ধর্মের সীমাবদ্ধতা

শিরোনাম দেখেই একদল মানুষ ক্ষুব্ধ হবেন। যারা কখনই চিন্তা করতে চায়না তাদেরকে কী বলবেন? যারা ভাবেন তারা খুব ভালো করেই জানেন, যাদের সীমাবদ্ধতা আছে তারাই ক্ষুব্ধ হন। কলমের বদলে কলম চালাতে অপারগ মানুষ কখনো মুক্তমনা হতে পারেননা। তারা কূপমন্ডুকতায় ডুবে থাকতে জানেন। অন্যকে সেখানে ডুবিয়ে রাখতে শিখেন।
ধর্মের কী সীমাবদ্ধতা আছে?
একটা জমজমাট আলোচনা হতে পারে। আমাদের কূপমন্ডুপ সমাজে আলোচনার স্থান কোথায়? তারচেয়ে মার-কাট-দাঙ্গা লাগাতে যারা অস্তাদ তাদের রাজ্য চলছে যেন। অথচ প্রতিটা ধর্মই শুরু হয়েছে বিদ্রোহ করে! সমালোচনা করে। এরপর কোন এক সময় এরাই বিদ্রোহ দমন আর সমালোচনার জবাবে স্বৈরাচার হয়ে উঠেছে।
এটাই হল ধর্মের প্রধান সীমাবদ্ধতা। এরা নিজেরা অন্যের সমালোচনার স্বাধীনতা চায়, কিন্তু অন্যকে নিজের সমালোচনার ক্ষেত্রে হুমকি দিয়ে বসে থাকে।
আবার, আপনি যখন আপনার মাকে পৃথিবীর সবচেয়ে আপন মানুষ ভাবছেন। তখন কিন্তু তাকে নর কিংবা নারী হিসেবে আলাদা চোখে দেখছেন না। বরং তিনিই হয়ে উঠছেন শ্রেষ্ঠ মানুষ। সব ধরনের মানুষের চেয়ে তিনি আপনার কাছে শ্রেষ্ঠ। কারন তিনি আপনাকে সবার চেয়ে আপন করে নিয়েছেন তাই। তিনি নারী কিংবা বয়স্ক কিংবা আপনার পরিবারের সদস্য সেজন্য নয়। সেগুলো আলাদা ব্যাপার। কিন্তু তিনি আপনাকে সবচেয়ে আপন করে ভাবেন বলেই আপনি তাকে শ্রেষ্ঠ মানুষ মনে করেন। ঠিক এই মা যখন রাস্তা দিয়ে হেটে যান, তাকেই নারী হিসেবে ছোট করে রাখা হয় ধর্মের নামে।
অর্থাৎ নারীদের অধিকার সংকুচিত করে রাখাটা ধর্মের অন্যতম সীমাবদ্ধতা।
অযোগ্য মানুষের সম্মান ধর্মের অন্যতম প্রধান সীমাবদ্ধতা। আপনার সমাজে সবচেয়ে মেধাবী সন্তান গুলো দেখবেন ধর্মের চেয়ে সমাজের সৌন্দর্যে দৃষ্টি দেন। ভেদাভেদ ভুলে সমাজকে সুন্দর করতে অসাম্প্রদায়িকতার কোন বিকল্প যে নেই! ফলে তারাই একেক ধর্মের চোখে একেকজন অপরাধী হিসেবে গন্য হন। ফলে এই সূর্য সন্তানেরা নানা ভাবে অপদস্ত হতে থাকেন। আর অপদস্ত করার কাজ যারা করে তারা দেখবে সমাজের এমন মানুষ যারা মেধাহীন অবস্থায় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করেছে। স্কুল থেকে ঝড়ে পড়েছে কিংবা সেখানে গিয়ে টিকে থাকবার ব্যাপারেও আত্মবিশ্বাস ছিলোনা। মেধাহীন এই ছেলেরাই একসময় ধর্মের নামে সম্মান লাভ করতে তৎপর হয়। সাধারন মানুষকে অদৃশ্য ভয় দেখিয়ে সম্মান লাভ করতে পারে। এরপর এদের প্রধান কাজ হয় সমাজ ও রাষ্ট্রের মেধাশক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তাদের অপমানিত করা।
ফলে সমাজের মেধাকে ধ্বংস করা এবং অযোগ্যদের হাতে সমাজের ক্ষমতা হস্তান্তর করার বাধ্যবাধকতা হল ধর্মের অন্যতম প্রধান সীমাবদ্ধতা।
প্রগতি মানুষের বৈশিষ্ট। এই বৈশিষ্টের কারনেই অসামান্য উচ্চতায় এসেছে এই মানুষ। অথচ প্রতিটা ধর্মই প্রাচীন অবস্থা আকড়ে রাখতে তৎপর। এই তৎপরতায় বাঁধা হবার কারনে অনেক অসাধারন মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে। আরো কত মানুষ যে জীবন দেবেন তার ঠিক নেই।
প্রগতির অন্তরায় হওয়ার এই বৈশিষ্ট ধর্মের অন্যতম প্রধান সীমাবদ্ধতা।
বিভেদ তৈরির প্রধান মাধ্যম ধর্ম। বিশ্বের বুকে সকল মানুষ এক মানবতাবাদে আশ্রয় নেয়ার যে অদম্য ইচ্ছা, তাকে হত্যা করার একমাত্র শক্তি হল ধর্ম। একবার ভেবে দেখুন, ধর্মের কারনে মানুষ ঐক্যের পথে হাটতে পারছে না। ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান, লিবিয়া, মিশর, ফিলিস্তিন এই যে দগদগে ঘা! এসবই ধর্মের বাড়াবাড়ি আর রেসিজমের কারনে। অথচ এক দেহের মানুষ একমনের হতে কতটাই না আকুলতা!
এভাবে ভাবলে একটা বিষয় আপনাকে মানতেই হবে। ধর্ম সকল অনৈক্যের মূল। দুজন প্রতিবেশিদের যেকোন ঝগড়াও খুব স্বাভাবিক থাকে, যতক্ষণ তা সাধারন কোন বিষয়ে সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু যখনই তা ধর্মের ব্যাপারে গড়ায় তখন সেটা আর মানবিকতার পর্যায়ে থাকেনা।
আসুন একটু খানি মুক্তচিন্তা করি। মানুষের জন্য আলোচনা হোক।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
২৫ ফেব্রুয়ারি ’১৬ রাত ০২:৫৩
valo laglo,tobe dhormer sathe onek kichui ar sathe jorito
২৫ ফেব্রুয়ারি ’১৬ বিকাল ০৫:১২
দাদা, এই সাব্জেক্ট বাদ দিয়ে অন্য কিছু লেখেন। মানুষের মধ্যে যেটা নিয়া এলার্জি আছে সেটা স্কিপ করাই তো ভালো। গণতান্ত্রিক দেশ তো!
২৫ ফেব্রুয়ারি ’১৬ বিকাল ০৫:২৫
এইখানে দুইটা পয়েন্টের সাথে কিছুটা একমত। কিন্তু বাকীগুলো ধর্মের ওপর চাপিয়ে দেয়া দোষ। গতকাল ভালোবাসার মতবাদ শিরোনামে একটা ব্লগ দিয়েছি। সেখানে মহামানবদের ব্যাপারে বলেছি যে, তারা অপকর্মে ব্যবহৃত হন। তাই দোষটা তাদের নয়। বরং যারা অপরাধ করে তাদের। ধর্মের ক্ষেত্রে একই কথা। ধর্মগুলো সবই সমাজের শান্তির জন্য এসেছে। সে সময় শান্তি স্থাপন করে তার শক্তিমত্তা দেখিয়ে দিয়েছে। সূতরাং অপরাধীদের কাজকর্ম ধর্মের ওপর চাপিয়ে দেয়ার কোন যুক্তি নাই। যারা ধর্মকে অপব্যাখ্যা করে অধর্মের কাজ করে আর যারা সেগুলো দেখিয়ে ধর্মের মূলবাণীর অপব্যাখ্যা করে তারা তো একই রকম হয়ে গেল।
যেমন- মা, নারী, মেধা, প্রগতি, ঐক্য এই পয়েন্ট গুলোর ক্ষেত্রে বলা যায়। এই বিষয়গুলো কখনই ধর্মের সীমাবদ্ধতা নয়। কারন ধর্ম যেভাবে বলে সেভাবে সমাজে এইসব প্রচলিত হয়নি। অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। মসজিদে ইহুদি আর খ্রিস্টানরা ইবাদতের অনুমতি পেত। নারীর সম্মান সেসময় ধর্মই দিয়েছে। অধর্ম অনুসারে নারীরা মানুষ বলে গণ্য হতনা। প্রগতির জন্য ধর্ম বাঁধা দেয়নি। বরং প্রগতির সমস্যা গুলো রোধ করেছে। মেধার ক্ষেত্রে এটা মেধাবীদের ব্যার্থতা বলতে হবে। মেধাবীরা শুধু না জেনে সমালোচনা না করলে ধর্ম দিয়েই সঠিক সমাজ গড়া যেত।
প্রতিটা মতবাদই সম্মানিত। মতবাদ সৃষ্টি হয় মানুষের প্রয়োজনে। বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে না। ধন্যবাদ।