অকার্যকর হয়ে আছে উপজেলা পরিষদ

উপজেলা চেয়ারম্যানের ক্ষমতা বা কাজ সম্পর্কে পিরোজপুর উপজেলা চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান খালেক জানান, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েও আমরা উপজেলা চেয়ারম্যানরা অনেকটাই এতিম। একটি গাড়ি, একটি অফিস আর একজন পিয়ন দিয়েই কার্যত চলছে উপজেলা পরিষদ।
বহুমুখী প্রভাবের কারণে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না উপজেলা পরিষদ। সংসদ সদস্য, ইউএনও’র নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে পারছেন না উপজেলা চেয়ারম্যানরা।
পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছেও অনেকাংশে জিম্মি স্থানীয় সরকারের এই স্তরটি।
এসবের পাশাপাশি কাঠামোগত ত্রুটি এবং আইনি দুর্বলতার কারণে উপজেলা পরিষদ অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে বলে মনে করেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা।
তাদের মতে, উপজেলা পরিষদকে কার্যকর করতে হলে আইন সংশোধন করতে হবে। প্রভাব ও চাপমুক্ত করতে হবে এই প্রতিষ্ঠানকে।
অন্যথায় নির্বাচনের মাধ্যমে বিজয়ী নতুন চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানরা তেমন কিছুই করতে পারবেন না। এ অবস্থায় সম্ভাব্য প্রার্থীদের এক ধরনের হতাশার মধ্যেই আগামী ১০ মার্চ প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন।
এদিন দেশের ৮৭ উপজেলায় ভোট হবে। সারা দেশে ৪৮৯ উপজেলায় এবার মোট ৫ দফায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট উপজেলা পরিষদ। এটি শক্তিশালী ও গতিশীল করতে হলে বিদ্যমান আইন সংশোধন করতেই হবে।
তাদের মতে, শুধু চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান নয়, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের মতো উপজেলা পরিষদের সব সদস্যকে জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত করার বিধান যুক্ত করতে হবে।
এছাড়া বর্তমানে যে বহুমুখী চাপ সহ্য করতে হচ্ছে এই স্তরকে তা থেকে মুক্ত করতে হবে। সংসদ সদস্য ও ইউএনও’র নিয়ন্ত্রণ থেকে উপজেলাকে মুক্ত করতে হবে বলে তারা উল্লেখ করেন।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য দায়িত্ব নেয়ার পরপরই যুগান্তরকে বলেন, ‘আমি নিজেই পাঁচ বছর উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলাম, আমি এর ভুক্তভোগী এবং বিষয়টি অবগত। যাতে দ্রুত এর সমাধান হয়, সে ব্যাপারে সরকারের শীর্ষপর্যায়ে সমস্যার কথা তুলে ধরব।’
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বৃহস্পতিবার বলেন, উপজেলা পরিষদের গঠন ত্রুটিপূর্ণ এবং নিয়ন্ত্রিত বলেই এটি একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড়ায়নি।
কারণ স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং ইউএনওরাই পুরো পরিষদ নিয়ন্ত্রণ করছেন। চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যান কার্যত ক্ষমতাহীন। তাদের চেয়ার আছে, কিন্তু ক্ষমতা নেই।
তিনি বলেন, উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু গত পাঁচ বছরে স্থানীয় সরকারের এ স্তরটি (উপজেলা পরিষদ) যেসব সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে, সেগুলো সমাধানের উদ্যোগ না নিয়ে শুধু নির্বাচন করলে উপজেলা পরিষদ সত্যিকার অর্থে কার্যকর প্রতিষ্ঠান হবে না। তাই দ্রুত কাঠামোগত পরিবর্তনসহ বিদ্যমান সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হবে।
এদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রেশ কাটতে না কাটতেই সারাদেশে উপজেলা নির্বাচনের দামামা বেজে উঠছে।
ইতিমধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক, বাম প্রগতিশীল এবং ইসলামী ঘরানার রাজনৈতিক দল ও জোটগুলো যে যার মতো করে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বিএনপি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিলেও তাদের জোট ২০ দল এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিকদের ভূমিকা এখনও স্পষ্ট না। এ অবস্থার মধ্যেই জমে উঠেছে দলীয় প্রতীকের এই নির্বাচন।
নির্বাচনকে ঘিরে একদিকে যেমন সাজ সাজ রব, পাড়ায়-মহল্লায় চলছে প্রচার-প্রচারণা। অন্যদিকে প্রার্থীদের মাঝে হতাশার চিত্রও ফুটে উঠছে ধীরে ধীরে।
বিশেষ করে উপজেলা নির্বাচনে ভোটের লড়াইয়ে জয়ী হয়ে আসতে পারেন, এমন সম্ভাব্য প্রার্থীরা হৃদয়ে একধরনের ক্ষত নিয়েই নেমেছেন নির্বাচনী প্রচারে।
উপজেলা পরিষদের ২৫ ধারা অনুযায়ী, নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা সংশ্লিষ্ট উপজেলা পরিষদের উপদেষ্টা হবেন এবং পরিষদ উপদেষ্টার পরামর্শ গ্রহণ করবেন। আইনের ৪২ ধারার একটি অংশে বলা হয়েছে, পরিষদ তার প্রতিটি উন্নয়ন পরিকল্পনার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্যের সুপারিশ গ্রহণ করে এর অনুলিপি সরকারের কাছে পাঠাবে।
এছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারও (ইউএনও) প্রত্যক্ষ প্রভাব থাকে পরিষদ পরিচালনায়। একাধিক চেয়ারম্যান প্রার্থী বলেন, এর মাধ্যমে উপজেলা পরিষদের কার্যত কোনো ক্ষমতা থাকে না। সংসদ সদস্যের কথার বাইরে এবং ইউএনও’র ইচ্ছার বিরুদ্ধে চেয়ারম্যানরা কিছুই করতে পারেন না।
এজন্য সাবেক চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানরা নানা সময়ে সংসদ সদস্য এবং ইউএনও’র নিয়ন্ত্রণ বিলুপ্ত করতে আইন সংশোধনেরও দাবি জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম প্রধান শরীক দল ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, ‘সংসদ সদস্যদের উপজেলা পরিষদের উপদেষ্টা হিসেবে রাখার বিধান বাতিলের পক্ষে আমি।
আমি মনে করি এটা রাখার দরকার নেই। এখানে প্রয়োজন স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের মধ্যে সমন্বয় নিশ্চিত করা। আর তা সম্পর্কের মাধ্যমেই সম্ভব।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও একাধিক উপজেলা চেয়ারম্যান মনে করেন, উপজেলা পরিষদের গঠন ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় স্থানীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এই স্তরটি পুরোপুরি কার্যকর হতে পারছে না।
তাদের মতে, পরিষদের গঠন-কাঠামো উপযোগী নয়। উপজেলা চেয়ারম্যানদের সামান্য ক্ষমতা থাকলেও ভাইস চেয়ারম্যানদের সুনির্দিষ্ট কোনো কাজ বা দায়িত্ব নেই।
সংসদ সদস্যদের পরামর্শ ছাড়া পরিষদ কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। আবার ইউএনও পরিষদকে সাচিবিক সহায়তা দেয়ার কথা থাকলেও মূলত তারাই আর্থিক ও প্রশাসনিক অধিকাংশ ক্ষমতা প্রয়োগ করেন।
ফলে চেয়ার থাকলেও হাতে ক্ষমতা নেই উপজেলা চেয়ারম্যানদের। আর ক্ষমতা না থাকায় কার্যত তারা কাগুজে বাঘে পরিণত হয়েছেন।
উপজেলা পরিষদকে শক্তিশালী করতে একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনেই আইন সংশোধন করার দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশন। এ দাবিতে এর আগেও তারা স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী ও সচিবের বরাবর চিঠি দিয়েছেন।
উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি হারুন-অর-রশীদ হাওলাদার এ প্রসঙ্গে যুগান্তরকে বলেন, উপজেলা পরিষদকে কার্যকর করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছার বড় অভাব।
তিনি বলেন, এই দীর্ঘ সময়েও উপজেলা পরিষদ কার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়নি। মূলত সংসদ সদস্য এবং ইউএনও’র প্রভাব থাকায় উপজেলা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রিতই রয়ে গেছে।
আর নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারলে জনগণের দোরগোড়ায় কাক্সিক্ষত সেবা পৌঁছে দেয়া কঠিন।
জানা গেছে, দাবির মুখে সরকার ১৭টি বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপজেলা পরিষদের অধীনে হস্তান্তর করলেও সেখানে চেয়ারম্যান বা ভাইস চেয়ারম্যানদের ক্ষমতা সামান্যই।
উপজেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, প্রাথমিক শিক্ষাসহ ১৭টি বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিষদের অধীনে হস্তান্তর করা হলেও কার্যত সেখানে চেয়ারম্যানদের কোনো ভূমিকা থাকে না।
পিরোজপুর, পটুয়াখালী, ঝালকাঠিসহ কয়েকটি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান যুগান্তরকে বলেন, তারা শুধু পরিচয়টুকুই দিতে পারেন। কাজের কাজ কিছু করতে পারেন না। উপজেলা পরিষদের অধিকাংশ আর্থিক এবং প্রশাসনিক ক্ষমতাও ইউএনও’র হাতে।
তারা জানান, ১৭টি বিভাগের বিভিন্ন বিষয়ে কমিটি আছে ৯৬টি। এর মধ্যে বেশির ভাগ কমিটির প্রধান ইউএনও। এ নিয়ে বিভিন্ন উপজেলায় চেয়ারম্যান এবং ইউএনওদের মধ্যে বিরোধ লেগেই থাকে।
জানতে চাইলে পিরোজপুর উপজেলা চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান খালেক যুগান্তরকে বলেন, তার ওপরে সংসদ সদস্য এবং নিচে ইউএনও মাঝখানে থাকায় তিনি ‘স্যান্ডউইচ’ হয়ে গেছেন।
ওই চেয়ারম্যান দাবি করেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েও আমরা অনেকটাই এতিম। একটি গাড়ি, একটি অফিস আর একজন পিয়ন দিয়েই কার্যত চলছে উপজেলা পরিষদ।
ক্ষমতা নেই, কাজও নেই। পৌরসভার মেয়র ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানরাও তাদের চাইতে অনেক বেশি ক্ষমতাবান।
প্রায় সব উপজেলা চেয়ারম্যানের অভিন্ন অভিযোগ, উপজেলা পরিষদের নামে টেস্ট রিলিফ (টিআর), কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) ও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বরাদ্দ দেয়া হলে, তা স্থানীয় সংসদ সদস্যরা নিয়ন্ত্রণ করেন।
পরিষদের উপদেষ্টা হিসেবে সংসদ সদস্যদের পরামর্শ নেয়া বাধ্যতামূলক হওয়ায় এক্ষেত্রে চেয়ারম্যানরা একেবারেই অসহায়।
অথচ নিয়ম হল উপজেলা পরিষদ জনসংখ্যা ও ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনা করে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মাঝে তা বিতরণ করবেন। এছাড়া বিভিন্ন জাতীয় দিবস উদযাপনের বাজেট বরাদ্দ ও কার্যক্রম সার্বিকভাবে উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে হওয়ার কথা।
বাস্তবে তা সংসদ সদস্যের পরামর্শে ইউএনও করে থাকেন। উপজেলা চেয়ারম্যানদের ভূমিকা রাখার সুযোগ তেমন থাকে না।
উপজেলা চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান খালেক যুগান্তরকে বলেন, উপজেলা পরিষদ এখনও একটি অকার্যকর প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘদিনেও এই প্রতিষ্ঠানটি মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারেনি।
উপজেলা পরিষদ আইন সংশোধন করে পরিষদকে ক্ষমতা দেয়ার কথা বলা হলেও এর সবই আছে প্রতিশ্রুতির মধ্যে। পরিষদের কোনো নথিই উপজেলা চেয়ারম্যানদের দফতরে যায় না।
কোনো মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তার নামাজে জানাজায় অংশ নেয়া, দাওয়াত খাওয়া, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেয়া ছাড়া আর কোনো কাজই নেই উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের।
তিনি জানান, ২০০৯ সালে উপজেলা নির্বাচনের পর উপজেলা পরিষদকে কার্যকর করতে তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানরা দীর্ঘদিন আন্দোলন করেন। দাবি তোলেন উপজেলা পরিষদ আইন সংশোধনের।
পরিষদের উপদেষ্টা হিসেবে সংসদ সদস্যদের বাদ দেয়ার দাবিও জানিয়েছিলেন তারা। কিন্তু তাদের কিছু কিছু দাবি পূরণ হলেও পরিষদের উপদেষ্টা হিসেবে সংসদ সদস্যদের বাদ দেয়া হয়নি।
২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পরও আগের অবস্থাতেই রয়েছে পরিষদ। আইনের কিছু কিছু ধারায় সংশোধনী আনা হলেও পরিষদ এখনও কার্যকর হয়ে উঠতে পারেনি।
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মুক্তাদীর আহমেদ মুক্তা বলেন, ২০০৯ সালে প্রথম ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। ওই পাঁচ বছর কোনো কাজ ছিল না। ২০১৪ সালে আবারও নির্বাচিত হয়েছি। কিন্তু এখনও কোনো কাজ নেই। পরিষদ হিসেবে উপজেলা একটি অকার্যকর প্রতিষ্ঠান।
অবশ্য স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ মনে করেন, উপজেলা পরিষদকে কার্যকর করতে হলে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের আরও সক্রিয় হতে হবে। তিনি বলেন, আইনে যেসব ক্ষমতা দেয়া হয়েছে সেগুলো প্রয়োগ করে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অধিকাংশ চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানই আইনে দেয়া ক্ষমতা প্রয়োগ করছেন না, বা প্রয়োগ করতে পারছেন না।
সংশ্লিষ্টদের দাবি, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও পৌরসভার মেয়ররা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের জন্য সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হলেও পদাধিকারবলে তারা উপজেলা পরিষদের সদস্য। এজন্য তাদের আলাদাভাবে কোনো নির্বাচনে জয়ী হতে হয় না। ফলে তারা একটি নির্বাচনে জয়ী হলেই দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদের অধিকারী হচ্ছেন।
উপজেলা পরিষদে শুধু চেয়ারম্যান ও দুই ভাইস চেয়ারম্যান জনগণের সরাসরি ভোটে নির্র্বাচিত। বাকিরা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের জন্য নির্বাচিত। তারা কেউ উপজেলা পরিষদের জন্য নির্বাচিত নন। একটি উপজেলা পরিষদে এদের সংখ্যাও নির্বাচিতদের চেয়ে বেশি।
গোষ্ঠীগত কারণে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ইউপি ও পৌরসভা চেয়ারম্যানরা একজোট হয়ে নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবও করার নজির রয়েছে। আইন সংশোধনের মাধ্যমে এসব দূর করার দাবি জানান সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের এক ধরনের হতাশার মধ্যেই নির্বাচন কমিশন (ইসি) উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে।
আগামী ১০ মার্চ প্রথম ধাপের নির্বাচন। দলীয় প্রতীকে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হবে। দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে তফসিল ঘোষণা করেছে ইসি।
১৮ মার্চ ১২৯ উপজেলায় ভোট হবে। শিগগিরই বাকি উপজেলার তফসিল দেবে ইসি। দেশে বর্তমানে ৪৮৯টি উপজেলা পরিষদ রয়েছে। সর্বশেষ ২০১৪ সালের মার্চ-মে মাসে ছয় ধাপে ভোট হয়েছিল।
আইনে মেয়াদ শেষের পূর্ববর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে ভোট করার বাধ্যবাধকতা থাকায় এ নির্বাচন করতে হচ্ছে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে ১৯৮২ সালে দেশে উপজেলা পরিষদ ব্যবস্থার প্রবর্তন হলেও প্রথম মেয়াদে নির্বাচন হয় ১৯৮৫ সালে। দ্বিতীয় মেয়াদে ১৯৯০ সালে।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
কোন মন্তব্য নাই.