কিছুটা নষ্টালজিক আর বাকি পুরোটাই নির্মম বাস্তবতা...................
আমরা যারা গরিব বাংলাদেশ থেকে মধ্যবিত্ত বাংলাদেশের রূপান্তর চাক্ষুষ দেখেছি, তারা শৈশবের অন্তত একটা লাইব্রেরির কথা মনে করতে পারি। প্রতি এলাকায় একটা দুইটা লাইব্রেরি, যারা শুধু পাঠ্যবই না, খাতা কলম না, গল্পের বই, ম্যাগাজিন আর কমিকসও বেচে। আমরা তো তখন গরিব, কেনার অবস্থা নাই। আমরা ধার নিতাম। চাচা চৌধুরী সাবুর কমিকস, তিন গোয়েন্দার সিরিজ, বিখ্যাত গল্প উপন্যাসের অনুবাদ ধার নিতাম লাইব্রেরি থেকে। তির চারদিন পর আবার ফেরত। এটা ছিল জীবনের একটা অংশ। মনের মধ্যে খালি ঘুরত কখন একটা ফেরত দিয়ে আরেকটা আনব। লাইব্রেরিয়ানের সঙ্গে খাতির রাখার আপ্রাণ চেষ্টা থাকত। পাড়ার ছেলেমেয়ের মধ্যে বইয়ের আদানপ্রদান সেটাও কম হতো না। বরং যে পাড়ার লোকেরা নিজেরা পত্রিকা বের করে তাদের আমরা অনেক ‘পশ’ চোখে দেখতাম।
কিশোর পত্রিকার জন্য হুড়োহুড়ি লেগে যেত। অনেক কষ্টের পয়সা জমিয়ে, কয়েকজন মিলে একটা পত্রিকা কেনা—তারপর সেটা পড়ার জন্য আরো লম্বা লাইন। কখনো কখনো ঝগড়া ঝাটি করে পত্রিকা কুচি কুচি করে ছিঁড়ে ফেলা! রাগ করে বলা—যা, যা, তোর ভাগ নে যা।
হাজারো মজার স্মৃতি আমাদের আছে। লাক্স কিংবা অ্যারোমেটিক সাবান থেকে কিভাবে হাজার হাজার সাবানে ভরে গেল আমাদের বাজার; একমাত্র সাবান চুলে, মুখে, গায়ে ডলাডলি থেকে কী করে ফেস ওয়াশ, স্ক্রাব আর শ্যাম্পু আমাদের জীবনে প্রবেশ করল চোখ বন্ধ করে সেটা বলে দিতে পারবে আমরা । এমন নানা রকম জিনিস আমাদের জীবনে ঢুকতে শুরু করলো আর আস্তে আস্তে হারিয়ে যেতে শুরু করল ‘বই’।
প্রত্যেক এলাকায় এখন আর ‘লাইব্রেরি আর স্টেশনারি ’ দেখা যায় না, দেখা যায় ‘বিউটিপার্লার’, দেখা যায় ‘টেইলার্স’। আধুনিক বাবা মা যারা নিজেরা নিম্নবিত্ত কিংবা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে অনেক সংগ্রাম করে উচ্চ মধ্যবিত্ত কিংবা উচ্চবিত্ত হয়েছেন, সন্তানদের ভালো জীবনের জন্য তারা অনেক কিছু করছেন। দামী স্কুল, ভালো খাবার, ভালো মোবাইল, ভালো পোশাক, গেইম খেলার ভালো ডিভাইস, দামী ল্যাপটপ, কম্পিউটার—সবাই তাদের আছে, শুধু নাই একটুখানি বই পড়ার অভ্যাস। বইমেলায় বাচ্চাদের নিয়ে গিয়ে বই কিনে দেয়াটাও একটা ফ্যাশন।
প্রতি বইমেলায় বাংলা একাডেমিতে হাজারো মানুষের ঢল নামে। একশটি মজার রান্না, কিভাবে ব্যবসায় সফল হবেন, আর হুমায়ূন আহমেদের হিমু—এই তো, এর বাইরে প্রকাশকরা কাড়ি কাড়ি বই বের করে গালে হাত দিয়ে বসে থাকেন। বিক্রয়কর্মীরা মাছি মারেন। লেখকরা আত্মপ্রতারণায় মন ভরান। আর কেনার মতো বইই বা বের হয় কয়টা? সাহিত্য রাজনীতি কিংবা গবেষণা—ভালো কাজের খুবই অভাব। তবু এরই মধ্যে প্রকাশনা নিয়েই ব্যবসা করছেন প্রকাশকরা। চেষ্টা করছেন তরুণ লেখকদের দিয়ে ভালো কিছু লেখাতে। লেখকরা চেষ্টা করছেন পাঠকের মন যোগাতে।
মেলায় যে শিশুরা আসে তাদের বেশিরভাগেরই এটাই একমাত্র মাস যখন তারা পাঠ্যবইয়ের বাইরে অন্য বই কেনে। মেলায় এসে বেশিরভাগ শিশুই অবশ্য প্রচ্ছদ দেখে বই কিনতে চায়। গত কয়েকবছরে শিশুদের বইগুলোর প্রকাশনায় বিশাল পরিবর্তন হয়েছে। বইয়ের প্রচ্ছদ, কাগজ, রং, আঁকাবুঁকি, বাঁধাই—প্রযুক্তির ছোঁয়ায় দিন দিন চমৎকার থেকে চমৎকার হচ্ছে বইগুলো। তবে কনটেন্ট কতটা সমৃদ্ধ হয়েছে, সেটা নিয়ে আমার বিরাট সন্দেহ আছে। বেশিরভাগ শিশুতোষ ছড়া বা কবিতার বই লেখক মনের অহেতুক ছন্দময় প্রলাপ। গল্পের মধ্যেও কোনো বৈচিত্র্য নাই। আবোল তাবোল কথা লিখলেই যেন শিশুদের বই হয়ে যায়। বোঝাই যায় লেখকদের কোনো নিষ্ঠা নাই। শিশুদের প্রতি কোনো কমিটমেন্টও নাই। শিশুদের মনের খোরাক যোগাতে যে পরিশ্রম করা দরকার সেটাও তারা করতে চান না।
শিশুরাও তার প্রতিদান দিচ্ছে। তাদের পছন্দ বিদেশি কার্টুনের দেশি ভাষার বই। বাসায় সারাক্ষণ যে কার্টুন দেখে, মেলায় এসেও সেই কার্টুনের বইটাই ঘুরেফিরে কিনছে। বাবা মা আপত্তি করলে মন খারাপ করছে। বাবা মা হয়তো জোর করে অন্য বইই কিনে দিচ্ছেন, কিন্তু তারা আসলে বাসায় গিয়ে বইটা উল্টেও দেখছে না। এই যে বইয়ের প্রতি অনাগ্রহ এটার কারণ এবং ফলাফল দুইটাই ভয়াবহ।
যে বাবা মা নিজেরাই অবসরে বই পড়েন না, তাদের শিশুরাও সেটা করবে না, এটাই স্বাভাবিক। কথা বা উপদেশ নয়, শিশুরা শেখে দেখে দেখে। যা দেখে তাই করে। বাবা মা টিভি দেখবেন, সিনেমা দেখবেন, সিরিয়াল দেখবেন, শিশুটিও একসময় পুরোপুরি যুক্ত হয়ে যাবে সে জগতে। আর মোবাইল সহ অন্যান্য গেজেট তো রয়েছেই! অনেক অভিভাবক এ নিয়ে গর্ব করে বলেন, আমার বাচ্চাটা তো আমার চেয়েও ভালো মোবাইল অপারেট করতে পারে! অনেক শিশুই ঘুম থেকে উঠে খাবার খাওয়ার কথা ভুলে যায়, কিন্তু ট্যাব বা অন্য ডিভাইসের আবদার করতে ভোলে না। ইন্টারনেট অনেক বড় এবং বিস্তৃত জায়গা। এর সবজায়গা শিশুদের উপযোগীও নয়। বাবা মায়েরা নিজেদের দায়িত্বে ফাঁকি দিতে গিয়ে অবুঝ শিশুদের হাতে এইসব যন্ত্র তুলে দিচ্ছেন। গর্বও করছেন। কে কত দামি ফোন বা ল্যাপটপ কিনে দিচ্ছেন সেটা নিয়ে প্রতিযোগিতায় মেতে উঠছেন। শিশুটি বড় হচ্ছে একটা মিথ্যে পৃথিবীর মধ্যে, একটা ছলনার মধ্যে। এই ছলনার মধ্যে সে এমনভাবে বন্দী হয়ে পড়ছে, যেখানে সে নিজেই নিজেকে হারিয়ে ফেলছে। নিজের অনুভূতিকে চিনতে পারছে না, নিজেকেই আবিষ্কার করতে পারছে না। ভার্চুয়াল জগতে অভ্যস্ত শিশুটি কিন্তু বাস্তব জগত থেকে বহুদূরে বাস করে। তার অস্তিত্ব তার নিজের কাছেই কখনো সত্যি হয়ে উঠতে পারে না।
এই মিথ্যা জগতে বাস করার দায় কিন্তু আমাদের অভিভাবকদের। উন্নত দেশগুলোতে আমাদের চেয়েও অনেক ধনী মানুষ বাস করেন কিন্তু তারা সন্তানদের জীবন এভাবে হেলাফেলায় নষ্ট করেন না। আমেরিকার প্রেসিডেন্টের বারাক ওবামার নিশ্চয়ই অর্থের বা আক্কলের কোনো অভাব নেই! অথচ তার দুই মেয়েকে কত বছর বয়সে মোবাইল ব্যবহার করতে দেয়া হয়েছিল, খোঁজ নিয়ে দেখুন। আমাদের নতুন বড়লোক হওয়া অভিভাবকরা তাদের অর্থ আর আধুনিকতা দেখাতে গিয়ে আক্কেল হারিয়ে ফেলছেন। সন্তানকে বড় বড় টেলিভিশন আর নিত্য নতুন গেজেট কিনে দিচ্ছেন, সন্তানের সামনে বসেই মীরাক্কেলের মতো অ্যাডাল্ট জোকসের অনুষ্ঠান দেখছেন আর সেই সন্তান কিশোর বয়সে মাদকের কবলে পড়ে হারিয়ে গেলে সব দোষ চাপাচ্ছেন নতুন প্রজন্মের ঘাড়ে।
অভিভাবকদের বলব, শুধু ফেব্রুয়ারি মাস নয়, সারা বছর আপনার সন্তানকে বই কিনে দিন। বই পড়তে শেখান। রুচি তৈরি করুন। তার পছন্দের লুঙ্গি ডান্স না শুনে ভালো ভালো গান আপনি নিজে শুনুন তার সামনে। নিজে পড়ুন ছড়া, গল্প, কবিতার বই। আপনার আচরণ তার অজান্তেই তার অবচেতনে প্রভাব ফেলবে। কোনো একদিন দেখবেন আপনাকে অনুসরণ করতে গিয়েই সে নিজের জগতকে আবিষ্কার করবে। নিজেকে আবিষ্কার করবে। কেননা আপনার জগত থেকেই তার জগতের সূচনা। এটাই বাস্তব। এটাই সত্য।
সংগৃহিতঃ
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
কিশোর পত্রিকার জন্য হুড়োহুড়ি লেগে যেত। অনেক কষ্টের পয়সা জমিয়ে, কয়েকজন মিলে একটা পত্রিকা কেনা—তারপর সেটা পড়ার জন্য আরো লম্বা লাইন। কখনো কখনো ঝগড়া ঝাটি করে পত্রিকা কুচি কুচি করে ছিঁড়ে ফেলা! রাগ করে বলা—যা, যা, তোর ভাগ নে যা।
হাজারো মজার স্মৃতি আমাদের আছে। লাক্স কিংবা অ্যারোমেটিক সাবান থেকে কিভাবে হাজার হাজার সাবানে ভরে গেল আমাদের বাজার; একমাত্র সাবান চুলে, মুখে, গায়ে ডলাডলি থেকে কী করে ফেস ওয়াশ, স্ক্রাব আর শ্যাম্পু আমাদের জীবনে প্রবেশ করল চোখ বন্ধ করে সেটা বলে দিতে পারবে আমরা । এমন নানা রকম জিনিস আমাদের জীবনে ঢুকতে শুরু করলো আর আস্তে আস্তে হারিয়ে যেতে শুরু করল ‘বই’।
প্রত্যেক এলাকায় এখন আর ‘লাইব্রেরি আর স্টেশনারি ’ দেখা যায় না, দেখা যায় ‘বিউটিপার্লার’, দেখা যায় ‘টেইলার্স’। আধুনিক বাবা মা যারা নিজেরা নিম্নবিত্ত কিংবা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে অনেক সংগ্রাম করে উচ্চ মধ্যবিত্ত কিংবা উচ্চবিত্ত হয়েছেন, সন্তানদের ভালো জীবনের জন্য তারা অনেক কিছু করছেন। দামী স্কুল, ভালো খাবার, ভালো মোবাইল, ভালো পোশাক, গেইম খেলার ভালো ডিভাইস, দামী ল্যাপটপ, কম্পিউটার—সবাই তাদের আছে, শুধু নাই একটুখানি বই পড়ার অভ্যাস। বইমেলায় বাচ্চাদের নিয়ে গিয়ে বই কিনে দেয়াটাও একটা ফ্যাশন।
প্রতি বইমেলায় বাংলা একাডেমিতে হাজারো মানুষের ঢল নামে। একশটি মজার রান্না, কিভাবে ব্যবসায় সফল হবেন, আর হুমায়ূন আহমেদের হিমু—এই তো, এর বাইরে প্রকাশকরা কাড়ি কাড়ি বই বের করে গালে হাত দিয়ে বসে থাকেন। বিক্রয়কর্মীরা মাছি মারেন। লেখকরা আত্মপ্রতারণায় মন ভরান। আর কেনার মতো বইই বা বের হয় কয়টা? সাহিত্য রাজনীতি কিংবা গবেষণা—ভালো কাজের খুবই অভাব। তবু এরই মধ্যে প্রকাশনা নিয়েই ব্যবসা করছেন প্রকাশকরা। চেষ্টা করছেন তরুণ লেখকদের দিয়ে ভালো কিছু লেখাতে। লেখকরা চেষ্টা করছেন পাঠকের মন যোগাতে।
মেলায় যে শিশুরা আসে তাদের বেশিরভাগেরই এটাই একমাত্র মাস যখন তারা পাঠ্যবইয়ের বাইরে অন্য বই কেনে। মেলায় এসে বেশিরভাগ শিশুই অবশ্য প্রচ্ছদ দেখে বই কিনতে চায়। গত কয়েকবছরে শিশুদের বইগুলোর প্রকাশনায় বিশাল পরিবর্তন হয়েছে। বইয়ের প্রচ্ছদ, কাগজ, রং, আঁকাবুঁকি, বাঁধাই—প্রযুক্তির ছোঁয়ায় দিন দিন চমৎকার থেকে চমৎকার হচ্ছে বইগুলো। তবে কনটেন্ট কতটা সমৃদ্ধ হয়েছে, সেটা নিয়ে আমার বিরাট সন্দেহ আছে। বেশিরভাগ শিশুতোষ ছড়া বা কবিতার বই লেখক মনের অহেতুক ছন্দময় প্রলাপ। গল্পের মধ্যেও কোনো বৈচিত্র্য নাই। আবোল তাবোল কথা লিখলেই যেন শিশুদের বই হয়ে যায়। বোঝাই যায় লেখকদের কোনো নিষ্ঠা নাই। শিশুদের প্রতি কোনো কমিটমেন্টও নাই। শিশুদের মনের খোরাক যোগাতে যে পরিশ্রম করা দরকার সেটাও তারা করতে চান না।
শিশুরাও তার প্রতিদান দিচ্ছে। তাদের পছন্দ বিদেশি কার্টুনের দেশি ভাষার বই। বাসায় সারাক্ষণ যে কার্টুন দেখে, মেলায় এসেও সেই কার্টুনের বইটাই ঘুরেফিরে কিনছে। বাবা মা আপত্তি করলে মন খারাপ করছে। বাবা মা হয়তো জোর করে অন্য বইই কিনে দিচ্ছেন, কিন্তু তারা আসলে বাসায় গিয়ে বইটা উল্টেও দেখছে না। এই যে বইয়ের প্রতি অনাগ্রহ এটার কারণ এবং ফলাফল দুইটাই ভয়াবহ।
যে বাবা মা নিজেরাই অবসরে বই পড়েন না, তাদের শিশুরাও সেটা করবে না, এটাই স্বাভাবিক। কথা বা উপদেশ নয়, শিশুরা শেখে দেখে দেখে। যা দেখে তাই করে। বাবা মা টিভি দেখবেন, সিনেমা দেখবেন, সিরিয়াল দেখবেন, শিশুটিও একসময় পুরোপুরি যুক্ত হয়ে যাবে সে জগতে। আর মোবাইল সহ অন্যান্য গেজেট তো রয়েছেই! অনেক অভিভাবক এ নিয়ে গর্ব করে বলেন, আমার বাচ্চাটা তো আমার চেয়েও ভালো মোবাইল অপারেট করতে পারে! অনেক শিশুই ঘুম থেকে উঠে খাবার খাওয়ার কথা ভুলে যায়, কিন্তু ট্যাব বা অন্য ডিভাইসের আবদার করতে ভোলে না। ইন্টারনেট অনেক বড় এবং বিস্তৃত জায়গা। এর সবজায়গা শিশুদের উপযোগীও নয়। বাবা মায়েরা নিজেদের দায়িত্বে ফাঁকি দিতে গিয়ে অবুঝ শিশুদের হাতে এইসব যন্ত্র তুলে দিচ্ছেন। গর্বও করছেন। কে কত দামি ফোন বা ল্যাপটপ কিনে দিচ্ছেন সেটা নিয়ে প্রতিযোগিতায় মেতে উঠছেন। শিশুটি বড় হচ্ছে একটা মিথ্যে পৃথিবীর মধ্যে, একটা ছলনার মধ্যে। এই ছলনার মধ্যে সে এমনভাবে বন্দী হয়ে পড়ছে, যেখানে সে নিজেই নিজেকে হারিয়ে ফেলছে। নিজের অনুভূতিকে চিনতে পারছে না, নিজেকেই আবিষ্কার করতে পারছে না। ভার্চুয়াল জগতে অভ্যস্ত শিশুটি কিন্তু বাস্তব জগত থেকে বহুদূরে বাস করে। তার অস্তিত্ব তার নিজের কাছেই কখনো সত্যি হয়ে উঠতে পারে না।
এই মিথ্যা জগতে বাস করার দায় কিন্তু আমাদের অভিভাবকদের। উন্নত দেশগুলোতে আমাদের চেয়েও অনেক ধনী মানুষ বাস করেন কিন্তু তারা সন্তানদের জীবন এভাবে হেলাফেলায় নষ্ট করেন না। আমেরিকার প্রেসিডেন্টের বারাক ওবামার নিশ্চয়ই অর্থের বা আক্কলের কোনো অভাব নেই! অথচ তার দুই মেয়েকে কত বছর বয়সে মোবাইল ব্যবহার করতে দেয়া হয়েছিল, খোঁজ নিয়ে দেখুন। আমাদের নতুন বড়লোক হওয়া অভিভাবকরা তাদের অর্থ আর আধুনিকতা দেখাতে গিয়ে আক্কেল হারিয়ে ফেলছেন। সন্তানকে বড় বড় টেলিভিশন আর নিত্য নতুন গেজেট কিনে দিচ্ছেন, সন্তানের সামনে বসেই মীরাক্কেলের মতো অ্যাডাল্ট জোকসের অনুষ্ঠান দেখছেন আর সেই সন্তান কিশোর বয়সে মাদকের কবলে পড়ে হারিয়ে গেলে সব দোষ চাপাচ্ছেন নতুন প্রজন্মের ঘাড়ে।
অভিভাবকদের বলব, শুধু ফেব্রুয়ারি মাস নয়, সারা বছর আপনার সন্তানকে বই কিনে দিন। বই পড়তে শেখান। রুচি তৈরি করুন। তার পছন্দের লুঙ্গি ডান্স না শুনে ভালো ভালো গান আপনি নিজে শুনুন তার সামনে। নিজে পড়ুন ছড়া, গল্প, কবিতার বই। আপনার আচরণ তার অজান্তেই তার অবচেতনে প্রভাব ফেলবে। কোনো একদিন দেখবেন আপনাকে অনুসরণ করতে গিয়েই সে নিজের জগতকে আবিষ্কার করবে। নিজেকে আবিষ্কার করবে। কেননা আপনার জগত থেকেই তার জগতের সূচনা। এটাই বাস্তব। এটাই সত্য।
সংগৃহিতঃ
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
মন্তব্য: ৪ টি
০১ মার্চ ’১৬ বিকাল ০৩:৪৯
বইয়ের কদর করতে পারিনা আমরা। হোক প্রকাশক কিংবা পাঠক। মধ্যখানে মানের লেখকরাও হারিয়ে যায়। জাতি হিসেবে আমাদের ভেতরটা আজ পুরোই ফাঁকা। বই নিয়ে সরকারের অনেক কিছু করার আছে। দায় আছে।