গাধা আর ঘোড়ার গল্প
অনেক দিন আগের কথা। এক বন ঘেঁষে এক কৃষকের বাস ছিলো। কৃষকের ছিলো একটা ঘোড়া। সে এই ঘোড়ার সাহায্যে কৃষিজমিতে হাল বহাত। আবার দূরের গ্রামে হাটে হাটে নিজের পণ্য বিক্রি করতে নিয়ে যেত। অন্যান্য সময় ঘোড়াটি ছেড়ে দেয়া হত। বনের আশেপাশে ঘুরে ঘুরে সে ঘাস-লতা-পাতা খেত।
ঘোরাটি যখন ছেড়ে দেয়া হত তখন সে প্রায়ই বনের কিছুটা ভেতরে ঠিক নিজের মতই আরেকটা প্রাণীর সাথে দেখা করতে যেত। সেটা ছিলো গাধা। ঘোড়াটি সেই অদ্ভুত ছোট আকারের প্রাণী দেখে আশ্চর্য হয়ে তার সাথে বন্ধুত্ব করে ফেলল। গাধা যখন বুঝল যে ঘোরাটি তাকে ঘোড়ার মতন সম্মান দিচ্ছে তখন তারও কোন আপত্তি থাকল না। সে মনে মনে খুব খুশি। গাধা কখনও ঘোড়া হয়না, অথচ একটা বোকা ঘোড়া তাকে ঘোরা ভেবেছে। সম্মান পেয়ে তার আনন্দের শেষ নেই।
একদিন ঘোড়াটি ঘুরতে ঘুরতে গাধার কাছে গেল। নানা কথার মাঝে ঘোড়াটি তাকে প্রশ্ন করে বসল, আচ্ছা তুমি আমার চেয়ে এত বেটে আকৃতির কেন?
গাধা তো গাধাই। সে তখন তার মোটাবুদ্ধিতে বলে বসল- আসলে আমার এক মনিব ছিলো। সে আমাকে দিয়ে অনে ভারি বোঝা টানাত। খুব ছোটবেলা থেকে ভারি বোঝা টানার কারনে আমি বেটে হয়ে যাই। এক্দিন বোঝা বইতে বইতে আমি খুব অসুস্থ হয়ে পড়লে পথে আমাকে ফেলে মনিব আরেকটি দলের সাথে চলে যায়। ভাগ্য ভালো থাকায় আমি জানে বেঁচে যাই। আর সে থেকে এখানে একা থাকি।
ঘোড়া ভাবল এ কেমন কথা! ভারি বোঝা তো সে ছাড়াও আরো অনেক ঘোড়াই ছোট বেলা থেকে বইছে। কখনোই তো সে কোন ঘোড়ার স্বাভাবিক উচ্চতা হারাতে দেখেনি!
ঘোড়ার সন্দেহ হল। গাধাটার আচরনও ঠিক তার মত নয়। বুদ্ধিও খুব একটা ভালো না। তার পক্ষে বিরান ভূমিতে মারা যাবার হাত থেকে রক্ষা পাওয়াও স্বাভাবিক নয়। তাই সে পরের হাটে ভালো করে ঘোড়া গুলোকে দেখতে লাগল। কোন ঘোড়াকেই সে ছোট আকৃতির হিসেবে দেখল না। প্রতি হাটে সাধারনত যে স্থানে ঘোড়াটির মনিব তাকে বেধে রাখে সেখানে আরেকটি বড় ঘোড়া আসে। আজ তার সাথেই কথাটা পাড়ল। সে তার অদ্ভুত অভিজ্ঞতার কথা তাকে বলল। শুনে বড় ঘোড়াটি তার অভিজ্ঞতা থেকে সব রহস্যের জট খুলে দিল। সে বলল, তুমি একটি বোকা ধোকাবাজের পাল্লায় পড়েছ। আসলে সে ঘোড়া নয় বরং একটা বন্য গাধা। সে নিজের সম্মান বাড়াতে তোমার সাথে অভিনয় করে যাচ্ছে। তুমি না হয় গাধা চেননা। কিন্তু বন্য গাধা তো ঠিকই ঘোড়া চেনে। আর একতা গাধার পক্ষে এত কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে জীবন বাচানো সম্ভব নয়। তাছাড়া অবস্থা খুব খারাপ না হলে কোন মনিব তার বাহন ফেলে দেয়না। সে একটা মিথ্যুক গাধা।
সব শুনে গোড়াটি বলল, তাহলে তুমি যা বললে সেটা তো যেকোন অভিজ্ঞ ঘোড়াই ধরে ফেলতে পারে। আমাকে সে এত দূর্বল একটা মিথ্যা বলল কেন?
জবাবে বড় ঘোড়া বলল, সে হল গাধা। দেখতে গোড়ার মত কিন্তু ঘোড়া নয়। তুমি যেমন তোমার মত তাকে ভাবছ সেও তোমাকে তার মতই ভেবেছে। তোমার কাছে গাধার কোন অভিজ্ঞতা নেই বলেই তুমি ধরতে পারনি। আসলে গাধারা মিথ্যুক হলে খুব সহজ মিথ্যুক হয়। তারা এমন কিছু বলে যা তারাই মিথ্য হিসেবে প্রমাণ করে দেয়। সে শুধু মাত্র নিজেকে সম্মানিত করার চেষ্টা করেছে। গাধা তো সবসময় গাধা, তাই সে কাজটাও গাধার মত করেছে।
ঘোড়াটি সব কিছু উপলব্ধি করে বুঝল তার মনিবের সমাজেও কিছু গাধা আছে, যারা ঠিক ঐ গাধাটির মতই মিথ্যাচার করে সম্মানিত হতে চায়। আর ঐসব গাধারা বিভিন্ন মিথ্যা কাহিনী বানালেও তার পেছনে কোন প্রমাণ ও যুক্তি হাজির করতে পারেনা।
সে আজ উপলব্ধি করল তার মনিবও তার মতই কম অভিজ্ঞ হবার কারনে মানুষরুপী কিছু গাধার কাছে প্রতিদিনই ঠকছে। যারা কিছু গালগল্প বলে মাঝে মাঝেই তার মনিবের কাছ থেকে সম্মানি গ্রহণ করে। আর মনিবও কিছু অদৃশ্য যুক্তিহীন বিশ্বাস থেকে তাদেরকে সম্মান ও খাতির করে। যার আসলে কোন মূল্য নেই।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
০১ মার্চ ’১৬ বিকাল ০৪:৪৬
আমাদের সমাজে এই গাধার মত মিথ্যুক আছে ঠিক। তারা সবাই যে ধর্ম নিয়েই ব্যবসা করে তা তো না। অনেকেই প্রগতী নিয়েও ব্যবসা করে। পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলে আজ নিজেরাই পুঁজিবাদের এজেন্ট হয়েছে, এমন উদাহরন আছে ভুরি ভুরি। তাই এই গাধার গল্পটা ধর্মের সাথে নয় বরং অমানুষের বৈশিষ্ট্যের সাথে বেশি প্রাসঙ্গিক।
০১ মার্চ ’১৬ বিকাল ০৫:৩৮
ধর্ম মানেই খারাপ, এমন কথা ঠিক না। আমরা অনেক কিছুই দেখিনা। অনেক কিছুই উপলব্ধি করিনা।
০১ মার্চ ’১৬ বিকাল ০৫:৪৫
এক অদ্ভুত গাধার পিঠে চলছে স্বদেশ? বনের গাধাকে বুঝলাম। আপনিও গাধার মত গল্পের শেষে (একান্ত না পেরে ট্যাগ এন্ড ট্রেন্ডে) গাধা, কাঠমোল্লা, ধর্মব্যবসায়ী লাগিয়ে দিলেন। বাহ! কি দারুন!
০১ মার্চ ’১৬ বিকাল ০৫:৫২
গাধা সব সময়ই অন্যকে গাধা ভাবে। সমস্যা হল- বিচক্ষণরা আবার সেই গাধাদের কথাতেই নড়েচড়ে বাপু!