অমর একুশে গ্রন্থ মেলাঃ এক বিক্রেতার কথা
বই মেলা শেষ। ২৯ দিনের সফর ছিল। আগে বই মেলায় যেতাম সব মিলিয়ে হয়তো ১০-১২ দিন। এইবার পুরো ২৭ দিন। মাঝে দু'দিন যাইনি। অভিজ্ঞতার সেলফে নতুন একটা বই যোগ হল।
কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে চাই,
আমাদের প্রকাশনির নাম 'শব্দশৈলী।' আমার দেখা সবচে সুন্দর প্রচ্ছদের বই, "আবৃত্তির জন্য নির্বাচিত ভালোবাসার একশ কবিতা।' অসাধারন সব কবিতা গুলো। এই বইটা সবচে বেশি নিয়েছে এমন কিছু মানুষ যারা জীবনে কোনদিন হয়তো পাঠ্য বইয়ের বাইরের কবিতা ছুঁয়েও দেখেনি। তাদের মূল উদ্দেশ্য গিফট করা। অনেকে আবার নিজের সেলফে সাজিয়েও রাখার জন্য নিয়েছে।
আমাদের বেস্ট সেলার বই, 'উনিশ বসন্ত।' লেখক জান্নাতুন নাঈম প্রীতি। অবশ্যই সু-লেখিকা। তার বইয়ের জন্য কুমিল্লা, এমনকি চট্টগ্রাম থেকেও মানুষ ছুঁটে এসেছে। আড়াই ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকেছে শুধু তাঁকে এক নজর দেখবে বলে। আমি পার্সোনালি সুমন্ত আসলামের ভক্ত। প্রায় এক মাস মেলায় থেকেও স্যারের অটোগ্রাফের জন্য একদিন যাই নি।
"প্রীতি, তোমার ভক্ত ভাগ্য অনেক ভালো, আমার মত প্লাস্টিক ভক্ত পাও নাই। অনেক অনেক শুভ কামনা।"
মেলার প্রথম দিন গুলো ছিল অফুরন্ত অবসরের। আমি চেয়ার বিছিয়ে ঘুমিয়েছিও।
মেলা আমাকে আরেকটা জিনিস দিয়েছে সেটা হল, ফারজানা প্রিয়দর্শিনী আপুর সাথে পরিচয়। অসাধারণ একটা মানুষ। নারীর নামের আগে যে 'অবলা' বলে একটা অপবাদ আছে সেটা আমার এই আপুটা ফু বা তুড়িতে উড়িয়ে দিয়েছে। আপুর একটা বই বেরিয়েছে আমাদের প্রকাশনি থেকে। নাম "নারী অধিকার ও আন্দোলন।"
আমার মনে হয় দুনিয়ায় ইফতেখার আমিন ভাইয়ার চাইতে অমায়িক কোন প্রকাশক নাই। এই বেচারা স্টল পেয়েছে একদম পিছনে। এক কোনায়। একই সাথে স্টল পাওয়া অনেক প্রকাশনি যায়গা মত জল ঢেলে সামনে চলে গেছে। এবং এই তরুণ প্রকাশক তার সততার বাজনা বাজিয়ে পিছনেই থেকে গেছেন। আর লাখ লাখ টাকা ক্ষতি গুনেছেন। আরো আছে, আজকে শেষ দিন, মেলা শুরু হয়েছে দুপুর ১ টায়। আমি মেলায় ঢুকেছি বিকাল ৫ টা ২২ এর পরে। এই অমায়িক ব্যক্তি আমাকে এক বার জিজ্ঞেসও করেননি দেরি হইলো ক্যান।
এখানে একটা কথা বলব, কথাটা ভাইয়া বুকের ভেতর চাপা থাকলেও মুখে আনবে না, বাংলা একাডেমী কে আমরা যত স্বচ্ছ ভাবি, যত নিষ্পাপ ভাবি সবই মরীচিকা। দুর্নীতির এক বিরাট আড্ডাখানা।
বই মেলায় কাজ করার সবচে আনন্দের ব্যাপার হল, আমার চারদিকে বই। বই গুছানো। নতুন বইয়ের গন্ধ নেয়া। নতুন বইয়ে প্রথম স্পর্শ, যেন প্রথমবার প্রেমিকার হাত ধরা। নতুন বই ডিসপ্লেতে দেয়া। সেলফে তোলা। হিসাব রাখা। মানে শুধু বই আর বই। বইয়ের মাঝে প্রায় সারা দিন থাকার অনুভূতিটা সম্পূর্ন আলাদা। আর অদ্ভুতও।
আমাদের স্টলের মত এত আড্ডা বোধহয় আর কোন স্টলে হয়না। এই ২৯ দিনে ৫/৬ বক্স টি-ব্যাগ শেষ। প্রতিদিন সন্ধ্যায় অস্থির সব নাস্তা।
মেলার আরেকটা সুন্দর অভিজ্ঞতা হল, বাচ্চাদের সাথে। এত্ত কিউট কিউট সব বাচ্চা আসে প্রতিদিন। আর কেউ কেউ এমন ভাবে বই ধরে যেন কত হাজার বই যেন পড়া হয়ে গেছে। বিরাট জ্ঞানী মানুষ জন। পরম স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা একটাই, এদের বইয়ের প্রতি ভালোবাসা যেন কোন দিন ফিকে না হয়ে যায়। যদিও জানি, ডোরেমন আর মটু পাতলুর এই যুগে তা অনেক কঠিন। তবুও আশা করে যাই...
বই মেলায় কাজ করতে গিয়ে চকলেট কালার আমি পিওর চকলেট হয়ে গেছি। কাছের মানুষের শুনেছি যৌক্তিক সব অভিযোগ। সময় দিতে না পারার অভিযোগ। কথা না বলার অভিযোগ। আমি সৈকত বড় হতে চাইনি কোন দিন। কিন্তু এইচ এস সি পরীক্ষার রেজাল্ট আর এডমিশন টেস্টের মত বই মেলাও আমাকে আরেক ধাপ বড় করে দিয়ে গেল। কৃতজ্ঞতা জানানো উচিত কিনা বুঝতে পারছি না।
বই মেলা নিয়ে অনেক কিছু লিখবো ভেবেছিলাম। কিন্তু অক্ষরে প্রকাশ করতে গিয়ে দেখি পারছি না। বই মেলা হল ভালোবাসার স্থান। আবেগের স্থান। স্নীগ্ধ অনুভূতির স্থান।
চুপচাপপ আরেকটা ব্যাপার বলি, প্রকাশক হওয়ার তীব্র ইচ্ছা ঢুকিয়ে দিয়ে গেছে আমার ভিতরে এই বই মেলা।
২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে চাই,
আমাদের প্রকাশনির নাম 'শব্দশৈলী।' আমার দেখা সবচে সুন্দর প্রচ্ছদের বই, "আবৃত্তির জন্য নির্বাচিত ভালোবাসার একশ কবিতা।' অসাধারন সব কবিতা গুলো। এই বইটা সবচে বেশি নিয়েছে এমন কিছু মানুষ যারা জীবনে কোনদিন হয়তো পাঠ্য বইয়ের বাইরের কবিতা ছুঁয়েও দেখেনি। তাদের মূল উদ্দেশ্য গিফট করা। অনেকে আবার নিজের সেলফে সাজিয়েও রাখার জন্য নিয়েছে।
আমাদের বেস্ট সেলার বই, 'উনিশ বসন্ত।' লেখক জান্নাতুন নাঈম প্রীতি। অবশ্যই সু-লেখিকা। তার বইয়ের জন্য কুমিল্লা, এমনকি চট্টগ্রাম থেকেও মানুষ ছুঁটে এসেছে। আড়াই ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকেছে শুধু তাঁকে এক নজর দেখবে বলে। আমি পার্সোনালি সুমন্ত আসলামের ভক্ত। প্রায় এক মাস মেলায় থেকেও স্যারের অটোগ্রাফের জন্য একদিন যাই নি।
"প্রীতি, তোমার ভক্ত ভাগ্য অনেক ভালো, আমার মত প্লাস্টিক ভক্ত পাও নাই। অনেক অনেক শুভ কামনা।"
মেলার প্রথম দিন গুলো ছিল অফুরন্ত অবসরের। আমি চেয়ার বিছিয়ে ঘুমিয়েছিও।
মেলা আমাকে আরেকটা জিনিস দিয়েছে সেটা হল, ফারজানা প্রিয়দর্শিনী আপুর সাথে পরিচয়। অসাধারণ একটা মানুষ। নারীর নামের আগে যে 'অবলা' বলে একটা অপবাদ আছে সেটা আমার এই আপুটা ফু বা তুড়িতে উড়িয়ে দিয়েছে। আপুর একটা বই বেরিয়েছে আমাদের প্রকাশনি থেকে। নাম "নারী অধিকার ও আন্দোলন।"
আমার মনে হয় দুনিয়ায় ইফতেখার আমিন ভাইয়ার চাইতে অমায়িক কোন প্রকাশক নাই। এই বেচারা স্টল পেয়েছে একদম পিছনে। এক কোনায়। একই সাথে স্টল পাওয়া অনেক প্রকাশনি যায়গা মত জল ঢেলে সামনে চলে গেছে। এবং এই তরুণ প্রকাশক তার সততার বাজনা বাজিয়ে পিছনেই থেকে গেছেন। আর লাখ লাখ টাকা ক্ষতি গুনেছেন। আরো আছে, আজকে শেষ দিন, মেলা শুরু হয়েছে দুপুর ১ টায়। আমি মেলায় ঢুকেছি বিকাল ৫ টা ২২ এর পরে। এই অমায়িক ব্যক্তি আমাকে এক বার জিজ্ঞেসও করেননি দেরি হইলো ক্যান।
এখানে একটা কথা বলব, কথাটা ভাইয়া বুকের ভেতর চাপা থাকলেও মুখে আনবে না, বাংলা একাডেমী কে আমরা যত স্বচ্ছ ভাবি, যত নিষ্পাপ ভাবি সবই মরীচিকা। দুর্নীতির এক বিরাট আড্ডাখানা।
বই মেলায় কাজ করার সবচে আনন্দের ব্যাপার হল, আমার চারদিকে বই। বই গুছানো। নতুন বইয়ের গন্ধ নেয়া। নতুন বইয়ে প্রথম স্পর্শ, যেন প্রথমবার প্রেমিকার হাত ধরা। নতুন বই ডিসপ্লেতে দেয়া। সেলফে তোলা। হিসাব রাখা। মানে শুধু বই আর বই। বইয়ের মাঝে প্রায় সারা দিন থাকার অনুভূতিটা সম্পূর্ন আলাদা। আর অদ্ভুতও।
আমাদের স্টলের মত এত আড্ডা বোধহয় আর কোন স্টলে হয়না। এই ২৯ দিনে ৫/৬ বক্স টি-ব্যাগ শেষ। প্রতিদিন সন্ধ্যায় অস্থির সব নাস্তা।
মেলার আরেকটা সুন্দর অভিজ্ঞতা হল, বাচ্চাদের সাথে। এত্ত কিউট কিউট সব বাচ্চা আসে প্রতিদিন। আর কেউ কেউ এমন ভাবে বই ধরে যেন কত হাজার বই যেন পড়া হয়ে গেছে। বিরাট জ্ঞানী মানুষ জন। পরম স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা একটাই, এদের বইয়ের প্রতি ভালোবাসা যেন কোন দিন ফিকে না হয়ে যায়। যদিও জানি, ডোরেমন আর মটু পাতলুর এই যুগে তা অনেক কঠিন। তবুও আশা করে যাই...
বই মেলায় কাজ করতে গিয়ে চকলেট কালার আমি পিওর চকলেট হয়ে গেছি। কাছের মানুষের শুনেছি যৌক্তিক সব অভিযোগ। সময় দিতে না পারার অভিযোগ। কথা না বলার অভিযোগ। আমি সৈকত বড় হতে চাইনি কোন দিন। কিন্তু এইচ এস সি পরীক্ষার রেজাল্ট আর এডমিশন টেস্টের মত বই মেলাও আমাকে আরেক ধাপ বড় করে দিয়ে গেল। কৃতজ্ঞতা জানানো উচিত কিনা বুঝতে পারছি না।
বই মেলা নিয়ে অনেক কিছু লিখবো ভেবেছিলাম। কিন্তু অক্ষরে প্রকাশ করতে গিয়ে দেখি পারছি না। বই মেলা হল ভালোবাসার স্থান। আবেগের স্থান। স্নীগ্ধ অনুভূতির স্থান।
চুপচাপপ আরেকটা ব্যাপার বলি, প্রকাশক হওয়ার তীব্র ইচ্ছা ঢুকিয়ে দিয়ে গেছে আমার ভিতরে এই বই মেলা।
২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬।

ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
মন্তব্য: ৮ টি
০১ মার্চ ’১৬ সকাল ০৯:০৮
কি দারুন লিখতে পারেন আপনি? আমি মনে হয় আপনাকে দেখেছি। শব্দশৈলীর স্টলে গিয়েছি তো! কিন্তু বই কেনা হয় নি। আচ্ছা, শব্দশৈলীর এড্রেস কোথায়? আপনার ব্লগ দেখে কিছু বই কিনতে লোভ হচ্ছে!