ব্লগার তরীকুল ইসলামের ব্লগ "তনু কিংবা বাংলাদেশ: উত্তর খুঁজে না পাওয়া প্রশ্ন গুলো" ও কিছু কথা
বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে খৈ ফোটানোর মত টকশোবাজ, কলামিস্ট কিংবা নাট্যকারের অভাব কোন কালেই ছিলোনা। টকবাজরা আগে চায়ের দোকানে ছিলো এখন টিভির পর্দায় উন্নতি করেছে। এছাড়া রাজনীতির 'চাপাবাজি' কখনই কম ছিলোনা।
ব্লগার তরীকুলের মতই আমরা আম পাব্লিকেরা 'সমাধানের' আশায় অযথা সময় ক্ষেপণ করে, কখনো ঐসব চাপাবাজদের চাপায় আকৃষ্ট হয়েছি, আবার কখনো তাদের ধার করা চাপার চার্জ নিয়ে নিজেরাও ক্ষনিক পথ চলেছি। রাজনীতি আর দেশ উদ্ধার কোনটাই আমরা করিনি। আমি সুস্থ মাথায় বলছি- রাজনীতি আর দেশ উদ্ধারের কোনটাই "আমরা করিনি"।
চাপাবাজরা রাজনীতিকদেরকে রাজনীতির সমাধানদাতা হিসেবে চিনিয়েছে। আর আমরাও নিজেদের দ্বায়িত্ব থেকে অবসর নেয়ার আশায় তাদের বাকোয়াজ মুখস্থ করে নিয়েছি। ভেবে নিয়েছি সমাধান দাতা সব রাজনীতিকরাই। অথচ মূল ক্ষমতা জনগণের! মূল ক্ষমতাই গণতন্ত্রের। কিন্তু গণমানুষ অসচেতন ও অলস! গণতন্ত্রের 'পলিটিক্স'ও এই সুযোগে হয়েছে 'রাজ'নীতি, প্রজানীতি নয়!
সব মিলিয়ে আমাদের দ্বায়িত্ব আমরাই ত্যাগ করেছি। আমার বাজারের ব্যাগ এখন আমার পূর্ণ মালিকানায় নাই। ফলে ঐ ব্যাগে কার কত ভাগ বসবে, তার বিহিত নিয়ে হরিলুট শুরু হয়েছে। এই হরিলুটের আভিধানিক নামটাই তো 'রাজ'নীতি।
তো! যখন পাব্লিক নিজের হিসাব কষার দ্বায়িত্ব ত্যাগ করেছে, স্বাভাবিক ভাবে তখন ঐ হিসাবে 'রাজ'নীতিকদের খরচা-পাতিও যুক্ত হয়েছে। সেই খরচা পাতির নানা খাত আছে। এর একটা খাত চলে যায় 'বিজ্ঞাপনের' পেছনে। এই বিজ্ঞাপনই হল রাজনীতি বিষয়ক টকশোজীবী, কলামিস্ট, নাট্যকার, গীতিকার, পিকেটার ইত্যাদি ক্যারেকটারের লোকজন। সম্মিলিত ভাবে এরা রাজনীতির বিজ্ঞাপন দেয়। এরাই জনগণকে বুঝায় যে, "তারা সঠিক পথে আছে। রাজনীতির হিসাবটা রাজনীতিকদের হাতে থাকাই বেটার। জনগণ ঘুমিয়ে থাকবে এটাই গণতন্ত্রের অর্জন!"
ফলে আমরা, সোজা বাংলায় 'আমাদের খাসলতের' মাশুল দিচ্ছি। গুলির নিশানা হচ্ছি। বাঁশখালী হচ্ছি। তনু হচ্ছি। হাজারী বাগেরর আগুন দেখছি। রানা প্লাজার ধ্বংসস্তুপ থেকে সিনেমা অবধি দেখছি, পা দুলাচ্ছি!
সমাধান নিয়ে কথা আসছে। সবাই আগুনে অক্সিজেন সাপ্লাই দিয়ে আগুন থেকে মুক্তির উপায় খুঁজছি। প্রথমেই অক্সিজেন সাপ্লাই বন্ধ করা লাগবে। এরপর ঐ আগুনে কার্বন ডাই অক্সাইড ঢালতে হবে। তাহলে না আগুন বন্ধ হবে। আগুন বন্ধ হবার পর ঐ অঙ্গনে আবার অক্সিজেন ঢালতে হবে। এরপর স্থানটি সুজলা-সুফলা হবে। এখন আমরা জনতার নীতি তথা প্রজানীতি থেকে ৩ স্টেপ রিভার্সে চলছি।
টকশো জীবির কথায় নয়, নিজের বাজারের ব্যাগে নিজের শতভাগ মালিকানা প্রতীষ্ঠার জন্য ভোট বিক্রি, আবেগী স্বীদ্ধান্ত ও নেতা পুজা বাদ দিয়ে মেরুদন্ড সোজা করতে হবে। তাহলেই না সমাধানের দিকে পা বাড়বে। এক পা সঠিক গন্তনব্যে দেয়ার আগেই যদি বিপরীতে থাকা 'সমাধানের' আশা করি তাহলে হবে?
সবার আগে জাতীয় অলস বৈশিষ্ট্য থেকে বেরিয়ে এসে নিজেকে রাজা ভাবতে শিখা লাগবে। রাজনৈতিক দলের পরিচালনার ভার নিতে হবে। নেতা নির্বাচনের ভার নিতে হবে। রাজনীতি দূর করতে হলে আগে রাজতান্ত্রিক নীতি দূর করা ছাড়া কোন উপায় নেই। প্রথমেই রাজনীতি থেকে পারিবারিক রাজতন্ত্র দূর করে রাজনীতিকে প্রজানীতির স্থানে নিয়ে আসতে পারলে সমাধান অবশ্যই হবে।
সমাধান সম্ভব কিনা?
এই প্রশ্নের জবাব পাওয়াটা এখন খুব সহজ। আপনি নিজে ও নিজের সমাজকে প্রশ্ন করুন যে, তারা রাজা হতে প্রস্তুত নাকি প্রজা হিসেবে থাকতেই প্রস্তুত? যদি তারা রাজা হতে প্রস্তুত হয় তাহলে সমাধান আসবেই। নচেৎ নয়!
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
মন্তব্য: ২ টি