জলবায়ু পরিবর্তন কি? এর প্রভাবে কি হয়?

আজকাল অনেক শীতপ্রধান দেশেও শীতকালে সতেজ সবজি পাওয়া যাচ্ছে। এগুলো গ্রীষ্মকালে জন্মিয়ে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত স্টোরেজ থেকে পরে আনা নয়। এগুলো বহুদূরের বিষুবীয় উষ্ণ অঞ্চলের কোন দেশে উৎপন্ন নয়। পক্ষান্তরে শীতকালেই স্থানীয়ভাবে গ্রীনহাউসে উষ্ণ ও আলোকিত ঘরে উৎপন্ন সবজি – একদম সতেজ। গ্রীনহাউস আমাদের পক্ষে এক ম্যাজিকের মতো কাজ করে।
সহজভাবে বলতে গেলে গ্রীনহাউস হচ্ছে একটা স্বচ্ছ আস্তরণ দিয়ে বানানো ঘর। এই স্বচ্ছ আস্তরণের মধ্য দিয়ে high frequency সূর্য্যরশ্মি প্রবেশ করতে পারে কিন্তু low frequency প্রতিফলিত ও বিকীরিত রশ্মি আস্তরণের বাইরে যেতে পারে না। ফলে আস্তরণের মধ্যে ঘরের উষ্ণতা বৃদ্ধি পায় যা বাইরের তুলনায় বেশি।

এবার সারা পৃথিবীকে একটি বড় গ্রীনহাউস হিসেবে কল্পনা করা যেতে পারে যেখানে গ্রীনহাউস গ্যাস বায়ুমন্ডলের বাইরে একটা কম্বলের ন্যায় আস্তরণ তৈরী করে, যার ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ে। সহজেই অনুমেয়, যদি এই গ্রীনহাউস গ্যাসগুলো বায়ুমন্ডলে না থাকত তাহলে পৃথিবীর তাপমাত্রা অনেক কম হত। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হল, এই গ্রীনহাউস গ্যাসগুলো সভ্যতার ক্রমবিকাশের সাথে দ্রুতহারে বৃদ্ধি পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে অভিশাপ বয়ে এনেছে। এই অভিশাপের নাম বৈশ্বিক উষ্ণায়ন।
কোন স্থানের কোন এক নির্দিষ্ট সময়ের বায়ুর অবস্থাকে আবহাওয়া বলে। অপরপক্ষে, জলবায়ু হল ঐ স্থানের দীর্ঘদিনের আবহাওয়ার গড় অবস্থা। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, বাংলাদেশের জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ, আবার ভারতের থর মরভূমির জলবায়ু উষ্ণ ও শুষ্ক। জলবায়ুর পরিবর্তন হল দীর্ঘ দিনের জলবায়ুর ধরণে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন ঘটা। হিমালয়ের হিমবাহ এক গুরুত্বপূর্ণ পানির যোগানদাতা। কিন্তু বিগত দশকগুলোতে হিমালয়ের হিমবাহের দ্রুত গলনের ফলে হিমবাহের সংকোচন ঘটছে। বিজ্ঞানীদের মতে, হিমালয়ের হিমবাহ দ্রুতগলনের পিছনে পৃথিবীর তাপমাত্রা দ্রুতহারে বাড়ার প্রভাব রয়েছে।

পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের উষ্ণতা গত ১০০ বছরে গড়ে প্রায় ০.৭৪ (+/- ০.১৮) ডিগ্রী সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। এই উষ্ণতা বৃদ্ধির পরিমাণপৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন মাত্রায় দেখা দিচ্ছে। যেমন উত্তর গোলার্ধের উষ্ণতা দক্ষিণ গোলার্ধের চেয়ে দ্রুত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের উপর আন্তঃরাষ্ট্রীয় জলবায়ু পরিবর্তন প্যানেল (Intergovernmental Panel on Climate Change, IPCC) এই উষ্ণতা বৃদ্ধির পিছনে মনুষ্যজনিত উষ্ণতা বৃদ্ধিকারক গ্রীনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধিকে মূলতঃ দায়ী করেছে। যদিও পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনের পিছনে কিছু প্রাকৃতিক কারণও দায়ী, কিন্তু তার প্রভাব অনেক কম ও অনেক ধীর প্রকৃতির।
পৃথিবীর উষ্ণতা মুলতঃ দুটি কারণে বৃদ্ধি পেতে পারে। প্রাকৃতিক কারণ ও মনুষ্যজনিত উষ্ণতা বৃদ্ধিকারক গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি। প্রাকৃতিক কারণগুলোর মধ্যে পৃথিবীর অক্ষরেখার পরিবর্তন, সূর্যরশ্মির পরিবর্তন, মহাসাগরীয় পরিবর্তন ও আগ্নেয়গিরির অগ্নোৎপাত মুলতঃ দায়ী। কতিপয় বিশিষ্ট বিজ্ঞানী মনুষ্যজনিত উষ্ণতা বৃদ্ধিকারক গ্যাস নিঃসরণের পরিমাণ বৃদ্ধিকে কর্তমান কালের উষ্ণতাবৃদ্ধির মূল কারণ হিসেবে অভিহিত করেছেন। এই গ্রীনহাউস গ্যাসগুলোর মধ্যে কার্বন-ডাই-অক্সাইড (CO2), জলীয়বাষ্প, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, ক্লোরো-ফ্লোরো-কার্বন (CFC) অন্তর্ভূক্ত। এসব গ্রীনহাউস গ্যাস পৃথিবীর চারপাশে কম্বলের মতো একটা আবরণ তৈরী করে, যা ভেদ করে সূর্যরশ্মি প্রবেশ করতে পারে, কিন্তু বের হতে পারে না। এর ফলে ভূপৃষ্ঠ-সংলগ্ন বায়ুমন্ডলের উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়।
পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধির পিছনে বহুলাংশে দায়ী কার্বন-ডাই-অক্সাইড এর পরিমাণ প্রাক্-শিল্পযুগ সময়ের (১৭৫০ সাল) থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত ১০০ ppmv (parts per million by volume) বৃদ্ধি পেয়েছে। তার মধ্যে বিগত ৩০-৪০ বছরেই প্রায় ৫০ppmv বৃদ্ধি পেয়েছে। সভ্যতা বিকাশের জন্য আমরা বহুলাংশে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি জীবাশ্ম জ্বালানির উপর, যা প্রচুর পরিমাণেকার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ করে। আবার দ্রুতহারে বন-ধ্বংস ও ভূমিবিন্যাসের পরিবর্তন কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণকে বাড়িয়ে দিচ্ছে, কারণ উদ্ভিদ কার্বন-ডাই-অক্সাইডের সঞ্চয় ভান্ডার হিসেবে কাজ করে। কিন্তু বন ধ্বংসের ফলে সেই কার্বন-ডাই-অক্সাইড বায়ুমন্ডলে মুক্ত অবস্থায় থাকে।
সভ্যতার ক্রমবিকাশের সাথে গ্রীনহাউস গ্যাসের নিঃসরণের হার ওতপ্রোতভাবে জড়িত। গ্রীনহাউস গ্যাসের নিঃসরণের হার শিল্পোন্নত ও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ দেশগুলো যেমন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, কানাডা, জাপান, অষ্ট্রেলিয়া, জার্মানী, ফ্রান্স, ইতালিতে অনেক বেশী। আবার বিগত বছরগুলোতে ভারত ও চীনের গ্রীনহাউস গ্যাসের নিঃসরণের হার অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। কতিপয় গবেষক জানিয়েছেন চীনের উন্নয়নের মাত্রা অব্যাহত থাকলে অদূর ভবিষ্যতে চীনের গ্রীনহাউস গ্যাসের নিঃসরণের হার যুক্তরাষ্ট্রের হারকে ছাড়িয়ে যাবে।
গ্রীনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধির ভয়াবহতা উপলব্ধি করে ১৯৯৭ সালে জাপানের কিয়োটো শহরে একটা প্রটোকল গঠন করা হয়, যা ‘কিয়োটো প্রটোকল’ নামে পরিচিত, যাতে ৩৭টি শিল্পপ্রধান দেশ তাদের গ্রীনহাউস গ্যাসের নিঃসরণের হার কমানোর লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে। এই লক্ষ্যমাত্রা স্থির করাই যথেষ্ট নয়, সত্যিকার অর্থে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হবে। এমনকি বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখিয়েছেন, এখনই যদি কোন দৈবক্রমে মনুষ্যজনিত গ্রীনহাউস গ্যাস নিঃসরণ বন্ধ করা যায়, তারপরও বিশ্বের তাপমাত্রা ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পেতেই থাকবে, যদিও বৃদ্ধির হার বর্তমান হারের চেয়ে অনেক কম হবে। কারণ হল বর্তমানে বায়ুমন্ডলে গ্রীনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বেশী এবং মুখ্য গ্রীনহাউস গ্যাস কার্বন-ডাই-অক্সাইড-এর দীর্ঘস্থায়ী জীবন। তার অর্থ আমাদের যেমন নিঃসরণ মাত্রা কমাতে হবে, সাথে সাথে জলবায়ুর পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।
পৃথিবীর অর্থনৈতিক উন্নয়ন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার, ভূমিবিন্যাস ইত্যাদি তথ্যকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন বিজ্ঞানীগণ দেখিয়েছেন, একুশ শতাব্দীর শেষ নাগাদ মুখ্য গ্রীনহাউস গ্যাস কার্বন-ডাই-অক্সাইডের এর পরিমাণ প্রাক্-শিল্পযুগের তুলনায় দুই গুণ থেকে তিন গুণ বৃদ্ধি পেতে পারে। এ সব গ্রীনহাউস গ্যাস বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে কতিপয় বিশিষ্ট গবেষক কম্পিউটার মডেলের সাহায্যে দেখিয়েছেন যে একবিংশ শতাব্দীতে ভূপৃষ্ঠ-সংলগ্ন গড় উষ্ণতা প্রায় ১.১ থেকে ৬.৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। যদিও এই বৃদ্ধির পরিমাণ পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন মাত্রায় দেখা যাবে। তেমনি কোনো নির্দিষ্ট স্থানে শীত ও গ্রীষ্মে এই বৃদ্ধির পরিমাণে তারতম্য ঘটতে পারে। বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে লক্ষ্যণীয় পরিবর্তন ঘটতে পারে। যেমন বৃষ্টিপাতের পরিমাণপরিবর্তন, ঘনঘন তাপ প্রবাহ, বন্যা ও খরার প্রাদুর্ভাব, পানির প্রয়োজন ও যোগানের পার্থক্য, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, কৃষি ক্ষেত্রে ফলনে খারাপ প্রভাব, ইকোলজিতে পরিবর্তন, বিদ্যুত শক্তির চাহিদা বৃদ্ধি এবং মানুষের স্বাস্থ্যে লক্ষ্যণীয় প্রভাব পড়তে পারে। যদিওবিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রভাব পৃথিবীর সর্বত্র একই ভাবে এবং একই মাত্রায় হয়তোবা দেখা যাবে না।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কিছু গবেষক জানিয়েছেন, ভূপৃষ্ঠের উষ্ণতা বৃদ্ধি কৃষি ক্ষেত্রে ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলতে পারে যা সামাজিকও অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিশ্বের তাপমাত্রার বৃদ্ধি বাংলাদেশের কোন কোন ক্ষেত্রে কিভাবে প্রভাব ফেলতে পারে তার জন্যে উপযুক্ত কম্পিউটার মডেলের সাহায্যে স্থানীয় তথ্যকে কাজে লাগিয়ে বহুবিদ গবেষণা করার প্রয়োজন রয়েছে।
একথা সত্য যে জলবায়ুর পরির্বতন একটা বৈশ্বিক সমস্যা এবং এই সমস্যা সৃষ্টির পিছনে বাংলাদেশ বা বৃহত্তর বাংলার জনগণের ভূমিকা খুবই নগন্য। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দুই বাংলা হয়ত এড়াতে পারবে না, কিন্তু আমাদের সচেতন ও তৎপর হতে হবে যাতে ক্ষতিকারক প্রভাবকে লঘু করার জন্য আমরা যথাসময়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পারি।
কি ঘটছে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ?
গত ৫০ বছর ধরে ক্রমাগত ভাবে ফসিল ফুয়েল বা পেট্রোলিয়াম জাতীয় জ্বালানী ব্যবহারের ফলে কার্বন ডাইঅক্সাইড আর গ্রিনহাউস গ্যাসের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে।

প্রাক শিল্প যুগ থেকে বর্তমান পর্যন্ত নিম্ন বায়ুমণ্ডলে ৩০% পরিমাণ কার্বন ডাইঅক্সাইডের বৃদ্ধি ঘটেছে যা বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বাড়িয়েছে আর তার সাথে বাড়িয়েছে মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীকুলের স্বাস্থ্য ঝুঁকি।অতি তাপমাত্রা জনিত কারণে মৃত্যু ছাড়াও আমরা আক্রান্ত হই নানা প্রকার সংক্রামক ব্যাধিতে।
গত ৫০ বছর ধরে ক্রমাগত ভাবে ফসিল ফুয়েল বা পেট্রোলিয়াম জাতীয় জ্বালানী ব্যবহারের ফলে কার্বন ডাইঅক্সাইড আর গ্রিনহাউস গ্যাসের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে।প্রাক শিল্প যুগ থেকে বর্তমান পর্যন্ত নিম্ন বায়ুমণ্ডলে ৩০% পরিমাণ কার্বন ডাইঅক্সাইডের বৃদ্ধি ঘটেছে যা বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বাড়িয়েছে আর তার সাথে বাড়িয়েছে মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীকুলের স্বাস্থ্য ঝুঁকি।অতি তাপমাত্রা জনিত কারণে মৃত্যু ছাড়াও আমরা আক্রান্ত হই নানা প্রকার সংক্রামক ব্যাধিতে।
ক্রান্তীয় থেকে সুমেরু,প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ, বিশ্বজুড়ে কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকায় আবহাওয়ার প্রভাব এসেছে কখনো শান্তির বারতা হয়ে কখনো ধ্বংসের দামামা নিয়ে।১৯৯০ দশকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে ৬০০০০০ মানুষ নিহত হয়েছেন, ঘরবাড়ি হারিয়েছেন বহু। শতকরা ৯৫ ভাগ দুর্যোগ এসেছে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে।

তাপমাত্রার তীব্র আর স্বল্পমেয়াদী ওঠানামাও গুরুতরভাবে স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। অতিরিক্ত তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে হাইপারথার্মিয়া অথবা অতিরিক্ত ঠান্ডায় হাইপোথারমিয়া দেখা দিতে পারে যা হৃদপিণ্ড ও শ্বাসযন্ত্রের রোগ বৃদ্ধি করে মৃত্যুর হার বাড়াতে পারে বহুগুণ।সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যায়, ২০০৩ ছিল ইউরোপের সবথেকে উষ্ণতম বছর এবং অন্য যেকোনো বছরের চেয়ে ৭০০০০ বেশী লোকের মৃত্যু ঘটে সে বছর।
চরম বা অধিক পমাত্রায় বায়ুমণ্ডলে পরাগ এবং বায়ু তারিত অতিপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টিকারী বস্তুর আধিক্য বেশী দেখা যায় যা হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট রোগের উৎস হিসেবে কাজ করে।বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর ৩০০ মিলিয়ন মানুষ মারা যায় এসব রোগে ভুগে।

বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বাড়ছে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা যা বহু মাত্রায় ঘটায় উপকূলীয় বন্যা, বাড়িয়ে দেয় জনসংখ্যা স্থানচ্যুতি।পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী বাস করছে সমুদ্রের ৬০ কি,মি, তীরবর্তী অঞ্চলগুলোতে।অতিমাত্রায় বন্যার ফলে বাড়ছে মৃত্যু হার, সুপেয় পানি হচ্ছে অপ্রতুল আর জীবানুবাহিত রোগে ভুগে অকালে প্রাণ হারাচ্ছে মিলিয়ন মিলিয়ন শিশু। অনেকক্ষেত্রে জনসংখ্যা স্থানচ্যুতির ফলে বাড়ছে সামাজিক কলহ এবং সামাজিক স্খলন।

দ্রুত পরিবর্তনশীল বৃষ্টিপাত বণ্টন আর অসময়ে খরার ফলে বিশ্বব্যাপী সুপেয় পানির চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণ। প্রতি দশ জনে চারজন পানি ঘাটতির শিকার হোন। পানির অভাব এবং বিশুদ্ধ পানির সঠিক মাত্রায় ব্যবহার নিশ্চিত করতে না পারায় ডাইরিয়ার মতো মারাত্মক রোগে প্রতি বছর ২.২ মিলিয়ন মানুষ প্রাণ হারায়। এছাড়াও ট্রাকোমার মতো মারাত্মক সংক্রামক রোগে চোখ হারান অনেকে।
সঠিক মাত্রায় পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত না হওয়ায় দুর-দুরান্ত থেকে পানি বহনকালে পানি দূষিত হবার সম্ভাবনা থাকছে, যার ফলে ঘটছে নানা প্রকার পানি বাহিত রোগ।
জলবায়ু সংবেদনশীল রোগ গুলোকে আ মুহূর্তে বলা হচ্ছে বৃহত্তম প্রাকৃতিক খুনী। পানি দূষণ এবং অন্যান্য জলবায়ু সম্পর্কিত এবং আবহাওয়া জনিত কারণে ম্যালেরিয়া, ডাইরিয়া, এবং প্রোটিন অপুষ্টি রোগে বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর প্রাণ হারাচ্ছেন ৩ মিলিয়ন মানুষ যার এক তৃতীয়াংশই আফ্রিকায়।

অধিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি আর বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দ্রুতহারে কমছে খাদ্য উৎপাদন যা প্রকৃতপক্ষে এসব দেশগুলোতে তৈরি করছে দুর্ভিক্ষ আর শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে অপুষ্টি জনিত নানা রোগে। শুধু তাই নয়, অপুষ্টিতে আক্রান্ত এসব শিশুর বেশিরভাগ আক্রান্ত হয় ম্যালেরিয়া, ডাইরিয়ার মতো প্রাণঘাতী রোগে।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
কোন মন্তব্য নাই.