টিং টিং
রবিউল একটি বহুজাতিক কম্পানিতে সামান্য জব করে। চাকচিক্যময় পরিবেশে জব করলেও সেই চাকচিক্য তার জীবনকে রঙ্গীন করতে পারেনা। সারাদিন এসি রুমে বসে বাসায় ফিরতে গিয়ে ক্লান্ত প্রাণ ধুক ধুক করে ওঠে। কথায় বলে, 'নদীর পাশে থাকলে সেই পানির সামান্য অংশ হলেও ভাগ্যে জোটে'। কিন্তু সে পানি যদি হয় বানের পানি...!
অফিস থেকে বেরুতেই কঠিন বাতাসের ধাক্কা সারাদিনের ক্লান্তি বয়ে আনে, এরপর লোকাল বাসের চাপ সয়ে সোজা নামতে হয় বাজার মুখে। শেষবেলা অফিস ভিড়ের মাঝে দোকানীর লাভ বের করার ধান্দায় রবিউলও সমান নিশান!
বাজার যুদ্ধে জয় হলে প্রায়ই মাছ বাজারে ঘুরে রবি। তাজা মাছ দেখার ইচ্ছা নিয়ে এদিক ওদিক হাটে। হাজার ভাবনায় ছেলেবেলার ভাবনাগুলো দোলা দেয়। মায়ের শত আবদারও রবিকে টলাতে পারেনি। মাছ হোক, মাংস হোক কিংবা গাছের ফল। কিছুই তার মনোযোগ পেত না। কত কসরত আর ছলনায় পরিবারের একমাত্র সন্তান রবির আদর যত্ন হত! সেই দিন গুলো মা-বাবার সাথেই গত হয়েছে। বাবার কুরিয়ার সার্ভিসের চাকরি সার্ভিসের সাথে সাথেই শেষ হয়ে গেছে। তরুন বয়সে ধরতে হয়েছে জীবনের হাল। কোনমতে ডিগ্রি পাস করেই চাকরির আশায় ঢাকা আসতে হয়েছে।
এরপর চাকরি জুটাতেই বিয়ে, দুটি জমজ বাচ্চা এখনও দুধপায়ী। বাজার ব্যবস্থাপনায় বড় বড় মাছ গুলোর দিকে তাকিয়ে পণ্যের হিসেবে ছোট বাচ্চাজোড়ার দামও বেজায় কম মনে হয় রবির! দিন যাবে, ইনকাম বাড়বে ক্যালকুলেটরের বাটন বুঝে। বাজার বাড়বে জ্যামিতিক হারে! ফলে আজকের ঐ জমজ মুখে এই মাছের টুকরো তুলে দেয়ার সম্ভ্যাব্যতাও সামান্য!
হিসেবের গড়মিল রবির অনুভূতি ভোঁতা করে দেয়। ঘামগুলো বাতাসের স্পর্ষে এসির আমেজ বয়ে আনে। সবজি আর সামান্য আধপচা মাছের পলিব্যাগ নিয়ে বাড়ি ফেরে রবি। ক্লান্তির ভারে খানিক বিশ্রামের আশায় বিছানায় এলিয়ে যায়। গুটি গুটি পায় কখন যে ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে যায় টের পায়না। স্বপ্ন নেমে আসে। মা আসেন। বাবা আসেন। ঘুমের রাজ্যে রবি এখন খুবই শান্ত স্বভাবের হয়েছে। তাই দেখে বাবা-মা ভীষণ খুশি। রবির মাথায় হাত বুলিয়ে মা বলেন- তোর বাচ্চা দুইটা তোর মত হইছে! দেখ মা-মাংস কিছুই খাইতে চায়না...!
-এর মাঝেই রবির ঘুম ভেঙ্গে যায়।
সত্যিই! রবির বাচ্চা দুটি রবির মতই নিরামিষভোজী হয়েই উঠবে। শহরের জীবনে পণ্য হয়ে তারা এ যুগের নিরামিষভোজী! কী হয় মা-মাংস না খেলে? কেউ খেতে পায়না, কী খেতে চায়না! জীবনের দুই পর্বই আসলে এক। একই রকম। নিরামিষভোজী জীবন।
ছোটরা না হয় জীবনের ভিন্নতাই পেল...
দীর্ঘস্বাশ ঝেড়ে ফেলে রবি মুখ খুলে-
"রাফি, রকির আম্মু, খাবার হল?"
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
মন্তব্য: ১০ টি
০৮ ফেব্রুয়ারি ’১৬ রাত ০৮:৫১
বুক থেকে যেন বিরাট এক বোঝা নেমে গেল। তবুও মনটা খারাপ করে দিলেন! এটা গল্প নাকি কষ্টের ফোটা দাদা???