আমাদের ঈদ শপিং এবং আমীরুল মোমেনীন উমার ফারুক (রাঃ)
এখন শপিং এর মওসূম চলছে। তাকওয়ার মাসে কেনাকাটার ধুম ! বস্তুবাদী দর্শনের আল্টিমেট প্রভাব। ঈদে নতুন জামার সুন্নাত পালনের জন্য সে কি পেরেশানী ! অথচ মানবতা আজ বিপন্ন। কত বনি আদম ছেঁড়া কাপড়ে ঈদ করছে- করবে। সেদিকে আমাদের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। অথচ আমরা এমন কিছু সোনার মানুষের উত্তরসূরী- যাদের ইতিহাস পড়লে চোখে অশ্রু আসে। কি অনুপম তাদের জীবন! কি অসাধারণ তাদের জীবনধারা ! চলুন আজ একজন মহান মানুষের ঈদের কথা জেনে নিই।
তখন তিনি অর্ধ পৃথিবীর শাসক। দোর্দন্ড প্রতাপশালী শাসক। দিকে দিকে ইসলামী খিলাফতের জয়-জয়কার। হযরত উমর (রাঃ)এর নেতৃত্বে এগিয়ে চলছে মুসলিম জাহান। প্রেসিডেন্ট উমার (রাঃ) এর অর্থ মন্ত্রনালইয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হযরত আবু উবাইদা (রাঃ)। তৎকালীন রাষ্ট্রীয় কোষাগার দেখাশুনা করছেন আবু উবায়দা (রাঃ)।
ঈদের আগের দিন খলীফার দুই সন্তান কাঁদছেন। আগামীকাল ঈদ, অথচ এখনো পর্যন্ত নতুন জামা কেনা হয় নি। মদীনার বাচ্চারা নতুন জামার মহড়া দিচ্ছে। সন্তানদের অবস্থা দেখে খলীফার স্ত্রী একান্তে খলীফার কাছে গিয়ে বললেন -
‘আমাদের জন্য ঈদের নতুন কাপড় না হলেও চলবে। কিন্তু ছোট বাচ্চারা তো ঈদের নতুন কাপড়ের জন্য কাঁদছে। আর নতুন জামা পড়া তো রাসূলুল্লাহ্র সুন্নাত। দিন না কিনে !'
খলীফা বললেন,-
‘আমার তো নতুন কাপড় কেনার সামর্থ্য নেই! কোথায় পাবো টাকা?'
চিন্তার রাজ্যে ডুবে গেলেন খলীফা। ভাবলেন- অবুঝ সন্তানদের নতুন জামা কিনে দেয়া জরুরী। কিভাবে দেয়া যায় ? মাথায় আসলো- বায়তুলমাল থেকে আমি তো নির্দিষ্ট বেতন পাই। আগামী দুই মাসের অগ্রীম বেতন নিলেই তো শিশু সন্তানদের মুখে হাসি ফোটাতে পারি। আগামী দুই মাস আর বেতন নিব না। যেই ভাবনা- সেই কাজ।খলীফা উমর (রাঃ) অর্থমন্ত্রী হযরত আবু উবাইদাকে দুই মাসের অগ্রিম বেতন দেয়ার জন্য চিঠি পাঠালেন।সমগ্র মুসলিম জাহানের খলীফা যিনি, যিনি অর্ধ পৃথিবী শাসন করছেন, তাঁর এ ধরনের চিঠি পাঠ করে হযরত আবু উবাইদার চোখে পানি এসে গেল।খলীফার নাজুক অবস্থা উপলব্ধি করা সত্বেও দায়িত্ববোধ ভুলতে পারলেন না।
হযরত আবু উবাইদা (রাঃ) বাহককে টাকা না দিয়ে খলীফার পাঠানো চিঠিতে চুমো খেয়ে উত্তরে লিখলেন
- ‘আমীরুল মুমিনীন! অগ্রিম বেতন বরাদ্দের জন্য দুটি বিষয়ে আপনাকে গ্যারান্টি দিতে হবে।
প্রথমতঃ আগামী দুই মাস পর্যন্ত আপনি বেঁচে থাকবেন কি না?
দ্বিতীয়তঃ বেঁচে থাকলেও মুসলমানেরা আপনাকে খিলাফতের দায়িত্বে বহাল রাখবে কিনা?’
সম্মানিত ভাইয়েরা- একবার চিন্তা করে দেখুন, শুধুমাত্র আল্লাহ তায়ালার ভয় কিভাবে একজন সাহাবীকে প্রেসিডেন্টের আদেশের বিপরীতে যুক্তিকে অবলম্বন করেন ! আল্লাহু আকবার। নিজের চাকুরী হারানোর ভয়, তাকে বায়তুলমাল হেফাজতের দায়িত্বে অবহেলা করতে উৎসাহ দেয় নি।এবার প্রেসিডেন্টের ফিলিংস দেখুন।
ফেরত পাওয়া চিঠি পাঠ করে প্রেসিডেন্ট হযরত উমর (রাঃ) কোন প্রতি উত্তর তো করলেনই না, বরং এত কেঁদেছেন যে তাঁর চোখের পানিতে দাঁড়ি ভিজে গেল ।
আর হাত তুলে হযরত আবু উবাইদার জন্য দোয়া করলেন-
‘ হে আল্লাহ! আবু উবাইদার উপর রহম কর, তাঁকে হায়াত দাও।'
এটিই ইসলামের প্রানসত্বা ! এটিই আমাদের সোনালী অতীত। ভুলেছি সে অতীতকে। আজ আমাদের শপিং প্রস্তুতি আর উমর রাঃ সেই ঘটনাকে মুখোমুখি দাঁড় করালে লজ্জিত হই। বুঝতে চেষ্টা করি- কেন বিশ্বব্যাপী আমরা লাঞ্চিত হচ্ছি। বস্তুবাদী দর্শনের মুখে লাথি মেরে ইসলামের প্রানসত্বাকে লালন করতে আমাদের শক্ত করে সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার। শপিং এর প্রচলিত ট্রেন্ডকে ইগনোর করার সৎ সাহস উমর রাঃ উত্তরসূরীদেরই তো থাকবে ! আল্লাহ তায়ালা আমাদের ক্ষমা করুন। আসুন- এই ঈদে শপিং লিস্টকে একটু সামলিয়ে রাখি। শপিং তালিকায় দরিদ্রদের জন্য কিছু রাখি।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
২৬ জুন ’১৬ সকাল ১১:৩৬
এটিই ইসলামের প্রানসত্বা ! এটিই আমাদের সোনালী অতীত। ভুলেছি সে অতীতকে। আজ আমাদের শপিং প্রস্তুতি আর উমর রাঃ সেই ঘটনাকে মুখোমুখি দাঁড় করালে লজ্জিত হই। বুঝতে চেষ্টা করি- কেন বিশ্বব্যাপী আমরা লাঞ্চিত হচ্ছি। বস্তুবাদী দর্শনের মুখে লাথি মেরে ইসলামের প্রানসত্বাকে লালন করতে আমাদের শক্ত করে সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার। শপিং এর প্রচলিত ট্রেন্ডকে ইগনোর করার সৎ সাহস উমর রাঃ উত্তরসূরীদেরই তো থাকবে ! সম্পূর্ণ একমত। দারুন লিখেছেন ব্রাদার। অব্যাহত রাখুন।
২৭ জুন ’১৬ সকাল ১১:৪১
এ ধরনের দায়ীত্ববোধই পারে মানুষকে তার ঈশ্বরের সান্নিধ্যর কাছাকাছি নিয়ে যেতে