদেরও সতর্কতার সঙ্গে চলাচল করা উচিত"! একটা দেশের মন্ত্রী যদি এরকম বিকৃত মনসা হয়, সে দেশে এসব খুনের বিচার যে কখনোই হবে না সেটা সন্দেহাতীতভাবে সত্য!
সড়ক দুর্ঘটনায় প্রয়াত চলচ্চিত্র পরিচালক তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন নিহতের ঘটনায় এক বাস চালকের যাবজ্জীবন সাজা দিয়ে রায় দিয়েছিলো আদালত। তার ঠিক কয়েকদিন পর সাভারে ট্রাকচাপা দিয়ে এক নারীকে হত্যার দায়ে আদালত আরেক ট্রাক চালকের ফাঁসির রায় দিয়েছিলো। এর প্রতিবাদে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন সে বার সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট ডাকে। শ্রমিক নেতা শাহজান সে সময়ও ড্রাইভারদের পক্ষ নিয়ে বলেছিলো- "ওরা ধর্মঘট ডাকে নাই, এখানে তো শ্রমিকরা স্বেচ্ছায় অবসরে গেছেন।" তাহলে বুঝুন একেকটা ড্রাইভারকে ড্রাইভিং লাইসেন্সের সাথে মানুষ হত্যার বৈধতা দেয় কে!!
আচরনগত দিক থেকে শাহাজান খান আর পাবলিক বাসের হেল্পারের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। গত কয়েকদিন আগে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পায়েলকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিলো এই পরিবহন শ্রমিকেরা। সামান্য দায় এড়ানোর জন্য ওরা একটা তরতাজা প্রাণ হত্যা করেছিলো। অথচ তারা মানবিকতা নয়, শুধু নিজেদের কর্তব্যটুকু করলেও বেঁচে যেতো পারতো পায়েল। কিন্তু তারা দায় নেয়ার চেয়ে খুন করাটা সহজতর মনে করেছিলো। কারণ তারা জানে ধরা পড়লে তাদের বাঁচানোর জন্য শাহাজন খান আছে!
পরিবহন শ্রমিকদের ক্ষেত্রে আমার একটা ব্যক্তিগত অবজার্ভেশন আছে। জানি সবাই এক রকম নয়, তাই কথাটি বলার আগে যারা এই 'এক রকমে'র বাইরে তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। নিচু তলায় জন্মানো কারো অপরাধ নয়, নিচুতলার মানুষদের ছোট করার মানসে আমি কথাটি বলছি না, আমি শুধু বাস্তবতাটা তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
আজকে যারা লোকাল বাস, ডিস্ট্রিক্ট বাস, ট্রাক বা অন্যন্য গণপরিবহনের ড্রাইভার তাদের বেশির ভাগেরই প্রথমটা শুরু হয়েছে ছোট ছোট পাবলিক পরিবহনগুলোর এসিস্ট্যন্ট হিসেবে। আর আমরা একথা জানি যে এই এসিস্ট্যান্ট সম্প্রদায়ের বেশির ভাগেরই ফুটপাতে ভুমিষ্ট হওয়া। এরা জীবনে শিক্ষা, সংস্কার, সভ্যতা, মানবিকতার দীক্ষা কখনোই পাইনি। আর তাই গণপরিবহনের ভাড়া কাটতে কাটতে একদা ড্রাইভার বনে যাওয়া এই মানুষগুলোর এমন নির্দয় চেহারা আমাদের প্রায়শই দেখতে হয়। সামনের স্টপেজে অপেক্ষারত যাত্রী নেয়ার প্রতিযোগিতায় অন্য গাড়ির আগে যাওয়ার জন্য এরা প্রয়োজন একদল মানুষের গায়ের উপর গাড়ি তুলে দিতে পারে, সামান্য দায় এড়ানোর জন্য এরা আহত পায়েলদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার বদলে পাথর দিয়ে মেরে, মুখ থেতলে নদীতে ফেলে দেয়াটাকে সহজ মনে করে। পরিবারের শিক্ষাও এদের নেই, তাই একটা পরিবারের একমাত্র আশা-আখাঙ্খা এক মুহুর্তে নিথর হয়ে যাওয়ার ব্যাথা এদের কখনোই স্পর্শ করতে পার না।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
সাংবাদিকরা যখন বলছিলেন "৩টা ছেলেমেয়ে বাসচাপায় মারা গেছে!" উনি তখন হাসছিলো..!! বিশ্বাস করুন ওটা কোন মানুষের হাসি ছিলো না, ওটা ছিলো ওসুরের হাসি! গণপরিবহনের চালকদের হাতে ক'দিন পর পর নৃশংসভাবে মানুষ খুন হচ্ছে! কত মায়ের কোল খালি হচ্ছে! কত শোকার্ত স্বজনের আহাজারিতে পাষান হৃদয় পর্যন্ত প্রকম্পিত হচ্ছে! অথচ দেশের একজন দায়িত্বশীল মন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলনে কি নির্দয় হাসি দিয়ে শোকার্ত জাতির শোক বহুগুনে বাড়িয়ে তুলছে! গতকালের ঘটনায় নিহতের স্বজনদের বেদনার্ত চেহারা দেখেও আমার এতটা কষ্ট হয়নি, যতটা হয়েছে শাহাজান খানের হাস্যরসাত্মক সেই কুৎসিত মুখটি দেখে। স্বজনহারা পরিবারের সাথে এমন নির্মম রসিকতা আর কি হতে পারে!
"এই ঘটনার বিচার হবে কিনা" সাংবাদিকদের এরকম প্রশ্নের জবাবে বিরক্ত শাহাজান খান বললো- "ভারতে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৩জন মারা গেছে, এগুলা নিয়ে তো ওরা এত কথা বলছে না! আপনারা এই ৩জন মারা যাওয়া নিয়ে এত কথা বলছেন কেন ??" কি ভয়ংকর যুক্তি! এর আগেও এই কালপ্রিটটা গণপরিবহনের খুনি ড্রাইভারদের পক্ষ নিয়ে বলেছিলো- "দুর্ঘটনার জন্য চালকদের সাজা বাড়ানো হলে দুর্ঘটনা কমবে না। চালকদের পাশাপাশি পথচারীদেরও সতর্কতার সঙ্গে চলাচল করা উচিত"! একটা দেশের মন্ত্রী যদি এরকম বিকৃত মনসা হয়, সে দেশে এসব খুনের বিচার যে কখনোই হবে না সেটা সন্দেহাতীতভাবে সত্য!
সড়ক দুর্ঘটনায় প্রয়াত চলচ্চিত্র পরিচালক তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন নিহতের ঘটনায় এক বাস চালকের যাবজ্জীবন সাজা দিয়ে রায় দিয়েছিলো আদালত। তার ঠিক কয়েকদিন পর সাভারে ট্রাকচাপা দিয়ে এক নারীকে হত্যার দায়ে আদালত আরেক ট্রাক চালকের ফাঁসির রায় দিয়েছিলো। এর প্রতিবাদে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন সে বার সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট ডাকে। শ্রমিক নেতা শাহজান সে সময়ও ড্রাইভারদের পক্ষ নিয়ে বলেছিলো- "ওরা ধর্মঘট ডাকে নাই, এখানে তো শ্রমিকরা স্বেচ্ছায় অবসরে গেছেন।" তাহলে বুঝুন একেকটা ড্রাইভারকে ড্রাইভিং লাইসেন্সের সাথে মানুষ হত্যার বৈধতা দেয় কে!!
আচরনগত দিক থেকে শাহাজান খান আর পাবলিক বাসের হেল্পারের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। গত কয়েকদিন আগে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পায়েলকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিলো এই পরিবহন শ্রমিকেরা। সামান্য দায় এড়ানোর জন্য ওরা একটা তরতাজা প্রাণ হত্যা করেছিলো। অথচ তারা মানবিকতা নয়, শুধু নিজেদের কর্তব্যটুকু করলেও বেঁচে যেতো পারতো পায়েল। কিন্তু তারা দায় নেয়ার চেয়ে খুন করাটা সহজতর মনে করেছিলো। কারণ তারা জানে ধরা পড়লে তাদের বাঁচানোর জন্য শাহাজন খান আছে!
পরিবহন শ্রমিকদের ক্ষেত্রে আমার একটা ব্যক্তিগত অবজার্ভেশন আছে। জানি সবাই এক রকম নয়, তাই কথাটি বলার আগে যারা এই 'এক রকমে'র বাইরে তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। নিচু তলায় জন্মানো কারো অপরাধ নয়, নিচুতলার মানুষদের ছোট করার মানসে আমি কথাটি বলছি না, আমি শুধু বাস্তবতাটা তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
আজকে যারা লোকাল বাস, ডিস্ট্রিক্ট বাস, ট্রাক বা অন্যন্য গণপরিবহনের ড্রাইভার তাদের বেশির ভাগেরই প্রথমটা শুরু হয়েছে ছোট ছোট পাবলিক পরিবহনগুলোর এসিস্ট্যন্ট হিসেবে। আর আমরা একথা জানি যে এই এসিস্ট্যান্ট সম্প্রদায়ের বেশির ভাগেরই ফুটপাতে ভুমিষ্ট হওয়া। এরা জীবনে শিক্ষা, সংস্কার, সভ্যতা, মানবিকতার দীক্ষা কখনোই পাইনি। আর তাই গণপরিবহনের ভাড়া কাটতে কাটতে একদা ড্রাইভার বনে যাওয়া এই মানুষগুলোর এমন নির্দয় চেহারা আমাদের প্রায়শই দেখতে হয়। সামনের স্টপেজে অপেক্ষারত যাত্রী নেয়ার প্রতিযোগিতায় অন্য গাড়ির আগে যাওয়ার জন্য এরা প্রয়োজন একদল মানুষের গায়ের উপর গাড়ি তুলে দিতে পারে, সামান্য দায় এড়ানোর জন্য এরা আহত পায়েলদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার বদলে পাথর দিয়ে মেরে, মুখ থেতলে নদীতে ফেলে দেয়াটাকে সহজ মনে করে। পরিবারের শিক্ষাও এদের নেই, তাই একটা পরিবারের একমাত্র আশা-আখাঙ্খা এক মুহুর্তে নিথর হয়ে যাওয়ার ব্যাথা এদের কখনোই স্পর্শ করতে পার না।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
কোন মন্তব্য নাই.