ঈদ উপলক্ষ্যে স্পেশাল রান্না
♦ ভাত:
প্রথমেই আসি ভেতো বাঙালীর ভাতের কথায়। ভাত ফুটাতে এমনিতে যতটা সময় লাগে তার তিন ভাগের এক ভাগ সময় নিয়ে ফুটাতে পারেন যদি প্রেসার কুকার ব্যবহার করেন। শুধু চাল আর পানির পরিমাণটা ঠিক থাকলেই হল। সাধারণভাবে যেটুকু চাল তার দ্বিগুণ পানি নিলেই হবে। প্রেসার কুকারে তিনবার লম্বা সিটি বাজলেই ভাত সিদ্ধ হয়ে যাবে। এতে সময় নিবে পাঁচ থেকে সাত মিনিট। যদি কারও কুকারে লম্বা সিটি না বাজে, ছোট ছোট সিটি বাজে, তাহলে তিনবারের বদলে ছয়বার সিটি গুণতে হবে। আর চুলা বন্ধ করার আরও ১৫-২০ মিনিট পর কুকারের ঢাকনি খুলতে হবে। তাহলে ভাত মোটামুটি ঝরঝরে হয়ে যাবে। এর আগে ভাপ বের করে খুলে ফেললে ভাত আঠালো থাকে। আর কেউ যদি ইলেকট্রিক রাইস কুকারে ভাত ফুটান, তাহলে তো ভাতের পিছনে কোন গ্যাসই খরচ হবে না।
♦ ডাল:
ভাতের পরই চলে আসে ডালের কথা। মসুরের ডাল সিদ্ধ হতে যে সময় লাগে একেও তিন ভাগের এক ভাগে কমিয়ে আনতে পারেন। শুধু একটা ছোট কাজ করতে হবে। ডাল সিদ্ধ বসানোর চার ঘন্টা আগে ডাল ধুয়ে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। আমি যেটা করি, অফিসে যাওয়ার আগে ডাল ভিজিয়ে রেখে যাই, দুপুরে অফিস থেকে এসে রান্না করি। দশ মিনিটের মধ্যে ডাল সিদ্ধ হয়ে যায়। এরপর পেঁয়াজ-মরিচ-রসুন তেলে ভেজে বাগার দিয়ে দিলেই হল। পনের মিনিটে ডাল রান্না শেষ। মনে করে ডাল সিদ্ধ করার সময় পানি কমিয়ে দিতে হবে। নয়তো পানি শুকাতেই সময় লেগে যাবে। চার ঘন্টা ভিজানোর সময় না থাকলে প্রেসার কুকারেও ডাল সিদ্ধ করা যায়, তবে ওতে কেন যেন ডালের স্বাদটা ঠিক আসে না। এভাবে হালিমও বানাতে পারেন।
♦ গরু/খাসীর মাংস:
গরু/খাসীর মাংসের জন্যও সেই প্রেসার কুকারই ভরসা। তবে দুইভাবে রান্না করা যায়। একটা হল মাংস আগে প্রেসার কুকারে সিদ্ধ করে চর্বির পানিটুকু ফেলে দিয়ে এরপর মশলা কষিয়ে রান্না করা যায়। অথবা আগেই মশলা দিয়ে কষিয়ে নিয়ে এরপর পানি দিয়ে প্রেসার কুকারে বসিয়ে দেয়া যায়। প্রথমটায় তেল-চর্বি কম থাকে, দ্বিতীয় পদ্ধতিতে কষানোটা ভালো হয়। আমি আগে প্রথম পদ্ধতিতে করতাম, এখন দ্বিতীয় পদ্ধতিতে মাংস রান্না করি। প্রেসার কুকারে মাংস ভালো মত সিদ্ধ হতে কমপক্ষে বারোটা লম্বা সিটি বাজতে হবে। কেউ কেউ মুরগীর মাংসও প্রেসার কুকারে করে। তবে মুরগীর মাংস কষতেই সেদ্ধ হয়ে যায় তাই প্রেসার কুকারে দেবার প্রয়োজন পরে না।
♦ শাক-সবজী:
এগুলো প্রেসার কুকারে ঠিক সুবিধা হয় না। তাই কড়াইতেই রান্না করি। তবে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রান্না করি, এতে তাড়াতাড়ি সিদ্ধ হয়। শুধু আলুভর্তার জন্য আলু সিদ্ধ করতে প্রেসার কুকার খুব কাজে লাগে। দুইটা লম্বা সিটিই আলু সুন্দরমত সিদ্ধ করার জন্য যথেষ্ট।
♦ পোলাও/খিচুড়ি:
প্রেসার কুকারে সাদা পোলাও করা যায়। এক্ষেত্রে চালের পরিমাণ যতটুকু, পানিও ঠিক ততটুকু নিতে হবে। আর খিচুড়ি যদি পোলাও-এর চাল দিয়ে করতে চান, তাহলে চাল-ডালের সমপরিমাণ থেকে একটু কম পানি দিতে হবে। ভাতের চাল দিয়ে খিচুড়ি করলে ডালের সমপরিমাণ পানি, আর চালের দ্বিগুণ পরিমাণ পানি যোগ করে দিলেই হবে। সবজি-খিচুড়ি করলেও একই নিয়ম, শুধু সবজীর জন্য খুব সামান্য পরিমাণ পানি যোগ করে দিতে হবে।
♦ পুডিং:
১/২ লিটার দুধ নেড়ে নেড়ে জ্বাল দিতে থাকুন, খেয়াল রাখবেন দুধে যাতে স্বর বসে না যায়। তাই ঘন ঘন নাড়তে হবে। দুধ কমে যখন প্রায় অর্ধেক হয়ে যাবে নামিয়ে ঠান্ডা করুন। অন্য পাত্রে ৫ টা ডিম ভাল করে ফেটে নিন, এইবার এর সাথে চিনি মেশান। সবটা চিনি গলে যাবে না, তবুও যতটা সম্ভব ভাল করে মেশান। মিশ্রণটি জ্বাল দেয়া ঠান্ডা দুধে দিন, ১ চা চামচ ঘি দিন। ভাল করে ফেটে নিন, ভাল করে। এইবার পছন্দসই একটি পাত্র (প্রেসার কুকার উপযোগী) চুলায় চাপিয়ে তাতে সামান্য চিনি দিয়ে একটু লালচে (পুড়ে) করে নিন, পুডিং যখন উপুড় করে পরিবেশন করবেন তখন দেখতে ভাল দেখাবে। প্রেসার কুকারে পানি দিয়ে এর মধ্যে একটি স্ট্যান্ড বসিয়ে তার উপর পুডিং এর মিশ্রণ সহ ঢাকনা দিয়ে পাত্রটি দিন। ৩/৪ সিটি পর্যন্ত রান্না হতে দিন। এই সময়ে পাত্রের ঢাকনা তুলে দেখতে পারেন পুডিং জমেছে কিনা। মিনিট বিশেক এর মত লাগবে পুডিং হতে।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
মন্তব্য: ২ টি