মহাবীর আলেকজান্ডারের শেষ তিন ইচ্ছে
শিল্পীর তুলিতে মহাবীর আলেকজান্ডার
খ্রিষ্টপূর্ব ৩২৩ অব্দের মে মাস। মহাবীর আলেকজান্ডার তখন বাগদাদে। তার বয়স তখন ৩২। এরই মধ্যে তার ১৩ বছর কেটেছে মানুষের জানা পৃথিবীর অনেকটাই জয় করে। বিশ্ববাসীর কাছে তার পরিচয় দিগ্বিজয়ী আলেকজান্ডার নামে। সমভাবে তিনি সবার কাছে মহাবীর আলেকজান্ডার, ‘আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট’। চারদিকে রাজ্যের পর রাজ্য জয় করে তিনি গড়ে তোলেন এক বিশাল সাম্রাজ্য, যার বিস্তৃতি মেসিডোনিয়া থেকে গ্রিস ও পারস্য সাম্রাজ্য ছাড়িয়ে ভারতের প্রান্ত পর্যন্ত। তার স্বপ্ন ছিল, তার বিশাল এ সাম্রাজ্যের আরো বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃতি ঘটাবেন। কিন্তু তার সে স্বপ্ন বাস্তবে রূপ পায়নি।
আলেকজান্ডারের রাজ্য জয়ের এ অভিযানের শুরু হয় তখন, যখন তিনি পারস্য সাম্রাজ্য জয়ের আশায় অতিক্রম করেন হেলেসপন্ট তথা হেলেসপন্টাস প্রণালী। এর আরেক নাম দারদানেলিস প্রণালী। এ প্রণালীটি যুক্ত করেছে মরমরা সাগর ও এয়িজিন সাগরকে (অর্থাৎ গ্রিসের পূর্বাংশে ভূমধ্যসাগরের একটি বর্ধিতাংশকে)। বিজয়ী বীর আলেকজান্ডার তিনটি বড় ধরনের যুদ্ধ করে ৩৩০ খ্রিষ্টপূর্বে পারস্য-নেতা তৃতীয় ডরিয়াসকে হত্যা করেন।
আলেকজান্ডার পারস্যবাসীদের পরাজয় ঘটায় ৩৩১ খ্রিষ্টপূর্বে। এরপর তিনি অগ্রসর হন আরো পূর্ব দিকে। ভারতের উত্তর-পশ্চিম দিকে। যেই তার কর্তৃত্ব চ্যালেঞ্জ করেছে, তাকেই পরাভূত করেন। তিনি তার সাম্রাজ্য ভারত ও পরবর্তী ভূখণ্ড পর্যন্ত বিস্তৃত করতেন, যদি না সেনাবাহিনী তার এ পরিকল্পনার বাধ না সাধত। সেনাবাহিনী জোর করে তার পূর্বমুখী অভিযান বন্ধ করে দেয়।
কয়েক বছরের সামরিক অভিযান শেষ করে আলেকজান্ডার ফিরে আসেন বাগদাদে। এই সুযোগে তিনি বিশ্রাম নেন, তেমনি পরিকল্পনা করার সুযোগ পান তার পরবর্তী অভিযানের। ২৯ মে তিনি তার ঘনিষ্ঠ এক বন্ধুর আমন্ত্রণে এক ভোজসভায় যোগ দেন। দিনব্যাপী এ আয়োজনে আলেকজান্ডার প্রচুর মদ পান করেন। তার ভালো লাগছে না, এ কথা বলে ঘুমুতে চলে যান। তার গায়ে প্রচণ্ড জ্বর। দ্রুত তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে। তিনি এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েন যে, বিছানায় যেতেও পারছিলেন না। বিশ্ববিজয়ী এই বীর এর দশ দিন পর মারা যান।
আলেক্সান্ডারের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যায়নি। ইতিহাসবিদরা এ নিয়ে নানা বিতর্ক করেছেন শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে। কারো মতে, বিষের কারণে তার মৃত্যু। কারো মতে, ম্যালেরিয়ায় তিনি মারা গেছেন। কেউ বলেছেন, টাইফয়েডে। আবার নানাজন বলেছেন, অন্যান্য রোগের নাম। তবে সবাই এ ব্যাপারে একমত, আলেকজান্ডার মারা যান খ্রিষ্টপূর্ব ৩২১ অব্দের জুনের প্রথম দিকে। তখন তিনি প্রচণ্ড জ্বরে ভুগছিলেন। টানা দশ দিন চলে এ জ্বর। তার মৃত্যুর পর তার সাম্রাজ্য খণ্ড খণ্ড করে ভাগ-বাটোয়ারা করে নিলেন তার জেনারেলরা। শিগগিরই ভেঙে চুরমার হয়ে যায় তার গড়া বিশাল সাম্রাজ্য।
মৃত্যুশয্যায় আলেকজান্ডার তাঁর সেনাপতিদের ডেকে বলেছিলেন, ‘আমার মৃত্যুর পর আমার তিনটা ইচ্ছা তোমরা পূরণ করবে। এতে যেন কোনো ব্যত্যয় না ঘটে। আমার প্রথম অভিপ্রায় হচ্ছে, শুধু আমার চিকিৎসকেরা আমার কফিন বহন করবেন। আমার দ্বিতীয় অভিপ্রায়, আমার কফিন যে পথ দিয়ে গোরস্থানে নিয়ে যাওয়া হবে, সেই পথে আমার কোষাগারে সংরক্ষিত সোনা, রুপা ও অন্যান্য মূল্যবান পাথর ছড়িয়ে দিতে হবে। আমার শেষ অভিপ্রায়, আমার কফিন বহনের সময় আমার দুই হাত কফিনের বাইরে ঝুলিয়ে রাখতে হবে।’
তাঁর মৃত্যুশয্যায় উপস্থিত লোকজন মহাবীর আলেকজান্ডারের এই অদ্ভুত অভিপ্রায়ে বিস্মিত হন। কিন্তু এ ব্যাপারে তাঁকে কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস পাচ্ছিলেন না কেউ। তখন তাঁর একজন প্রিয় সেনাপতি তাঁর হাতটা তুলে ধরে চুম্বন করে বলেন, ‘হে মহামান্য, অবশ্যই আপনার সব অভিপ্রায় পূর্ণ করা হবে; কিন্তু আপনি কেন এই বিচিত্র অভিপ্রায় ব্যক্ত করলেন?’
দীর্ঘ একটা শ্বাস গ্রহণ করে আলেকজান্ডার বললেন, ‘আমি দুনিয়ার সামনে তিনটি শিক্ষা রেখে যেতে চাই। আমার চিকিৎসকদের কফিন বহন করতে বলেছি এ কারণে যে, যাতে লোকে অনুধাবন করতে পারে চিকিৎসকেরা আসলে কোনো মানুষকে সারিয়ে তুলতে পারেন না। তাঁরা ক্ষমতাহীন আর মৃত্যুর থাবা থেকে কাউকে রক্ষা করতে অক্ষম।
‘গোরস্থানের পথে সোনা-দানা ছড়িয়ে রাখতে বলেছি মানুষকে এটা বোঝাতে যে ওই সোনা-দানার একটা কণাও আমার সঙ্গে যাবে না। আমি এগুলো পাওয়ার জন্য সারাটা জীবন ব্যয় করেছি, কিন্তু নিজের সঙ্গে কিছুই নিয়ে যেতে পারছি না। মানুষ বুঝুক’ ধন-সম্পদের পেছনে ছোটা সময়ের অপচয় মাত্র।
কফিনের বাইরে আমার হাত ছড়িয়ে রাখতে বলেছি মানুষকে এটা জানাতে যে খালি হাতে আমি এই পৃথিবীতে এসেছিলাম, আবার খালি হাতেই পৃথিবী থেকে চলে যাচ্ছি।...
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
খ্রিষ্টপূর্ব ৩২৩ অব্দের মে মাস। মহাবীর আলেকজান্ডার তখন বাগদাদে। তার বয়স তখন ৩২। এরই মধ্যে তার ১৩ বছর কেটেছে মানুষের জানা পৃথিবীর অনেকটাই জয় করে। বিশ্ববাসীর কাছে তার পরিচয় দিগ্বিজয়ী আলেকজান্ডার নামে। সমভাবে তিনি সবার কাছে মহাবীর আলেকজান্ডার, ‘আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট’। চারদিকে রাজ্যের পর রাজ্য জয় করে তিনি গড়ে তোলেন এক বিশাল সাম্রাজ্য, যার বিস্তৃতি মেসিডোনিয়া থেকে গ্রিস ও পারস্য সাম্রাজ্য ছাড়িয়ে ভারতের প্রান্ত পর্যন্ত। তার স্বপ্ন ছিল, তার বিশাল এ সাম্রাজ্যের আরো বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃতি ঘটাবেন। কিন্তু তার সে স্বপ্ন বাস্তবে রূপ পায়নি।
আলেকজান্ডারের রাজ্য জয়ের এ অভিযানের শুরু হয় তখন, যখন তিনি পারস্য সাম্রাজ্য জয়ের আশায় অতিক্রম করেন হেলেসপন্ট তথা হেলেসপন্টাস প্রণালী। এর আরেক নাম দারদানেলিস প্রণালী। এ প্রণালীটি যুক্ত করেছে মরমরা সাগর ও এয়িজিন সাগরকে (অর্থাৎ গ্রিসের পূর্বাংশে ভূমধ্যসাগরের একটি বর্ধিতাংশকে)। বিজয়ী বীর আলেকজান্ডার তিনটি বড় ধরনের যুদ্ধ করে ৩৩০ খ্রিষ্টপূর্বে পারস্য-নেতা তৃতীয় ডরিয়াসকে হত্যা করেন।
আলেকজান্ডার পারস্যবাসীদের পরাজয় ঘটায় ৩৩১ খ্রিষ্টপূর্বে। এরপর তিনি অগ্রসর হন আরো পূর্ব দিকে। ভারতের উত্তর-পশ্চিম দিকে। যেই তার কর্তৃত্ব চ্যালেঞ্জ করেছে, তাকেই পরাভূত করেন। তিনি তার সাম্রাজ্য ভারত ও পরবর্তী ভূখণ্ড পর্যন্ত বিস্তৃত করতেন, যদি না সেনাবাহিনী তার এ পরিকল্পনার বাধ না সাধত। সেনাবাহিনী জোর করে তার পূর্বমুখী অভিযান বন্ধ করে দেয়।
কয়েক বছরের সামরিক অভিযান শেষ করে আলেকজান্ডার ফিরে আসেন বাগদাদে। এই সুযোগে তিনি বিশ্রাম নেন, তেমনি পরিকল্পনা করার সুযোগ পান তার পরবর্তী অভিযানের। ২৯ মে তিনি তার ঘনিষ্ঠ এক বন্ধুর আমন্ত্রণে এক ভোজসভায় যোগ দেন। দিনব্যাপী এ আয়োজনে আলেকজান্ডার প্রচুর মদ পান করেন। তার ভালো লাগছে না, এ কথা বলে ঘুমুতে চলে যান। তার গায়ে প্রচণ্ড জ্বর। দ্রুত তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে। তিনি এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েন যে, বিছানায় যেতেও পারছিলেন না। বিশ্ববিজয়ী এই বীর এর দশ দিন পর মারা যান।
আলেক্সান্ডারের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যায়নি। ইতিহাসবিদরা এ নিয়ে নানা বিতর্ক করেছেন শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে। কারো মতে, বিষের কারণে তার মৃত্যু। কারো মতে, ম্যালেরিয়ায় তিনি মারা গেছেন। কেউ বলেছেন, টাইফয়েডে। আবার নানাজন বলেছেন, অন্যান্য রোগের নাম। তবে সবাই এ ব্যাপারে একমত, আলেকজান্ডার মারা যান খ্রিষ্টপূর্ব ৩২১ অব্দের জুনের প্রথম দিকে। তখন তিনি প্রচণ্ড জ্বরে ভুগছিলেন। টানা দশ দিন চলে এ জ্বর। তার মৃত্যুর পর তার সাম্রাজ্য খণ্ড খণ্ড করে ভাগ-বাটোয়ারা করে নিলেন তার জেনারেলরা। শিগগিরই ভেঙে চুরমার হয়ে যায় তার গড়া বিশাল সাম্রাজ্য।
মৃত্যুশয্যায় আলেকজান্ডার তাঁর সেনাপতিদের ডেকে বলেছিলেন, ‘আমার মৃত্যুর পর আমার তিনটা ইচ্ছা তোমরা পূরণ করবে। এতে যেন কোনো ব্যত্যয় না ঘটে। আমার প্রথম অভিপ্রায় হচ্ছে, শুধু আমার চিকিৎসকেরা আমার কফিন বহন করবেন। আমার দ্বিতীয় অভিপ্রায়, আমার কফিন যে পথ দিয়ে গোরস্থানে নিয়ে যাওয়া হবে, সেই পথে আমার কোষাগারে সংরক্ষিত সোনা, রুপা ও অন্যান্য মূল্যবান পাথর ছড়িয়ে দিতে হবে। আমার শেষ অভিপ্রায়, আমার কফিন বহনের সময় আমার দুই হাত কফিনের বাইরে ঝুলিয়ে রাখতে হবে।’
তাঁর মৃত্যুশয্যায় উপস্থিত লোকজন মহাবীর আলেকজান্ডারের এই অদ্ভুত অভিপ্রায়ে বিস্মিত হন। কিন্তু এ ব্যাপারে তাঁকে কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস পাচ্ছিলেন না কেউ। তখন তাঁর একজন প্রিয় সেনাপতি তাঁর হাতটা তুলে ধরে চুম্বন করে বলেন, ‘হে মহামান্য, অবশ্যই আপনার সব অভিপ্রায় পূর্ণ করা হবে; কিন্তু আপনি কেন এই বিচিত্র অভিপ্রায় ব্যক্ত করলেন?’
দীর্ঘ একটা শ্বাস গ্রহণ করে আলেকজান্ডার বললেন, ‘আমি দুনিয়ার সামনে তিনটি শিক্ষা রেখে যেতে চাই। আমার চিকিৎসকদের কফিন বহন করতে বলেছি এ কারণে যে, যাতে লোকে অনুধাবন করতে পারে চিকিৎসকেরা আসলে কোনো মানুষকে সারিয়ে তুলতে পারেন না। তাঁরা ক্ষমতাহীন আর মৃত্যুর থাবা থেকে কাউকে রক্ষা করতে অক্ষম।
‘গোরস্থানের পথে সোনা-দানা ছড়িয়ে রাখতে বলেছি মানুষকে এটা বোঝাতে যে ওই সোনা-দানার একটা কণাও আমার সঙ্গে যাবে না। আমি এগুলো পাওয়ার জন্য সারাটা জীবন ব্যয় করেছি, কিন্তু নিজের সঙ্গে কিছুই নিয়ে যেতে পারছি না। মানুষ বুঝুক’ ধন-সম্পদের পেছনে ছোটা সময়ের অপচয় মাত্র।
কফিনের বাইরে আমার হাত ছড়িয়ে রাখতে বলেছি মানুষকে এটা জানাতে যে খালি হাতে আমি এই পৃথিবীতে এসেছিলাম, আবার খালি হাতেই পৃথিবী থেকে চলে যাচ্ছি।...
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
কোন মন্তব্য নাই.