নিউক্লিয়াস থেকে স্বাধীনতা
নিউক্লিয়াসের তিন প্রতিষ্ঠাতা
আমরা অনেকেই মনে করি স্বাধীনতা সংগ্রাম হুট করে একাত্তরে শুরু হয়েছে। কিন্তু আসলে তা নয়। এটি ছিল ধারাবাহিক ও দীর্ঘদিনের প্রক্রিয়া। আর এক কাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি হলেন রহস্যপুরুষ সিরাজুল আলম খান।
সিরাজুল আলম খান বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত ছাত্র নেতা, রাজনীতিবিদ। তিনি বাঙালির ‘জাতীয় রাষ্ট্র’ বাংলাদেশ গঠনের লক্ষে ১৯৬২ সনে গোপন সংগঠন ‘নিউক্লিয়াস’ গঠন করেন। নিউক্লিয়াস ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’ নমেও পরিচিত। এছাড়াও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ গঠন এবং ‘সিপাহী জনতার গণ-অভ্যুত্থান’ এর নেপথ্য পরিকল্পনাকারী ছিলেন সিরাজুল আলম খান।তাকে বাংলাদেশের রাজনীতির রহস্যপুরুষ বলা হয়।
১৯৬২ সালে ছাত্রনেতা সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদ গোপন সংগঠন ‘নিউক্লিয়াস’ বা স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ গঠন করেন। ১৯৬৯ সালে তারা বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স (বিএলএফ) প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯৬২ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত ‘নিউক্লিয়াস’-এর সাংগঠনিক তত্ত্বাবধানে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে গোপনে প্রায় সাত হাজার সদস্য সংগৃহীত হয়। ১৯৭০ সালের নভেম্বরের প্রথম দিকে সিরাজুল আলম খান এবং আবদুর রাজ্জাক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সাথে বৈঠক করেন। বৈঠকে নেতৃবৃন্দ ‘নিউক্লিয়াস’ ও ‘বিএলএফ’-এর গঠন এবং সাংগঠনিক বিস্তৃতি সম্পর্কে অবহিত করেন। ‘নিউক্লিয়াস’ সম্পর্কে শেখ মুজিবুর রহমান অবগত ছিলেন না।
সহকর্মীদের সাথে মিটিং করছেন সিরাজুল আলম খান, ছবিঃ সামহোয়্যার ইন ব্লগ
এ বৈঠকেই সিরাজুল আলম খান ও আবদুর রাজ্জাক বঙ্গবন্ধুকে আশ্বস্ত করেন, স্বাধীনতার বিষয়ে ‘নিউক্লিয়াস’ এবং ‘বিএলএফ’-এর কর্মী বাহিনী সাংগঠনিকভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও দক্ষ। এখন প্রয়োজন বিদেশের সাথে, বিশেষ করে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সাথে স্বাধীনতার বিষয়ে যোগাযোগ স্থাপন করা; ভবিষ্যতে বিদেশী সাহায্য-সহযোগিতার জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা এবং প্রয়োজনবোধে সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য রসদ সংগ্রহ ও ট্রেনিং প্রদানের ব্যবস্থা করা।
এ বৈঠকের কয়েক দিন পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব লন্ডনে যান এবং সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বিশেষ দূতের সাথে বাঙালির স্বাধীনতার বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করেন। লন্ডন থেকে পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে তিনি ‘নিউক্লিয়াস’ নেতৃবৃন্দকে ডেকে ভারতের সাথে যোগাযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। ১৯৭০ সালের নভেম্বর মাসের শেষের দিকে বঙ্গবন্ধু ‘বিএলএফ’-এর চার নেতা সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক, শেখ ফজলুল হক মণি এবং তোফায়েল আহমেদকে ডেকে চিত্তরঞ্জন সুতারের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। ওই দিন প্রথম সাক্ষাতেই চিত্তরঞ্জন সুতার ‘বিএলএফ’ নেতৃবৃন্দকে ২১ ড. রাজেন্দ্র রোড, নর্দান পার্ক, ভবানীপুর, কলকাতা-৭০০০২১ ঠিকানাটি মনে রাখতে বলেন। ‘নিউক্লিয়াস’ নেতারা এই ঠিকানাটি তিন-চারবার মুখে উচ্চারণ করেন এবং মুখস্ত করেন। বঙ্গবন্ধু নিজেও কয়েকবার ঠিকানাটি আওড়ান।
১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ১৮ বা ১৯ তারিখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ‘বিএলএফ’-এর চার নেতা সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক, শেখ ফজলুল হক মণি ও তোফায়েল আহমেদ এবং আওয়ামী লীগ হাইকমান্ডের নেতা তাজউদ্দীন আহমদকে নিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিষয়ে আলোচনায় বসেন। বৈঠকে বঙ্গবন্ধু তাজউদ্দীনকে স্বাধীনতার প্রশ্নে বিএলএফের চার নেতা সম্পর্কে বিস্তারিত অবগত করেন। বৈঠকে তিনি পরামর্শ দেন, ভবিষ্যতে কখনো যদি ‘তার’ (বঙ্গবন্ধু) অনুপস্থিতি ঘটে, তাহলে ‘বিএলএফ’-এর চার নেতা তাজউদ্দীন আহমদের সাথে শলা-পরামর্শ করেই স্বাধীনতার সব কৌশল নির্ধারণ করবেন। বৈঠকে ভারতের সাথে যোগাযোগের বিষয়টিও পুনরায় তিনি তাজউদ্দীন আহমদ ও চার নেতাকে স্মরণ করিয়ে দেন এবং ২১ ড. রাজেন্দ্র রোড, নর্দান পার্ক, ভবানীপুর, কলকাতা-৭০০০২১ ঠিকানাটি তিনি তাদের মনে রাখতে বলেন।
পাকিস্তানস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত জোসেফ ফারল্যান্ড প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার অনুরোধে ২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৭১ সকাল ৯টায় শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনে উপস্থিত হয়ে এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে আন্তরিকতার সাথে আলোচনা করেন।
শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আলোচনার পর স্টেট ডিপার্টমেন্টকে পাঠানো টেলিগ্রামে রাষ্ট্রদূত ফারল্যান্ড আলোচনার বিষয়বস্তুর সাথে উল্লেখ করেন, শেখ মুজিব অত্যন্ত হৃদ্যতার সাথে তাকে বলেছেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি তাঁর নিজের’ এবং ‘বাংলাদেশের জনগণের বন্ধুত্বের কথা’। রাষ্ট্রদূত আরো জানান, পূর্ব পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতার (স্বাধীনতার) পরিবর্তে মুজিব একধরনের ফেডারেশনে আগ্রহী। মুজিব জোর দিয়ে বলেছেন, তার জনগণকে অধিকার ভোগ করতে দিতে হবে এবং ঔপনিবেশিকের মর্যাদা রাখা চলবে না। ফারল্যান্ড আরো লিখেন যে, পাকিস্তানের বর্তমান তালগোল অবস্থায় চরমপন্থী কমিউনিস্ট এবং ভাসানীর হাত থেকে কেবল তিনিই (শেখ মুজিব) পাকিস্তানকে রক্ষা করতে সক্ষম। তার এই বক্তব্য রাজনৈতিক বাগ্মিতার অংশ।
১৯৭১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ভাইস এডমিরাল সৈয়দ মোহাম্মদ আহসান এবং কোর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল সাহেবজাদা ইয়াকুব খান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদকে গভর্নর ভবনে আমন্ত্রণ জানিয়ে পরের দিন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সম্ভাব্য ভাষণ সম্পর্কে ইঙ্গিত করেন। জাতীয় সংসদের অধিবেশন স্থগিত করলে নতুন তারিখ দেয়ার জন্য প্রেসিডেন্টকে প্রভাবিত করতে শেখ মুজিব গভর্নর আহসানকে অনুরোধ করেন।
সিরাজুল আলম খানের সাম্প্রতিক ছবিঃ ফেসবুক পেইজ, সিরাজুল আলম খানের পাঠচক্র
জাতীয় সংসদের অধিবেশন স্থগিত করলে পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতির ভয়ানক অবনতির আশঙ্কায় পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ভাইস এডমিরাল এস এম আহসান প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সাথে বিতর্কে জড়িয়ে পড়লে প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া তাকে তাৎক্ষণিকভাবে বরখাস্ত করেন এবং কোর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল সাহেবজাদা ইয়াকুব খানকে গভর্নরের দায়িত্ব দেন। সাহেবজাদা ইয়াকুব খান একই সম্ভাবনার কারণে ৪ মার্চ টেলিফোনে এবং ৭ মার্চ লিখিতভাবে পদত্যাগ করেন।
বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন
১৯৭১ সালের ১ মার্চ পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান বেতার ভাষণে গণপরিষদের অধিবেশন স্থগিত করলে ছাত্র-জনতা বিক্ষুব্ধ হয়ে রাস্তায় নেমে পড়ে। এ সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব দিলকুশার হোটেল পূর্বাণীতে আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি দলের সাথে বৈঠক করছিলেন। বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা সেখানে গিয়ে উপস্থিত হলে তিনি (‘নিউক্লিয়াস’-এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী) আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুকুম দেন। শুরু হয় স্বাধীনতার জন্য প্রত্যক্ষ আন্দোলন। সিরাজুল আলম খানের পরামর্শ ও নির্দেশে কাউকে আগে না জানিয়ে ২ মার্চ ডাকসুর ভাইস প্রেসিডেন্ট আ স ম আবদুর রব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-জনতার সমাবেশে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।
জয়বাংলা ইশতেহার
সিরাজুল আলম খানের পরামর্শে ‘জয়বাংলা ইশতেহার’ গোপনে প্রস্তুত করা হয় এবং ৩ মার্চ ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে স্বাধীনতাকামী ছাত্র-জনতার বিশাল সমাবেশে শেখ মুজিবের অনুপস্থিতিতে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাজাহান সিরাজ ‘স্বাধীনতার ইশতেহার’ পাঠ করেন।
‘জয়বাংলা ইশতেহার’ পাঠের শেষপর্যায়ে বঙ্গবন্ধু মুজিব মঞ্চে এসে উপস্থিত হলে সিরাজুল আলম খান ইশতেহার পুনরায় পাঠের নির্দেশ দেন। বঙ্গবন্ধু মনোযোগ দিয়ে পুরো ইশতেহার শোনেন। পরে অনুষ্ঠানে স্বাধীনতার পক্ষে চার ছাত্রনেতা নূরে আলম সিদ্দিকী, শাজাহান সিরাজ, আ স ম আবদুর রব এবং আবদুল কুদ্দুস মাখন শপথবাক্য পাঠ শেষে ‘জয়বাংলা’ বাহিনীর উপ-প্রধান (ডেপুটি চিফ) কামরুল আলম খান খসরু আনুষ্ঠানিকভাবে ‘গান ফায়ার’ করে সশস্ত্র যুদ্ধের ঘোষণা জানান।
১৯৭১-এর ৩ মার্চ পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের জনসভায় শাজাহান সিরাজ উপস্থাপিত ও পঠিত ইশতেহারটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম লিখিত দলিল। এই ইশতেহারের মাধ্যমে পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে ‘বিদেশী ও হামলাকারী শত্রু সৈন্য’ হিসেবে ঘোষণা করে ‘গ্রামে গ্রামে, এলাকায় এলাকায় মুক্তিবাহিনী গঠন’-এর ডাক দেয়া হয়। স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সর্বাধিনায়ক হিসেবে ঘোষণা করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম। স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমারেখা ও রাষ্ট্রীয় মূলনীতি তুলে ধরা হয় এই ইশতেহারে। স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার নকশা ও জাতীয় সঙ্গীতের প্রথম আনুষ্ঠানিক দিকনির্দেশনাও প্রদান করে ওই ঐতিহাসিক ইশতেহার।
বাংলাদেশ স্বাধীনতার ইশতেহার
জয় বাংলা (ইশতেহার নং-এক)
(স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ ঘোষণা ও কর্মসূচি)
স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ ঘোষণা করা হয়েছে :
গত ২৩ বছরের শোষণ, কুশাসন ও নির্যাতন এ কথা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করেছে, সাত কোটি বাঙালিকে গোলামে পরিণত করার জন্য বিদেশী পশ্চিমা উপনিবেশবাদীদের যে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র তা থেকে বাঙালির মুক্তির একমাত্র পথ স্বাধীন জাতি হিসেবে স্বাধীন দেশের মুক্ত নাগরিক হয়ে বেঁচে থাকা। গত নির্বাচনের গণরায়কে বানচাল করে শেষবারের মতো বিদেশী পশ্চিমা শোষকেরা সে কথার প্রয়োজনীয়তা হাড়ে হাড়ে প্রমাণ করেছে।
৫৪ হাজার ৫০৬ বর্গমাইল বিস্তৃত ভৌগোলিক এলাকার সাত কোটি মানুষের জন্য আবাসিক ভূমি হিসেবে স্বাধীন ও সার্বভৌম এ রাষ্ট্রের নাম বাংলাদেশ। স্বাধীন ও সার্বভৌম ‘বাংলাদেশ’ গঠনের মাধ্যমে নিম্নলিখিত তিনটি লক্ষ্য অর্জন করতে হবে।
১- স্বাধীন ও সার্বভৌম ‘বাংলাদেশ’ গঠন করে পৃথিবীর বুকে একটি বলিষ্ঠ বাঙালি জাতি সৃষ্টি ও বাঙালির ভাষা, সাহিত্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির পূর্ণ বিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে।
২- স্বাধীন ও সার্বভৌম ‘বাংলাদেশ’ গঠন করে অঞ্চলে অঞ্চলে, ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে বৈষম্য নিরসনকল্পে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি চালু করে কৃষক-শ্রমিক রাজ কায়েম করতে হবে।
৩- স্বাধীন ও সার্বভৌম ‘বাংলাদেশ’ গঠন করে ব্যক্তি, বাক ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতাসহ নির্ভেজাল গণতন্ত্র কায়েম করতে হবে।
বাংলার স্বাধীনতা আন্দোলন পরিচালনার জন্য নিন্মলিখিত কর্মপন্থা গ্রহণ করতে হবে :
(ক) বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রাম, মহল্লা, মহকুমা, শহর ও জেলায় ‘স্বাধীনতা সংগ্রাম কমিটি’ গঠন করতে হবে।
(খ) সকল শ্রেণীর জনসাধারণের সহযোগিতা কামনা ও তাদের ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।
(গ) শ্রমিক এলাকায় শ্রমিক ও গ্রামাঞ্চলে কৃষকদের সুসংগঠিত করে গ্রামে গ্রামে, এলাকায় এলাকায় ‘মুক্তিবাহিনী’ গঠন করতে হবে।
(ঘ) হিন্দু-মুসলমান ও বাঙালি-অবাঙালি সাম্প্রদায়িক মনোভাব পরিহার করতে হবে এবং সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে।
(ঙ) স্বাধীনতা সংগ্রামকে সুশৃঙ্খলার সাথে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য পারস্পরিক যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে এবং লুটতরাজসহ সকল প্রকার সমাজ বিরোধী ও হিংসাত্মক কার্যকলাপ বন্ধ করতে হবে।
স্বাধীনতা আন্দোলনের ধারা নিম্নরূপ হবে :
ক) বর্তমানে সরকারকে বিদেশী উপনিবেশবাদী শোষক সরকার গণ্য করে বিদেশী সরকারের ঘোষিত সকল আইনকে বেআইনি বিবেচনা করতে হবে।
খ) তথাকথিত পাকিস্তানের স্বার্থের তল্পীবাহী পশ্চিমা অবাঙালি মিলিটারিকে বিদেশী ও হামলাকারী শত্রু সৈন্য হিসেবে গণ্য করতে হবে এবং এ হামলাকারী শত্রু সৈন্যকে খতম করতে হবে।
গ) বর্তমান বিদেশী উপনিবেশবাদী শোষক সরকারকে সকল প্রকার ট্যাক্স-খাজনা দেয়া বন্ধ করতে হবে। ঘ) স্বাধীনতা আন্দোলনকারীদের উপর আক্রমণরত যেকোনো শক্তিকে প্রতিরোধ, প্রতিহত, পাল্টা আক্রমণ ও খতম করার জন্য সকল প্রকার সশস্ত্র প্রস্তুতি নিতে হবে।
ঙ) বৈজ্ঞানিক ও গণমুখী দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে সকল প্রকার সংগঠন গড়ে তুলতে হবে।
চ) স্বাধীন সার্বভৌম বাঙলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি...’ সংগীতটি ব্যবহৃত হবে।
ছ) শোষক রাষ্ট্র পশ্চিম পাকিস্তানি দ্রব্য বর্জন করতে হবে এবং সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
জ) উপনিবেশবাদী পাকিস্তানি পতাকা পুড়িয়ে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ব্যবহার করতে হবে।
ঝ) স্বাধীনতা সংগ্রামেরত বীর সেনানীদের সর্বপ্রকার সাহায্য ও সহযোগিতা প্রদান করে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ুন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের সর্বাধিনায়ক :
স্বাধীন ও সার্বভৌম ‘বাংলাদেশ’ গঠন আন্দোলনের এ পর্যায়ে নিন্মলিখিত জয়ধ্বনি ব্যবহৃত হবে -
স্বাধীন সার্বভৌম ‘বাংলাদেশ’ - দীর্ঘজীবী হউক।
স্বাধীন কর স্বাধীন কর - বাংলাদেশ স্বাধীন কর।
স্বাধীন বাংলার মহান নেতা - বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব।
গ্রামে গ্রামে দূর্গ গড় - মুক্তিবাহিনী গঠন কর।
বীর বাঙালি অস্ত্র ধর - বাংলাদেশ স্বাধীন কর।
মুক্তি যদি পেতে চাও - বাঙালিরা এক হও।
বাংলা ও বাঙালির জয় হোক
জয় বাংলা।
স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ।
বিঃদ্রঃ [গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ দলিলপত্র দ্বিতীয় খণ্ড থেকে সংগৃহীত]
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
কোন মন্তব্য নাই.