জনগণের উপর ‘করের চাবুক’ চালাবে হাসিনা সরকার
প্রতিবারের মত আমার নজর থাকে কী কমেছে বা কী বেড়েছে। এটা শুধু আমার নয় সবারই নজর থাকে। আমাদের বাচাল অর্থমন্ত্রী বলেছেন গত দশ বছরে নাকি বাজেটের পর দাম বাড়েনি। তার এই কথার যথেষ্ট সমালোচনা হয়েছে। এই নিয়ে আর কথা বলতে চাই না।
তবে যে কথাটি বলতে চাই তা হলো এবারের বাজেটে কোন কিছুরই দাম কমছে না। সব কিছুরই দাম বাড়ছে। কিছু খুচরা পণ্যের দাম কমানোর কথা বলা হয়েছে যেগুলো মানুষের প্রয়োজনেই আসে না।
জনগণের জীবন আরও কঠিন হয়ে গেল। তাদের খরচ বাড়বে। বাড়িভাড়া, পোশাক-আশাক, কেনাকাটা, যাতায়াত—প্রায় সব ক্ষেত্রে বাড়তি টাকা গুনতে হবে। আবার বাড়িওয়ালার ওপর সারচার্জ আরোপ করায় বাড়বে বাড়িভাড়া। স্বপ্নের ফ্ল্যাটেও বাড়ানো হয়েছে ভ্যাটের হার। সব মিলিয়ে বাজেটের টাকার জন্য জনগণের ওপর ‘করের চাবুক’ বেশি চালাবেন অর্থমন্ত্রী।
অন্যদিকে কর ছাড়ে মধ্যবিত্ত ও সীমিত আয়ের করদাতাদের এক বিন্দুও ছাড় দেওয়া হয়নি। করমুক্ত আয়সীমা আগের মতোই আড়াই লাখ টাকা রাখায় চাপে থাকবেন তাঁরা। নতুন বাজেটে অর্থমন্ত্রী কর আদায়ের জন্য মধ্যবিত্ত ও সীমিত আয়ের গোষ্ঠীকেই বেছে নিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, এবারের বাজেটে যেসব পরিবর্তন আনা হয়েছে, তাতে মধ্যবিত্তরাই বেশি চাপে থাকবে। একদিকে উবার, পাঠাওয়ে ভ্যাট বসিয়ে মধ্যবিত্তের যাতায়াত খরচ বৃদ্ধি করা হয়েছে, অন্যদিকে ব্যাংকের কর কমিয়ে উচ্চবিত্তকে সুবিধা দেওয়া হলো। ১ টাকা আয় করতে মধ্যবিত্তকে ১০ টাকার দুর্ভোগ দেওয়া হচ্ছে। আবার ছোট ফ্ল্যাট কেনায় বাড়তি ভ্যাট বসানো কোনোভাবেই বৈষম্য কমানোর নীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। তিনি মনে করেন, মধ্যবিত্তকে ছাড় দেওয়ার পরিবর্তে বাজেটে চাপ বেশি দেওয়া হয়েছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে সিটি করপোরেশন এলাকার কারও যদি আট হাজার বর্গফুট বা এর বেশি আয়তনের গৃহসম্পত্তি থাকে, তাহলে ওই বাড়িওয়ালার আয়করের ওপর সারচার্জ বসবে। এই সারচার্জের পরিমাণ ওই বাড়িওয়ালার আয়ের ১০ শতাংশ বা কমপক্ষে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা। বাড়িওয়ালা স্বাভাবিকভাবেই নিজের খরচ কমাতে ফ্ল্যাটের ভাড়া বাড়িয়ে দেবেন।
গণপরিবহনের সমস্যা এখন প্রকট। মধ্যবিত্তদের যাতায়াতে কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্য আনতে শুরু করেছিল রাইড শেয়ারিং উবার, পাঠাওয়ের মতো গাড়ি ও মোটরসাইকেল। উবার, পাঠাওয়ের মতো রাইড শেয়ারিংয়ের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট বসিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এমনকি এসব রাইড শেয়ারিং সেবা প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের ওপর ৩ থেকে ৪ শতাংশ উৎসে করও বসানো হয়েছে। এতে এসব সেবা নেওয়ার খরচ বাড়বে।
কর বসেছে পোশাকেও। দেশি ব্র্যান্ডের শার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবি, সালোয়ার-কামিজ কিনতে এখন থেকে বাড়তি টাকা গুনতে হবে। আগে ভ্যাট ছিল ৪ শতাংশ, এখন হয়েছে ৫ শতাংশ। খরচের কথা চিন্তা করে দেশি ব্র্যান্ডের পোশাক বাদ দিলেও রক্ষা নেই। বড় দোকান থেকে জামাকাপড় কিনলেও ৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে, যা আগে ছিল না।
বাড়ি-গাড়ির স্বপ্ন সবারই থাকে। কিন্তু এই বাজেটের পর ছোট ফ্ল্যাট কিনতে গেলে খরচ বাড়বে। ১১০০ বর্গফুটের কম আয়তনের ফ্ল্যাটে ভ্যাট দেড় থেকে দুই শতাংশ করা হয়েছে। এতে ৫০ লাখ টাকার ফ্ল্যাটে অন্তত ২৫ হাজার টাকা বাড়তি গুনতে হবে। আবার নতুন গাড়ি কেনার সামর্থ্য নেই, রিকন্ডিশন্ড গাড়িতেই ভরসা বেশিরভাগ মানুষের। সেখানেও দুঃসংবাদ। রিকন্ডিশন্ড গাড়ির অবচয়ন সুবিধা কমিয়ে দেওয়ায় গাড়ির দাম বাড়বে।
দুঃসময়ের জন্য সবাই সঞ্চয় করেন। ভরসা হিসেবে সঞ্চয়পত্র কিনে রাখেন। কিন্তু অর্থমন্ত্রী বাজেটে ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি শিগগিরই সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমাবেন। আবার সঞ্চয়পত্র কেনার সুযোগও কমানো হয়েছে। আগামী বাজেটে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে ২৬ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা ধার নেওয়া হবে, যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৪০ শতাংশ কম। চলতি অর্থবছরে ৪৪ হাজার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রির করা লক্ষ্য নির্ধারণ করা আছে।
বাজেটে চাকরিজীবীদের জন্য আরেকটি দুঃসংবাদ আছে। তাঁদের কর রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তাঁরা সঠিকভাবে রিটার্ন দিয়েছেন কি না, তা নিশ্চিত করতে হবে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানকেই। প্রতিবছরের এপ্রিল মাসের মধ্যে ওই প্রতিষ্ঠানের কতজন রিটার্ন দিয়েছেন, তা না জানালে ওই প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয় নিরীক্ষা করা হবে।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
কোন মন্তব্য নাই.