নিঃশব্দে কাঁদছে পাহাড়
নিঃশব্দে কাঁদে পাহাড় :
--------------------------
অবিভক্ত ভারতের পূর্ব পূর্ববঙ্গ, দেশভাগের পর পূর্ব পাকিস্তান আজকের অধুনা বাংলাদেশ । বাংলাদেশের অন্তর্গত পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের সমগ্র আয়তনের এক দশমাংশ ৫০৯৩ বর্গমাইল । এই অঞ্চলের ৯৯% শতাংশ মানুষ ছিল জুম্ম(চাকমা), আদিবাসী, এদের কিছু মানুষ বৌদ্ধ ধর্ম মানত । ভারত ভাগের পরে পরেই পাকিস্তানের মুসলমান শাসকদের হাত ধরে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশে এদের উপর নামিয়ে আনা হয়েছে অকথ্য অত্যাচার, যার ফলে এদের জনসংখ্যা আজকে প্রায় ত্রিশ শতাংশে নেমে এসেছে । আজকে যখন সোশ্যাল মিডিয়াতে বা প্রিন্ট মিডিয়াতে দেখেন বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে কোনো ধর্ষিতা নারীর মৃত, নিথর লাশ সিলিং থেকে ঝুলছে, তখন আঁতকে না উঠে এদের আজকের এই পরিণতির ইতিহাসের উৎস সন্ধান করতে একটু পড়াশোনা করুন । শিহরিত হবেন এদের উপরে অত্যাচার ও বঞ্চনার ইতিহাসের ধারাবাহিকতা জানলে পরে ।
পকিস্তান গঠনের কয়েকদিনের মধ্যেই পাক সরকার কৌশলে ওই অঞ্চলের আদিবাসী, বৌদ্ধদের উচ্ছেদ করে মুসলমান প্রধান অঞ্চল বানানোর প্রক্রিয়ায় লিপ্ত হয় । নিয়মিত সরকারি মদতে পূর্ববাংলার সমতলের বাঙালি মুসলমানদের ওই অঞ্চলে প্রবেশ করিয়ে নারী ধর্ষণ, বলপূর্বক বিয়ে, জমি দখল, ধর্মান্তকরণ এবং নরহত্যা চলতেই থাকে । প্রশাসন এদের কোনো নালিশেই কোনোদিন কর্ণপাত করেনি । এই প্রক্রিয়া দীর্ঘ ২৪ বছর এদের মুখ বুঁজে সহ্য করতে হয়েছিল (১৯৪৭-১৯৭১), বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত । ১৯৭১ এ বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এই পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী, বৌদ্ধরাও তাতে সামিল হয় । এখানে উল্লেখ্য, মৃগাঙ্ক চাকমা নামের এক আদিবাসী যুবক, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মেজর জিয়াকে কাঁধে করে কমলছড়ির চেঙ্গী নদী পার করিয়ে দিয়েছিলো । ইতিহাসের কি নিদারুন ব্যাঙ্গ ! কিছু বছর পরে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে যখন মেজর জিয়া স্বাধীন বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসে, তখন এই জিয়ার সেনাবাহিনীই মৃগাঙ্ক চাকমাকে ১৯৮৭ সালে তার মা বাবার সামনে গুলি করে হত্যা করে মারে । মুক্তিযুদ্ধে সহায়তার অতুলনীয় পুরস্কার !! বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে সাংসদ মানবেন্দ্র চাকমার নেতৃত্বে ১২ জনের এক পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিনিধি দল , স্বাধীন বাংলাদেশের বেতাজ বাদশা মুজিবর রহমানের কাছে এক স্মারকলিপি দেয় । মুজিবর রহমান সেটা না পরেই ছুঁড়ে নিক্ষেপ করেছিল, মানবেন্দ্র চাকমার দিকে এবং এই প্রতিনিধি দলকে সৌজন্য দেখিয়ে বসতে পর্যন্ত বলেনি । মিটিং স্থায়ী হয়েছিল কেবল ৩ থেকে ৪ মিনিট । মুজিব সোজাসুজি তাদের কঠোর নির্দেশের ভাষায় বলে , 'নিজেদের জাতীয় পরিচয় ভুলে বাঙালি হয়ে যেতে,বাঙালি মুসলমানেরা পার্বত্য চট্টগ্রাম ছেয়ে ফেলবে ।' এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্ট অনুযায়ী এর পরে পরেই পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও পুলিশ যৌথভাবে উপজাতীয় গ্রামগুলোর উপরে আক্রমণ চালায় । এতে করে কয়েক হাজার নারী,পুরুষ ও শিশু নিহত হয় । বহু যুবতীদের অপহরণ করা হয় । মেয়েদের স্কুলে অভিভাবকদের ডেকে শাঁসানো হয় যে, এই নিয়ে মুখ খুললে প্রত্যেক ছাত্রীকে ধর্ষণ করে তাদের গর্ভে মুমিন মুসলমান সন্তান দিয়ে দেওয়া হবে । এরপরে স্বাধীন বাংলাদেশে এলো মেজর জিয়ার রাজ । ১৯৭৯ এর প্রথম দিকে জেল থেকে দাগী আসামিদের ছেড়ে দিয়ে অভিবাসন করানো হলো পার্বত্য চট্টগ্রামে । এই আসামিরা পরবর্তীতে দাড়ি, টুপি আর জোব্বায় সজ্জিত হয়ে, ৫৬ মুসলিম দেশের আর্থিক সহায়তায় সেখানে মসজিদ স্থাপন করে মুয়াজ্জিন হয়ে বসলো । ১২২ ট্রাক বহিরাগত বাঙালি মুসলমান আমদানি করা হয়েছিল সে সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে । চললো জোর করে ধর্মান্তর, অবাধে নারী ধর্ষণ, খুন, জখম, জমি দখল । শিক্ষকের ঘরে ঢুকে, তাকে বেঁধে রেখে সেনা অফিসার অবলীলায় ধর্ষণ করলো তার স্ত্রীকে, ১০ বছরের উর্দ্ধে চাকমা পুরুষদের হত্যা করে , তাদের নারীদের বলপূর্বক নিকাহ করা হলো । মা ও মেয়ে একই বিছানায় ধর্ষিত হলো.........!
আজ সোশ্যাল মিডিয়াতে যখন দেখেন বাবা তার মেয়েদের ধর্ষিত নিথর দেহের পাশে মাথায় হাত দিয়ে কান্নায় ভেঙে পরেছে, আদিবাসী ধর্ষিতা নারীর নিথর লাশ সিলিং থেকে ঝুলছে, কখনো এর ভেতরে ঢুকে দেখেছেন কোথায় এর উৎস, কারা দায়ী ? চারটে ইমো দিয়ে, খান কতক কমেন্ট করার দিন গেছে । গোড়ায় আঘাত করুন !!
রেফ : নিঃশব্দ সন্ত্রাস-রবীন্দ্রনাথ দত্ত ।
©ফেসবুক থেকে সংগ্রহীত
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
--------------------------
অবিভক্ত ভারতের পূর্ব পূর্ববঙ্গ, দেশভাগের পর পূর্ব পাকিস্তান আজকের অধুনা বাংলাদেশ । বাংলাদেশের অন্তর্গত পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের সমগ্র আয়তনের এক দশমাংশ ৫০৯৩ বর্গমাইল । এই অঞ্চলের ৯৯% শতাংশ মানুষ ছিল জুম্ম(চাকমা), আদিবাসী, এদের কিছু মানুষ বৌদ্ধ ধর্ম মানত । ভারত ভাগের পরে পরেই পাকিস্তানের মুসলমান শাসকদের হাত ধরে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশে এদের উপর নামিয়ে আনা হয়েছে অকথ্য অত্যাচার, যার ফলে এদের জনসংখ্যা আজকে প্রায় ত্রিশ শতাংশে নেমে এসেছে । আজকে যখন সোশ্যাল মিডিয়াতে বা প্রিন্ট মিডিয়াতে দেখেন বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে কোনো ধর্ষিতা নারীর মৃত, নিথর লাশ সিলিং থেকে ঝুলছে, তখন আঁতকে না উঠে এদের আজকের এই পরিণতির ইতিহাসের উৎস সন্ধান করতে একটু পড়াশোনা করুন । শিহরিত হবেন এদের উপরে অত্যাচার ও বঞ্চনার ইতিহাসের ধারাবাহিকতা জানলে পরে ।
পকিস্তান গঠনের কয়েকদিনের মধ্যেই পাক সরকার কৌশলে ওই অঞ্চলের আদিবাসী, বৌদ্ধদের উচ্ছেদ করে মুসলমান প্রধান অঞ্চল বানানোর প্রক্রিয়ায় লিপ্ত হয় । নিয়মিত সরকারি মদতে পূর্ববাংলার সমতলের বাঙালি মুসলমানদের ওই অঞ্চলে প্রবেশ করিয়ে নারী ধর্ষণ, বলপূর্বক বিয়ে, জমি দখল, ধর্মান্তকরণ এবং নরহত্যা চলতেই থাকে । প্রশাসন এদের কোনো নালিশেই কোনোদিন কর্ণপাত করেনি । এই প্রক্রিয়া দীর্ঘ ২৪ বছর এদের মুখ বুঁজে সহ্য করতে হয়েছিল (১৯৪৭-১৯৭১), বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত । ১৯৭১ এ বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এই পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী, বৌদ্ধরাও তাতে সামিল হয় । এখানে উল্লেখ্য, মৃগাঙ্ক চাকমা নামের এক আদিবাসী যুবক, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মেজর জিয়াকে কাঁধে করে কমলছড়ির চেঙ্গী নদী পার করিয়ে দিয়েছিলো । ইতিহাসের কি নিদারুন ব্যাঙ্গ ! কিছু বছর পরে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে যখন মেজর জিয়া স্বাধীন বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসে, তখন এই জিয়ার সেনাবাহিনীই মৃগাঙ্ক চাকমাকে ১৯৮৭ সালে তার মা বাবার সামনে গুলি করে হত্যা করে মারে । মুক্তিযুদ্ধে সহায়তার অতুলনীয় পুরস্কার !! বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে সাংসদ মানবেন্দ্র চাকমার নেতৃত্বে ১২ জনের এক পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিনিধি দল , স্বাধীন বাংলাদেশের বেতাজ বাদশা মুজিবর রহমানের কাছে এক স্মারকলিপি দেয় । মুজিবর রহমান সেটা না পরেই ছুঁড়ে নিক্ষেপ করেছিল, মানবেন্দ্র চাকমার দিকে এবং এই প্রতিনিধি দলকে সৌজন্য দেখিয়ে বসতে পর্যন্ত বলেনি । মিটিং স্থায়ী হয়েছিল কেবল ৩ থেকে ৪ মিনিট । মুজিব সোজাসুজি তাদের কঠোর নির্দেশের ভাষায় বলে , 'নিজেদের জাতীয় পরিচয় ভুলে বাঙালি হয়ে যেতে,বাঙালি মুসলমানেরা পার্বত্য চট্টগ্রাম ছেয়ে ফেলবে ।' এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্ট অনুযায়ী এর পরে পরেই পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও পুলিশ যৌথভাবে উপজাতীয় গ্রামগুলোর উপরে আক্রমণ চালায় । এতে করে কয়েক হাজার নারী,পুরুষ ও শিশু নিহত হয় । বহু যুবতীদের অপহরণ করা হয় । মেয়েদের স্কুলে অভিভাবকদের ডেকে শাঁসানো হয় যে, এই নিয়ে মুখ খুললে প্রত্যেক ছাত্রীকে ধর্ষণ করে তাদের গর্ভে মুমিন মুসলমান সন্তান দিয়ে দেওয়া হবে । এরপরে স্বাধীন বাংলাদেশে এলো মেজর জিয়ার রাজ । ১৯৭৯ এর প্রথম দিকে জেল থেকে দাগী আসামিদের ছেড়ে দিয়ে অভিবাসন করানো হলো পার্বত্য চট্টগ্রামে । এই আসামিরা পরবর্তীতে দাড়ি, টুপি আর জোব্বায় সজ্জিত হয়ে, ৫৬ মুসলিম দেশের আর্থিক সহায়তায় সেখানে মসজিদ স্থাপন করে মুয়াজ্জিন হয়ে বসলো । ১২২ ট্রাক বহিরাগত বাঙালি মুসলমান আমদানি করা হয়েছিল সে সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে । চললো জোর করে ধর্মান্তর, অবাধে নারী ধর্ষণ, খুন, জখম, জমি দখল । শিক্ষকের ঘরে ঢুকে, তাকে বেঁধে রেখে সেনা অফিসার অবলীলায় ধর্ষণ করলো তার স্ত্রীকে, ১০ বছরের উর্দ্ধে চাকমা পুরুষদের হত্যা করে , তাদের নারীদের বলপূর্বক নিকাহ করা হলো । মা ও মেয়ে একই বিছানায় ধর্ষিত হলো.........!
আজ সোশ্যাল মিডিয়াতে যখন দেখেন বাবা তার মেয়েদের ধর্ষিত নিথর দেহের পাশে মাথায় হাত দিয়ে কান্নায় ভেঙে পরেছে, আদিবাসী ধর্ষিতা নারীর নিথর লাশ সিলিং থেকে ঝুলছে, কখনো এর ভেতরে ঢুকে দেখেছেন কোথায় এর উৎস, কারা দায়ী ? চারটে ইমো দিয়ে, খান কতক কমেন্ট করার দিন গেছে । গোড়ায় আঘাত করুন !!
রেফ : নিঃশব্দ সন্ত্রাস-রবীন্দ্রনাথ দত্ত ।
©ফেসবুক থেকে সংগ্রহীত
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
মন্তব্য: ১ টি
১৫ জুলাই ’১৮ রাত ১২:৪১
সুমন:
রুপম ভাই, গল্পটা একটু বেশি হয়ে গেলো না?
বাবার চাকুরির সুবাদে জীবনের একটা বড় সময় কাটিয়েছি বান্দরবনে। এখনো আমার প্রচুর উপজাতীয় বন্ধু আছে। এখনো বান্দরবনে গেলে বাঙালিদের চাইতে উপজাতীয়দের সাথে বেশি সময় কাটাই। এসব গাঁজাখুরি কথাবার্তা বন্ধ করা দরকার। বাঙ্গালি-পাহাড়ি বন্ধন থাকবে এবং আছে। আপনাদের মতো কিছু কীট সেখানে অশান্তি করছে।