"অসময়-সময়"
অসময় গুলো সময় হয়ে উঠছে। ব্যাখ্যা করেই বলি। বছর খানেক আগে রাতের বেলায় আমি আমার ফোনে সেভ করা নাম্বার গুলো খুঁজতাম। অচেনা নাম্বার। যাকে আমি ফোন দেবো। আমার প্রথম ফোনে সে আমার কল রিসিভ করবে না। পরের দুটো কলও না। চতুর্থ কলটা সে ঘুম ঘুম চোখে রিসিভ করবে। ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলবে, "কে বলছেন?" তার কন্ঠে থাকবে একই সাথে বিরক্তি, প্রশ্ন আর বিস্ময়। আর আমি জবাবে আমার সারা দিনের গল্প শোনাবো। সে অপরিমেয় আগ্রহ নিয়ে আমার গল্প শুনবে। আমার মতে প্রত্যেকটা মানুষের প্রত্যেকটা দিনই এক একটা গল্প। কিন্তু সবাই সে গল্প লিখতে পারে না। যারা পারে তাদের আত্নজীবনী বের হয়। এক মাসের মধ্যে সাত আট মুদ্রণ শেষ হয়।
টাচ স্ক্রিন মোবাইলের স্ক্রিন চেপে আমি অবিরাম স্ক্রল করে নিচে নামতাম। আবার উপরে উঠতাম। কিন্তু আমি কোন নাম্বারই খুঁজে পেতাম না। তাই আমার গল্প গুলোও কাউকে বলা হতো না। বাধ্য হয়ে প্রেমিকার নাম্বার ডায়াল লিস্টে টপে থাকতো সর্বদা। দিন শেষে আমাদের সবারই এক জন লাগে। যার কাঁধে মাথা রেখে হোক না রেখে, বলা যায়,"আমি ভালো নেই!"
আসলে সেটা ছিল অসময়। আর অসময় বলেই প্রেমিকাকে ফোন দিতাম। গুটু গুটুর করে কথা বলতাম। তবুও কাটতো না অসময় গুলো। প্রেমিকাকে কোন দিনই বলা হয়নি সারা দিনের গল্প। সে জানতেও চায়নি কোনদিন। কোন দিন আদর মাখা কন্ঠে জানতে চায়নি,"আজ সারা দিন কেমন ছিল প্রিয়?"
প্রেমিকা শুধু প্রেমিকাই হতে চেয়েছিল হয়তো।
তারপর এক সময় সেই প্রেমিকা আমায় ছেড়ে চলে যায়। অপরাধ আমারই ছিল। অসময় গুলো আমি সময় করে তুলতে পারিনি। তাই ভাব-সম্প্রসারণে পড়া সময়ের মূল্যের কুফল প্রমান করে ফেলেছিলাম।
তারপর শুরু হল আমার অসময় গুলোকে সময়ে পরিনত করার লড়াই। যে লড়াইয়ে আমি মাত্র দু-মাসের একদিনও টানা দু-ঘন্টা ঘুমাতে পারিনি। অসময় গুলো সময়ে বদলে ফেলার লড়াইতে আমি সফল কিনা জানতাম না। তবে এখন টের পাই।
সকাল বেলা ভার্সিটিতে ছুটি। ক্লাস করি। আড্ডা দিই। লাঞ্চ করি। বাসায় ফিরি যখন তখন সূর্য ডুবে গেছে। গোসল আর নাস্তা করতে করতে কখন যে সময় পেরিয়ে যায় বলতে পারি না। মাঝে মাঝে থাকলেও এসাইনমেন্ট আর রিপোর্ট সময় গুলো ভাগ করে নেয় স্বার্থপরের মত। পছন্দের হাত ঘড়িটাও নষ্ট হয়ে গেছে। যখন তখন চাইলেই সময় দেখতে পারি না। আগে অসময় পেরোত না। আর এখন সময় খুঁজে পাই না।
আমি আবার প্রেম করছি। এই মেয়েটা বড্ড অদ্ভুত। প্রেমের শুরুটা ছিল আমার দিক থেকে। হালের 'ক্রাশ' শব্দটা ভালো যায় সেই অবস্থার ব্যাখায়। আমার পাগলামী বা যন্ত্রনায়ই হোক শেষ পর্যন্ত ৬২(বাষট্টি) খানা শর্ত দিয়ে সে আমাকে মেনে নিল। আমি অপুর মত বললাম, "আমি পাইলাম ইহাকে পাইলাম।"
বলেছিলাম মেয়েটা অদ্ভুত। বড্ড অদ্ভুত। তার প্রথম শর্ত ছিল, 'হাত ধরা যাবে না। কোন 'উছিলায়'ই না।' সে আমাকে মেনে নেয়ার পর প্রথম যেদিন দেখা করতে মানে সহজ কথায় ডেটিং করতে গিয়েছিলাম সেদিন দেখা হওয়ার সাড়ে সাত মিনিটের মাথায় সে আমার হাত জড়িয়ে ধরে।
দ্বিতীয় শর্ত দেয়ার আগে সে প্রশ্ন করেছিল, "বিয়ে করার প্ল্যান আছে?" আমি পুরুষজাতি ভাইদের মান রক্ষা করিতে লাফাই উঠে মিন মিন করে বলেছিলাম, "হ্যা আছে!" সে ফোনের অপর প্রান্তে বসে আমার লাফ খানা দেখে নাই। দেখলে বলত ফ্লোরিং মানে মেঝেতে থেকে ভালোই করছো। নইলে তো খাট তো বিয়ের আগেই ভেঙে ফেলতা। সে লাফও দেখলো না, মিন মিন করা কন্ঠও শুনলো না, হুংকার দিয়ে বলল, "বিলাইয়ের মত মিউ মিউ করো ক্যান?" আমি কাশি দিয়া জোর কন্ঠে বললাম, "আছে। বিয়ে করার প্ল্যান অবশ্যই আছে।" তখন সে বলল, "তাহলে চুমু টুমু যা খাওয়ার বাসর রাতের পরেই খাবা। তার আগে ভুলেও টাচ করবা না।" আমি আবার মিন মিন করে বললাম, "আর যদি প্ল্যান না থাকে তাইলে কি আগেই খাইয়ে দিবা?" মিন মিন করলেও সে এবারের ডায়লগ খানা স্পষ্টই শুনলো। এবং ফোনটা কেটে দিয়ে ফোন বন্ধ করে রাখলো। এই মেয়ে আমার প্রেমের চব্বিশ দিনের মাথায় আমাকে চুমু খায়। এবং আমার শখের অ্যাশ কালারের সোয়েটারে লাল লিপস্টিক এর দাগ লাগাই দিয়েছে। মনীষীরা এই জন্যই বলেছেন, "নারী জাতি অদ্ভুত এবং একই সাথে রহস্যময়ী ও বৈচিত্র্যময়।"
প্রেমিকা হিসেবে তার প্রথম অভিজ্ঞতা। ভালোবাসার শেষ নেই কোন। সব কিছুতেই ব্যাপক উৎসাহ।
-"এক প্লেট ফুচকা চল এক সাথে খাই!"
সে চোখে মুখে ১০০০ পাওয়ারের বালব জ্বালিয়ে বলে,"চলো!"
-"চল রিকশায় নগরী দেখি!"
সে লাফিয়ে উঠে বলে,"দারুন হবে তাই না?"
আমি ভিলেন মার্কা হাসি ঝুলিয়ে বলি,
-"হুড কিন্তু তুলে দিবো!"
সে লজ্জায় লাল হয়ে চোখ নামিয়ে নেয়। কিন্তু মাথা কাত করে জানিয়ে দেয়,"আই অ্যাম ইন!"
পাগলের মত যে ভালোবাসে সেটা টের পাই। অনুভব করি। সপ্তাহের একটা দিন দেখা করতে গেলে যখন আমার ডান হাতটা শক্ত করে জড়িয়ে রাখে, ইচ্ছে করে আকাশের দিকে তাঁকিয়ে পরম স্রষ্টা'র কাছে প্রশ্ন করি, "এই স্নীগ্ধতা অনুভবের জন্য একটা মাত্র জীবন কি কম হয়ে গেল না? আরো কয়েক শত জীবন যাপন করতে দিলে কি এমন ক্ষতি হয়ে যেত?"
অথচ এই মেয়েটাকে আমি সময় দিয়ে পারি না। অসময় গুলো আজ সময় হয়ে উঠেছে।
"প্রেমিকা, তোমায় আমি হাজার খানেকবার বলেছি ভালোবাসি। কোন দিনও কি বলেছি, কতটা ভালোবাসি?"
পাদটীকা: পাদটীকা শব্দের অর্থ আমি জানি না। বড় বড় লেখকেরা দেখি গল্পের শেষে কিছু বলতে চাইলে এই শব্দটা ব্যবহার করেন। নিজেকে লেখক ভাবি না। কিন্তু লেখকদের অনুসরণ করতে ভালোবাসি। অভিনেতা না হয়েও অভিনয় করি আমরা সারা জীবন।
অনেক দিন পর কিছু একটা লিখলাম। যা লিখলাম প্রথম কিছু অংশ বাস্তব। কিছু আমার অনুর্বর মস্তিস্কের কল্পনা। তবে যাই লিখেছি আনন্দ পেয়েছি। প্রচন্ড মন খারাপ নিয়ে লিখতে বসেছি। লেখা শেষে তৃপ্তি নিয়ে উঠেছি। পাঠক পড়ে তৃপ্তি না পেলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টি ভিক্ষা চাইছি।
ভিক্ষার জন্য অগ্রিম ধন্যবাদ।
কষ্ট করে পড়ার জন্য আবার ধন্যবাদ।
-তরীকুল ইসলাম সৈকত
ভোর ৫:১৪ ঘটিকা।
১৯ মার্চ, ২হ১৬।
ঢাকা।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
টাচ স্ক্রিন মোবাইলের স্ক্রিন চেপে আমি অবিরাম স্ক্রল করে নিচে নামতাম। আবার উপরে উঠতাম। কিন্তু আমি কোন নাম্বারই খুঁজে পেতাম না। তাই আমার গল্প গুলোও কাউকে বলা হতো না। বাধ্য হয়ে প্রেমিকার নাম্বার ডায়াল লিস্টে টপে থাকতো সর্বদা। দিন শেষে আমাদের সবারই এক জন লাগে। যার কাঁধে মাথা রেখে হোক না রেখে, বলা যায়,"আমি ভালো নেই!"
আসলে সেটা ছিল অসময়। আর অসময় বলেই প্রেমিকাকে ফোন দিতাম। গুটু গুটুর করে কথা বলতাম। তবুও কাটতো না অসময় গুলো। প্রেমিকাকে কোন দিনই বলা হয়নি সারা দিনের গল্প। সে জানতেও চায়নি কোনদিন। কোন দিন আদর মাখা কন্ঠে জানতে চায়নি,"আজ সারা দিন কেমন ছিল প্রিয়?"
প্রেমিকা শুধু প্রেমিকাই হতে চেয়েছিল হয়তো।
তারপর এক সময় সেই প্রেমিকা আমায় ছেড়ে চলে যায়। অপরাধ আমারই ছিল। অসময় গুলো আমি সময় করে তুলতে পারিনি। তাই ভাব-সম্প্রসারণে পড়া সময়ের মূল্যের কুফল প্রমান করে ফেলেছিলাম।
তারপর শুরু হল আমার অসময় গুলোকে সময়ে পরিনত করার লড়াই। যে লড়াইয়ে আমি মাত্র দু-মাসের একদিনও টানা দু-ঘন্টা ঘুমাতে পারিনি। অসময় গুলো সময়ে বদলে ফেলার লড়াইতে আমি সফল কিনা জানতাম না। তবে এখন টের পাই।
সকাল বেলা ভার্সিটিতে ছুটি। ক্লাস করি। আড্ডা দিই। লাঞ্চ করি। বাসায় ফিরি যখন তখন সূর্য ডুবে গেছে। গোসল আর নাস্তা করতে করতে কখন যে সময় পেরিয়ে যায় বলতে পারি না। মাঝে মাঝে থাকলেও এসাইনমেন্ট আর রিপোর্ট সময় গুলো ভাগ করে নেয় স্বার্থপরের মত। পছন্দের হাত ঘড়িটাও নষ্ট হয়ে গেছে। যখন তখন চাইলেই সময় দেখতে পারি না। আগে অসময় পেরোত না। আর এখন সময় খুঁজে পাই না।
আমি আবার প্রেম করছি। এই মেয়েটা বড্ড অদ্ভুত। প্রেমের শুরুটা ছিল আমার দিক থেকে। হালের 'ক্রাশ' শব্দটা ভালো যায় সেই অবস্থার ব্যাখায়। আমার পাগলামী বা যন্ত্রনায়ই হোক শেষ পর্যন্ত ৬২(বাষট্টি) খানা শর্ত দিয়ে সে আমাকে মেনে নিল। আমি অপুর মত বললাম, "আমি পাইলাম ইহাকে পাইলাম।"
বলেছিলাম মেয়েটা অদ্ভুত। বড্ড অদ্ভুত। তার প্রথম শর্ত ছিল, 'হাত ধরা যাবে না। কোন 'উছিলায়'ই না।' সে আমাকে মেনে নেয়ার পর প্রথম যেদিন দেখা করতে মানে সহজ কথায় ডেটিং করতে গিয়েছিলাম সেদিন দেখা হওয়ার সাড়ে সাত মিনিটের মাথায় সে আমার হাত জড়িয়ে ধরে।
দ্বিতীয় শর্ত দেয়ার আগে সে প্রশ্ন করেছিল, "বিয়ে করার প্ল্যান আছে?" আমি পুরুষজাতি ভাইদের মান রক্ষা করিতে লাফাই উঠে মিন মিন করে বলেছিলাম, "হ্যা আছে!" সে ফোনের অপর প্রান্তে বসে আমার লাফ খানা দেখে নাই। দেখলে বলত ফ্লোরিং মানে মেঝেতে থেকে ভালোই করছো। নইলে তো খাট তো বিয়ের আগেই ভেঙে ফেলতা। সে লাফও দেখলো না, মিন মিন করা কন্ঠও শুনলো না, হুংকার দিয়ে বলল, "বিলাইয়ের মত মিউ মিউ করো ক্যান?" আমি কাশি দিয়া জোর কন্ঠে বললাম, "আছে। বিয়ে করার প্ল্যান অবশ্যই আছে।" তখন সে বলল, "তাহলে চুমু টুমু যা খাওয়ার বাসর রাতের পরেই খাবা। তার আগে ভুলেও টাচ করবা না।" আমি আবার মিন মিন করে বললাম, "আর যদি প্ল্যান না থাকে তাইলে কি আগেই খাইয়ে দিবা?" মিন মিন করলেও সে এবারের ডায়লগ খানা স্পষ্টই শুনলো। এবং ফোনটা কেটে দিয়ে ফোন বন্ধ করে রাখলো। এই মেয়ে আমার প্রেমের চব্বিশ দিনের মাথায় আমাকে চুমু খায়। এবং আমার শখের অ্যাশ কালারের সোয়েটারে লাল লিপস্টিক এর দাগ লাগাই দিয়েছে। মনীষীরা এই জন্যই বলেছেন, "নারী জাতি অদ্ভুত এবং একই সাথে রহস্যময়ী ও বৈচিত্র্যময়।"
প্রেমিকা হিসেবে তার প্রথম অভিজ্ঞতা। ভালোবাসার শেষ নেই কোন। সব কিছুতেই ব্যাপক উৎসাহ।
-"এক প্লেট ফুচকা চল এক সাথে খাই!"
সে চোখে মুখে ১০০০ পাওয়ারের বালব জ্বালিয়ে বলে,"চলো!"
-"চল রিকশায় নগরী দেখি!"
সে লাফিয়ে উঠে বলে,"দারুন হবে তাই না?"
আমি ভিলেন মার্কা হাসি ঝুলিয়ে বলি,
-"হুড কিন্তু তুলে দিবো!"
সে লজ্জায় লাল হয়ে চোখ নামিয়ে নেয়। কিন্তু মাথা কাত করে জানিয়ে দেয়,"আই অ্যাম ইন!"
পাগলের মত যে ভালোবাসে সেটা টের পাই। অনুভব করি। সপ্তাহের একটা দিন দেখা করতে গেলে যখন আমার ডান হাতটা শক্ত করে জড়িয়ে রাখে, ইচ্ছে করে আকাশের দিকে তাঁকিয়ে পরম স্রষ্টা'র কাছে প্রশ্ন করি, "এই স্নীগ্ধতা অনুভবের জন্য একটা মাত্র জীবন কি কম হয়ে গেল না? আরো কয়েক শত জীবন যাপন করতে দিলে কি এমন ক্ষতি হয়ে যেত?"
অথচ এই মেয়েটাকে আমি সময় দিয়ে পারি না। অসময় গুলো আজ সময় হয়ে উঠেছে।
"প্রেমিকা, তোমায় আমি হাজার খানেকবার বলেছি ভালোবাসি। কোন দিনও কি বলেছি, কতটা ভালোবাসি?"
পাদটীকা: পাদটীকা শব্দের অর্থ আমি জানি না। বড় বড় লেখকেরা দেখি গল্পের শেষে কিছু বলতে চাইলে এই শব্দটা ব্যবহার করেন। নিজেকে লেখক ভাবি না। কিন্তু লেখকদের অনুসরণ করতে ভালোবাসি। অভিনেতা না হয়েও অভিনয় করি আমরা সারা জীবন।
অনেক দিন পর কিছু একটা লিখলাম। যা লিখলাম প্রথম কিছু অংশ বাস্তব। কিছু আমার অনুর্বর মস্তিস্কের কল্পনা। তবে যাই লিখেছি আনন্দ পেয়েছি। প্রচন্ড মন খারাপ নিয়ে লিখতে বসেছি। লেখা শেষে তৃপ্তি নিয়ে উঠেছি। পাঠক পড়ে তৃপ্তি না পেলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টি ভিক্ষা চাইছি।
ভিক্ষার জন্য অগ্রিম ধন্যবাদ।
কষ্ট করে পড়ার জন্য আবার ধন্যবাদ।
-তরীকুল ইসলাম সৈকত
ভোর ৫:১৪ ঘটিকা।
১৯ মার্চ, ২হ১৬।
ঢাকা।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
মন্তব্য: ৪ টি