ইন্টারনেট দুনিয়াঃ কতটুকু স্বাধীন আমরা?
আধুনিকতার বিশ্ময় ইন্টারনেট! মুহুর্তেই এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তের অবাধ তথ্য প্রবাহের মাধ্যম। আধুনিক মানুষ হিসেবে ইন্টারনেটের ব্যবহারে আমরা গর্বিত। সভ্যতার ছোঁয়া পেয়ে আপ্লুত তৃতীয় বিশ্বের আধুনিক সমাজ। আসলে কতটা আধুনিক আমরা? কতটা স্বাধীন?
২৪ এপ্রিল ২০১৪ তে টাইমস ম্যাগাজিনের এক প্রতিবেদনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ব্লাদিমির পুতিনের ইন্টারনেট নিরাপত্তা সম্পর্কিত একটা বক্তব্য উঠে আসে। যেখানে তিনি বলেছেন ‘ইন্টারনেট হল সিআইএর একটি প্রোজেক্ট’। রাশিয়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর সার্ভার সেদেশে রাখার জন্য একটি আইনও পাশ করেছে। নিজেদের তথ্য পাচার রোধে ইরানের মত রাষ্ট্র নানাবিধ প্রযুক্তির সহায়তা নিয়েছে। কঠিন ধর্মীয় বিষয় ছাড়াও ইরান প্রায়ই নিরাপত্তার কারনে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এখনও ইরানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার অনেক সংকীর্ন করে রাখা হয়েছে। অনেক এলাকায়ই জনপ্রিয় মাধ্যমগুলো জ্যাম করে রাখা হয়। আমরা জানি ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে পশ্চিমা উন্নত বিশ্বেও সেনাবাহিনীর ক্ষেত্রে আলাদা আইন ও নির্দেশনা রাখা হয়েছে। সেনা সদস্যদের জন্য রয়েছে আলাদা মোটিভেশনাল প্রোগ্রাম।
তাছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা বিশেষ করে ইরাক ও আফগানিস্তানে অবস্থানরত ন্যাটো ও মার্কিন সেনা সদস্যদের জন্যও আলাদা নির্দেশনার কথা জানা যায়। শুধু সেনাবাহিনী নয় রাষ্ট্রের স্পর্ষকাতর সংস্থার ক্ষেত্রেও একই ভাবে নিরাপত্তা বিধান করা হয়। বিশ্ববিখ্যাত উইকিলিকসের আবির্ভাবে আজ কিছু উন্নত দেশের নির্লজ্জ গোয়েন্দাবৃত্তির অসংখ্য প্রামাণ্য দস্তাবেজ আমাদের হাতে। নানান প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো বিশেষ করে আমেরিকা অন্য দেশগুলোর ওপর কিভাবে নজর রাখত এবং তথ্য চুরি করত তা প্রকাশ হয়েছে। এ নিয়ে উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে আমেরিকার সম্পর্ক ও আস্থার নিদারুন অবনতি হয়েছে। ফলে বাধ্য হয়ে দেশগুলো তাদের অনলাইন নিরাপত্তায় বিনিয়গ বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
এ তো হল প্রযুক্তির নিরাপত্তায় বিশাল ব্যবস্থাপনা সম্পন্ন দেশগুলোর অবস্থা! তথ্য-প্রযুক্তির রক্ষনাবেক্ষন ও সীমাহীন সম্পদ ব্যয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থার পরেও ইন্টারনেটের তথ্য ফাঁস ও পাচার রোধে ঘুমহীন তারা! সেখানে অনুন্নত বা উন্নয়নশীল বিশ্বে আমরা কোথায় অবস্থান করছি, ভাবাই যায়না!
ইন্টারনেট এমন একটি বাক্স, যাতে সহজে তথ্য সংরক্ষণ এবং এর মাধ্যমে তথ্য আদানপ্রদানও করা যায়। কিন্তু সেই বাক্সের চাবি কিংবা বাক্সের অবস্থান যদি আমার সীমানার বাইরে থাকে তাহলে মূল্যবান তথ্যের কী মূল্য থাকে?
স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা হল উন্নত জীবন যাপনের মৌলিক শর্ত। মানুষ স্বাচ্ছন্দে জীবন যাপন করতে চায় ‘নিরাপত্তার শর্তে’। নিরাপত্তাহীন স্বাচ্ছন্দ কখনো স্বাচ্ছন্দ হতে পারেনা। এর নাম আধুনিকতা নয়। আজ আমরা এমন একটি ব্যবস্থায় অভ্যস্ত হচ্ছি, যার নিরাপত্তার চাবি আমাদের হাতে নয়। রাষ্ট্র সে অবস্থায় উপনিত হতে পারেনি! সেক্ষেত্রে আধুনিক বিশ্বব্যবস্থায় ইন্টারনেটের বর্ধমান অভ্যস্ততাকে অন্তত আমাদের এই প্রেক্ষাপটে ‘আধুনিক’ বলা যায়না। অনিরাপত্তা এবং একই সাথে একটি চাকচিক্যময় আধুনিক জেলখানায় দিন কে দিন আবদ্ধ হচ্ছি আমরা!
সেজন্য তথ্য প্রবাহের আধুনিকতায় মানিয়ে নেয়ার চেয়েও বড় বিষয় হয়ে দাঁড়ায় আধুনিকতার এই মৌলিক প্রতীক তথা ইন্টারনেট নিরাপত্তায় রাষ্ট্রীয় ভাবে একটি যৌক্তিক পর্যায়ে অবতীর্ণ হওয়া। রাষ্ট্রকে অবশ্যই এক্ষেত্রে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। নয়তো প্রযুক্তির উন্নয়নে আমাদের রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও দলিল সাম্রাজ্যবাদীদের কাছে দিনে দিনে উন্মূক্ত হয়ে পড়বে।
আধুনিক যুগে পরাধীনতার জন্য এটুকুই যথেষ্ট যে, ‘রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবসাইটের নিরাপত্তায় আমরা বিদেশী ব্যবস্থাপনা এবং বিদেশী সংস্থার কাছে জিম্মি’! কার্যকর দেশীয় ব্যবস্থাপনা গ্রহনের বিকল্প নেই।
যেখানে নিজস্ব উদ্ভাবন নিজস্ব হস্তগত ইন্টারনেট ব্যবস্থার পরেও পশ্চিমা ও উন্নতবিশ্ব ইন্টারনেট নিরাপত্তার ক্ষেত্রে চিন্তিত, সেখানে এই দিকটি নিয়ে অবশ্যই আমাদের সরকারকে ভাবতে হবে। নয়তো ভবিষ্যতে সহজ আত্মসমর্পন ছাড়া আমাদের জাতির আর কোন দিক খোলা থাকবেনা।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
মন্তব্য: ২ টি
১৩ ফেব্রুয়ারি ’১৬ সন্ধ্যা ০৬:৫২
এই দিকটা আসলে খুবই গুরুতর। একই সাথে আমরা অত্যন্ত দূর্বল অবস্থানে আছি। সরকারের উচিৎ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পথে সিকিউরিটি নিয়ে কাজ করা।