৮৩তম শুভজন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রিয় কবি:আল মাহমুদ
আল মাহমুদ(জন্ম :১১ জুলাই ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দ) আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। তাঁর প্রকৃত নাম মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মোড়াইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একাধারে একজন কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্প লেখক, শিশুসাহিত্যিক এবং সাংবাদিক।বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়াংশে সক্রিয় থেকে তিনি আধুনিক বাংলা কবিতাকে নতুন আঙ্গিকে, চেতনায় ও বাক্ভঙ্গীতে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ করেছেন। তিনি ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি সরকার বিরোধী দৈনিক গণকণ্ঠ পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন।
তিনি মিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানার সাধনা হাই স্কুল এবং পরে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড হাই স্কুলের পড়াশোনা করেন। মূলত এই সময় থেকেই তার লেখালেখির শুরু। । আল মাহমুদ বেড়ে উঠেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়।
তিনি একজন আত্মপ্রত্যয়ী কবি। তার কবিতার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো পর্যালোচনা করলে উপলব্ধি করা যায়।
১. আমার চেতনা যেন শাদা এক সত্যিকারের পাখি/ বসে আছি সবুজ অরণ্যে এক চন্দনের পাখি। (লোক-লোকান্তর)
২. ও পাড়ার সুন্দরী রোজে না/ সারা অঙ্গে ঢেউ তার, তবু মেয়ে/ কবিতা বোঝে না! ( অবুঝের সমীকরণ)
৩. আমার সমস্ত গন্তব্যে একটি একটি তালা ঝুলছে। (আমার সমস্ত গন্তব্যে)
৪. দ্যাখো, জয়নুলের ছবির মত ঘরবাড়ি, নারী/ উঠোনে ঝাড়ছে ধান, ধানের ধুলোয় ম্লান শাড়ি। (প্রত্যাবর্তন)
৫. কবিতা তো মক্তবের মেয়ে চুল খোলা আয়েশা আক্তার। (কবিতা এমন)
৬. নোংরা পালক ফেলে পৌর ভাগাড়ে ওড়ে নগর শকুন। (খড়ের গম্ভুজ)
৭. আমাদের ধর্ম হোক ফসলের সুষম বণ্টন। (সোনালি কাবিন-১০)
৮. আমাদের কলাকেন্দ্র, আমাদের সর্ব কারুকাজে/ অস্তিবাদী জিরাফেরা বাড়িয়েছে ব্যক্তিগত গলা। (সোনালি কাবিন-১১)
৯. হৃদয়ের ধর্ম নিয়ে কোনো কবি করে না কসুর। (সোনালি কাবিন -১৪)
১০. আমার কবিতা শুধু অই চোখের কসম। (কালো চোখের কাসিদা)
তার উল্লেখযোগ্য রচনাবলিঃলোক লোকান্তর ;কালের কলস;সোনালি কাবিন;মায়াবী পর্দা দুলে উঠো ;কাবিলের বোন (উপন্যাস);পানকৌড়ির রক্ত (গল্পগ্রন্থ)।এছাড়াও তিনি অসংখ্য গ্রন্থের রচনা করেন।
লোক লোকান্তর
আমার চেতনা যেন একটি শাদা সত্যিকার পাখি,
বসে আছে সবুজ অরণ্যে এক চন্দনের ডালে;
মাথার ওপরে নিচে বনচারী বাতাসের তালে
দোলে বন্য পানলতা, সুগন্ধ পরাগে মাখামাখি
হয়ে আছে ঠোঁট তার। আর দুটি চোখের কোটরে
কাটা সুপারির রঙ, পা সবুজ, নখ তীব্র লাল
যেন তার তন্ত্রে মন্ত্রে ভরে আছে চন্দনের ডাল
চোখ যে রাখতে নারি আত বন্য ঝোপের ওপরে।
তাকাতে পারি না আমি রূপে তার যেন এত ভয়
যখনি উজ্জ্বল হয় আমার এ চেতনার মণি,
মনে হয় কেটে যাবে, ছিঁড়ে যাবে সমস্ত বাঁধুনি
সংসার সমাজ ধর্ম তুচ্ছ হয়ে যাবে লোকালয়।
লোক থেকে লোকান্তরে আমি যেন স্তব্ধ হয়ে শুনি
আহত কবির গান। কবিতার আসন্ন বিজয়।
১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে মাত্র দুটি কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনি বাংলা একাডেমি পুরষ্কার লাভ করেন। তাঁর সবচেয়ে সাড়া জাগানো সাহিত্যকর্ম সোনালি কাবিন।
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারঃ একুশে পদক ,ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার, অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার, ফররুখ স্মৃতি পুরস্কার, জীবনানন্দ দাশ স্মৃতি পুরস্কার ইত্যাদি।
তার একমাত্র দাম্পত্যসঙ্গী সৈয়দা নাদিরা বেগম।কবি আল মাহমুদ
বাংলা সাহিত্যের অংকার,অনেক ভালোবাসা রইলো প্রিয় কবি ।
আল্লাহ আপনাকে দীর্ঘজীবী করুণ।
লেখকঃশাফিউল কায়েস
শিক্ষার্থী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ, ঢাকা।
মেইলঃ[email protected]
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
কোন মন্তব্য নাই.