একনজরে সাদ্দাম হোসেন: প্রেসিডেন্ট থেকে ফাঁসীর মঞ্চে

ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট তিনি, যার নামের সঙ্গে মিশে আছে ইতিহাস। উত্থান ও পতন- জীবনের দুটি দিকেই চূড়ান্ত বিন্দুতে পৌঁছানো ‘সৌভাগ্যবান’ এই মানুষটির নাম সাদ্দাম হোসেন। একটা সময় তিনি ছিলেন ইরাকের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। এক নাগাড়ে প্রবল প্রতাপে দেশ শাসন করেছেন প্রায় চার দশক।
ক্ষমতাধর এই রাষ্ট্রনায়ককে জীবনের শেষ দিনগুলোতে মার্কিন সেনাবাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে এখান থেকে সেখানে। তবুও বাঁচতে পারেননি তিনি। শেষ পর্যন্ত ফাঁসির মঞ্চেই তার জীবনের চরম পরিণতি ঘটে।

যুবক সাদ্দাম হোসেন
জন্ম: ক্ষমতাধর এই মানুষটির পুরো নাম সাদ্দাম হোসেন আবদুল মাজিদ আল তিকরিতি। তিনি ১৯৩৭ সালের ২৮ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। ১৬ জুলাই ১৯৭৯ সালের ১৬ জুলাই ইরাকের পঞ্চম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় আরোহন করেন। আর চার দশক পর তার পতন হয় ২০০৩ সালের ৯ এপ্রিল।
জীবন ইতিহাস: ক্যারিয়ারের প্রথম দিকে সাদ্দাম হোসেন জেনারেল আহমেদ হাসান আল বকরের উপ-রাষ্ট্রপতি ছিলেন। সেই সময় তিনি দৃঢ়ভাবে সরকার ও সামরিক বাহিনীর মধ্যকার বিরোধের অবসান ঘটান এবং একটি নিরাপত্তা বাহিনী গড়ে তোলেন।

প্রেসিডেন্ট জেনারেল আহমেদ হাসান আল বকরের সাথে সাদ্দাম হোসেন
পরে ইরাকের রাষ্ট্রপতি ও বাথ পার্টির প্রধান হিসেবে আরব জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে ধর্মনিরপেক্ষ ও আধুনিক ইরাক গড়ে তোলার চেষ্টা করেন তিনি। অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেন। এ সময়ই ইরানের সঙ্গে দীর্ঘ ৯ বছরের (১৯৮০-১৯৮৮) যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন সাদ্দাম।
ইরাক-ইরান যুদ্ধের পরে ১৯৯১ সালে সাদ্দাম উপসাগরীয় যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। সাদ্দাম নিজের মতানুসারে ইরাকের স্থিতিশীলতার বিরোধী সবগুলো পক্ষকে নির্মূলের উদ্যোগী হন। সে সময় ইরাকের উপজাতীয় ও ধর্মীয় গোত্রগুলো, যারা স্বাধীনতা দাবি করছিল, যেমন, ইরাকি শিয়া মুসলিম, কুর্দি, ইরাকি তুর্কি জনগণ, এদের তিনি বিরোধী পক্ষ হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের নির্মূলের উদ্যোগ নেন।

সাদ্দাম হুসাইন এবং কুর্দিস্তানি ডেমোক্র্যাট পার্টির নেতা মুস্তফা আল-বারজানি
শেষ জীবন: ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে কয়েকটি পশ্চিমা রাষ্ট্র ইরাক আক্রমণ করে। তাদের যুক্তি ছিল, সাদ্দাম ব্যাপক ধ্বংসাত্মক জীবাণু অস্ত্র তৈরি করছেন (যদিও যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে এমন কোনো অস্ত্রের হদিস পাওয়া যায়নি)।
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সাদ্দাম মার্কিন সেনাবাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে পালিয়ে বেড়িয়েছেন ইরাকের এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্তে। তাকে লুকিয়ে থাকতে হয়েছিল মাটির তলার বাঙ্কারে। তবুও শেষ রক্ষা হয়নি। ২০০৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর আমেরিকান সেনাদের হাতে ধরা পড়েন তিনি। বিশ্বজুড়ে সমালোচনার আশঙ্কায় মার্কিন প্রশাসন তাকে হত্যা না করে গ্রেফতার করে। পরে তার বিচার হয় মার্কিন আদালতে।

আদালতে সাদ্দাম হোসেন
আর সেই বিচারের শুনানিও ঘটা করে অনেক দিন ধরে চালানো হয়। শুনানির সময় সাদ্দামকে তার আত্মপক্ষ সমর্থনে সওয়ালও করতে দেওয়া হয়। সবশেষে বিচারক তাকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন। ৩০ ডিসেম্বর ২০০৬ সালে ইরাকি সময় সকাল ৬টা ৬ মিনিটে ফাঁসি দিয়ে তার দণ্ড কার্যকর করা হয়।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
কোন মন্তব্য নাই.