পৃথিবীর অনন্য পাঁচটি দ্বীপ
গ্রিনল্যান্ড, সূত্রঃ The Telegraph
পৃথিবী জুড়ে সাগর, মহাসাগরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য দ্বীপ। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের আধার এই সকল দ্বীপের সঠিক সংখ্যা নির্ণয় করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তবে ধারণা করা হয় যে মহাসাগরে প্রায় ২০০০ দ্বীপ রয়েছে। এদের আকার আকৃতি, ভূ-প্রাকৃতিক পরিবেশ, আবহাওয়া ও জলবায়ু, উদ্ভিদ ও প্রাণীকুল ইত্যাদি কারণে দ্বীপ গুলোর মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্যও রয়েছে। আজ আমরা বিখ্যাত পাঁচটি দ্বীপের কথা জানবো।
গ্রিনল্যান্ডঃ
সর্বমোট ২১,৩০,৮০০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের গ্রিনল্যান্ড দ্বীপটি পৃথিবীর সর্ববৃহৎ দ্বীপ। আটলান্টিক মহাসাগর ও উত্তর মহাসাগরের মাঝে অবস্থিত এই দ্বীপটি ডেনমার্কের একটি স্বায়ত্ত শাসিত অঞ্চল। গ্রিনল্যান্ডের ৮০ ভাগ অঞ্চল বরফ এবং হিমবাহ দ্বারা আবৃত। বিশাল এই দ্বীপটি জনসংখ্যা মাত্র ৫৭,৬০০ জন
গ্রিনল্যান্ড, সূত্রঃ public holidays global
বিশাল আয়তনের এই দ্বীপটিতে শুধুমাত্র জনসংখ্যা কম থাকার কারণে এটিকে মহাদেশ হিসেবে গণ্য করা হয়না। অ্যান্টার্কটিকার পরই গ্রিনল্যান্ড এ পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম বরফ স্তর রয়েছে। মেরু অঞ্চলের বাইরে সর্ববৃহৎ হিমবাহ এই দ্বীপে অবস্থিত। উত্তর-পূর্ব গ্রিনল্যান্ড ন্যাশনাল পার্ক পৃথিবীর সর্ববৃহৎ এবং সর্ব উত্তরের ন্যাশনাল পার্ক। গ্রিনল্যান্ডের শহর গুলোকে যুক্ত করার মত কোনো নিরবচ্ছিন্ন সড়ক পথ নেই।
গ্রিনল্যান্ডের মানুষের জীবিকার প্রধান উৎস মৎস্য শিকার, তিমি শিকার ও মুদ্রাঙ্কন ইত্যাদি।
কানাডার ব্যাফিন দ্বীপ
নুনাভাট অঞ্চলে অবস্থিত ব্যাফিন দ্বীপটি কানাডার সর্ববৃহৎ দ্বীপ। আয়তনে এই দ্বীপটি প্রায় ৫,০৭,৪১৫ বর্গ কিলোমিটার। আর্কটিক দ্বীপপুঞ্জের অন্তর্গত এই দ্বীপটি অত্যন্ত ঠাণ্ডা এবং এর বার্ষিক গড় তাপমাত্রা (-৮) ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়াও এখানে অনেক স্বাদু পানির হ্রদ ও ফিয়র্ড (সমুদ্র খাঁড়ি) রয়েছে।
ব্যাফিন দ্বীপ, সূত্রঃ Net Geo Italia
এই দ্বীপটির নামকরণ হয়েছে ব্রিটিশ অনুসন্ধানকারী উইলিয়াম ব্যাফিন এর নামানুসারে। এই দ্বীপের বেশির ভাগ অংশ সুমেরু বৃত্তের উত্তরে অবস্থিত হওয়ায় এখানে চমৎকার মেরুজ্যোতি বা অরোরা বোরিয়ালিস দেখা যায়। ব্যাফিনে মেরু ভালুক, সুমেরু নেকড়ে সহ বিভিন্ন ধরনের স্তন্যপায়ী প্রাণী বাস করে। এই দ্বীপে স্যারমিলিক ও আয়্যুটাক নামে দুটো ন্যাশনাল পার্ক রয়েছে যেখানে দৃষ্টিনন্দন হিমবাহ, নয়নাভিরাম ফিয়র্ড, ঝলমলে তুষারক্ষেত্র সহ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
মাদাগাস্কার, রিপাবলিক অব মাদাগাস্কার
ভারত মহাসাগরে আফ্রিকার পূর্ব উপকূলে মাদাগাস্কার দ্বীপ দেশটি অবস্থিত। পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম এই দ্বীপের আয়তন ৫,৮৭,৭১৩ বর্গ কিলোমিটার। ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে আলাদা হয়ে প্রায় ৮৮ মিলিয়ন বছর আগে এই দ্বীপটি গঠিত হয়। এই দ্বীপে রয়েছে কিছু অনন্য প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী। মাদাগাস্কার দ্বীপটিকে বলা হয় অষ্টম মহাদেশ বা বিকল্প পৃথিবী।
মাদাগাস্কার, সূত্রঃ AFK Travel
মাদাগাস্কার দ্বীপে ২, ৫০, ০০০ প্রজাতির প্রাণীর বসবাস যা পৃথিবীর আর কোথাও পাওয়া যায়না। এখানে ১৪,০০০ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে যার ৯০ ভাগই এখানকার স্থানীয় প্রজাতির। বিড়াল মুখো ল্যামুর শুধুমাত্র মাদাগাস্কার দ্বীপেই দেখা যায়। মাদাগাস্কার দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে অবস্থিত টোলিয়ারা প্রবাল প্রাচীরটি পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম প্রবাল প্রাচীর।
প্রশান্ত মহাসাগরের নিউ গিনি
পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় নিউ গিনি দ্বীপটি পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বীপ। এই দ্বীপটি ১,৫০০ মাইল দীর্ঘ ও ৪০০ মাইল প্রশস্ত এবং এর আয়তন ৭,৮৫,৭৫৩ বর্গ কিলোমিটার। এই দ্বীপটি পরিচালিত হয় দুটি দেশের অধীনে- পশ্চিমাংশ ইন্দোনেশিয়ার অধীনে এবং পূর্বাংশ পাপুয়া নিউ গিনির অধীনে।
নিউ গিনি, সূত্রঃ GE Works
এই দ্বীপের প্রায় পুরোটা জুড়ে রয়েছে সুউচ্চ পর্বত শ্রেণি। ১৬,৫০৩ ফুট উচ্চতা সম্পন্ন জয়া শৃঙ্গ নিউ গিনির সর্বোচ্চ চূড়া। এই অঞ্চলে জনবসতি স্থাপন হয় ৪০,০০০ বছর আগে। দ্বীপটিতে বিপুল পরিমাণ কপার ও সোনা মজুদ রয়েছে। এখানে চমৎকার সব প্রজাতির পাখি রয়েছে।
তিন দেশের দ্বীপ বোর্নিও
পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত বোর্নিও দ্বীপটি পৃথিবীর একমাত্র দ্বীপ যা তিনটি দেশের দ্বারা পরিচালিত হয়। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও ব্রুনাই এই দ্বীপটি শাসন করলেও এর বেশিরভাগ অঞ্চল ইন্দোনেশিয়ার অন্তর্ভুক্ত। ৭,৪৮,১৬৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের দ্বীপটি পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম দ্বীপ। এই দ্বীপটি আয়তনে জার্মানির প্রায় দ্বিগুণ।
বোর্নিও, সূত্রঃ Bursada Bugun
বোর্নিও দ্বীপের রেইনফরেস্ট এর বয়স ১৩০ মিলিওন বছরের ও বেশি। এটা পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো রেইনফরেস্ট। এই বনে ১৫,০০০ প্রজাতির উদ্ভিদ, ২২১ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী ও ৪২০ প্রজাতির পাখি রয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ মাউন্ট কিমাবালু বোর্নিও দ্বীপে অবস্থিত। বিলুপ্তপ্রায় বোর্নিয়ান ওরাংওটাং ও দায়াক ফল বাদুর শুধুমাত্র এই দ্বীপেই পাওয়া যায়।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
কোন মন্তব্য নাই.