অগ্নিঝড়া মার্চ আমার আগুন ঝড়া কাব্য
একাত্তরের অগ্নিঝরা মার্চের আজ ৮ম দিন। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ডাক ও সশস্ত্র সংগ্রামের প্রস্তুতির নির্দেশে পুরোপুরি পাল্টে যায় পুরো বাংলাদেশের চিত্র।
বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালনে উত্তাল-বিক্ষুব্ধ বাংলায় বিদ্রোহ-সংগ্রামের তরঙ্গ টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। বাঙালির প্রচণ্ড বিক্ষোভে একাত্তরের এই দিনে রেডিও-টেলিভিশনে বঙ্গবন্ধুর অবিস্মরণীয় ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ প্রচার করতে বাধ্য হয় পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী।
চোখের সামনে সবাইকে বোকা বানিয়ে বঙ্গবন্ধুর কৌশলে স্বাধীনতার আহ্বানে হতভম্ভ হয়ে যায় পাকিস্তানি সামরিক জান্তা। বঙ্গবন্ধুকে বিচ্ছিন্নতাবাদী বানিয়ে স্বাধীনতার আন্দোলনকে ভুলের শেষ পরিকল্পনাও ব্যর্থ হওয়ায় হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম দমনের নীলনকশা আঁটতে থাকে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী।
১৯৭১-এর এই দিনে বাংলার দামাল ছেলেরা চূড়ান্ত আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রস্তুতি নিতে থাকে। আর ৭ মার্চ দেওয়া বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে উদ্বুদ্ধ বাংলার জনগণ। বঙ্গবন্ধু যে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছেন, তার পক্ষে দেশবাসী জেগে উঠতে শুরু করে। বাংলার দামাল ছেলেরা নিজেরা দলে দলে যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। বঙ্গবন্ধুর ডাকে অসহযোগ আন্দোলন চলতেই থাকে। এ সময় স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
অন্যদিকে বঙ্গবন্ধুর বাণী রেডিওতে প্রচার না করায় বাঙালিরা ক্ষোভে ফেটে পড়ে। বেতারকর্মীদের আন্দোলনের কারণে পাকিস্তানিরা বাধ্য হয় বঙ্গবন্ধুর ভাষণ বেতারে প্রচার করতে। ৮ মার্চ সকাল ৮টায় রেডিওতে ভেসে আসে বঙ্গবন্ধুর সেই অবিস্মরণীয় ভাষণ- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। অন্যদিকে আগের মতোই উত্তাল জনতা মিটিং-মিছিলে প্রকম্পিত করে রাখে সারাদেশ।
মাত্র একদিন আগে ৭ মার্চ সকালে পাকিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ফারল্যান্ড বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে সাক্ষাৎ করে সরাসরি স্বাধীনতা ঘোষণা না করার জন্য ওয়াশিংটনের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন। পাকিস্তান হানাদাররাও প্রস্তুত ছিল বঙ্গবন্ধু সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা দিলে প্রচণ্ড আক্রমণ চালাবে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু আগে থেকেই এ ব্যাপারে সতর্ক ছিলেন।
বিচ্ছিন্নতাবাদীর দায় চাপিয়ে দেশের স্বাধীনতাকে যাতে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা বিলম্বিত করতে না পারে, সেজন্য বঙ্গবন্ধু মাত্র ১৯ মিনিটে দেন একটি সর্বশ্রেষ্ঠ ঐতিহাসিক ভাষণ।সরাসরি না দিয়ে বঙ্গবন্ধু পরোক্ষভাবে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দেন বীর বাঙালিকে। আর বঙ্গবন্ধুর বজ্রনির্ঘোষ কণ্ঠে এ নির্দেশ পেয়েই নিরস্ত্র বাঙালি জাতি সশস্ত্র হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
কোন মন্তব্য নাই.