‘জাতি’ বলতে আমরা কি বুঝি?
‘জাতি’ বলতে আমরা কি বুঝি?
‘জাতি’ প্রথা মানবজাতির এমন এক প্রথা, যা একই সাথে বিভেদ এবং ঐক্যের কারণ। জাতিভেদের মাধ্যমে মানবজাতি একে অপর থেকে আলাদা হয়। তুমি আরব, আমি বাঙালি বা তুমি চাকমা, আমি বাঙালি। আবার জাতিভেদের মাধ্যমে মানবজাতির অভ্যন্তরে রচিত হয় ঐক্যের সুর। তুমি আরব, আমি বাঙালি, আমরা মানুষ। তুমি চাকমা, আমি বাঙালি, আমরা মানুষ। জাতিভেদ করা হয় যেন মানুষ একে অপরকে চিনতে পারে, একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পারে। জাতি বলতে মূলত নৃগোষ্ঠী বোঝানো হয়। নৃ মানে মানুষ অর্থাৎ মানুষের গোষ্ঠীসমূহ।
মূলত জাতিভাগ করা হয় তিন ভাবে। ভাষা-সংস্কৃতি, ধর্ম এবং রাষ্ট্রীয় সীমানা। এর মধ্যে ভাষা-সংস্কৃতির আলোকে জাতিভাগ করাটাই সবচেয়ে মূলানুগ। ধর্মের ভিত্তিতে জাতিভাগ করা অপ্রয়োজনীয় বাহুল্য। আর রাষ্ট্রীয় সীমানার মাধ্যমে জাতিভাগ করাটা সবচেয়ে দুর্বল জাতিভাগ। কারণ রাষ্ট্রীয় সীমানাগুলো নবীন, ভঙ্গুর এবং উপনিবেশিক মানসিকতার ফসল।
ধর্মের ভিত্তিতে জাতিভেদ খুবই অস্পষ্ট। যেমন মুসলমান জাতি, খ্রিস্টিয়ান জাতি, হিন্দু জাতি ইত্যাদি ভাগে মানুষকে ভাগ করাটা একটা অপ্রয়োজনীয় বিষয়। এমনটা হওয়া উচিত নয়। মুসলমানরা বিভিন্ন জাতি হতে পারে। যেমন আরব মুসলমান বা তুর্কি মুসলমান বা মালয় মুসলমান বা তামিল মুসলমান। কিন্তু এটা অপ্রয়োজনীয় একারনে যে একটা জাতিতে বিভিন্ন ধর্মের লোক থাকতে পারে। যেমন বাঙালিদের মধ্যে মুসলমান আছে, হিন্দু ধর্মের মানুষ আছে, খ্রিস্টিয়ান ধর্মের মানুষ আছে। বৌদ্ধ আছে, নির্ধর্মী আছে। আবার আরবদের মধ্যেও কেবল মুসলমান আছে তা নয়। আরবদের মধ্যেও খ্রিস্টিয়ান আছে, মানদিয়ান আছে, ইহুদি আছে, বাহাই আছে, নির্ধর্মী আছে। তাই ধর্মের হিসাবে একক কোনো জাতি হতে পারে না। যেমন মুসলমান জাতি বা খ্রিস্টিয়ান জাতি ইত্যাদি।
রাষ্ট্রের ভিত্তিতে জাতিভেদ অস্পষ্ট না হলেও একই রকম অপ্রয়োজনীয়। কারণ বর্তমান রাষ্ট্রগুলোর সীমানা উপনিবেশিক মন ও জ্ঞানের ফসল। এই সীমানাগুলো বেশিরভাগই রাজনৈতিকভাবে কৃত্তিম। যেমন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ভেতর বাঙালি জাতি আছে। আছে চাকমা জাতি, মারমা জাতি, সাঁওতাল জাতি। আছে এরকম ৪০ থেকে ৪৫ টি জাতি। আবার বাংলাদেশের বাইরেও বাঙালি জাতি আছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম এবং ত্রিপুরাতে বাঙালি জাতির বসবাস। আবার ভারত রাষ্ট্রে বাঙালি ছাড়াও তামিল, তেলুগু, মারাঠি, গুজরাতি, কাশ্মিরি, রাজস্থানি, অসমিয়া বিভিন্ন জাতি রয়েছে। এইভাবে রাষ্ট্র দিতে জাতিভাগ করাটা বাহুল্য।
জাতীয় পরিচয় মূলত মানুষের সাংস্কৃতিক লক্ষণ বিচার। যেমন আমরা যখন শুনবো কেউ বাঙালি, তখন বুঝে নেব যে সে বাংলায় কথা বলে, তার সংস্কৃতি বাঙালি এবং তার প্রধান খাদ্য ভাত। আবার যখন শুনবো কেউ রুশ, তখন বুঝে নেব যে তার ভাষা রুশ, তার সংস্কৃতি রুশ এবং তার প্রধান খাদ্য রুটি এবং আলু। ধর্ম এবং সীমানায় পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও সাংস্কৃতিক মিলের কারণে মানুষ একই জাতির অন্তর্গত হতে পারে। যেমন বাংলাদেশের মুসলমান বাঙালি এবং পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু বাঙালি ধর্ম এবং সীমানার জাতীয়তা দ্বারা সম্পূর্ন আলাদা। কিন্তু তারপরও তারা আলাদা নয়, বাঙালি জাতির অন্তর্ভূক্ত। কারণ তাদের ভাষা এবং সংস্কৃতি এক।
ভাষা আর সংস্কৃতিই তাই জাতিভেদের মূল প্রযোজক। ভাষার ভিত্তিতেই গড়ে উঠে জাতি। ভাষার ভিত্তিতেই গড়ে উঠে মানুষে মানুষে বিভাজন। সংস্কৃতির কারণে মানুষে মানুষে পার্থক্য। সংস্কৃতির মাধ্যমেই মানুষে মানুষে ঐক্য।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
‘জাতি’ প্রথা মানবজাতির এমন এক প্রথা, যা একই সাথে বিভেদ এবং ঐক্যের কারণ। জাতিভেদের মাধ্যমে মানবজাতি একে অপর থেকে আলাদা হয়। তুমি আরব, আমি বাঙালি বা তুমি চাকমা, আমি বাঙালি। আবার জাতিভেদের মাধ্যমে মানবজাতির অভ্যন্তরে রচিত হয় ঐক্যের সুর। তুমি আরব, আমি বাঙালি, আমরা মানুষ। তুমি চাকমা, আমি বাঙালি, আমরা মানুষ। জাতিভেদ করা হয় যেন মানুষ একে অপরকে চিনতে পারে, একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পারে। জাতি বলতে মূলত নৃগোষ্ঠী বোঝানো হয়। নৃ মানে মানুষ অর্থাৎ মানুষের গোষ্ঠীসমূহ।
মূলত জাতিভাগ করা হয় তিন ভাবে। ভাষা-সংস্কৃতি, ধর্ম এবং রাষ্ট্রীয় সীমানা। এর মধ্যে ভাষা-সংস্কৃতির আলোকে জাতিভাগ করাটাই সবচেয়ে মূলানুগ। ধর্মের ভিত্তিতে জাতিভাগ করা অপ্রয়োজনীয় বাহুল্য। আর রাষ্ট্রীয় সীমানার মাধ্যমে জাতিভাগ করাটা সবচেয়ে দুর্বল জাতিভাগ। কারণ রাষ্ট্রীয় সীমানাগুলো নবীন, ভঙ্গুর এবং উপনিবেশিক মানসিকতার ফসল।
ধর্মের ভিত্তিতে জাতিভেদ খুবই অস্পষ্ট। যেমন মুসলমান জাতি, খ্রিস্টিয়ান জাতি, হিন্দু জাতি ইত্যাদি ভাগে মানুষকে ভাগ করাটা একটা অপ্রয়োজনীয় বিষয়। এমনটা হওয়া উচিত নয়। মুসলমানরা বিভিন্ন জাতি হতে পারে। যেমন আরব মুসলমান বা তুর্কি মুসলমান বা মালয় মুসলমান বা তামিল মুসলমান। কিন্তু এটা অপ্রয়োজনীয় একারনে যে একটা জাতিতে বিভিন্ন ধর্মের লোক থাকতে পারে। যেমন বাঙালিদের মধ্যে মুসলমান আছে, হিন্দু ধর্মের মানুষ আছে, খ্রিস্টিয়ান ধর্মের মানুষ আছে। বৌদ্ধ আছে, নির্ধর্মী আছে। আবার আরবদের মধ্যেও কেবল মুসলমান আছে তা নয়। আরবদের মধ্যেও খ্রিস্টিয়ান আছে, মানদিয়ান আছে, ইহুদি আছে, বাহাই আছে, নির্ধর্মী আছে। তাই ধর্মের হিসাবে একক কোনো জাতি হতে পারে না। যেমন মুসলমান জাতি বা খ্রিস্টিয়ান জাতি ইত্যাদি।
রাষ্ট্রের ভিত্তিতে জাতিভেদ অস্পষ্ট না হলেও একই রকম অপ্রয়োজনীয়। কারণ বর্তমান রাষ্ট্রগুলোর সীমানা উপনিবেশিক মন ও জ্ঞানের ফসল। এই সীমানাগুলো বেশিরভাগই রাজনৈতিকভাবে কৃত্তিম। যেমন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ভেতর বাঙালি জাতি আছে। আছে চাকমা জাতি, মারমা জাতি, সাঁওতাল জাতি। আছে এরকম ৪০ থেকে ৪৫ টি জাতি। আবার বাংলাদেশের বাইরেও বাঙালি জাতি আছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম এবং ত্রিপুরাতে বাঙালি জাতির বসবাস। আবার ভারত রাষ্ট্রে বাঙালি ছাড়াও তামিল, তেলুগু, মারাঠি, গুজরাতি, কাশ্মিরি, রাজস্থানি, অসমিয়া বিভিন্ন জাতি রয়েছে। এইভাবে রাষ্ট্র দিতে জাতিভাগ করাটা বাহুল্য।
জাতীয় পরিচয় মূলত মানুষের সাংস্কৃতিক লক্ষণ বিচার। যেমন আমরা যখন শুনবো কেউ বাঙালি, তখন বুঝে নেব যে সে বাংলায় কথা বলে, তার সংস্কৃতি বাঙালি এবং তার প্রধান খাদ্য ভাত। আবার যখন শুনবো কেউ রুশ, তখন বুঝে নেব যে তার ভাষা রুশ, তার সংস্কৃতি রুশ এবং তার প্রধান খাদ্য রুটি এবং আলু। ধর্ম এবং সীমানায় পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও সাংস্কৃতিক মিলের কারণে মানুষ একই জাতির অন্তর্গত হতে পারে। যেমন বাংলাদেশের মুসলমান বাঙালি এবং পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু বাঙালি ধর্ম এবং সীমানার জাতীয়তা দ্বারা সম্পূর্ন আলাদা। কিন্তু তারপরও তারা আলাদা নয়, বাঙালি জাতির অন্তর্ভূক্ত। কারণ তাদের ভাষা এবং সংস্কৃতি এক।
ভাষা আর সংস্কৃতিই তাই জাতিভেদের মূল প্রযোজক। ভাষার ভিত্তিতেই গড়ে উঠে জাতি। ভাষার ভিত্তিতেই গড়ে উঠে মানুষে মানুষে বিভাজন। সংস্কৃতির কারণে মানুষে মানুষে পার্থক্য। সংস্কৃতির মাধ্যমেই মানুষে মানুষে ঐক্য।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
কোন মন্তব্য নাই.