নারীর অধিকার ঠিক কোথায়?
পারভীন আক্তারের বাড়ি মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার পাচুটিয়া গ্রামে। কাকডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে উঠান ঝাড়ু ও থালাবাসন ধোয়ার কাজ দিয়েই শুরু হয় তার প্রাত্যহিক জীবনের রুটিন। রান্নাবান্না থেকে ঘরের কাজ, সব সদস্যের খাবার পরিবেশন, কাপড়চোপড় ধোয়া, হাঁস-মুরগির খাবার দেয়া, ছোট ছেলেকে স্কুলে পাঠানোর প্রস্তুতি।
আবার দুপুরের খাবারের প্রস্তুতি। এর পর কৃষিকাজেও সহায়তা করেন পরিবারের পুরুষদের সাথে। একান্নবর্তী পরিবার, সদস্য সংখ্যা বেশি; তাই খাওয়াদাওয়া চলে বিকেল পর্যন্ত। খাওয়ার পর থালাবাসন পরিষ্কার ও হাঁড়িপাতিল ধোয়ার কাজ করতে হয়। কখন যে বেলা গড়িয়ে যায়, টের পান না পারভীন। এরপর চলে রাতের খাবার তৈরির পালা। রাতে সবার খাওয়া শেষ হলে তার খাওয়ার পালা। অনেক দিন তরকারিও জোটে না কপালে। ঘুমোতে ঘুমোতে রাতের অনেকটা সময় পেরিয়ে যায়। এভাবেই দিন কেটে যায় পারভীন আক্তারের।
তারপরও স্বামী, ছেলেমেয়ে ও সংসার নিয়ে সুখে আছেন তিনি। শুধু একজন পারভীন আক্তারই নন, আমাদের দেশের প্রায় সব গ্রামীণ নারীই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা কঠোর পরিশ্রম করেন। কিন্তু নারীর এ কাজের স্বীকৃতি নেই বললেই চলে। বাংলাদেশের নারীরা জনসংখ্যার অর্ধেক; কিন্তু সুযোগ-সুবিধার দিক থেকে পুরুষের চেয়ে অনেকটা পিছিয়ে।
বিয়ের পাঁচ বছরের মাথায় তিন সন্তানকে রেখে স্বামী মারা যাওয়ার পর মানিকগঞ্জের বরংগাইল গ্রামের রোকেয়া বেগম দু’বেলা খাবার জোটাতে নাম লেখান মহিলা শ্রমিকদের দলে। এরপর থেকে মাটি কাটা, ইটভাটার তপ্ত দহন ও কৃষিকাজসহ সব ধরনের কায়িক পরিশ্রম শুরু করেন তিনি। কিন্তু হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেও নারী বলে পুরুষের সমান মজুরি পান না তিনি। শুধু রোকেয়া বেগম নন, তার মতো দেশের সব নারীশ্রমিকের অবস্থা একই। দিন-রাত পরিশ্রম করেও তারা ন্যায্য মজুরি পান না।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
কোন মন্তব্য নাই.