ঈদ মোবারক! সড়কে জীবন দিতে আপনি প্রস্তুত তো?
সামনেই আসছে ঈদ! অভিজ্ঞতার আলোকে অগ্রীম বলে দেয়া যায়, অনেক গুলো মানুষের আয়ুও ফুরিয়ে এসেছে। আমরা জানি আজরাইল আঃ প্রতিটি মানুষের মৃত্যুর দূত হয়ে আসেন। মৃত্যু স্বাভাবিক ঘটনা। তবে স্বাভাবিক মৃত্যু ও অস্বাভাবিক মৃত্যু এক নয়। এজন্যই তো ধর্মে আত্মহননকে মহাপাপ বলা হয়। আবার হত্যকান্ডকে ধর্ম কিংবা আইন কেউই সমর্থন করেনা। ফলে আজরাইলকে 'যেচে ডেকে আনার' শাস্তি মারাত্মক।
বেসরকারী টিভি চ্যানেল এনটিভির একটি প্রতিবেদন দেখছিলাম। আজরাইলকে ডেকে আনা হচ্ছে মানিকগঞ্জে! বিষয়- লক্কড় ঝক্কড় বাস মেরামত করে ফিট হিসেবে রাস্তায় নামানোর 'ঈদ প্রস্তুতি'! সামনেই সারা দেশে মেরামতকৃত এইসব লক্কড় ঝক্কড় বাসগুলোরই রাজত্ব প্রতিষ্ঠা হবে। অনেক গুলো প্রাণ অকালে ঝরে যাবে। যার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় কিছু টু পাইস জড়ো হবে পুলিশের পকেটে! জনগনের প্রকৃত বন্ধু হলে যা হয়! নাগরিকের জন্যই ঈদ উপলক্ষে আজরাইল ডেকে এহেন পরিনতি যোগ হচ্ছে বছরের পর বছর। এক্ষেত্রে এবারও মানিকগঞ্জে পুলিশকে বেশ সাহায্যের ভূমিকাতেই দেখা গেলো। মৌনতাই যেখানে সম্মতির লক্ষণ, পুলিশের নাকের ডগায় চলা মেরামত কর্মকে সেখানে বেশ এগিয়েই রাখা যায়।
রিপোর্টে স্বাক্ষাৎকার প্রদানকারী পুলিশদেরকে বেশ সাহিত্যমনা বলেই মনে হল। একজন কর্তা ব্যাক্তি এনটিভির প্রতিবেদক কে বেশ রসিয়ে রসিয়েই বলছিলেন তাদের পরিকল্পনার কথা। জানাচ্ছিলেন 'এখনই তারা এইসব গাড়ি ধরার কাজ করছেন! কারন ঈদের মুহুর্তে এই গাড়িগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়না! তখন তাদের ‘প্রধান লক্ষ্য’ থাকে ভীড় সামাল দেয়া।' অন্যদিকে উৎফুল্ল শ্রমিকরা জানালেন ২৭-২৮ রমজান থেকেই সড়কে নামবে গাড়িগুলো! আরেকজন শ্রমিক জানালেন যাত্রীরা রঙ চং করা গাড়ীই পছন্দ করে।
যেই যাত্রীদের নিয়ে ঈদ বিজনেস, তারা জানাচ্ছেন অন্য কথা। দেখা গেলো, রমজানের শেষে ভিড় সামাল দেয়ার পুলিশী ব্যবস্থাপনা কিংবা রঙ চং গাড়ির দিকে মনযোগই নেই তাদের! সোজা ভাষায় বললেন- এইসব লক্কড় ঝক্কড় গাড়ি তারা চান না। এসব গাড়ি যেন রাস্তায় আসতে না পারে সেজন্য পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে হবে বলে দাবি তাদের।
সব মিলিয়ে মানিকগঞ্জকে কেন্দ্র করে তুলে আনা দারুন এই রিপোর্ট কারো কারো পছন্দ হোক কিংবা না হোক, পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের ভাষ্যে বুঝা গেলো প্রতিবছরের মত এবারও ঈদ উপলক্ষ্যে কিছু মানুষের ভাগ্যে মৃত্যু লেখা হয়ে গেছে। আর শেষ পর্যন্ত এইসব গাড়িই রাস্তায় নামবে...
ঈদ মানেই খুশি, ঈদ মানেই আনন্দ! ঈদের দিন সড়কে ডিউটিরত পুলিশ কিছু কামাই করতে না পারলে সে আনন্দের মাত্রা হালকা হয়ে যায় বটে। তাছাড়া সারা দেশের মানুষ সবাই আনন্দ করবেন, সেখানে কিছু লোকের পরিবার অশ্রু ঝরাবে না, তা কী করে হয়? কিছু ত্যাগ যে স্বীকার করতেই হয়। শত হলেও ত্যাগই রমজানের শিক্ষা। সে শিক্ষা বাস্তবায়নের পূর্ণ সুযোগ থাকছে ঈদ সড়কে! শেকড়ের টানে বাড়ি ফেরা মানুষের এই ত্যাগ সড়ক মন্ত্রীকে নিশ্চই নাখোশ করবে না!
তাই, অগ্রীম সড়ক হত্যার শুভেচ্ছা ও “ঈদ মুবারক”।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
মন্তব্য: ২ টি
৩০ জুন ’১৬ রাত ১২:১৬
superb! লাইক, কমেন্ট, রেটিং সবই করলাম। জমা হয়ে থাকলো প্রিয়তে! সরকার যদি জনগণের কথা বুঝতে না পারে তাহলে এভাবে মানুষের প্রাণ যেতেই থাকবে।