পৃথিবীর ছাদে বসবাসকারী মানুষের গল্প

পামির পর্বতমালা, ছবিঃ World Atlas
পামির মালভূমি। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু মালভূমি। তাই একে বলা হয় পৃথিবীর ছাদ। তাজিক ভাষায় পামির মানে পৃথিবীর ছাদ। আর তার পাশ ঘেঁষে আফগানিস্তানের এক প্রান্তে তাজিকিস্তান, পাকিস্তান ও চীন সীমান্তসংলগ্ন ২০০ মাইল লম্বা এক করিডোরে বসবাস করে আফগান কিরগিজ জনগোষ্ঠী। যেখানে ডাক্তার নেই, শিক্ষক নেই, স্কুল নেই, এমনকি সেখানে গাছও হয় না, যেখানে ফসল ফলে না। তবে সেখানে বসত করে ১৩০০ মানুষ।
কিরগিজ জনগোষ্ঠীরা তাদের নেতাকে খান বলে। বর্তমান খানের নাম হাজী রোশন খান। খানের সারা জীবনের স্বপ্ন একটি গাড়ি। অথচ তার এলাকায় গাড়ি চলাচলের উপযোগী কোনো রাস্তাই নেই। খানের পিতা, যিনি এর আগে খান ছিলেন, তিনি নিজ এলাকায় একটি রাস্তার জন্য দেনদরবার করেই জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন। নতুন খানও সেই একই কাজ করছেন।
একটি রাস্তা হলে তার এলাকায় সহজে ডাক্তার আসবে, ওষুধপত্র আসবে। তাহলে এখন যে নানা রোগ-ব্যাধিতে প্রতিদিন গাদা গাদা মানুষ মরবে, সেটা কমবে। রাস্তা হলে বাইরে থেকে আসবে ব্যবসায়ীরা। তারা আনবে নানা রকম সবজি। তবেই না এলাকাবাসীর উন্নতি হবে। তাই একটি রাস্তার জন্য কাজ করে চলেছেন খান, আর স্বপ্ন দেখছেন নিজের একটি গাড়ির।
তবে রাস্তা ও গাড়ি দুটোই এখন পর্যন্ত স্বপ্ন। বাস্তবতা হলো চমরি গরু। ওর পিঠে চড়েই তাদের যাতায়াত, পণ্য পরিবহন সব। এভাবেই জীবন চলে আফগানিস্তানের প্রত্যন্ত এলাকায় বসবাসকারী কিরগিজ যাযাবর জনগোষ্ঠীর। পশুচারণই তাদের একমাত্র পেশা।

চমরি গরুর পিঠে কিরগিজরা ছবিঃ the grand bazaar
কিরগিজ যাযাবরেরা তাদের জন্মভূমিকে বলে থাকে ‘পৃথিবীর ছাদ’। কথাটি শুনতে বেশ কাব্যিক ও সুন্দর। সুন্দর যে সে কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে এখানকার যে পরিবেশ, তা মনুষ্যবাসের কতটা উপযোগী, সে কথা বলা বেশ কঠিন।
দু’টি উপত্যকা নিয়ে গঠিত এই এলাকার নাম পামির। একে চার দিক থেকে ঘিরে আছে হিমবাহ। ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৪ হাজার ফুট ওপরে অবস্থিত এই এলাকায় বাতাস বয় ভয়ঙ্কর গতিতে। এখানে ফসল ফলানো অসম্ভব। বছরে ৩৪০ দিন তাপমাত্রা থাকে হিমাঙ্কের নিচে। অনেক কিরগিজ জীবনে কোনো দিন গাছ দেখেনি।
আফগানিস্তানের উত্তর-পশ্চিম কোণ থেকে বেরিয়ে থাকা সাঁড়াশি আকৃতির একখণ্ড ভূমিতেই এ দুই উপত্যকা। অনেকে একে বলেন ওয়াখান করিডোর। ঊনবিংশ শতাব্দীতে মধ্য এশিয়ার ওপর কর্তৃত্ব স্থাপন করতে যুদ্ধে লিপ্ত হয় ব্রিটিশ ও রুশ সাম্রাজ্য। সেই তথাকথিত ‘গ্রেট গেমের’ ফল এই করিডোর। ১৮৭৩ থেকে ১৮৯৫ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিক আলোচনা ও চুক্তির মাধ্যমে ‘বাফার জোন’ হিসেবে এর জন্ম। জারশাসিত রাশিয়া যাতে ব্রিটিশশাসিত ভারতে ঢুকতে না পারে, তারই কৌশলী একটা ব্যবস্থা। এর আগে কয়েক শতাব্দী ধরে এ এলাকা ছিল সিল্ক রুটের অংশ। এই পথ দিয়ে যাতায়াত করত বাণিজ্যবহর, সৈন্যদল, পরিব্রাজক ও ধর্মপ্রচারক দল। দ্বাদশ শতাব্দীর শেষ দিকে এই পথ পাড়ি দেন বিখ্যাত পর্যটক মার্কো পোলো।

পামির মালভূমি বেয়ে আসা নদী, ছবিঃ http://www.pamirs.org
১৯১৭ সালে রাশিয়া ও ১৯৪৯ সালে চীনে কমিউনিস্ট বিপ্লবের পর এসব সীমান্ত বন্ধ হয়ে যায়। একদার প্রশস্ত রাজপথ পরিণত হয় কানাগলিতে। বর্তমানে করিডোরের চার দিকে বেশ ক’টি দেশ উত্তরে তাজিকিস্তান, দক্ষিণে পাকিস্তান এবং পূর্বে চীন। মূল ভূখণ্ড আফগানিস্তানের অবস্থান পশ্চিমে; বহু দূরে। করিডোরটি ২০০ মাইল লম্বা। এই বিচ্ছিন্ন অবস্থানের কারণে অনেক কিরগিজ এটাকে আলাদা রাষ্ট্রও বলে থাকে। তারা নিজেদের ভেবে থাকে দূরের কোনো দ্বীপে আটকে থাকা জনগোষ্ঠী, যারা তুষারাবৃত পর্বত শ্রেণীর ভেতরে বন্দী এবং ইতিহাস, রাজনীতি ও সঙ্ঘাতের মধ্যে পথ হারিয়ে ফেলেছে।
এই করিডোর থেকে সবচেয়ে কাছের রাস্তাটিতে পৌঁছতে লাগে তিন দিন। যেতে হয় অনেকগুলো পর্বত পাড়ি দিয়ে। সেই রাস্তাটিকেই নিজের এলাকা পর্যন্ত নিয়ে আসতে চান খান। এই রাস্তার প্রান্ত থেকে সবচেয়ে কাছের যে শহর, যে শহরে আছে একটি হাসপাতাল ও কিছু দোকানপাট, সেটাও আরো এক দিনের পথ। কিরগিজদের অবস্থান বহির্বিশ্ব থেকে কত দূরে, এ থেকেই তা বোঝা যায়। এবং এই দূরত্বের কারণেই ওই অঞ্চলে মৃত্যুহার ভয়াবহ রকমের বেশি। কেননা সেখানে নেই কোনো ডাক্তার, নেই স্বাস্থ্য ক্লিনিক। ওষুধপত্র বলতে যা পাওয়া যায়, তা-ও নামেমাত্র। ফলে ছোটখাটো অসুখও প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে সময় নেয় না। শিশুমৃত্যুর হার সেখানে বিশ্বের সর্বোচ্চ। অর্ধেকেরও বেশি শিশু বয়স পাঁচ হওয়ার আগেই মারা যায়। পাঁচ, ছয় বা সাতটি সন্তান মারা গেছে, এমন মা-বাবার সংখ্যা অনেক। প্রসূতিমৃত্যুর হারও ভয়ানকভাবে বেশি।

কিরগিজ তাঁবু ও তাদের পশুগুলো, ছবিঃ news.com.au
বাইরের দুনিয়ার খোঁজখবর কিন্তু মোটামুটি রাখেন খান। তিনি দু’বার ওয়াখান অঞ্চলের বাইরে গেছেন। এ ছাড়া বাইরে থেকে তার এলাকায় আসা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অনেক খবর পান তিনি। নিজেদের পালিত পশুর বিনিময়ে ওই ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নেন কাপড়চোপড়, গয়নাগাটি, আফিম, সানগ্লাস, ঘোড়ায় চড়ার জিন, কার্পেট এবং মোবাইল ফোন। মোবাইল ফোনটি তাদের যোগাযোগের কাজে লাগে না। এটি দিয়ে তারা গান শোনে এবং ছবি তোলে।
খানের বয়স এখন ৩২। ‘খান’ হওয়ার পক্ষে যথেষ্ট কম বয়স। দেখতেও অনেকটা বালকসুলভ চেহারা। তেমন লম্বা-চওড়াও নন দেখতে। লিখতে-পড়তে জানেন না। তবে নিজ এলাকায় সম্প্রতি শিশুদের জন্য একটা স্কুল চালু করেছেন তিনি।
খানের স্ত্রীর তৈলুক। তাদের চার মেয়ে। ১৩ শ’ লোকের শাসক খান জীবনে মাত্র দুইবার নিজ এলাকার বাইরে গেছেন। একবার ২০০৮ সালে তার বাবা, তৎকালীন খান, আবদুল রশিদ খানের সাথে হজ করতে মক্কায় এবং দ্বিতীয় ও শেষবার গত বছর বসন্তকালে রাজধানী কাবুলে। সেবার তিনি আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই ও তার কয়েকজন মন্ত্রীর সাথে দেখা করেন। তাদের কাছে আবেদন জানান তার এলাকায় একটি মেডিক্যাল ক্লিনিক, কয়েকটি স্কুল এবং অবশ্যই একটি রাস্তা তৈরির জন্য অর্থ বরাদ্দের।
রোশন যেভাবে খান হলেন
বর্তমান খান হাজী রোশনের বাবাও ছিলেন খান। তার ছিল ১৪ সন্তান। তবে পৈতৃক সূত্রে খান হননি হাজী রোশন। কেননা বংশানুক্রমিকভাবে এখানে কেউ খান হতে পারে না। এখানে চলে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি। কে খান হবে, তা আলোচনা করে নির্ধারণ করেন গোত্রের মুরব্বিরা। অবশ্য পূর্ববর্তী খান মৃত্যুর আগে ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন যেন তার এই ছেলেটিকেই পরবর্তী খান নির্বাচিত করা হয়।
যা হোক, নতুন খান নির্বাচনের উদ্দেশ্যে এক বসন্তে নিজের ক্যাম্পে গোত্রের মুরব্বিদের আমন্ত্রণ জানালেন আরেক মুরব্বি এর আলী বাই। এখানে বলে রাখি, কিরগিজ সমাজের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে ক্যাম্প। একটি ক্যাম্পে তিন থেকে দশটি কিরগিজ পরিবার বাস করে। তারা একসাথে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যায়। তাদের চমরি গাই, মোটা লেজঅলা ভেড়া ও লম্বা লোমঅলা ছাগলের মালিকানাও অভিন্ন। জনা চল্লিশেক মুরুব্বি অনেক আলাপ আলোচনা করে শেষ পর্যন্ত রোশন খানকেই খান হিসেবে নির্বাচিত করেন।
আরেকটা এতক্ষণের বয়ান শুনে কিরগিজদের গরিব মনে করার কোনো কারণ নেই। যদিও ওখানে কাগজের টাকা প্রায় দেখাই যায় না। কিন্তু অনেক ক্যাম্পেই দেখতে পাওয়া যাবে শত শত মূল্যবান প্রাণী, যার মধ্যে আছে ঘোড়া ও গাধা। এ দু’টি প্রাণী পাহাড়ে চলাফেরার একটি বড় মাধ্যম। তবে কিরগিজ মুদ্রার মৌলিক ইউনিটটি হচ্ছে ভেড়া। যেমন ৫০টি ভেড়ার বিনিময়ে পাওয়া একটি সেলফোন সেট। দশটি ভেড়ায় মেলে একটি চমরি গাই। একটি উন্নত জাতের ঘোড়ার মূল্য ৫০টি ভেড়া। বিয়েতে যৌতুকের বর্তমান হার ১০০ ভেড়া। আর ধনী কিরগিজদের স্ট্যাটাস সিম্বল হচ্ছে উট। যার এক বা একাধিক উট আছে, তিনি কিরগিজ সমাজের একজন ধনাঢ্য ও গণ্যমান্য ব্যক্তি।

কিরগিজদের তাঁবু ও তাদের পশু, ছবিঃ Trekking the Wakhan Corridor in Afghanistan
এলাকার পরিবেশের মতো কিরগিজরাও রসকষহীন, কাঠখোট্টা। তারা খুব একটা হাসে না। তারা বই পড়ে না, তাস খেলে না কিংবা অন্য কোনো খেলাধুলাও নয়। তাদের তেমন কোনো গান নেই। নাচ বলতে হাতে করে খুব ধীরে একটা রুমাল দোলানো। এর মধ্যে ব্যতিক্রম হিসেবে আমি এক কিশোরের দেখা পাই, যার একটি নোটবই আছে এবং অসাধারণ সব স্কেচে এঁকে নোটবইটি সে ভরিয়ে ফেলেছে। ওই একজনই; এরকম আর কাউকে পাইনি আমি, যে চিত্রকলা বা আঁকাআঁকিতে আগ্রহী। একবার ওদের এক বিয়ের অনুষ্ঠানে যাই আমি। আশ্চর্য রকমের নিরানন্দ এক অনুষ্ঠান। ওখানে বুজকাশি নামে একটা খেলা হয়। দ্রুতগতির সহিংস এ খেলাটি খেলতে হয় ঘোড়ার পিঠে চড়ে। এতে বল হিসেবে ব্যবহৃত হয় মাথাবিহীন একটি ছাগলের মাংসের টুকরা।
এটা এমন একটা জায়গা, যেখানে আপনি দ্রুত বুড়িয়ে যাবেন। যখন আপনি সর্বক্ষণ শীতের কামড়ে অস্থির থাকবেন, আপনার পাঁচ-ছয়টি সন্তানকে অকালে মরে যেতে দেখবেন, আপনার মনের কিছু অনুভূতি তো লোপ পাবেই। এটা খুব ঝড়ো হাওয়ার দেশ, প্রত্যন্ত অঞ্চলে এর অবস্থান, খুব কঠিন এখানে থাকা। এ দেশ আপনাকে মেরে ফেলবে না, কিন্তু ধ্বংস করে ফেলবে। আপনার জীবনের আনন্দ কেড়ে নেবে।
কিরগিজ তাঁবুর ভেতরে পড়ছে কিরগিজ শিশুরা, ছবিঃ paleyphoto
মোটা পশমি কাপড়ের দরজা ঠেলে যদি ঢুকে পড়তে পারেন কোনো কিরগিজ তাঁবুতে, মনে হবে জাদুর কাঠির ছোঁয়ায় সব বুঝি চোখের পলকে বদলে গেল। মনে হবে পৃথিবী ছেড়ে আপনি চলে এসেছেন এক কিরগিজ ওয়ান্ডারল্যান্ডে। কম্বল থেকে কার্পেট, ওয়াল হ্যাঙ্গিং থেকে ছাদ সবাই ঝলমলে ডিজাইনে সজ্জিত।
তাবুর মাঝখানে অনবরত জ্বলতে থাকে খোলা চুল্লি অথবা লোহার স্টোভ। ওই এলাকায় কাঠ পাওয়া যায় না। তাই তারা গোবরের ঘুঁটেকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে, যার একটা সূক্ষ্ম মিষ্টি গন্ধ তাঁবুর ভেতর সর্বক্ষণ ছড়িয়ে থাকে। চুলার ওপর সারাক্ষণ থাকে চায়ের একটি কেটলি, কোনো কোনো তাঁবুতে কয়েকটিও। চা কিরগিজদের প্রধান পানীয়। তারা সর্বক্ষণ চা পান করে। চা পাতা সেদ্ধ পানিতে মেশায় লবণ ও চমরি গাইয়ের দুধ। তারা শরীর উষ্ণ রাখার জন্য চা খায় খুব। পঞ্চাশ কাপতো তাদের নিয়মিত। কেউ কেউ তার চাইতেও বেশি খায়।
কিরগিজদের আরেকটি খাদ্য চমরি গাইয়ের দুধ থেকে তৈরি দই; ঠাণ্ডা ও ঘন। এ ছাড়া তারা ‘কুরুত’ নামের একটি শক্ত পনিরও খায়। এটি চোষার আগে নরম হওয়ার জন্য মুখের ভেতর কয়েক মিনিট রেখে দিতে হয়। এ ছাড়া খায় ইস্ট ছাড়া তৈরি এক ধরনের রুটির টুকরো, আকারে পিৎসার সমান। আর সবজি বলতে এক ধরনের ছোট বুনো পেঁয়াজ, আকারে মটরশুঁটির সমান। গোস্ত খায় কোনো উৎসবে, অনুষ্ঠানে। অন্য সময় কদাচিৎ।
একজন কিরগিজ বৃদ্ধ, ছবিঃ paleyphoto
কিরগিজ তাঁবুর চেয়েও আরেকটি দেখার জিনিস হলো তাদের নারীরা। সাধারণত কিরগিজ পুরুষেরা পরে কালো পোশাক। দেখে মনে হতে পারে, বুঝি তারা কারো শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যাচ্ছে। এর বিপরীতে নারীরা যেন কিরগিজ চিত্রকর্ম। এই নারীদের মাথায় থাকে লম্বা চোঙ্গাকৃতির টুপি, যাতে জড়ানো থাকে বিশাল ওড়না। অবিবাহিতা হলে ওড়নার রঙ লাল, বিবাহিতাদের সাদা। তারা যখন পথ চলে, সেই ওড়না ঝড়ো হাওয়ায় উড়তে থাকে, যেন তা কোনো মহাবীরের শিরস্ত্রাণের পুচ্ছ।

একজন কিরগিজ তরুণী, ছবিঃ Kyrgyz of the Wakhan
কিরগিজ মেয়েদের পোশাক লম্বা এবং উজ্জ্বল লাল রঙের। সচরাচর এর ওপর তারা পরে লাল রঙের কোটজাতীয় একটা পোশাক। এই পোশাক যেন নানা রঙের মোজাইক। এর কলারে থাকে নানা রঙের অসংখ্য প্লাস্টিকের বোতাম। গলায় থাকে গোলাকৃতির ধাতব তাবিজ, যাতে পবিত্র কুরআনের আয়াত উৎকীর্ণ থাকে। কোমরবন্ধের সাথে ঝোলানো থাকে চামড়ার তৈরি থলে। তার গায়েও থাকে নানা জিনিস মুদ্রা, চাবি, সুগন্ধির বোতল, ঈগলের নখ। ফলে কোনো কিরগিজ নারী যখন পথ চলে, তখন নানা ধরনের টুংটাং শব্দের তরঙ্গ তৈরি করতে করতেই চলে।
কিরগিজ নারীরা মাথায় দুই বা ততোধিক বেণী করে। তার সাথে জুড়ে দেয় রূপার গয়না। এ ছাড়া গলায় পরে হার। মধ্যমা ছাড়া হাতের প্রতিটি আঙ্গুলে একটি করে আংটি থাকে তাদের, এমনকি বুড়ো আঙুলেও। হাতে প্রচুর চুড়ি; কানে দুল। একজনের হাতে মাত্র একটা ঘড়ি এমন নারীর দেখা মেলে কদাচিৎ। সবার হাতে দু’টি বা তিনটি।

চমরি গরুর দুধ দোহাচ্ছেন এক কিরগিজ নারী, ছবিঃ http://www.pamirs.org
এভাবে সাজগোজ করে ফুলবৌটি হয়ে বসে থাকে কিরগিজ নারীরা, তা কিন্তু নয়। তারা অবিরাম কাজ করে। দিনে দু’ বেলা চমরি গাইয়ের দুধ দোয়, রান্না করে, সেলাই করে, ঘরদোর পরিষ্কার করে, ছেলেমেয়ের দেখাশোনা করে। সব মিলিয়ে দিনভর ব্যস্ত থাকে তারা। আশপাশে কোনো পুরুষ মানুষ থাকলে মেয়েদের গলার আওয়াজ আর শোনা যায় না।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
কোন মন্তব্য নাই.