ধূসর কৈশর এবং ফেলে আসা প্রেম
এখনো কি রাত নিঝুম হলে
শরৎ কাহিনী পাশে খোলা পড়ে থাকে
আকুল পিয়াসে আমারই তিয়াষে
অন্তর কেঁদে মরে
খুব জানতে ইচ্ছে করে।
শরৎচন্দ্রের লেখনি আর প্রথম প্রেম দু'টি হাত ধরাধরি করেই এসেছিলো আমার জীবনে। সেটা বয়সন্ধিকালের কথা। অব্যক্ত বিরহে বাম পাঁজরে চিনচিনে ব্যাথা অনুভূত হওয়ার সময়। মুখে হঠাৎ করে বিশ্রি রকমের গোঁপের রেখা দৃশ্যমান হওয়ার সময়। হঠাৎ বেমানান রুপে শরীরে পরিবর্তন দেখা দেয়ার সময়। বদলে যাওয়া গলার স্বর এবং মানসিক অঘোষিত পরিবর্তন বড়দের বিরক্তির কারন হওয়ার সময়। যখন দিনান্তে বাড়ি ফেরার সময় কেউ একজন আড়াল থেকে আমার অপেক্ষা করতো। আর আমি সেই অদৃশ্য শ্রোতাকে শুনাবো বলে উচ্চস্বরে গান ধরতাম। এটা সেই সদ্য শৈশবোত্তীর্ণ কৈশর বেলার কথা। যখন সাবালক হওয়ার বিবিধ লক্ষন শরীরে পুরোপুরি দৃশ্যমান হয়ে উঠেছিলো তখন আমাদের ঘরে ফেরার সময়টাও অপরাহ্ন পেরিয়ে সন্ধ্যার ক্ষানিকটা পর পর্যন্ত অলিখিত ভাবে ধার্য হয়েছিলো। একদিন সন্ধ্যাত্তীর্ণ সময় ঘরে ফিরছিলাম। সন্ধ্যান্ধকারে মনের ভীতি দূর করতে গলার স্বরটা ক্ষানিকটা উচ্চতায় তুলে গান ধরেছি-
এখনো কি সন্ধ্যা বেলায়,
আমার বাড়ি ফেরার সময় পেরিয়ে গেলে,
অনেক অভিমানে, চোখ দুটো কি জলে ভরে!
খুব জানতে ইচ্ছ করে,,
হঠাৎ চোখের সামনে একটা ছায়ামূর্তি দেখে গান আর চলার গতি একসাথে থামালাম। মাথার উপর এক ঝাঁক বলাকা ডানা ঝাপটায় মোহনীয় এক সুর তরঙ্গ তুলে উড়ে গেলো। কাছে কোথাও এক জোড়া কপোত-কপোতির ডাক ভেসে আসছে থেকে থেকে। অজস্র ঝিঁঝিঁ পোকার ঐকতান সাঁঝের চিরায়ত রহস্যময়তাকে পরিপূর্নতা দিয়েছে। সূর্য্য অস্তাচলে গেছে বহুকাল আগে কিন্তু বিগত সূর্য্যের ক্ষানিকটা ঘোলাটে আলো তখনো অবশিষ্ট ছিলো। আগমনি নিশার নীলিমাতলে অজস্র তরকারাজি ইতিমধ্যে চোখ মেলেছে। সেই আলোয় আজকের এই মহা সন্ধ্যায় আমার পথরোধ কারিনীকে চিনতে পারলাম। অনত নয়ন মুখে সলজ্জ হাসি, দ্বিধা আর সংকোচে বাকরুদ্ধ। হাতে রেপিং করা একটা চৌকোনো বস্তু নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভয় আর সংকোচে আমার সমস্ত শরীর থরথর করে কাঁপতে লাগলো। মেরুদন্ড বেয়ে একটা শীতল শিহরন বয়ে যাওয়া টের পেলাম। বিস্ময় ভরা চোখে তার দিকে তাকিয়ে মুখে শুধু একবার বললাম "তুমি"????
পথরোধ কারিনী হাতের প্যাকেটটি আমার দিকে বাড়িয়ে বললো - "এটা তোমার জন্য" আমি কম্পিত বাহু সন্মুখে ক্ষানিকটা প্রসারীত করে কৈশর প্রেমের প্রথম উপহার গ্রহন করলাম। পথরোধ কারিনী যেমনি নিরবে এসে দাঁড়িয়েছিলো, তেমনি নিবৃতে প্রস্থান করলো। আমার মন গঙ্গায় হর্ষ-বিষাদের দু'টি ধারা একই সাথে কলকল রবে প্রবাহীত হতে লাগলো। হর্ষ এ জন্যই, মনের অগোচরে আমি এই হরিন্ময়ির হৃদয় গহিনে এমন ভালো লাগার জায়গা তৈরী করতে পেরেছি যে, সে আমার জন্য এই অন্ধকার সন্ধ্যায় লোকচক্ষু উপেক্ষা করে ঘর ছেড়ে পথে এসে দাঁড়াতে পর্যন্ত পারে। আর বিষাদের কারন, বিরহী মনের সুদীর্ঘ প্রতিক্ষার পর কৈশর প্রেমের বল্গাহারা তীব্রতা সত্তেও মনের গহীন তলানীতে এই নিবৃতচারীনির কচি কিশালয়ের মত একখানি হাত একটু স্পর্শ করতে পারলাম না। মনের গোপন ইচ্ছে মনের অন্ধকার তলানীতে সমাহিত হলো।
সে সময় গুলো এমনি করেই চলতে লাগলো। আসা যাওয়ার পথে এমনি একটু আড় চোখে দেখা, কয়েক পলক চোখাচোখি হওয়া, কয়েক দিনের না দেখায় হৃদয়ের অন্ধ অতলে অষ্টদহনের বোবা যন্ত্রনা অনুভব করা। কৈশর কালে এই কাঁচা আবেগকে পাঠক যদি 'প্রেম' বলতে চান, তবে আমারও বলতে আপত্তি নাই যে, সেটা আমার কৈশর প্রেম ছিলো। কিন্তু ভালো লাগা কিংবা ভালোবাসা যে নামেই ডাকি না কেন, সেই অপরিনত বয়সের প্রেমের পরিধি এতটুকুতেই সীমাবদ্ধ ছিলো।
তারপর ঘড়ির কাঁটায় টিকটিক করে সেকেন্ড, মিনিট, ঘন্টা, দিন, সপ্তাহ, মাস, বছর এমনকি প্রায় দেড় যুগ কেটে গেলো। কত জল গড়ালো গঙ্গায়। কত অযুত-কোটি স্রোত উপছে পড়লো কর্ণফুলীর তীরে! সময় পাল্টালো তার গতিপথ। গ্রামের সেই দুরন্ত কিশোর এখন এই কংক্রিটের নগরীর জীবন যুদ্ধে ব্যাস্ত যুবক। কৈশর কালের সেই উত্তাল আবেগ মনের কোন গহীন কুঠরীতে জগদ্দল পাথর চাপা পরেছে যে আজ শত ডাকা ডাকিতেও তার সারা মেলে না। কিন্তু আমার শৈশবের সেই দিনগুলো এখনো আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় হয়ে আছে গহন বাস্তবতায়। তাই বছরান্তে এই কংক্রিটের জঙ্গল ছেড়ে ছুটে যায় সেই মেঠো পথ পানে, যেখানে আমার সোনা ঝরা অতিত আমাকে নিরন্তর হাত বাড়িয়ে ডাকে।
এবার ঈদ অবকাসে বাড়িতে যাওয়ার পরদিন একটা অচেনা আইডি থেকে মেসেঞ্জারে এরকম একটি ক্ষুদে বার্তা আসলো- "অনেক দিন পর আজ তোমাকে দেখলাম। ভেতরের তোমাকে জানবার অবকাস তো আমার নেই, তবে দুর থেকে তোমার বাহির পানে দেখে মনে হলো বহুকাল আগের সেই তুমি আর আজকের তুমি'র মাঝে বিস্তর ফারাক। সেই দুরন্ত উচ্ছাস, সেই প্রাণোচ্ছলতা আর তোমার মাঝে অবশিষ্ট নেই, সেই জায়গায় দখল নিয়েছে ধীর, স্থির আর অত্যন্ত মার্জিত একজন মানুষ। তবুও খুব জানতে ইচ্ছে করে,,,,
তুমি কি সেই আগের মতোই আছ,
নাকি অনেক খানি বদলে গেছ,,,
জানতে ইচ্ছে করে,,
ক্ষুদে বার্তাটি পড়ে প্রেরককে জানতে তার প্রোফাইলে ঢুকে বুঝলাম বহুকাল আগে আলো-আঁধারির মায়াময় এক সন্ধ্যায় আমার পথরোধ কারিনী আর আজকের এই বার্তা প্রেরক অভিন্ন সত্তা। খুব বেশি কিছু না, বাংলার এক নিবৃত পল্লিতে ঘর-কন্যা পেতে বসা এক সাধারন গৃহস্থ বধূ তার অতিত জীবনে প্রথম ভালো লাগার মানুষটির বর্তমান সম্পর্কে জানতে চেয়েছে। কোন চাওয়া পাওয়া নেই। অনুরোধ কিংবা মিনতিও ছিলো না কোথাও। ভাবলাম মানুষের জীবন সত্যিই হর্ষ আর বিষাদের মিশেলে এক মহা গ্রন্থ। যার কোথাও দুরন্ত রোমাঞ্চ! কোথাও নিরেট বিরহ! আর কোথাও আবেগ অনুভুতিহীন নির্মোহ বাস্তবতা!
কৈশর কালের বল্গাহারা আবেগে যা ছিলো সব থেকে ইপ্সিত, সময়ের পরিক্রমায় সেটা চাপা পড়ে যায় কালের ধূলীতে। বিস্মৃতির অন্ধকার জগত থেকে উঠে এসে গত দেড় যুগে যা এক মুহুর্তের জন্যও চিন্তায় স্থান পায়নি, আজ একটি ক্ষুদে বার্তায় ভেতরের সমস্ত মেকি সংস্কার চুর্ণবিচুর্ণ হয়ে গেলো। আবেগের দরজা আপনাতেই উন্মুক্ত হয়ে হু হু করে ঢুকতে লাগলো বিরহের বাতাস। বুঝলাম বয়সটা মানুষের জীবনে অজস্র কক্ষের এক বহুতল ইমারত যার কোনটিতে আঁধারাচ্ছন্ন, কোনটি আলোময় আর কোনটি আলো-আঁধারীর স্বপ্নময়তা। একেকটি কক্ষের আবহ একেক রকম বৈচিত্রময়। একটির সমীকরণ কখনো অন্যটির সাথে মেলে না, নাগালও পায় না।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
শরৎ কাহিনী পাশে খোলা পড়ে থাকে
আকুল পিয়াসে আমারই তিয়াষে
অন্তর কেঁদে মরে
খুব জানতে ইচ্ছে করে।
শরৎচন্দ্রের লেখনি আর প্রথম প্রেম দু'টি হাত ধরাধরি করেই এসেছিলো আমার জীবনে। সেটা বয়সন্ধিকালের কথা। অব্যক্ত বিরহে বাম পাঁজরে চিনচিনে ব্যাথা অনুভূত হওয়ার সময়। মুখে হঠাৎ করে বিশ্রি রকমের গোঁপের রেখা দৃশ্যমান হওয়ার সময়। হঠাৎ বেমানান রুপে শরীরে পরিবর্তন দেখা দেয়ার সময়। বদলে যাওয়া গলার স্বর এবং মানসিক অঘোষিত পরিবর্তন বড়দের বিরক্তির কারন হওয়ার সময়। যখন দিনান্তে বাড়ি ফেরার সময় কেউ একজন আড়াল থেকে আমার অপেক্ষা করতো। আর আমি সেই অদৃশ্য শ্রোতাকে শুনাবো বলে উচ্চস্বরে গান ধরতাম। এটা সেই সদ্য শৈশবোত্তীর্ণ কৈশর বেলার কথা। যখন সাবালক হওয়ার বিবিধ লক্ষন শরীরে পুরোপুরি দৃশ্যমান হয়ে উঠেছিলো তখন আমাদের ঘরে ফেরার সময়টাও অপরাহ্ন পেরিয়ে সন্ধ্যার ক্ষানিকটা পর পর্যন্ত অলিখিত ভাবে ধার্য হয়েছিলো। একদিন সন্ধ্যাত্তীর্ণ সময় ঘরে ফিরছিলাম। সন্ধ্যান্ধকারে মনের ভীতি দূর করতে গলার স্বরটা ক্ষানিকটা উচ্চতায় তুলে গান ধরেছি-
এখনো কি সন্ধ্যা বেলায়,
আমার বাড়ি ফেরার সময় পেরিয়ে গেলে,
অনেক অভিমানে, চোখ দুটো কি জলে ভরে!
খুব জানতে ইচ্ছ করে,,
হঠাৎ চোখের সামনে একটা ছায়ামূর্তি দেখে গান আর চলার গতি একসাথে থামালাম। মাথার উপর এক ঝাঁক বলাকা ডানা ঝাপটায় মোহনীয় এক সুর তরঙ্গ তুলে উড়ে গেলো। কাছে কোথাও এক জোড়া কপোত-কপোতির ডাক ভেসে আসছে থেকে থেকে। অজস্র ঝিঁঝিঁ পোকার ঐকতান সাঁঝের চিরায়ত রহস্যময়তাকে পরিপূর্নতা দিয়েছে। সূর্য্য অস্তাচলে গেছে বহুকাল আগে কিন্তু বিগত সূর্য্যের ক্ষানিকটা ঘোলাটে আলো তখনো অবশিষ্ট ছিলো। আগমনি নিশার নীলিমাতলে অজস্র তরকারাজি ইতিমধ্যে চোখ মেলেছে। সেই আলোয় আজকের এই মহা সন্ধ্যায় আমার পথরোধ কারিনীকে চিনতে পারলাম। অনত নয়ন মুখে সলজ্জ হাসি, দ্বিধা আর সংকোচে বাকরুদ্ধ। হাতে রেপিং করা একটা চৌকোনো বস্তু নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভয় আর সংকোচে আমার সমস্ত শরীর থরথর করে কাঁপতে লাগলো। মেরুদন্ড বেয়ে একটা শীতল শিহরন বয়ে যাওয়া টের পেলাম। বিস্ময় ভরা চোখে তার দিকে তাকিয়ে মুখে শুধু একবার বললাম "তুমি"????
পথরোধ কারিনী হাতের প্যাকেটটি আমার দিকে বাড়িয়ে বললো - "এটা তোমার জন্য" আমি কম্পিত বাহু সন্মুখে ক্ষানিকটা প্রসারীত করে কৈশর প্রেমের প্রথম উপহার গ্রহন করলাম। পথরোধ কারিনী যেমনি নিরবে এসে দাঁড়িয়েছিলো, তেমনি নিবৃতে প্রস্থান করলো। আমার মন গঙ্গায় হর্ষ-বিষাদের দু'টি ধারা একই সাথে কলকল রবে প্রবাহীত হতে লাগলো। হর্ষ এ জন্যই, মনের অগোচরে আমি এই হরিন্ময়ির হৃদয় গহিনে এমন ভালো লাগার জায়গা তৈরী করতে পেরেছি যে, সে আমার জন্য এই অন্ধকার সন্ধ্যায় লোকচক্ষু উপেক্ষা করে ঘর ছেড়ে পথে এসে দাঁড়াতে পর্যন্ত পারে। আর বিষাদের কারন, বিরহী মনের সুদীর্ঘ প্রতিক্ষার পর কৈশর প্রেমের বল্গাহারা তীব্রতা সত্তেও মনের গহীন তলানীতে এই নিবৃতচারীনির কচি কিশালয়ের মত একখানি হাত একটু স্পর্শ করতে পারলাম না। মনের গোপন ইচ্ছে মনের অন্ধকার তলানীতে সমাহিত হলো।
সে সময় গুলো এমনি করেই চলতে লাগলো। আসা যাওয়ার পথে এমনি একটু আড় চোখে দেখা, কয়েক পলক চোখাচোখি হওয়া, কয়েক দিনের না দেখায় হৃদয়ের অন্ধ অতলে অষ্টদহনের বোবা যন্ত্রনা অনুভব করা। কৈশর কালে এই কাঁচা আবেগকে পাঠক যদি 'প্রেম' বলতে চান, তবে আমারও বলতে আপত্তি নাই যে, সেটা আমার কৈশর প্রেম ছিলো। কিন্তু ভালো লাগা কিংবা ভালোবাসা যে নামেই ডাকি না কেন, সেই অপরিনত বয়সের প্রেমের পরিধি এতটুকুতেই সীমাবদ্ধ ছিলো।
তারপর ঘড়ির কাঁটায় টিকটিক করে সেকেন্ড, মিনিট, ঘন্টা, দিন, সপ্তাহ, মাস, বছর এমনকি প্রায় দেড় যুগ কেটে গেলো। কত জল গড়ালো গঙ্গায়। কত অযুত-কোটি স্রোত উপছে পড়লো কর্ণফুলীর তীরে! সময় পাল্টালো তার গতিপথ। গ্রামের সেই দুরন্ত কিশোর এখন এই কংক্রিটের নগরীর জীবন যুদ্ধে ব্যাস্ত যুবক। কৈশর কালের সেই উত্তাল আবেগ মনের কোন গহীন কুঠরীতে জগদ্দল পাথর চাপা পরেছে যে আজ শত ডাকা ডাকিতেও তার সারা মেলে না। কিন্তু আমার শৈশবের সেই দিনগুলো এখনো আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় হয়ে আছে গহন বাস্তবতায়। তাই বছরান্তে এই কংক্রিটের জঙ্গল ছেড়ে ছুটে যায় সেই মেঠো পথ পানে, যেখানে আমার সোনা ঝরা অতিত আমাকে নিরন্তর হাত বাড়িয়ে ডাকে।
এবার ঈদ অবকাসে বাড়িতে যাওয়ার পরদিন একটা অচেনা আইডি থেকে মেসেঞ্জারে এরকম একটি ক্ষুদে বার্তা আসলো- "অনেক দিন পর আজ তোমাকে দেখলাম। ভেতরের তোমাকে জানবার অবকাস তো আমার নেই, তবে দুর থেকে তোমার বাহির পানে দেখে মনে হলো বহুকাল আগের সেই তুমি আর আজকের তুমি'র মাঝে বিস্তর ফারাক। সেই দুরন্ত উচ্ছাস, সেই প্রাণোচ্ছলতা আর তোমার মাঝে অবশিষ্ট নেই, সেই জায়গায় দখল নিয়েছে ধীর, স্থির আর অত্যন্ত মার্জিত একজন মানুষ। তবুও খুব জানতে ইচ্ছে করে,,,,
তুমি কি সেই আগের মতোই আছ,
নাকি অনেক খানি বদলে গেছ,,,
জানতে ইচ্ছে করে,,
ক্ষুদে বার্তাটি পড়ে প্রেরককে জানতে তার প্রোফাইলে ঢুকে বুঝলাম বহুকাল আগে আলো-আঁধারির মায়াময় এক সন্ধ্যায় আমার পথরোধ কারিনী আর আজকের এই বার্তা প্রেরক অভিন্ন সত্তা। খুব বেশি কিছু না, বাংলার এক নিবৃত পল্লিতে ঘর-কন্যা পেতে বসা এক সাধারন গৃহস্থ বধূ তার অতিত জীবনে প্রথম ভালো লাগার মানুষটির বর্তমান সম্পর্কে জানতে চেয়েছে। কোন চাওয়া পাওয়া নেই। অনুরোধ কিংবা মিনতিও ছিলো না কোথাও। ভাবলাম মানুষের জীবন সত্যিই হর্ষ আর বিষাদের মিশেলে এক মহা গ্রন্থ। যার কোথাও দুরন্ত রোমাঞ্চ! কোথাও নিরেট বিরহ! আর কোথাও আবেগ অনুভুতিহীন নির্মোহ বাস্তবতা!
কৈশর কালের বল্গাহারা আবেগে যা ছিলো সব থেকে ইপ্সিত, সময়ের পরিক্রমায় সেটা চাপা পড়ে যায় কালের ধূলীতে। বিস্মৃতির অন্ধকার জগত থেকে উঠে এসে গত দেড় যুগে যা এক মুহুর্তের জন্যও চিন্তায় স্থান পায়নি, আজ একটি ক্ষুদে বার্তায় ভেতরের সমস্ত মেকি সংস্কার চুর্ণবিচুর্ণ হয়ে গেলো। আবেগের দরজা আপনাতেই উন্মুক্ত হয়ে হু হু করে ঢুকতে লাগলো বিরহের বাতাস। বুঝলাম বয়সটা মানুষের জীবনে অজস্র কক্ষের এক বহুতল ইমারত যার কোনটিতে আঁধারাচ্ছন্ন, কোনটি আলোময় আর কোনটি আলো-আঁধারীর স্বপ্নময়তা। একেকটি কক্ষের আবহ একেক রকম বৈচিত্রময়। একটির সমীকরণ কখনো অন্যটির সাথে মেলে না, নাগালও পায় না।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
কোন মন্তব্য নাই.