পিতা-মাতা যখন কাঠগড়ায়
সিনেমাতে আমরা প্রায়ই দেখি এতটুকু একটা বাচ্চা ছেলে বাবার হত্যার বদলায় শত্রুকে গুলি কিংবা ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। পরবর্তিতে তার সাহসিকতার দরুণ ছোট বয়সেই সে আন্ডারগ্রাইন্ড সন্ত্রাসের হিরো বনে যেতে থাকে।
এই দৃশ্যগুলো হয়তো আমাদের বিনোদন দেয়। কিন্তু এসব থেকে আমরা বিশেষ করে আমাদের কিশোররা কি শিখছে তা কি আমরা ভেবে দেখেছি??
এমনকি এসব কিশোর ছেলেদের সামনে যেভাবে অশ্লীলতার প্রদর্শণ হচ্ছে, তাতে করে তারা কেমন মন মানষিকত নিয়ে বড় হচ্ছে সেটাও ভেবে দেখিনা।
ঘরে টিভি চালু করলেই হিন্দি চ্যানেলগুলোর অশ্লীল অশালীন গানের চ্যানেলগুলো প্রায়ই কিশোরদের সামনে এসে পড়ে। এবং তারা মনোযোগ দিয়েই এগুলো দেখে।
এসব থেকে কি শিখছে আমাদের শিশু কিশোররা??
বর্তমানে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে যেই সমস্যাটি প্রকট রুপ ধারণ করেছে সেটি হলো কিশোর অপরাধ। নানা রকম চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, মাদকসেবন, ইভটিজিং এমনকি খুন ধর্ষণের মত ঘটনায়ও তারা জড়িয়ে পড়ছে।
পত্রিকায় প্রায়ই আমরা এধরনের শিরোনাম দেখে থাকি। এর পেছনে পারিবারিক সামাজিক অনেক ধরনের কারন রয়েছে। কিন্তু আমার মতে পিতামাতাই এর জন্য বেশি দায়ী। পিতা মাতা সন্তানের প্রতি ভালোভাবে যত্ন কিংবা খেয়াল রাখলে তাদের সন্তান খারাপ হতে কিংবা খারাপ পথে যেতে পারে না।
যে ধরণের মাতাপিতার সন্তানগণ কিশোর অপরাধী হয়ে থাকেঃ
ক| সংসারত্যাগী বা পলাতক মাতাপিতাঃ
এরা সমতানদের রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবসহা না করে পলাতক হয়েছেন। সমতান এদের অপত্য সেণহ-মমতা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
খ| অপরাধী মাতাপিতাঃ
এরা সমতানকে পাপের মধ্যে রেখে বড় করেন। কখনওবা সমতানের সহায়তায় পাপ করেন।
গ| অপকর্মে সহায়ক মাতাপিতাঃ
এরা সমতানের অপরাধস্পৃহায় উৎসাহ দেন।
ঘ| অসচ্চরিত্র মাতাপিতাঃ
তারা নির্বিচারে সমতানের সামনেই নানা অসামাজিক কাজ করেন ও কথা বলেন।
ঙ| অযোগ্য মাতাপিতাঃ
এরা সন্তানকে প্রয়োজনীয় ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা দানে অমনোযোগী বা অপারগ।
আধুনিককালে শহরগুলোতে দেখা যায় যে, মা-বাবা উভয়ে ঘরের বাইরে কাজ করছেন। ফলে সন্তান সন্ততি তাদের উপযুক্ত স্নেহ শাসন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং অনেক ক্ষেত্রেই তারা আচরণে বিদ্রোহধর্মী হয়ে যাচ্ছে।
এমনটিও দেখা যায় যে,মৃত্যু বা বিবাহ বিচ্ছেদের ফলে কোন কোন কিশোর মা অথবা বাবাকে হারাচ্ছে। এ কারণেও কিশোরদের স্বাভাবিক ব্যক্তিত্ব বিকাশে সমস্যা দেখা দেয় এবং তারা অসংলগ্ন আচরণ তথা সমাজবিরোধী কাজকর্মে লিপ্ত হয়।
অধিকন্তু পারিবারিক পরিমন্ডলে কোন শিশু-কিশোর যদি সর্বদা ঝগড়া বিবাদ, ব্যত্তিুত্বের সংঘাত এবং অপরাধমূলক ও হিংসাত্মক কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করে তাহলে তাদের পক্ষে সহসা কিশোর অপরাধী হয়ে উঠা অসম্ভব নয়।
করনীয়:
০১| সমন্বিত ভূমিকা গ্রহণঃ কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে মাতা-পিতা, অভিভাবক, শিক্ষক, রাজনীতিক সবাইকে ভূমিকা রাখতে হবে। পরিবার, বিদ্যালয়, সমাজ, সরকার ও রাষ্ট্র সবাইকে কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে সংবেদনশীল ও সহানুভূতিশীল হতে হবে। সুসহ কিশোর - মানস ও মনন গঠনে সংশ্লিষ্ট সবাইকে স্ব স্ব সহান থেকে সমন্বিত প্রয়াস চালাতে হবে।
০২| দারিদ্র দূরীকরণঃ দারিদ্র বিমোচনে দেশের অর্থনীতিবিদ্ সহ জাতীয় নেতৃবৃন্দকে উদ্যোগী হতে হবে।
০৩| বিনোদনঃ প্রতিটি বিদ্যালয়ে প্রশসত খেলার মাঠ থাকা উচিত। বিদ্যালয় গুলোতে বার্ষিক ত্রুীড়া প্রতিযোগিতা, বার্ষিক সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, বার্ষিক মিলাদ মাহফিল, বিজ্ঞান মেলা, বই পড়া প্রতিযোগিতা, বিতর্ক উৎসব, দেয়ালিকা প্রকাশ ইত্যাদি নিয়মিত হওয়া প্রয়োজন।
০৪| ধর্মচর্চাঃ ধর্মীয় নৈতিকতা কিশোর মনে পোত্তুভাবে প্রোথিত হতে হবে। এ লক্ষ্যে শৈশবেই ধর্মের বিশুদ্ধ চর্চা ও যথাযথ অনুশীলন করতে হবে। মসজিদের ইমাম, মন্দিরের ঠাকুর, গির্জার ফাদার, বৌদ্ধ ভিক্ষুগণ এ ক্ষেত্রে গুরতত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।
০৫| পাঠ্যত্রুম ও শিক্ষা ব্যবসহায় সংস্কার সাধনঃ শিক্ষার্থীদের বয়স, সামর্থ্য ও অভিরতচির প্রতি লক্ষ্য রেখে পাঠ্য পুসতক প্রণয়ন করা প্রয়োজন। মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বৈষম্যহীন ও সমন্বিত একমুখী শিক্ষা ব্যবসহা চালু করতে হবে।
০৬. সংবেদনশীল মনোভাব প্রদর্শনঃ যে কোন সমস্যার ওপর তাদের কথা ধৈর্য, আমতরিকতা ও গুরতত্বের সাথে মন দিয়ে শুনতে হবে এবং সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। তাদের সাথে এমনভাবে কথা বলতে হবে যাতে সে মনে করে তার কাজে বড়দের সমর্থন ও সহানুভূতি আছে। কথায় কথায় তাদের সাথে ঝগড়া বা তাঁকে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না।
০৭| ‘প্রাইমারী সেক্স এডুকেশন’ প্রদানঃ কিশোর ছেলে মেয়ে উভয়কে পরিশীলিতভাবে ‘প্রাইমারী সেক্স এডুকেশন’ দিতে হবে। এতে তারা অনেক অযাচিত শারীরিক বা মানসিক ভুল বা ক্ষতি থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখতে সক্ষম হবে।
০৮| কিশোর সংশোধনাগারের সংখ্যা বৃদ্ধি করাঃ সরকারী ও বেসরকারী উভয় উদ্যোগে কিশোর সংশোধনাগারের সংখ্যা বাড়াতে হবে।
০৯| আদর্শ ও উদাহরণ সহাপনঃ সর্বোপরি সমাজের সকল সতরের অভিভাবক ও বয়োজ্যেষ্ঠগণকে সর্বক্ষেত্রে কিশোর-কিশোরীদের সামনে কথা ও কাজের সমন্বয়ে আদর্শ সহাপন করতে হবে।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
মন্তব্য: ৪ টি
২৭ ফেব্রুয়ারি ’১৬ বিকাল ০৩:৪২
আপনার বাবাকে কেউ খুন করলে আপনি কি করতেন?এ ধরনের উদাহরণ ও আছে বাবা-মা দুজনাই খুব ভালো কিন্তু সন্তান হয়েছে সন্ত্রাস বা নেশাখোর!ব্যাখ্যা চাই
২৭ ফেব্রুয়ারি ’১৬ বিকাল ০৪:০৩
ধর্মচর্চা করে লাদেন হবে না, এমন কোন গ্যারান্টি দিতে পারবেন দাদা??