"মানুষ মানুষের জন্য জীবন জীবনের জন্য, একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারেনা? ও বন্ধু!" বিখ্যাত এই গানের অন্য অংশে বলা হয়েছে, মানুষ মানুষকে পণ্য ও জীবিকার বস্তু বানায়। অথচ মানুষের তো এমন হবার কথা ছিলো না! বাংলাদেশ বন্যার ডুবে আছে। মানুষ খাদ্য পাচ্ছেনা। বিশুদ্ধ পানি নেই। চারিদিকে হাহাকার! অপ্রতুল ত্রাণ ব্যবস্থার কষ্ট ঢাকায় লাগেনা! তাই মিডিয়ার ঢাকাবাসী মালিকরাও আগ্রহী হননা। অথচ মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে সরকার কোথায় কী করলো তা নিয়ে সম্পাদকরা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ডাক দেন। যুক্তি- জাতির দর্পন! সত্যিই কি সংবাদ পত্র ও মিডিয়াগুলো জাতির দর্পন? নাকি ঢাকার দর্পন? এর সাথে যুক্ত হয়েছে সাম্রাজ্যের আগ্রাষণ। সাম্রাজ্যবাদের নেশায় মানুষকে গুলি করে সীমান্ত ভিজিয়ে রাখার বিরোধীতা না হলেও, ঐ সাম্রাজ্যের কদর হাতি পর্যন্ত নেমে আসে! হায় আফসোস! হায়!

দেশের অগণিত মানুষ পানিবন্দী হয়ে পানির ওপর ভেসে আছে। তাদের খবর কয়টি? শিরোনাম? বরং একটি হাতিও যে বান ভাসা হয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে! তাই শিরোনাম ও কলম আগ্রাষণ শুরু হয়েছে। মানুষ যে মহান! আজ মানুষ মরলেও কান্না নাই। হাতির জন্যে মায়া! একটি জীবের জন্য মায়া হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপনের সুযোগ নেই। কিন্তু সেই জীব যদি জীবের চেয়ে ভারতীয় হবার কারনে গুরুত্ব পায়?-প্রবল আপত্তি থাকে। তা না হলে বাংলাদেশী ফেলানী কেবল বাংলাদেশী বলেই মূল্যহীন কেন? আস্ত সুন্দরবন ধ্বংস হলেও বন ও প্রাণীর মায়া থাকেনা কেন? বাংলাদেশী, তাইনা?

বাংলাদেশী বানভাসা ফেলানীরা সংবাদের বাইরে রবে? বন্যার শুরু থেকে পুরো বাংলাদেশের মানুষের কাছে একটি হাতির চেহারা, মেরুদন্ড, লেজ, উচ্চতা মুখস্থ। মিডিয়া চাইলে কী না পারে? ঠিক প্রাইমারী স্কুলের মত করে হাতি চেনাচ্ছেন! স্কুলে হাতি পড়া হলেও, 'ভারতীয় হাতি' পড়া হয়নি। এ যে ভারতীয় হাতি!

বাঁধ খুলে দেয়া ভারতীয় বান! ভাসছে বাংলাদেশ। ঘটনাক্রমে ভারতীয় হাতি ভেসে এসেছে?? তা হবে কেন? বানে ভাসবে এ পাড়ের মানুষ। ওপাড়ের হাতির নিয়তি তো বানে ভাসা নয়। বান ছেড়ে আনন্দিত থাকা! উজানকে বানে ডুবিয়ে নিজে বাঁচা। আর খরার সময় স্রোত আটকে ফসল পুড়ানো। বান, খরা সবই পূর্বাঞ্চলের নিয়তি। সেখানে একটি ভারতীয় হাতি বাঁধের শিকারে পরিনত হল? সে তো বিশাল খবর! সাম্রাজ্যবাদের থাবায় ফেলানিরা ঝুলেই থাকলো, খবরের পাতায় নেমে আসলোনা! ভারতীয় হাতি বেঁচে যাক। সেই কামনাই করি! ভারতীয় হাতি, বাংলাদেশী ফেলানী যে!


ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ