ঊনিশ এর বাংলা ভাষা আন্দোলনঃ এ তো আরেক একুশ! পর্ব-২
আসাম জুড়ে শুরু করা হল বাঙ্গালী খেদাও আন্দোলন। এর মাঝেই ২ জুলাই ডাকা হল ‘নিখিল আসাম বাঙ্গালা ভাষা সম্মেলন’। এখানে বাঙ্গালীদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করলেন অন্যান্য ভাষাগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা। লোকসভা সদস্য শ্রীদ্বারিকানাথ তেওয়ারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ঐ সভায় আলতাফ হোসেন মজুমদার, নন্দকিশোর সিংহ, নিবারণচন্দ্র লস্কর, রথীন্দ্রনাথ সেন, গোলাম ছগির খান, শরৎচন্দ্রনাথ বসু প্রমুখ বিশিষ্ট জনপ্রতিনিধি ও নেতৃবৃন্দ গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং প্রতিবাদ জানান।
সভায় অসমিয়াকে রাজ্যভাষা করার আন্দোলনের নামে বাঙালিদের উপর হামলা ও নির্যাতনের প্রতিবাদ করা হয়। ভাষার প্রশ্নে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার প্রস্তাব গৃহীত এবং কেন্দ্রের কাছে হস্তক্ষেপের দাবি করা হল। এর ঠিক পরপরই অসমীয় সম্প্রদায়ের চুড়ান্ত আক্রমণের শিকার হল বাঙ্গালীরা।
চারিদিকে বাঙ্গালী নিধন শুরু হল। বাঙ্গালীদের বাড়িঘরে আগুন। ব্যবসা প্রতীষ্ঠান জ্বলে পুড়ে ছাই! পালিয়ে অন্যান্য রাজ্যে আশ্রয় প্রার্থী হলেন বহু বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীর মানুষ! ফলে ১৯৬০ সালের ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবসকে ধিক্কার জানানো হল। কলকাতায় সেদিন ঘোষণা করা হল শোক দিবস। অসমিয় বর্বরতার প্রতিবাদে সরকারী সকল অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেল।
আন্দোলনের মূল শ্রোত শুরু হয় ১৯৬০ সালের ১০ অক্টোবর থেকে। এদিনই আসাম সরকার ঘোষণা করে রাজ্যের একমাত্র রাজ্য ভাষা হবে অসমীয়! মাতৃভাষার অস্তিত্ব রক্ষার চুড়ান্ত আন্দোলন শুরু হল। কাছাড়ে মূল আন্দোলন ঘাটি গাড়ল। সভা, সমাবেশ, মিছিল, শ্লোগান মুখর তখন কাছাড়। ১৯৬১ সালের ১৫ জানুয়ারী করিমগঞ্জে শীল ভদ্র যাজীর সভাপতিত্বে এক সম্মেলন থেকে আগের শিলচর সম্মেলনের ঘোষনা পূনর্ব্যাক্ত করা হল।
৫ ফেব্রুয়ারি করিমগঞ্জে আরেকটি সম্মেলনে কংগ্রেস নেতা আব্দুর রহমান চৌধুরির সভাপতিত্বে আসাম সরকারের শেষ জবাব দাবি করা হল। সম্মেলন থেকেই গঠিত হল ‘গণ সংগ্রাম পরিষদ’। চুড়ান্ত শপথ নেয়া হল গণপরিষদের পক্ষ থেকে।
১৯৬০ সালের ৫ ও ৬ নভেম্বর নওগাঁর হোজাইয়া বাঙালিদের এক সম্মেলন থেকে গঠিত নিখিল আসাম বঙ্গভাষী সমিতির এক প্রতিনিধি দল ৫ এপ্রিল দিল্লি গেলেন, সংবিধানের ৩৪৭ নং ধারা অনুসারে বাংলা ভাষাকে স্বীকৃতির দাবি নিয়ে। কিন্তু তাদের সে দাবি ব্যর্থ হল। এদিকে ১৩ এপ্রিল পার হয়ে গেল। জেদী আসাম সরকার নিশ্চুপ। ১৪ এপ্রিল ১ বৈশাখ নববর্ষের দিনে সমগ্র কাছাড় শপথ নিল- জান দেব, জবান দেব না।
এদিকে সংগ্রাম পরিষদের এক ইস্তাহারে ঘোষণা করা হল, ‘দিল্লি আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার জন্য আমরা সংগ্রামী জনসাধারণ হতাশ নই। প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আমরা জানাইয়া দিতে চাই সম্পূর্ণ দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা সংগ্রাম বন্ধ রাখিব না। মাতৃভাষা জিন্দাবাদ’। এরপর এক অভূতপূর্ব উত্তেজনার মধ্যে ঘোষণা করা হল সেই ঐতিহাসিক তারিখ ১৯ মে। এইদিন হতে শুরু হবে জেলাব্যাপী অহিংস আন্দোলন। চলবে হরতাল পিকেটিং...
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
২৩ ফেব্রুয়ারি ’১৬ রাত ০১:২৯
জাতি হিসেবে আমরা মহান। তবে আমাদের স্বার্থগত অন্তর্দন্দ্ব খুবই লজ্জাজনক। এসব ইতিহাস ভূখন্ডগত অহংবোধের কারনে মুছে দেয়ার চেষ্টা হয়। নয়তো এত বড় ইতিহাস ঢাকা রয় কিকরে?
২৩ ফেব্রুয়ারি ’১৬ রাত ০১:৩৩
আপনার ধারাবাহিকটি পড়ছি। আমার মনে হচ্ছে যেন আরেক '৭১ কিংবা '৫২ এর সাথে পরিচয় ঘটছে!
জয় বাঙালি!
২৩ ফেব্রুয়ারি ’১৬ রাত ০১:৫৪
চোখে পানি চলে এলো। একই রক্ত! একই কন্ঠস্বর শুনতে পেলাম দাদা!!!!!!!!!