এমন মানুষই চাই
মানসিক দৃঢ়তার চরম প্রতিক হলেন ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত ওমর।বিশ্বাসকে বাস্তবায়নের জন্য নিজের জীবন যেমন বিলিয়ে দিতে কুন্ঠাবোধ করতেন না তেমনী অন্যের জীবন তরবারির এক কোপে শেষ করে দিতেও পিছপা হতেন না।মানসিক দৃঢ়তা ও চারিত্রীক গুণাবলীর কারনেই মোহাম্মদ সাঃ বলেছিলেন, আমার পরে যদি কেউ নবী হতেন, সে হত হযরত ওমর। সেই ওমরের সময়ে ঘটেছে অনেক মজাদার কিন্তু শিক্ষনীয় ঘটনা। যা থেকে আজও মুসলমানেরা নৈতিক শক্তি যোগার করে থাকে। এ রকমই একটি ঘটনার কথা বলতে মনস্থির করেছি।
একদা দুজন লোক, এক যুবককে ধরে নিয়ে হযরত ওমরের কাছে বিচারের জন্য নিয়ে আসলো ।ওমর তাদের দেখে বলল, কি সমস্যা তোমাদের? হে ওমর বিচার চাই,আমার বাবার হত্যাকারীর বিচার চাই। কে তোমার বাবাকে হত্যা করেছে? এই যুবক। হে যুবক,তাদের কথা কি সত্যি? হ্যা সত্যি তবে ইচ্ছা করে তাদের বাবাকে হত্যা করিনি। আমার উটটি অসতর্কতা বশত তাদের ফসলের ক্ষেতে ঢুকে পড়লে তাদের বাবা আমার উটকে পাথর দিয়ে আঘাত করে। উটটি অনেক কস্ট পেয়ে যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছিল, যা আমি সহ্য করতে না পেরে আরেকটি পাথর দিয়ে তাদের বাবাকে ছুরে মারি। আমার ছোড়া পাথর মাথায় লেগে ঘটনাচক্রে তাদের বাবা মারা যান।
তুমি কি জান,হত্যার শাস্তি কি? জানি, মৃত্যুদন্ড। তাহলে মরণের জন্য প্রস্তুতি গ্রহন করো। আর ওই দুজন লোককে উদ্দেশ্য করে ওমর বলল, তোমরা তোমার বাবার হত্যাকারীকে মাফ করে দিতে চাও? তারা যখন না সূচক জবাব দিল তখন আর মৃত্যদন্ড ছাড়া অন্যকোন পথ খোলা থাকলো না যুবকের সামনে। হযরত ওমর সর্বশেষ যুবকটিকে মরনের জন্য তৈয়ার হতে বললেন।
যুবকটি বলে উঠলো, আমাকে তিনদিন সময় দেয়া হোক।
কেন?
গুপ্ত যায়গায় আমার ছোট ভায়ের জন্য কিছু সম্পদ লুকিয়ে রেখেছি। ওগুলো ভাইকে বুঝিয়ে দিয়েই চলে আসবো, বিশ্বাস করুন।
বিশ্বাস অবিশ্বাসের বিষয় নয়,কেউ যদি তোমার যিম্মাদারী গ্রহন করে তাহলে তুমি যেতে পারো।
যুবকটিকে ডানে-বায়ে,সামনে পিছেনে বারবার ঘুরে তাকাতে লাগলো যিম্মাদারীর সাহায্যের জন্য। কেউ যখন রাজি হচ্ছিলনা সাহায্যের জন্য, তখন হযরত আবু যর গিফারী দারিয়ে গেলেন এবং যিম্মাদারীর জন্য একবাক্যে রাজি হয়ে গেলেন। তিনি জানতেন যে,যুবকটি সঠিক সময়ে আসতে না পারলে বা না আসলে যুবকের পরিবর্তে তাকেই মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হতে হবে। বুঝে শুনেই গিফারী রাঃ এই কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে একটুও পিছপা হলেন না।
একে একে দুদিন চলে গেলেও যুবকের কোন খবর নেই। অনেক সাধারণ মানুষ ছুটছে ওমরের দরবারে কি হয় গিফারীর কপালে সেটা দেখার জন্য। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হল, তবুও যুবকটি আসছেনা দেখে সবার চোখে মুখে এক ধরনের চিন্তার ছাপ স্পস্ট লক্ষ করা যাচ্ছিল। হযরত ওমর ঘোষনা দিলেন সন্ধ্যা নাগাদ অপেক্ষা করতে হবে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে গিফারীর মৃত্যুদন্ড বাস্তবায়নের যখন প্রস্তুতি চলছে ঠিক সেই মূহুর্তে যুবকটি এসে হাজির।
হযরত ওমর প্রশ্ন করলেন,মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও কেন ফিরে আসলে?
যুবকটি উত্তর দিল,মুসলমানের এক জবান। আজ যদি আমি মৃত্যুর ভয়ে না আসতাম তাহলে অন্যরা বলাবলি করতো,মুসলমানেরা কথা দিয়ে কথা রাখেনা।আমি এসে প্রমান করলাম,মুসলমানেরা কথা দিয়ে কথা রাখে।
আবু যর গিফারীকে এবার প্রশ্ন করলেন হযরত ওমর, তুমি কেন অচেনা যুবকের জন্য এতবড় ঝুকি নিতে গেলে?
আবু যর উত্তর দিল,যাতে কেউ বলতে না পারে যে,একজন মুসলমান সাহায্যের এদিক ওদিক তাকাচ্ছিল কিন্তু অপর কোন মুসলমান তাকে সাহায্য করেনি।
যুবকের প্রত্যাবর্তন ও প্রত্যাবর্তনের কারন এবং আবু যর গিফারীর যিম্মাদারীর কারন শ্রবণের পরে বাদী পক্ষের লোক দুটি তার বাবার খুনিকে মাফ করে দিলেন।
এরপর হযরত ওমর লোক দুটিকে বললেন, কেন তারা তাদের বাবার খুনিকে মাফ করে দিলেন?
তারা জবাবে বলল,যাতে কেউ বলতে না পারে একজন মুসলমান অপর মুসলমানের কাছে তার অপরাধের জন্য মাফ চেয়েছিল কিন্তু মাফ করেনি।মানবতার জয় হোক।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
০১ মার্চ ’১৬ বিকাল ০৪:০১
রাত-দিন কল্লা ফেলা অনেক ওমর বের হয়ে গেছে। দেশটা ধ্বংস করার জন্য আর দুই এক পিস লাগবে নাকি?
০১ মার্চ ’১৬ বিকাল ০৪:৪২
এই মানুষগুলো সত্যিকার মানুষ ছিলো। এটাই বড় কথা। তারা পরিচয়ে মুসলিম কিনা, আমার কাছে সেটা বড় নয়।
০৩ মার্চ ’১৬ বিকাল ০৪:৪১
আদর্শের জন্য কজন জিবন উৎসর্গ করতে পারে কিন্তু ওমরেরা পারতো।যদিও তাদের আদর্শ থেকে আমাদের আদর্শ সম্পুর্ন ভিন্ন তবুও আমার দৃষ্টিতে তারা বীরই ছিলেন।