দিন যায় কথা থাকে
মানুষের জীবন যে কত বৈচিত্র্যময় তার প্রমাণ পেতে আমদের জীবনের ছোট ছোট স্মৃতিগুলোই সহায়তা করে। আমার ছোটবেলার শিক্ষক ছিলেন গনি স্যার। প্রাইমারী স্কুলের গনিত পড়াতেন তিনি। ভীষণ ভয় পেতাম আমরা। কখনই স্যারের সামনে টু শব্দটাও করতে সাহস পেতনা কেউ। কিন্তু আমার কেমন যেন খুবই ভালো লাগত স্যারকে।
স্যার মূলত কিছু আদর্শ মেন্টেন করে চলতেন। মিথ্যা পছন্দ করতেন না। এর বাইরে অসততা গুলো দুই চোখে দেখতে পারতেন না। খুব কড়া ভাব নিয়ে থাকলেও ভেতরে তিনি খুব কোমল ছিলেন। এর প্রমাণ পেয়েছিলাম ছেলেবেলায়। আমাদের ক্লাসমেট বেলার পা কেটে গেলে স্যার নিজেই তাকে কাধে তুলে তার বাড়ি দিয়ে এসেছিলেন।
স্যারের সততার বিষয়গুলো আমাকে খুব ভাবাত। অনেকবার স্যারকে সেই সম্মানের স্থানটি দেখাতে পারিনি ভয়ের কারনে। ভয় জিনিসটা অন্যের কাছ থেকে ট্রান্সফার হয়। আমার কাছেও তা অন্যের দ্বারা পার হয়েছিলো। তাই প্রকৃত ভালোবাসার ওপর ভয় ভর করেছিলো বলে আমিও স্যারকে ভয় পেতে শিখেছিলাম।
মূল ঘটনা হল, বহু দিন পর সযারের সাথে দেখা। আব্বার ট্রান্সফারের পর ঐ এলাকা ছেড়ে চলে আসি। তারপর আর যাওয়া হয়নি। এবার সেখানে একটা কাজে গিয়ে স্যারের সাথে দেখা। স্যারকে সালাম করে নিজের পরিচয় দিতে স্যার জড়িয়ে ধরলেন। অনেক কথা বললেন। খোজ নিলেন। পরে স্যারকে নিজেই বললাম, আমি তাকে খুব ভালোবাসি। কিন্তু কখনও জানাতে পারিনি। এরপর আবারও তিনি আমার মাথায় দরদ মাখা হাত দিয়ে বললেন তিনি তার সকল ছাত্রকেই দোয়া করেন, ভালোবাসেন।
আমার মন বলছিলো একজন সত্যিকার আদর্শিক স্যার এমনই হন। তার ভালোবাসা সবার প্রতি সমান। কথায় কাজে তিনি থাকে প্রকৃতই সৎ।
স্যারের সাথে বিদায় নিয়ে ফিরে আসার সারাটা পথ ভাবছিলাম সেই ছেলেবেলার কথা। স্কুল জীবনের কথা। কৃত্রিম ভয়ের কথা। মনে হল, আমাদের দিন গুলো অনেক অপূর্নতায় চলে যায়। অথচ বহু কথা বলার থাকে, বহু কিছু প্রকাশ করবার থাকে। আজ কিছু প্রকাশ হল! জীবন থেমে থাকেনা। অপেক্ষাও করেনা আমাদের পূর্নতা দিতে। নিষ্ঠূর জীবন সে।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
মন্তব্য: ৯ টি