ক্রিকেট বিশ্বের নতুন পরাশক্তি হতে যাচ্ছে আফগানিস্তান
বাংলাদেশ কেন হেরেছে আফগানিস্তানের কাছে এই নিয়ে অনেক বিশেষজ্ঞ মতামত হয়তো আসবে। কিন্তু এই কথাতে সবাই একমত হবেন যে, ক্রিকেট বিশ্ব শাসনে এগিয়ে আসছে আফগানিস্তান। ২০০৯ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হওয়া আফগানিস্তান ইতিমধ্যে তাদের সামর্থ জানান দিয়েছে।
ইতিমধ্যে তারা ৯৮ টি ওয়ান ডে খেলেছে। এর মধ্যে ৫১টি তারা জিতে নিয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ১৯৮৬ সাল থেকে খেলেছে ৩৪০ টি ম্যাচ। জিতেছে মাত্র ১০৮টি। যা তিন ভাগের এক ভাগের চাইতেও কম।
টি২০ তে আফগানিস্তান খেলেছে ৬৫ টি ম্যাচ। এর মধ্যে তারা জিতে নিয়েছে ৪৩ টি ম্যাচ। পক্ষান্তরে বাংলাদেশ এই পর্যন্ত খেলেছে ৭৮টি ম্যাচ। জিতেছে মাত্র ২৩টি ম্যাচ। আসলে পরিসংখ্যানই আপনাকে দুই দলের সামর্থ জানান দিবে।
আফগানিস্তানে ক্রিকেটের শুরুটা অন্যান্য দেশের মত সহজসাধ্য ছিল না। খুরাসানের মত ঘিঞ্জি পাকিস্তানী ক্যাম্প যেখানে নেই কোন পিচ, খেলাধুলার সামগ্রী, উইকেট, হেলমেট, গ্লাভস, চিত্ত বিনোদনের ব্যবস্থা। সেখানে রয়েছে কেবলমাত্র ক্ষুধা আর ক্ষুধা। খেলাধুলা! সেতো অযথা বিলাসিতা!
সেখান থেকেই স্বপ্ন দেখতেন নবী, শেহজাদরা। ক্রিকেট খেলতে ভালোবাসতেন তাঁরা। সেই ভালোবাসার জন্য ভোগান্তি, অপমান, বাধা-বিপত্তি কম ছিল না, তবু সেখান থেকেই মনের দৃশ্যপটে চলে আসতো এক দুঃসাধ্য চিন্তা, আফগানিস্তানের জার্সিতে মাঠ মাতানোর।
ছোটবেলা থেকেই তীব্র জীবনযুদ্ধে উপনীত মানুষগুলোর ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা আর সেই টুকরো টুকরো স্বপ্ন আজ আফগানিস্তানকে টেস্ট খেলুড়ে অভিজাত ক্লাবের সদস্য করে দিয়েছে। গত বছর একাদশতম দেশ হিসেবে টেস্ট মর্যাদা পেয়েছে আফগানিস্তান।
টেস্ট স্ট্যাটাস পেতে পরিকল্পনা লাগে, বড় বড় মাথার রাতদিনের চিন্তাভাবনা লাগে। বাণিজ্যিকীকরণের এদিনে প্রত্যেকটা দল ক্রিকেটে আসে অনেক তৈরি হয়ে, প্রস্তুত হয়ে।
আইসিসি'র টি২০ র্যাংকিং এ সেরা বোলার আফগানিস্তানের রশিদ খান
যদিও, আফগানদের শুরুটা একদমই সাদামাটা, ২০০০ সালের দিকে তালেবান সরকার সিদ্ধান্ত নেয় আফগানরা খেলাধুলা করবে, এতে যুবসমাজ চাঙ্গা হয়ে উঠবে। সদস্যপদের আবেদন পাওয়ার পর, দীর্ঘদিন খেলাধুলা নিষিদ্ধ থাকা দেশটাতে ক্রিকেটকে ছড়িয়ে দেয়ার এমন সুযোগে প্রসেসিং আর দীর্ঘ করলো না আইসিসি।
২০০১ সালেই আসে অনুমোদনপত্র। পাকিস্তানের নাওশেরাতে লোকাল একটি ক্লাবের সাথে প্রথম ওয়ানডে খেলে ফেলে তারা। আফগান ক্রিকেটের গড়ে ওঠার পিছনে ভারত-পাকিস্তানের অবদান কম নয়। নবী-শেহজাদরা পাকিস্তানের বয়সভিত্তিকে খেলেছেন, তাদের শীর্ষস্থানীয় কোচের অধীনে নিজেদের অনুশীলন সারতেন।
ভারতের কাছে স্টেডিয়াম ভাড়া নিয়ে অনুশীলন করেছেন। ভারতীয় ক্রিকেটাররা টিপস দিয়ে সাহায্য করতেন এই তরুণদের।
২০০৯ সালে তারা বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে অংশ নেয়। ২০১০ সালে আফগানিস্তান আন্তঃমহাদেশীয় কাপে স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে শিরোপা অর্জন করে। তারা ২০১০ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। সি-গ্রুপে প্রতিপক্ষ ছিল ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে আট উইকেটে হারলেও নূর আলী করেছিলেন হাফ সেঞ্চুরি। ২য় ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে ৫৯ রানে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেয়।
২০১১ সালে আফগানিস্তান টি-টোয়েন্টি র্যাংকিংয়ে ঢুকে পড়ে। নবম স্থানে উঠে আসে। আফগানরা ২০১১ সালের বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব থেকে বিদায় নিলেও ২০১৩ সাল পর্যন্ত ওয়ানডে ম্যাচ খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। আফগানিস্তান তাদের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলে এবং তাতে ৮৯ রানে জয়ী হয়।
তবে ওয়ানডেতে আফগানরা প্রথম চমক দেখায় ২০১৪ সালের এশিয়া কাপে বাংলাদেশকে হারিয়ে। সেই জয়ে আফগানিস্তানে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়।
২০১৪ সালের টি-টোয়েন্টি ও ২০১৫ সালের ওয়ানডে – দু’টি বিশ্বকাপ আসরে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিলেও তাদের পারফরমেন্স প্রশংসা পায়। তাদের নিজেদের প্রমাণের আরেকটি বিশ্বমঞ্চ ছিল যুব বিশ্বকাপ। যুব বিশ্বকাপে দলটি সেমিফাইনালে উঠে চমকে দেয় সবাইকে। মাইটি অস্ট্রেলিয়ার কাছে না হেরে গেলে হয়তো চ্যাম্পিয়নও হতে পারতো।
সমালোচক দৃষ্টিতে বলা যায়, তাদের এ দ্রুত উন্নতির অন্যতম প্রধান কারণ তাদের শারীরিক সক্ষমতা। তারা একই সাথে ফিট ও এনার্জিটিক হয় যা এশিয়ার অন্য দলগুলোর থেকে তুলনামূলক বেশি। শরীর দ্রুত বাড়ে, ফলে বয়সের তুলনায় অনেক বড় দেখায়।
এছাড়াও তাদের মধ্যে জেনুইন ক্রিকেট প্রতিভার ছাপ দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু পরিশ্রম সেভাবে করেনা তারা। আইপিএলে দল পেয়েছেন চার ক্রিকেটার। মূলত শারীরিক সক্ষমতার কারণে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বেশ মানানসই তারা।
এধারা বজায় রাখতে পারলে রশিদ খান, নবীরা যে একদিন বাঘা বাঘা দলের হুমকি হয়ে উঠবেন তা বলাই যায়! তাঁদের পাইপলাইনটাও বেশ শক্ত। গত বছরই টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়ে যাওয়া আফগানদের যুব দল সম্প্রতি অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলেছে। এবার তাহলে আর পেছনে ফিরে তাকানো নয়, সামনে এগিয়ে যাওয়ার পালা।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
কোন মন্তব্য নাই.