এক,
কারো সাথে কথা বলার প্রতিটি লাইনেই আমরা চেষ্টা করি দু-একটি ইংরেজী শব্দ ব্যবহার করার। যাকে আমরা স্মার্টনেস বলি। ( এখানেও আমাকে ইংরেজী শব্দ স্মার্টনেস বলতে হলো। এরচেয়ে ভাল শব্দ আপাতত আমার মনে পড়ছে না)
ঠিক ব্যাপারটা এমন যে কোন এক বিশুদ্ধ বাংলাভাষা প্রেমিক তার ছাত্রদের উপদেশ দিয়ে বলছেন- "তোমরা শুধুমাত্র বাংলা ভাষাতেই কথা বলবে।কোনভাবেই ইংরেজী শব্দ ইউজ করবে না!"
আসলে এটাই বাস্তবতা ! আমি বাংলা ভাষাকে ভালবাসি। অনেক ভালবাসি। কিন্তু এটা সত্য যে সময়ের সাথে সাথে বাংলা ভাষার সাথে ইংরেজী, আরবী ও হিন্দী ভাষায় কিছু জনপ্রিয়, সহজবোধ্য এবং শ্রুতিমধুর শব্দ যুক্ত হয়েছে। এসব বিদেশী শব্দ আমাদের ভাষাকে আক্রমন করেছে কি না এটা ভাষাবিদরা বলতে পারবেন, তবে আমি এখানে খুব বেশী আতংকিত নই।
আমরা একদিকে ডিজিটাইজেশনের কথা বলবো, গ্লোবালাইজেশনের কথা বলবো আর অন্যদিকে ভাষার ব্যাপারে সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদে ভুগবো- দুটো একসাথে হয় না। আমি ভাষার গ্লোবাল সম্প্রসারণের পক্ষে। আপনার কাছে সিয়েরিলিওনে বাংলা ভাষার সম্প্রসারণ যেমন ভাল লাগে, আমার কাছে বাংলা ভাষায় কোন সিয়েরিলিওনী শব্দ আসলে খুব খারাপ লাগবে না।


দুই,
আমরা আবার অতি স্মার্ট হতে গিয়ে ইংরেজীতে নিজেদের উপস্থাপন করতে চাই। আসলে সত্যি বলতে কি ইংরেজীতে কোনদিনই আপনি-আমি শতভাগ হ্রদয়ের আবেগ-অনূভূতি, কান্না-হাসিকে প্রকাশ করতে পারবো না। আমাদের ভাষায় আবেগ প্রকাশেরও একটা আলাদা ভাষা আছে। ইংরেজী দিয়ে তা আসলেই প্রকাশিত হয় না। আপনি হয় তো সাবলীল ইংরেজী বলতে পারেন, কিন্তু আমি তো সেই সাবলীলতাকে বুঝতে চেষ্টা করি থেমে থেমে। ভাষার মূল উদ্দেশ্য যদি বুঝার ব্যাপার হয়, তাহলে একপাক্ষিক সাবলীল ইংরেজী কোনদিনই সে উদ্দ্যেশ্য পূরুন করতে পারে নি, পারবেও না। কৃতিম স্মার্ট হতে গিয়ে অনেক কোটেট-বুটেট ভদ্রলোক ভুল ইংরেজী বলেন, এটা অন্তত শ্রোতা বুঝতে পারেন।

তিন,
আমি বাংলা ভাষা নিয়ে গর্বিত। আমাদের জাতির প্রতিটি অর্জনেই রক্ত ঝড়েছে। রফিক, সালাম, বরকতের রক্তলাল আমার মায়ের ভাষাতে কথা বলতে পেরে আমি উচ্ছ্বসিত। আল্লাহ শহীদদের কবুল করুন। আসুন আমরা হীনমন্যতা ছেড়ে- সাবলীল ভাষায় কথা বলি (সেখানে প্রাসঙ্গিকভাবে অন্য ভাষার শব্দ এলেও)। প্রাণ খুলে কথা বলতে চাই- ভাষা আন্দোলনের দাবী সম্ভবত এটাই।


ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ