ঊনিশ এর বাংলা ভাষা আন্দোলনঃ এ তো আরেক একুশ!-১
(ভাষা বাঙালির গৌরব। ভাষার জন্য জীবন দিয়ে বাঙালি গর্বিত। কিন্তু কী আশ্চর্য মিল! বাঙালি তার ভাষার জন্য স্থান-কাল-পাত্র দেখেনি! যেখানেই ভাষার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, জাতিসত্বার অস্তিত্বের প্রশ্ন সেখানেই বাঙালি অকুতভয় হতে দ্বিধা করেনি। ঢাকা কিংবা আসাম, যেখানেই জাতিনাশি ষড়যন্ত্র দেখানেই তো প্রতিরোধ! আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে জেনে নেই বাঙালির ভাষা আন্দোলনের আরেক ইতিহাস! ১৯ এর ভাষা আন্দোলন...)
কী সুনিপুণ মিল তাদের! কী অদ্ভুত প্রেক্ষাপট! একই ভাবে গর্জে ওঠা, শোষক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে! একই কায়দায় ভাষার জন্য জীবন দান! একুশের মতই আরেকটি আন্দোলনের নাম ঊনিশের ভাষা আন্দোলন।
‘মোদের গরব মোদের আশা, আ-মরি বাংলা ভাষা, ‘জান দেব, জবান দেবোনা‘’ কিংবা ‘মাতৃভাষা জিন্দাবাদ‘- শ্লোগানগুলো সেদিন ধ্বনিত হয়েছিলো আকাশে বাতাসে। পরিনতিতে সেই একই মাত্রার নির্যাতন, সেই একই অস্ত্রের ভাষা, সেই একই ভাষায় আত্মচিৎকার করে লুটিয়ে পড়া- শাহাদাত!
বাংলা ভাষা!
১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে আসাম ভারতের একটি অঙ্গরাজ্যে পরিনত হয়। বাঙ্গালীদের সংখ্যা তখন ১৫ থেকে ২০ লাখের মাঝে। অসমীয় জনগোষ্ঠী প্রায় সমসংখ্যক। আরও রয়েছে গারো, মুন্ডারী, লুসাই, সাঁওতাল, নেপালী, ঝংসেন, কুরুক, মেহ, পাইথি, লালং, বড়ো, মনিপুরী, খাসি, মিকিড় ইত্যাদি জাতীগোষ্ঠীর জনগন। অথচ হঠাতই ১৯৫১ সালে অসমীয় ভাষাভাষীদের সংখ্যা বিশাল আকারে বাড়িয়ে প্রকাশ করা হল। পাশাপাশি মূখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্যে ঘোষণা করলেন ‘আসাম শুধু মাত্র অসমীয় জনগোষ্ঠীর জন্য আর বাঙ্গালীরা যবন, কাফের’। ফলশ্রুতিতে শুরু হল বাঙ্গালীদের ওপর করুণ নির্যাতন। বাঙ্গালীদের এলাকার উন্নয়ন বন্ধ করে দেয়া হল, বাংলা ভাষায় পরিচালিত স্কুল গুলো বন্ধ হতে থাকল। কিছু আবার অসমীয় ভাষায় পরিচালনা হতে শুরু করল।
ফলে ১৯৪৭ থেকে ১৯৫১-র মধ্যে সেখানে ২৫০টি বাংলা মাধ্যমের স্কুলের মধ্যে ২৪৭টিই বন্ধ হয়ে যায়। বাঙ্গালীদের চাকরি থেকে বিতাড়ন করা হল। শুরু হল উগ্র অসমীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলন। এ পথ ধরেই ১৯৬০ সালে অসমীয়রা শুরু করল রাজ্যভাষা অসমীয় করার আন্দোলন। আসাম কংগ্রেস অবিলম্বে অসমীয়কে রাজ্য ভাষা করার প্রস্তাব আনলো। মূখ্যমন্ত্রী চালিহা ১৯৬০ সালের ২৩ জুন বিধান সভায় বললেন, সরকার দ্রুতই এ বিষয়ে বিল আনবে। আর অন্যদিকে আসাম জুড়ে শুরু করা হল বাঙ্গালী খেদাও আন্দোলন।
(অসমাপ্ত)
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
২১ ফেব্রুয়ারি ’১৬ রাত ০১:০৫
আসামের ভাষা আন্দোলন নিয়ে আমি পড়াশুনা করছিলাম। অবাক হলাম বাঙালি নিজের আত্মদান সম্পর্কে জানেই না। ঢাকার মত আরেকটা আত্মদান যে আছে, তা কেউ জানেই না। জানাইতেও চায়না বাঙালি বুদ্ধিজীবিরা।
সেই যায়গা থেকে এইদিন বের হয়ে এলেন বলে আপনাকে অনেক শুভেচ্ছা জানাই।
২১ ফেব্রুয়ারি ’১৬ বিকাল ০৪:২৪
ধন্যবাদ গুরুত্বপূর্ন পোষ্টটির জন্য। তবে সংশোধনী প্রয়োজন, ভারতের স্বাধীনতার সালটি ১৯৭৪ মনে হয় ভুল করে লিখেছেন যা ১৯৪৭ হবে!!!!!!!!!!!