নজরুলের জীবনে দুই নারী
শিল্পীর কল্পনায় নজরুল ও নার্গিস
নজরুলের জীবনের দুই নারীই তাঁর নিজের স্ত্রী ছিলেন। প্রথম জনের ডাক নাম ছিল নার্গিস। কিন্তু তাঁর সঙ্গে কবির কখনো ঘর করা হয়ে ওঠে নি। দ্বিতীয় বিবাহিত স্ত্রীর ডাকনাম ছিল দুলী, ভাল নাম ছিল আশালতা সেনগুপ্তা ওরফে প্রমীলা।
সেই বিয়েটা হয় প্রথম বিয়ের প্রায় তিন বছর পর। উভয় কনেই তখনকার বৃহত্তর ত্রিপুরার (এখন কুমিল্লা) মানুষ। দুই স্ত্রীই বিয়ের পরে অনেক পড়াশুনা করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের বৌদি যেমন হঠাৎ আত্মহত্যা করে বসে রবীন্দ্রনাথের জীবন থেকে চলে যান, তেমন কেবলমাত্র বিয়ে টুকু ছাড়া, বিয়ের রাত থেকেই নার্গিসের সঙ্গে নজরুলের আর কোন সম্পর্ক ছিল না। রবীন্দ্রনাথের স্ত্রী মৃণালিনী দেবী যেমন অসুস্থ হয়ে কবির অনেক আগেই মারা গিয়েছিলেন, নজরুলের স্ত্রী প্রমীলা নজরুলও অসুস্থ হয়ে কবির আগে মারা গিয়েছিলেন। বিষয়বস্তু নজরুল, তাই রবীন্দ্রনাথ রেখে এখন নজরুলের বিষয়টির ওপর রেখাপাতের চেষ্টা করা হল। বিষয়টি ঠিক মতো অনুধাবন করতে হলে মনে হয় যতটা গোড়ার দিক থেকে শুরু করা যায়, ততই ভাল।
১৩০৬ সালের ১১ জ্যৈষ্ঠ, ইংরেজি ১৮৯৯ খৃষ্টাব্দের ২৫শে মে, মঙ্গলবার, কাজী নজরুল ইসলাম পশ্চিমবঙ্গের আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র আট বছর বয়সে পিতা ফকির আহমদকে হারান। পয়সাকড়ির অভাবে লেখাপড়া করা যাচ্ছিল না। এদিকে গান বাজনায় ঝোঁক ছিল। তাই নামমাত্র লেখাপড়া করে স্থানীয় “লেটো” গানের দলে যোগ দেন। কিছুদিন গান করার পর তাঁর মনে হল, এরকম গান তো তিনি নিজেও বানাতে পারেন। তাই গান লেখা শুরু করলেন। ঐ অত অল্প বয়সের লেখা গানের কথা ও ভঙ্গি অনেকের নজর কেড়েছিল, তাদের মধ্যে বেশ একটা কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছিল। মুশকিল হল তার থেকে তেমন কোন আয় হচ্ছিল না। আর আয়ে কুলচ্ছিল না বলে ঐ বয়সেই তিনি গ্রামের হাজী পাহালওয়ান শাহের মসজিদে খাদেমগিরি শুরু করে দেন। ঐ কাজের মধ্যে পীর সাহেবের মাজারে সাঁঝের বাতি দেওয়ার কাজটাও করতে হতো। কিন্তু তাতেও সুবিধে হচ্ছিল না দেখে তিনি গিয়ে মিলিটারিতে যোগ দেন।
সালটা ছিল ১৯১৭ আর ঐ ইউনিটটার নাম ছিল ৪৯ নং বাঙ্গালী পল্টন। ওখানে জয়েন করার পর কাজের দাবীতে তাঁকে করাচিতে চলে যেতে হয়। স্কুলের পড়াশুনার সুযোগ না হলেও, পড়াশুনা ও জ্ঞান আহরণের অদম্য ইচ্ছা কিন্তু তাঁর ছিল। তাই ঐ কাজের ফাঁকে খোঁজাখুঁজি করে সেখানে একজন জ্ঞানী পাঞ্জাবী মৌলভী সাহেবের সন্ধান পান। তাঁর কাছ থেকে “দেওয়ান-ই-হাফিজ” ও ফার্সি ভাষার আরো নানা মূল্যবান কাব্যগন্থের সংস্পর্শে আসেন। বিষয় গুলোর উপর শিক্ষালাভ করার বিরল সৌভাগ্য তিনি অর্জন করেন। এভাবেই তিনি পৃথিবীর অন্যতম প্রথম সারীর মহৎ সাহিত্যের সংস্পর্শে আসেন। তাঁর গভীর অনুসন্ধিৎসু মন, এই গভীর কাব্যদর্শনের অতল গভীরে ডুব দেবার সুযোগ পায়। তিনি মানব মহাজীবনের সন্ধানে ঢোকার সিঁড়ি ধাপে ধাপে পেয়ে যান। আরব সাগরের পাড়ে, সেই করাচী শহরে বসে তিনি “মুক্তি”, “কবিতা-সমাধি”, “রিক্তের বেদন”, “ব্যথার দান”, “হেনা” নামের ব্যতিক্রমধর্মী, অসাধারণ ও বিস্ময়কর কবিতা ও গল্প রচনা করতে থাকেন। সমজদার পাঠক মণ্ডলী বুঝতে পারছিলেন বাংলাসাহিত্যের আকাশে আর একটি অভাবনীয়, প্রবল শক্তিময় আলো ছড়ানো সূর্যের আবির্ভাবের আলামত পাওয়া যাচ্ছে।
ইতিমধ্যে “বাঙ্গালী পল্টন” ভেঙ্গে দেওয়ার গুজব ওঠে। তা শুনে ভবিষ্যতে কি করা যায় চিন্তা করতে করতে তিনি দেশের বাড়ি চুরুলিয়ায় এসেছিলেন। ১৯২৯ সালে (বাংলা ১৩২৬ সালে) যখন সত্যি সত্যি পল্টন ভেঙ্গে দেওয়া হল, তখন তিনি এসে বর্ধমানের জেলার ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট-এর অধীনে সাব-রেজিস্ট্রার-এর পদের জন্য দরখাস্ত করেন। সেখানে সুবিধা না হওয়ায় তিনি চাকরীর খোঁজে কলকাতায় চলে যান। ওখানে পৌঁছে প্রথমে তিনি সতীর্থ ও বন্ধু শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়ের মেসে ওঠেন। পরে তিনি কলকাতা মেডিকেল কলেজের সামনে ৩২ নং কলেজ স্ট্রীটে অবস্থিত “বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি”র কার্যালয়ে যান। সেখানে “বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা”র সম্পাদক, কমরেড মোজাফফর আহমেদ ও “মোসলেম ভারত” পত্রিকার কর্ণধার আফজালুল হক ও থাকতেন।
এঁদের সঙ্গে আলাপ হবার পর ঐ ঠিকানাতেই নজরুলের থাকার ব্যবস্থা হয়। এর পাঁচ ছয় মাস পরে, কাউকে কিছু না বলে হঠাৎ তিনি একদিন কুমিল্লা চলে যান। ব্যাপারটা আন্দাজ না করতে পেরে সবাই মিলে নজরুলের অন্তরঙ্গ গায়ক বন্ধু, শ্রী নলিনীকান্ত সরকারের শরণাপন্ন হন। নলিনীবাবুর ভাষ্য ছিল মোটামুটি এরকম, “নজরুলের প্রাত্যহিক গতিবিধি ও কার্য্যসূচীর সন্ধান আগে থেকেই আমার জানা থাকতো। একদিন সারা বিকেলটা নজরুলের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে পরদিন সকাল বেলায় গিয়ে দেখি, নজরুল ঘরে নেই। তাঁর একজন সহকক্ষবাসী বন্ধু (মোসলেম-ভারতের কর্ণধার, আফজালুল হক) হাসতে হাসতে বললেন, ‘সে তো কাল রাত্তিরে কুমিল্লা চলে গেছে’। আমি বললাম, “কৈ, কাল তো কিছু বললে না”। সহকক্ষবাসী বন্ধু বললেন, “বলবে কি করে? কাল সন্ধ্যার পর এক ভদ্রলোক এসে কি সব কথাবার্তা ক’য়ে কুমিল্লা যাবার প্রস্তাব করলেন। প্রস্তাব, অনুমোদন, সমর্থন সব মুহূর্তের মধ্যে - সঙ্গে সঙ্গে শিয়ালদহ ষ্টেশনে যাত্রা”। ঐ “এক ভদ্রলোক” এর নাম আসলে আলী আকবর খান, কুমিল্লার দৌলতপুর নিবাসী বিখ্যাত প্রকাশক।
দৌলতপুর যাবার পথে খান সাহেব নজরুলকে নিয়ে কয়েকদিন কুমিল্লার কান্দিরপাড়ে শ্রী ইন্দ্রকুমার সেনগুপ্তের বাড়িতে থেকে যান। ইন্দ্রকুমার বাবু কুমিল্লা বোর্ড অফ ওয়ার্ডস-এর ইন্সপেক্টর হিসেবে কাজ করতেন। ইন্দ্রকুমারের ছেলে বীরেন্দ্রকুমার, কুমিল্লা জেলা স্কুলে পড়াশুনা করতেন। সে সময় আলি আকবর খানও সেখানে পড়তেন; তাই আলী আকবর বীরেন্দ্রকুমারের ক্লাসমেট ছিলেন। ক্লাসমেট থেকে তাঁরা বন্ধু হয়ে গিয়েছিলেন। পরস্পরের বাড়ীতে যাতায়াত ছিল। বীরেন্দ্রকুমারের বাড়ীতে স্ত্রী, বোন, ছেলে ও বাবা মা ছাড়াও আরো থাকতেন বিধবা পিসী গিরিবালা দেবী ও তাঁর একমাত্র কন্যা প্রমীলা তথা আশালতা সেনগুপ্তা, যার ডাকনাম দুলী।
আশালতার স্বর্গীয় পিতা, শ্রী বসন্তকুমার সেনগুপ্তের আদি নিবাস ছিল মানিকগঞ্জের তেহুতা গ্রামে। তিনি ত্রিপুরা সরকারের নায়েবের পদে চাকুরী করতেন। পিতার মৃত্যুর পর প্রমীলারা কুমিল্লায় আত্মীয় বীরেন্দ্রকুমারদের বাড়ীতে এসে সেখানেই বসবাস করছিলেন।
কয়েকদিন থাকার পর নজরুলকে সঙ্গে নিয়ে আলি আকবর সাহেব তাঁর নিজের দৌলতপুরের বাড়ীতে পৌঁছান। খান সাহেবের দু’জন বিধবা বোন ছিলেন। এক বোন তাঁর সংসারের সর্বময়ী কর্ত্রী ছিলেন। নজরুলের চেহারা ও আচার ব্যবহার দেখে তাঁর ভাল লাগে। তখন থেকে তিনি নজরুলকে মায়ের মতো স্নেহ দিয়ে আদর যত্ন করতেন। অন্য বোনটি ঐ বাড়ীতে না থাকলেও কাছাকাছি থাকতেন। তাঁর একছেলে ও এক মেয়ে ছিল। মেয়েটি যুবতী ও বেশ সুন্দরী ছিল। নজরুল এ বাড়ীতে আসার পর তাদের যাতায়াত বেড়ে যেতে থাকল।
সম্ভবত: নজরুলের বাঁশী ও মেয়েটির রূপ যৌবন পরস্পরকে আকৃষ্ট করেছিল। মেয়েটির নাম ছিল সায়ীদা খাতুন, ওরফে নার্গিস বেগম। এই ঘনিষ্ঠতা মোটামুটি পরিষ্কার হলে কিছুদিনের মধ্যে তাঁদের বিয়ের কথা পাকাপাকি হয় ও বিয়ের দিন ধার্য হয়। কুমিল্লার সেই পল্লীগ্রাম থেকে নজরুল ইসলাম ও খান সাহেব মিলে নজরুলের বিয়ের খবর জানিয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ পাঠান। মুস্কিল হল, একদিকে ব্যবসা সংক্রান্ত কারণে খান সাহেবের উপর অনেকেই সন্তুষ্ট ছিলেন না। অন্যদিকে নজরুলের তখন উঠতি বয়স, মানুষটা খুবই সেন্টিমেন্টাল এবং সত্যিকারের কোন স্থিতিশীল আয় বা স্টেডি ইনকাম তখন তাঁর ছিল না। এমতাবস্থায় বিয়ে করার মতো একটা বিরাট দায়িত্ব নজরুল কেমন করে পালন করতে পারবেন, তা নিয়ে তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধব ও হিতৈষী মহলে দারুণ উৎকণ্ঠা দেখা দেয়। অথচ কেউ যে এর বিরোধিতা করবে, সে সাহসও কারোর ছিল না।
সেই বিয়েটার অঙ্কুরেই বিনষ্টি ঘটে। দৌলতপুরে আলি আকবর খান সাহেবের কিছু কিছু ব্যবহার নজরুলকে মানসিকভাবে আঘাত করে। হবু বধূর কিছু আচরণও তাঁর কাছে দুর্ব্যবহার বলে মনে হয়। অবস্থা সুবিধের নয় দেখে ও নিজের দোষ কাটাবার অভিপ্রায়ে খান সাহেব বিয়েটা ভেঙ্গে দেবার ফন্দি করেন। তিনি হঠাৎ একটা নতুন প্রস্তাব এনে বলেন, বিয়ের-পরে নজরুলকে দৌলতপুরেই থেকে যেতে হবে, যেটা নজরুলের পক্ষে কোনমতেই মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। নজরুলের বিশেষ আমন্ত্রণে বিরজাসুন্দরী দেবী নৌকাযোগে দৌলতপুরের বিয়ে বাড়ীতে আসেন।
সঙ্গে সেনগুপ্ত পরিবারের আরো ১০-১১ জন সদস্যও এসেছিলেন। নজরুল যখন তাঁর ঐসব অপমানের কথা বিরজাসুন্দরীকে জানান, তখন তিনি এ বিয়ে না করার জন্য পরামর্শ দেন। কিন্তু এ উপলক্ষে অত লোকজন অলরেডি তখন উপস্থিত হয়ে গেছে। তাই বিয়েটা ভেঙ্গে না দিয়ে যে ভাবেই হোক নজরুল ঝামেলাটা চুকিয়ে ফেলার মনস্থ করেন এবং বিয়েটা শেষ পর্যন্ত সম্পন্ন হয়। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়েটা হয়েছিল সত্য, কিন্তু ইসলামী মতে তা কনজুমেটেড হয়নি। অর্থাৎ তাঁদের দাম্পত্য মিলন সাধিত হয়নি। বিয়ের রাতেই সেই প্রচণ্ড ঝড়-ঝঞ্ঝার মধ্যেই নজরুল দৌলতপুর ত্যাগ করেন। মনে করা হয় তিনি সেনগুপ্ত পরিবারের সঙ্গে গিয়ে কান্দিরপাড়ে ওঠেন। সেই কান্দির পাড় থেকে তিনি গুরুত্বপূর্ণ চিঠি লেখেন:
প্রথম চিঠিটি তিনি খান সাহেবকে “মামাশ্বশুর” না বলে “বাবা-শ্বশুর” বলে সম্বোধন করে লেখেন,
“ বাবা শ্বশুর! আপনাদের এই অসুর জামাই পশুর মতন ব্যবহার করে এসে যা কিছু কসুর করেছে, তা ক্ষমা করুন সকলে, অবশ্য যদি আমার ক্ষমা চাওয়ার অধিকার থাকে। এইটুকু মনে রাখবেন, আমার অন্তর-দেবতা নেহায়েত অসহ্য হয়ে না পড়লে, আমি কখনো কাউকে ব্যথা দিই না। ...আমিও আপনাদের মতো মানুষ। আমার গণ্ডারের চামড়া নয়, কেবল সহ্যগুণটা কিছু বেশী। আমার মান-অপমান সম্বন্ধে কাণ্ডজ্ঞান ছিল না বা “কেয়ার” করিনি বলে আমি কখনো এত-বড় অপমান সহ্য করিনি, যাতে আমার “ম্যানলিনেসে” বা পৌরুষে গিয়ে বাজে - যাতে আমাকে কেঊ কাপুরুষ, হীন ভাবতে পারে। আমি সাধ করে পথের ভিখারি সেজেছি বলে লোকের পদাঘাত সইবার মতন “ক্ষুদ্র আত্মা” অমানুষ হয়ে যাইনি। আপনজনের কাছ হতে পাওয়া অপ্রত্যাশিত এত হীন ঘৃণা, অবহেলা আমার বুক ভেঙ্গে দিয়েছে। বাবা! আমি মানুষের উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছি। দোওয়া করবেন আমার এ ভুল যেন দুদিনেই ভেঙে যায়। .......বাড়ির সকলকে দস্তুরমতো সালাম-দোয়া জানাবেন...... তাকেও ক্ষমা করতে বলবেন, যদি এ ক্ষমা চাওয়া ধৃষ্টতা না হয়। আরজ-ইতি। চীর-সত্য স্নেহ-সিক্ত – নুরু।
দ্বিতীয় চিঠিটা তিনি কলকাতায় মুজফফর সাহেবকে লেখেন। সেই চিঠি পেয়ে মুজফফর আহমেদ অনেক কষ্ট করে কুমিল্লা এসে (তখন রেল ধর্মঘট চলছিল) নজরুলকে সঙ্গে নিয়ে কলকাতা ফেরত যান। এর অল্পদিন পর ৩/১ সি তালতলা লেনে মুজাফফর সাহেবের বাড়ীতে থাকা অবস্থায় নজরুলের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এরপর নজরুল প্রায় তিন বছর ধরে কয়েকবার কান্দির পাড় গিয়েছেন। শেষমেশ ১৯২৪ সালের ২৪শে এপ্রিল, কলকাতার ৬ নম্বর হাজি লেনে, আশালতা সেনগুপ্তা, ওরফে প্রমীলার সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তবে ঝক্কি ছিল।
কবির সাথে কবি পত্নী প্রমীলা দেবী, দুই সন্তান অনিরুদ্ধ ও সব্যসাচী
কনের বয়েস ১৮ বছরের বেশ কম ছিল বলে অফিসিয়ালি হিন্দু-মুসলমানের বিয়ে, অর্থাৎ সিভিল ম্যারেজ হতে পারেনি। অগত্যা ইসলামী মতেই বিয়েটি হয়। এ জটিলতায় হিন্দু, মুসলনমান উভয় সম্প্রদায়ের লোকেরা চটে যান। আশালতার ডাকনাম ছিল”দোলনা দেবী”, সংক্ষেপে “দুলী”। দোলনার গায়ের রঙ চাঁপাকলির মতো ছিল বলে নজরুল তাঁর দ্বিতীয় কাব্যের নাম দিয়েছিলেন “দোলন চাঁপা”। দ্বিতীয় সন্তান জন্ম দেবার পর থেকে প্রমীলা দেবী পক্ষাঘাত রোগে আক্রান্ত হয়ে বহুদিন শয্যাশায়ী ছিলেন। কবি প্রায় তাঁর সর্বস্ব দিয়ে স্ত্রীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে থাকেন।
দুর্ভাগ্যবশত: অল্পদিনের মধ্যে দারুণ অসুস্থ হয়ে তিনি নিজেও শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। দীর্ঘ ৩৮ বছর সংসার করার পর, ১৯৬২ সালের ৩০শে জুন, শনিবার, মাত্র ৫২ বছর বয়সে প্রমীলা দেবী তাঁর কলকাতার পাইকপাড়ার বাসাতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
কোন মন্তব্য নাই.