একজন বাবুল আকতার আর আমাদের মিডিয়া-পুলিশ
এক,
বাংলাদেশে এখন "বাবুল আকতার" সিনড্রোম চলছে। মাঠেঘাটে, চায়ের স্টলে, কফি হাউজে আলোচনার বিষয় বাবুল আর মিতু। মাতোম চলছে মিডিয়াতেই বেশী। মিতু হত্যাকান্ডে বাবুল আক্তারের চেয়েও যেন বেশী কষ্ট পেয়েছে চিহ্নিত কিছু দালাল মিডিয়া। সম্প্রতি ডিবিতে বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদকে কেন্দ্র করে দারুন কিছু রসালো গল্পের তৈরী হয়েছে। বাংলাদেশে এখন ২৬টি টেলিভিশন, গোটা পঞ্চাশেক রেডিও, শ’খানেক পত্রিকা, হাজারখানেক অনলাইন আছে। বাবুল আক্তারকে নিয়ে গল্পটা সবাই শুনেছেন। কিন্তু ‘বিশ্বস্ত সূত্র’এর বরাত দিয়ে রিপোর্ট করেছে হাতেগোনা কয়েকটি গণমাধ্যম। বেশির ভাগ সাংবাদিক ও গণমাধ্যম যে নজিরবিহীন সংযম দেখিয়েছে, তাতে আমি অভিভূত ও আশ্বস্ত। না, সবাই যতই গালিগালাজ করুক, সাংবাদিকতা পেশার বস্তুনিষ্ঠতা ও এথিক্স এখনও ফুরিয়ে যায়নি। বেশিরভাগই এমন একটি রসালো গল্প পেয়েও ধৈর্য্য ধরে সত্যের জন্য অপেক্ষা করেছে, যেটা দারুণ প্রশংসার। যারা সংযম দেখাতে পারেননি, তাদেরও খেসারত দিতে হবে। একদিনের হিট নয়। টেকসই হিট পেতে হলে বস্তুনিষ্ঠ হতেই হবে। এই সিলেকটিভ দালালদের চিনে রাখতে হবে। তাদেরকেই একদিন হিট দিতে হবে প্রত্যাখ্যান করে।
দুই,
বলা হয়ে থাকে-ইতিহাসের শিক্ষা হলো, ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না। অতীতে এমন শিক্ষামূলক ঘটনা অনেক ঘটেছে, আমরা শিক্ষা নিইনি। এমনকি প্রিয় মাছরাঙ্গা টিভির সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনীও তাদের সহকর্মী সাংবাদিকদের নোংরা কলম থেকে রক্ষা পায়নি। তাদেরও মরণোত্তর চরিত্র হনন করেছি, এই আমরাই এবং জাতির বিবেক সাংবাদিক সমাজ। ব্যাপারটা এমন যে খুনের শিকার হওয়া অসহায়দের "অপরাধী" প্রমাণ করতে পারলেই, ঐ অসহায়দের খুন বৈধ হয়ে যায়। মিতু "পরকীয়া" করেছে; সূতরাং মিতুর হত্যাকান্ড বৈধ। জঙ্গীরা মানুষ মারে; তাই তাদের হত্যা করা বৈধ। ইদানিং খেয়াল করছি- পুলিশও ক্রসফায়ারের পর বলছে ও জঙ্গী ছিল। মানে কি ? ও জঙ্গী ছিল বলে, আপনিও জঙ্গীপনা করবেন?
তিন,
বাবুলে আক্তারের স্ত্রী মিতু খুন হওয়ার পর সারাদেশের সবাই তাকে চেনেন। বড় অফিসার। মোটামুটি সবাই তার প্রতি সহানুভূতিশীল। তিনি এখনও পুলিশ সুপার পদমর্যাদায় চাকরি করছেন। ডিবি থেকে ফোন করে ডাকলেই নিশ্চয়ই তিনি ছুটে যেতেন। সেখানে কেন তাকে মধ্যরাতে ডেকে নিতে হবে? কেন তাকে পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করতে দেয়া হবে না। এখন প্রশ্ন উঠছে- খোদ এসপি বাবুল আক্তারের সাথেই যদি পুলিশ এই আচরণ করে, তবে সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে কী হয়? নাগরিক হিসেবে এসব একটু ভাবলেই ভয় লাগে। এ কারণেই পুলিশকে মানুষ বন্ধু মনে করে না। যদি রাতে বা সকালে পুলিশের দায়িত্বশীল কেউ বাবুল আক্তারের ব্যাপারে সাংবাদিকদের ব্রিফ করতো, তাহলে আর এই ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হতো না। আমরা চাই পুলিশ সবার সাথেই আইনানুগ আচরণ করবে। দ্রুত মিতু হত্যার রহস্য উন্মোচন করবে, দায়ীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসবে এবং সাংবাদিকদের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করবে।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
মন্তব্য: ২ টি
২৮ জুন ’১৬ সন্ধ্যা ০৬:০০
মানুষ বড় অসহায় হয়ে পড়েছে এই দেশে। কবে মিলবে মুক্তি কোন ঠিক নেই।
২৮ জুন ’১৬ সন্ধ্যা ০৬:০৩
আহারে মুসলমান! রমজান মাসেও মিথ্যা? বাংলাদেশে রোজা আইনা কী লাভ হইলো কইতে পারেন?