ছাত্রদের সাথে প্রতারণা করেছে প্রশাসন
আন্দোলনকারীরা যে ভয় পেয়েছিলেন সেটাই হয়েছে। আন্দোলন বন্ধ হওয়ার সাথে সাথেই নির্যাতন নেমে আসছে ছাত্রছাত্রীদের উপর। এর প্রথম শিক্ষার হলেন সুফিয়া কামাল হলের ২০ জন ছাত্রী।
মুঠোফোন ‘চেক’ করে বিভ্রান্তিকর পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে ছাত্রীদের বের করে দিচ্ছে কবি সুফিয়া কামাল হল কর্তৃপক্ষ। সাধারণ ছাত্রীরা হলের এই অবস্থানের বিরোধিতা করছেন। তাঁরা মারাত্মক আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। তাঁরা বলছেন হলের প্রাধ্যক্ষ আরও বহু ছাত্রীর ছাত্রত্ব বাতিল করে দেওয়া, গোয়েন্দা নজরদারি ও মামলার ভয় দেখাচ্ছেন।
হলের প্রাধ্যক্ষ সাবিতা রেজওয়ানা বলেন, আমরা অনেক ছাত্রীকে ডেকেছি। তাদের মোবাইল চেক করা হচ্ছে। তারা বিভিন্ন ফেক অ্যাকাউন্ট খুলে গুজব ছড়াচ্ছে। মুচলেকা দিয়ে তাদের স্থানীয় অভিভাবকের সঙ্গে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
এক ছাত্রীকে নিয়ে যাচ্ছেন তার বাবা
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১১টা ৪৮ মিনিটে উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনেই একজন ছাত্রীকে বের করে দেওয়া হয়। ওই ছাত্রীর বাবা ছাত্রীকে মোটরসাইকেলে বসিয়ে দ্রুতবেগে চলে যান। সেসময় তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে চাননি। এরপর রাত ১২টা ৪০মিনিটে এক ছাত্রীর বাবা হলের ফটক দিয়ে ঢোকার সময় সাংবাদিকদের বলেন, তাঁকে ফোন করে হলে এসে তাঁর মেয়েকে নিয়ে যেতে বলা হয়।
এরপর থেকে ওই ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তিনি ধামরাই থেকে হলের গেটে পৌঁছে অপেক্ষা করছিলেন। পরে তিনি একাই সেখান থেকে চলে যান। সেসময় তিনি সাংবাদিকদের কাছে বলেন, তাঁর মেয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিল। আন্দোলনের কারণে সে (ওই ব্যক্তির মেয়ে) রাতেও হল থেকে বের হয়েছিল। ভবিষ্যতে যেন এমন কিছু না হয় হল থেকে এসব বিষয়ে তাঁকে ডেকে হুঁশিয়ার করা হয়েছে।
সাবিতা রেজওয়ানা বলেছেন, দুই ছাত্রীর স্থানীয় অভিভাবককে ডেকে ছাত্রীদের হস্তান্তর করা হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের মঞ্চ বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার রক্ষা পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক বলেছেন, রাতে আটজনকে বের করে দেওয়া হয়েছে।
হল কার্যালয়ের রাত ৯টা থেকে কমপক্ষে ২০ জনকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়। তবে সবাইকে একসঙ্গে বের করে দেওয়া হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হলের ফ্লোরে ফ্লোরে রাতে হাউস টিউটররা পাহারা বসান। ছাত্রীরা আতঙ্কে আছেন। তাঁরা বলছেন, মূলত যে ২৬ ছাত্রী ছাত্রলীগ নেত্রী ইফফাত জাহান এশার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন প্রথম চোটে তাদের বিচার করছে হল প্রশাসন।
আরেক ছাত্রীর বাবা অপেক্ষা করছেন তার মেয়ের জন্য
প্রাধ্যক্ষের হুমকিঃ
রাত ১১টায় কবি সুফিয়া কামাল হলের প্রদীপ্ত ভবনের নিচে প্রাধ্যক্ষ ছাত্রীদের ডেকে হুঁশিয়ারি দেন। তাঁর অডিও ক্লিপ প্রথম আলোর হাতে রয়েছে। তিনি যা বলেছেন হুবহু তাই লেখা হলো:
‘অনেকে বিভ্রান্তিকর পোস্ট দেয়। ইনেটলিজেন্স সেল দেখবে যে কারা কারা বিভ্রান্তিকর পোস্ট দিচ্ছে। আই ডোন্ট ওয়ান্ট এনি ইনভলভমেন্ট। এরপরে এই হলে ছাত্রলীগ যদি গণ্ডগোল করে আমাকে বিচার দেবে। জেনারেল মেয়ে গণ্ডগোল করলে আমাকে বিচার দেবে। এখন থেকে হল সিট হল প্রশাসন দেবে। আর কোনো পয়েন্টে এর বাইরে আর কোনো সিট হবে না। হলে যদি আর কেউ বিশৃংখলা করার চেষ্টা করে বা তোমরা কোনো পোস্ট দেওয়ার চেষ্টা কর হলকে বিভ্রান্ত করার জন্য তাহলে কিন্তু আমরা সরকারকে বলব...
আমার নলেজের বাইরে আমার ভিডিও যে আপলোড করে সেটা কিন্তু ক্রাইম, আজকে আমি বলে দিলাম সেটা কিন্তু সাইবার ক্রাইম...আই ওয়ান্ট টু বি লাউড অ্যান্ড ক্লিয়ার। কারও কিছু প্রশ্ন আছে?’
জবাবে ছাত্রীরা ওই রাতে ছাত্রলীগ সভানেত্রী ইফফাত জাহান এষাকে কেন্দ্র করে যা যা ঘটেছে তাতে দুই হাজার মেয়ে সম্পৃক্ত ছিল বলে উল্লেখ করেন। তখন সাবিতা রেজওয়ানা বলেন, ‘দুই হাজার মেয়ে কিছু করেনি। আমার সিসিটিভি ফুটেজে আছে কারা কারা করেছে। দুই হাজার মেয়ে সাক্ষর দাও, আমি বিশ্ববিদ্যালয়কে দেব। আমি দুই হাজার মেয়ের ছাত্রত্ব বাতিল করে দেব।
আমার শিক্ষকেরা দেখেছে, আমার সিসিটিভি প্রমাণ আছে ওরা মেরেছে। তোমরা যদি মেরে থাক, নাম লেখ। ওদিন যেটা হয়েছে সেটা অপপ্রচার। ওই মেয়ে যার পা কেটেছে সে নিজে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। ওর শুধু পা-ই কাটা হয়েছে। এই মেয়েটাকে যে পরিমাণ মারা হয়েছে সেটা কি বিচারে মারা হয়েছে। যে মেয়ে ভয় পেয়েছে সে নিজে বলেছে।
মোটকথা ঢাবি প্রশাসন ছাত্রলীগের দালালে পরিণত হয়েছে। ছাত্রলীগের নির্দেশমত আচরণ করছে। রগকাটা এশাকে ব্যাকআপ দিতেই তাদের এই আয়োজন। আবার ঢাবি ভিসিকে যখন এই প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলো তিনি বলেন এগুলো গুজব, গুজবে কান দিবেন না।
একদিকে হল থেকে মেয়েদের বের করে দেয়া হচ্ছে । অন্য দিকে ঢাবি ভিসি বলছেন এটা গুজব। এই ধরণের ঘটনা ঘটে নি।
বাহ, ভিসি বাহ!
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
কোন মন্তব্য নাই.