গ্রামীণ সামাজিকতা শহরে টিকছে না কেন?
গ্রামীন সমাজের মাতববরের বিচার বা সিদ্ধান্ত সবার কাছে গ্রহন যোগ্যতা পেয়ে থাকে। মাতব্বর সাহেব নিজে যেমন অন্যায় অনাচার থেকে বিরত থাকেন তেমনী অন্যদেরকে বিরত রাখার চেষ্টা করেন।গ্রামের মাতব্বরগণ হয়ে থাকেন আস্থার প্রতিক। তিনি কোন না কোন ভাবে সবার সাথে আত্বীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ।তিনি উঠোন বৈঠকের মাধ্যমে গ্রামের অন্যন্য গন্যমাণ্য ব্যাক্তিদের কে নিয়ে যেকোন সমস্যার সমাধান করে থাকেন। যেখানে উভয় পক্ষের লোকদের অংশগ্রহন নিশ্চিত থাকে। এজন্যই বলেছিলাম যে,তার রায়ে উভয়পক্ষের লোকজন খুশি হয়ে ঘরে ফিরে যেত,সমাজে শান্তি-শৃংখলা বজায় থাকতো। কিন্তু শহরে এ ধরনের গ্রাম্য শালিস বা উঠোন বৈঠকই অনুপস্থিত। ফলে গ্রাম্য প্রধানের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান লক্ষ্য করা যায়না। যা হয় সেটা পুলিশী সমাধন। যা দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার জন্ম দিয়ে থাকে।
আবার ধরুন গ্রামের কোন মেয়ে বিপদে পড়ে কোন পুরুষের কাছে সাহায্য চাইলে,পুরুষটি সযত্নে তাকে নিরাপদ যায়গায় পৌছে দেয় কিন্তু শহরে ঘটছে তার উল্টো। সামাজিক মূল্যবোধের কারনেই এমনটি হচ্ছে বলে আমি মনে করি।পুরুষটির দ্বারা মেয়েটি লাঞ্চিত হলে সমাজে বসবাস করা পুরুষটির জন্য কঠিন হয়ে পড়ে।সবাই তাক ধিক জানাতে থাকে। এমনও ঘটনা ঘটে যে,এ ধরনের অপরাধের জন্য অপরাধীকে গলায় জুতোর মালা পরিয়ে রাস্তার মাঝে দাড় করিয়ে রাখা হয়।ফলে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তির কথা মাথায় আনতে ভয় পায় গ্রামীন সমাজের মানুষেরা। শহরে মানুষেরা এ ধরনের সামাজিক বন্ধনের বাইরে হবার কারনে অনেকটা অপরাধ প্রবণ। তবে শহরের মেয়েরা যদি গ্রামীন মেয়েদের মত, চলাচলের নিয়ম মেনে চলে তাহলে নারী কেন্দ্রীক ঝামেলা কমবে বলে বিশ্বাস করি।
আবার দেখা যায় গ্রামে কেউ বিপদে পড়লে অন্যরা সবাই তার সাহায্যার্থে এগিয়ে আসে। কিন্তু শহরে ঘটে তার উল্টো! চোখের সামনে কেউ খুন হচ্ছে বা কোন নারী ধর্ষিত হচ্ছে দেখেও শহর বাসীরা মির জাফরের ভূমিকা পালন করে থাকে। কি দরকার অন্যর জন্য নিজে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়া,সে তো আমার কেউ নয়!নিজে বাঁচলে বাপের নাম,এটাই হল তথাকথিত শহরবাসীর চরীত্র। অন্যদিকে আপনি যদি লক্ষ্য করেন দেখবেন যে,গ্রামে নারী ধর্ষীত তো দূরের কথা কোন শিশু বাচ্চাও যদি এমনিতেই রাস্তার ধারে বসে কাঁদে,সবাই এগিয়ে এসে বলতে থাকে কি হয়েছে বাবা?তোমার মা মেরেছে তোমাকে! সবাই ধরাদরী করে বাচ্চাটাকে তার মায়ের কাছে পৌছে দিয়ে আসে। শহরে এটা চিন্তাও করা যায়না বরং সুযোগ পেলেই বাচ্চাটাকে নিয়ে ভেগে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশী।আর এটা হয়েও থাকে অহরহ। সমাজে বসবাস কারী সবাই বিশ্বাস করে একের বিপদ মানেই হল সবার বিপদ। এ জন্য অপরের বিপদে সবাই ঝাপিয়ে পড়ে।গ্রামীন সমাজ মানেই সংঘবদ্ধ বসবাসের প্রতিশুতি,শহরে যার অস্তিত্ব নেই।
আবার ধরুন গ্রামের কোন হতদরীদ্র পরিবারের কন্যার বিয়ে হবে কিন্তু দরীদ্র পিতা টাকা যোগাড় করতে পারছেনা,এখন কি হবে? কোন সমস্যা নেই গ্রামের সবাই ওই মেয়েটিকে পাত্রস্থ করার জন্য সাধ্যানুযায়ী সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়।সবার অর্থে খুব সহজে পার হয়ে দরীদ্র মেয়েটির বিবাহের সমস্ত অনুষ্ঠান। একেই বলে দশেমিলে করি কাজ,হারিজিতি নাহি লাজ।শহরে যার অস্তিত্ব একদম নেই।কারন তারা সমাজের কেউ নয় যদি হত তাহলে অন্ততপক্ষে জানত তাদের নিচের ফ্লাটে কারা থাকে,কি করে তারা,তারা কোন ধর্মের বা খেয়ে আছে নাকি না খেয়ে রাত্রি যাপন করছে!?
সব কিছুর মূলে রয়েছে সমাজ বদ্ধতা।সব ধরনের কর্মকান্ড সমাজিক ভাবেই সম্পন্ন হয়ে থাকে। ফলে কেউ ইচ্ছা করলেই বাবা-মার সাথে খারাপ ব্যবহার করতে পারেনা,কেউ ইচ্ছা করলে নারীকে বেইজ্জতী করতে পারেনা,কারন সমাজ এগুলোকে বরদাসত করেনা। যেখানে সমাজই নেই সেখানে গ্রামীন সামাজিকতা টিকবেনা এটাই সাভাবিক।শহরে মানবিকতার চেয়ে কর্মের মূল্য বেশি। যে শহর জীবিকা নির্বাহের সে শহরে সামাজিকতা বা মানবিকতা টিকবেনা খুব সাভাবিক।এখানেই গ্রামীন সমাজ ও শহরের মাঝে বিস্তর পার্থক্য।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
৩১ জানুয়ারি ’১৬ সন্ধ্যা ০৬:৫৫
ভালো বিশ্লেষণ করেছেন। আমিও এ বিষয়টা নিয়ে অনেক দিন ভেবেছি।
সত্যিই- "যেখানে সমাজই নেই সেখানে গ্রামীন সামাজিকতা টিকবেনা এটাই সাভাবিক।"
৩১ জানুয়ারি ’১৬ সন্ধ্যা ০৭:১০
মানুষ গুলো গ্রামে থাকে
যন্তুরা সব টাউনে,
গ্রামে হলে পেট পুরে যায়,
রুচিই হয়না কাউনে।
৩১ জানুয়ারি ’১৬ সন্ধ্যা ০৭:১২
ভাবনাটা গুরুত্বপুর্ন!একের ভাবনা অন্যর কাজ,এভাবেই ভাবনার আদান প্রদানে সাহিত্যে জন্মলাভ করে থাকে