জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উপাত্তে দূষণ কমানোয় বিশ্বসেরা রাজশাহী
বাতাসে ভাসমান মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কণা দ্রুত কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বিশ্বে সবচেয়ে এগিয়ে আছে রাজশাহী শহর। গত দুই বছরে রাজশাহীতে এই সফলতা এসেছে। জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) উপাত্তের ভিত্তিতে গতকাল যুক্তরাজ্যের দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
বুক ভরে পদ্মা নদীর নির্মল বাতাস নিতে রাজশাহী নগরের লালন শাহ পার্কে প্রতিদিন বিকেলে ভিড় করেন অনেক মানুষ। শহরের ভেতরেও বেশ পরিচ্ছন্ন একটা চেহারা চোখে পড়ে। সড়ক বিভাজকজুড়ে সবুজের বেষ্টনীসহ সব মিলিয়ে রাজশাহী এখন একটি নির্মল বাতাসের শহর।
গার্ডিয়ান-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজশাহীর বাতাসে ভাসমান ক্ষুদ্র ধূলিকণা (১০ মাইক্রোমিটার আকারের) প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ছিল ১৯৫ মাইক্রোগ্রাম। এটা প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কমে ২০১৬ সালে দাঁড়ায় ৬৩ দশমিক ৯ মাইক্রোগ্রামে। দুই বছর আগে এ শহরে আরও ক্ষুদ্র ধূলিকণা (২ দশমিক ৫ মাইক্রোমিটার আকারের) প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ছিল ৭০ মাইক্রোগ্রাম। ২০১৬ সালে এটি প্রায় অর্ধেক হয়ে দাঁড়ায়, ৩৭ মাইক্রোগ্রাম। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের যে ১০টি শহরে গত দুই বছরে বাতাসে ভাসমান ক্ষুদ্র ধূলিকণা কমেছে, এর মধ্যে রাজশাহীতে কমার হার সবচেয়ে বেশি। এর পরিমাণ ৬৭ শতাংশ।
ইটভাটার চিমনির উচ্চতা বাড়িয়ে দেওয়া, বনায়ন, রাস্তার পাশের ফুটপাত কংক্রিট দিয়ে ঘিরে দেওয়া, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার বহুল ব্যবহার, ডিজেলচালিত যানবাহন চলাচলে কড়াকড়ি—এসবই রাজশাহীর বায়ুদূষণ কমানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেসের পরিচালক উদ্ভিদবিজ্ঞানী অধ্যাপক এম মনজুর হোসেন বলেন, ১০ মাইক্রোমিটার অথবা তার চেয়ে কম ব্যাসের কণা কোনো নির্দিষ্ট উৎস অথবা জটিল রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে প্রকৃতিতে ছড়িয়ে পড়ে। এরা সরাসরি শ্বাসনালি হয়ে ফুসফুসে ঢুকে যায়। মানবদেহের জন্য এ কণা অত্যন্ত ক্ষতিকর। তিনি বলেন, ডিজেলচালিত যানবাহন থেকে এই কণা বেশি ছড়ায়।
এম মনজুর হোসেন বলেন, রাজশাহীতে বর্তমানে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা থাকার কারণে ডিজেলচালিত যানবাহন শহরে ব্যবহৃত হচ্ছে না। রাজশাহীর বাতাসে এই কণা কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক সুলতান উল ইসলাম বলেন, রাজশাহী নগরের চারদিকে যে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে, পাশে পদ্মা নদীর চরও সবুজ ঘাস ও কাশবনে ছেয়ে গেছে। কোথাও কোথাও ফসলও হচ্ছে। এ কারণে আগে যে পরিমাণ ধূলিঝড় দেখা যেত, এখন আর দেখা যায় না।
রাজশাহী নগরের পদ্মা নদীর পরিত্যক্ত ধারে বর্তমানে পরিকল্পিত পার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। প্রায় পাঁচ কিলোমিটার টাইলস দিয়ে হাঁটার পথ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। এটি এখন পদ্মার নির্মল বাতাসের একটি উৎস। এসব জায়গা থেকে আর ধুলোবালি ওড়ে না।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক বলেন, ২০১৩ সালে রাজশাহী সিটি করপোরেশন প্রধানমন্ত্রীর পরিবেশ পদক পেয়েছে। তার আগের তিন বছর বৃক্ষরোপণে সেরা পদক পেয়েছে। তিনি বলেন, গত ২০ বছরে নগর সবুজায়নে তাঁরা যে কাজ করেছেন, তার কারণে নগরের বাতাস নির্মল হয়েছে।
গতকাল বিকেলে রাজশাহী নগরের লালন শাহ পার্কে সপরিবারে ঘুরতে গিয়েছিলেন নগরের অনন্যা শিশু শিক্ষালয়ের অধ্যক্ষ বুলবুল নাহার। তিনি বলেন, এ শহরের সবকিছুই পরিপাটি। বাতাসটাও পরিষ্কার। আর নদীর ধারে এলে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। সুযোগ পেলেই শুক্রবার ছুটির দিনে এখানে সপরিবারে ঘুরতে আসেন। মনটাই ভালো হয়ে যায়।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
মন্তব্য: ৩ টি